নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ঢাউস আকারের নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে এখন ঘরেবাইরে ‘আগুন’ জ্বলছে। বলা হচ্ছে, দলটি এখন জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এতে টালমাটাল এই দলটিতে চলছে হতাশা-আফসোস আর হরেক রকম গুঞ্জন। এরই প্রভাবে থমকে যাচ্ছে চেয়ানপারসন খালেদা জিয়ার ডাকা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াও। দেখা দিয়েছে বিএনপিতে মহাসংকট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনটি কারণেই বিএনপি মহাসংকটে পড়েছে। কারণ তিনটি হলো, আবদুল্লাহ আল নোমানের পদত্যাগের শঙ্কা, জোবায়দা রহমান ও শর্মিলী রহমানকে স্থায়ী কমিটিতে নিয়োগের চিন্তাভাবনা এবং খালেদা জিয়ার ডাকা জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া থমকে যাওয়া। দলটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলাপ করে এমন আভাস মিলেছে।
প্রথম সংকটের জন্য দায়ী করা হচ্ছে বিএনপির দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে। এবার স্থায়ী কমিটিতে তার জায়গা হচ্ছে, এমনটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ধরা হচ্ছিল। যদিও পরপর দুই কাউন্সিলের মতো এবারও নিজের নাম স্থায়ী কমিটিতে খুঁজে পেলেন না তিনি। কমিটি ঘোষণার পর থেকে তার সেলফোন বন্ধ। এমনকি তার ব্যক্তিগত সহকারীর নম্বরও বন্ধ।
এ বিষয়ে বিএনপিন্থী একজন বুদ্ধিজীবী নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি আর কাজ করবেন না। বিএনপি থেকে নিষ্ক্রিয় হবেন। তবে সরাসরি বিএনপির রাজনীতিই ছেড়ে দিবেন কিনা, এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি। যদিও নতুন কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এটি মনে করেন না।
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আছেন। মীর নাছির হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান। এর মধ্যে মীর নাছির হোসেনকে রেখে নোমানকে দিলে ব্যাপার সুন্দর দেখাতো না। আমির খসরুকে করা হয়েছে তার লিয়াঁজো জ্ঞানের কারণে।
আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে কথা হয়েছে— এমন দাবি করা বিএনপিপন্থী এক বুদ্ধিজীবী জানান, নোমান ১৯ মার্চের কাউন্সিলে সমস্ত প্রকাশনা নিজের বাসায় সেরেছেন। সর্বশেষ জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় নিজেকে শুরু থেকে যুক্ত রেখেছেন।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, উনার একসেপ্টেশন তো জেনুইন। এখনও তো পদ খালি আছে। দেখা যাক। অপেক্ষা করুন।
জানা গেছে, বিএনপির বড় সংকটের পেছনে অন্যতম হচ্ছে স্থায়ী কমিটিতে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমানকে যুক্ত করার বিষয়টি। বিএনপিপন্থী এক বুদ্ধিজীবী বলেন, শুনেছি খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের বউকে স্থায়ী কমিটিতে যুক্ত করবেন। এটি সত্যি হয়ে থাকলে বিপদ। এতে বিএনপি শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, ভাঙবেও।
বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর সম্প্রতি বিএনপিপন্থী এক প্রবীণ বুদ্ধিজীবীর বাসায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও এ বিষয়টিকে ক্ষোভের সঙ্গে ব্যাখ্যা করেন।সূত্রের ভাষ্য, চিকিৎসকের মন্তব্য ছিল, বিএনপি এখন জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে কোনও আশা করাও ভুল।
যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবিবার সংবাদিকদের জানান, যারা নিজেদের মতো পদবঞ্চিত হয়েছেন, তারা যেন আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
বিএনপি সূত্রের দাবি, গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের ইঙ্গিত অনেকটাই শুভ নয়। জোবায়দাকে স্বাগত জানানোর মধ্যে খালেদা জিয়ার কোনও খারাপ খবর রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের গুঞ্জন তো রয়েছেই। ফলে, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে আমলে নিতে হবে। তবে জমির উদ্দিন সরকার বলেছেন, খালেদা জিয়া গ্রেফতারে প্রস্তুত। তিনি গ্রেফতারকে ভয় পান না।
সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়া গ্রেফতারের শঙ্কা থেকে স্থায়ী কমিটিতে নিজের পরিবারের নিরঙ্কুশ প্রভাব তৈরি করতে চান। এ কারণে শূন্য দুটি পদে দুই ছেলের বউকে স্থান দেবেন বিএনপিপ্রধান। এ ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটিতে জিয়া পরিবারের সংখ্যা হবে চার।
বিএনপিপন্থী এক বুদ্ধিজীবীর ভাষ্য, শেখ হাসিনাও এটি করেননি। খালেদা জিয়া এটি করছেন, গ্রেফতারের শঙ্কা থেকে। তিনি গ্রেফতার হলে বিএনপি ভাঙনের মুখে পড়বে নিশ্চিতভাবেই। শেখ হাসিনা চাইছেন আর এজ পসিবল বিএনপিকে দুটি টুকরো করে দেওয়া।
নতুন কমিটির সংকটের মধ্যে সিনিয়র নেতাদের পদস্খলনের বিষয়টিও সামনে এসেছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান মওদুদ আহমদের পরে থাকলেও তার অবস্থান আরও দুজনের পরে করা হয়েছে।
সাবেক সহ-দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আবদুল লতিফ জনি ও শামীমুর রহমান শামীম দুজনেই পরিকল্পনা করছেন নীরব থাকার। এমনকী এর মধ্যে একজন সম্প্রতি এমাজউদ্দীনের কাছে দল থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, এমন অবস্থানও জানিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে এমাজউদ্দীন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
বিএনপির কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র অস্থিরতা এবার চলমান জাতীয় ঐক্য প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে এমাজউদ্দীন আহমদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমান জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা করছেন। এর মধ্যে নোমান নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হলে হয়তো জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতিতে তাকে আরও নাও দেখা যেতে পারে।
এমাজউদ্দীন আহমদ তাঁর জামায়াতবিষয়ক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিএনপির মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের পর থেকেই নিজেকে দূরে রাখছেন। এরই মধ্যে খালেদা জিয়াও তাকে ডাকেননি। তিনিও আগ্রহ দেখাননি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও নিষ্ক্রিয় হবেন বলে মনে করছেন বিএনপিন্থী একজন বুদ্ধিজীবী। তার দাবি, তার সঙ্গে কথা হয়েছে, এবং তিনি প্রক্রিয়াটিকে সামনে নিতে অনাগ্রহী।
©somewhere in net ltd.