![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
শুধুমাত্র রিকশার লাইসেন্স থেকে প্রায় ২২ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। প্রায় আশি হাজার রিকশার নিবন্ধন থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসহ প্রভাবশালী সমিতির নেতারা প্রকাশ্যে ১০ লক্ষাধিক রিকশার অবৈধ লাইসেন্স বিক্রি করেছেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে অনুযায়ী রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন রয়েছে ৭৯ হাজার ৫৪৭টি। বাকি রিকশাগুলো অবৈধ। মূলত যানজট নিরসনের লক্ষ্যেই ১৯৮৬ সালের পর থেকে রাজধানীতে রিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির নামে নাম্বার প্লেট নিয়ে দিন দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন রিকশা। এছাড়া দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে নতুন সংযুক্ত ১৬ ইউনিয়ন পরিষদের নিবন্ধিত রিকশাগুলোও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করছে।
জানা যায়, রাজধানীতে সরকারিভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ নিবন্ধন বন্ধ থাকার সুযোগে অবৈধভাবে রিকশার লাইসেন্স নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য চলছে। বেশ কয়েকটি চক্র লাইসেন্স বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ লাইসেন্স বাবদ কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি রিকশার লাইসেন্স নবায়ন করার বার্ষিক সরকারি ফি প্রায় ২০০ টাকা। সে হিসাবে রাজধানীতে চলাচলকারী প্রায় ১২ লাখ রিকশা থেকে ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা। অথচ সিটি করপোরেশন মাত্র দেড় কোটি টাকা আদায় করতে পারছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় ৭৯ হাজার ৫৪৭টি রিকশার নিবন্ধন দেয় তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)। সিটি করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ২৬ হাজার ৮১৯টি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৫২
হাজার ৭২৮টি বৈধ রিকশা রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আরও ৭০ হাজারের মতো বৈধ লাইসেন্সধারী রিকশা রয়েছে। গত ২৮ জুন এসব ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এগুলো বৈধ না অবৈধ তা এখনো নির্ধারণ করেনি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চলাচলকারী রিকশাগুলোতে একাধিক সংগঠন বা সমিতির নাম দেখা যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের সমিতি বা সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ত্রিশটি। রিকশাচালকরা জানান, এসব সংগঠন বা সমিতির নাম দেখলে পুলিশও কিছু বলে না। আর এসব অবৈধ লাইসেন্সকেই বৈধ হিসেবেই জানেন তারা। ত্রিশটির মতো সংগঠন সমিতি থাকলেও বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশন, ঢাকা বিভাগীয় রিকশা ও ভ্যান মালিক সমিতি, জাতীয় রিকশা ভ্যান মালিক ও শ্রমিক লীগ, ঢাকা মুক্তিযোদ্ধা রিকশা মালিক কল্যাণ সমিতি, ঢাকা উ. দ. সিটি করপোরেশন রিকশা মালিক সমিতি মহানগর রিকশা মালিক লীগ, মুক্তিযুদ্ধ সমন্বয় পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধ সমন্বয় পরিষদ-ঢাকা বিভাগের নামেই বেশিরভাগ নাম্বার প্লেট দেখা যায়। আবার যাদের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে তারাও একই নাম্বারে বিশটি করে রিকশা চালাচ্ছেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও অবৈধ রিকশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 'নিরাপদ সড়ক চাই' সংগঠনের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এক লাইসেন্স দিয়ে দুই সিটি করপোরেশনে অন্তত পঞ্চাশটি রিকশা চালায়। ফলে সাধারণ মানুষ যেমন দুর্ভোগে পড়ে তেমনি সরকারও বিশাল অংকের রাজস্ব হারায়। শিগগিরই অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মস্তোফা কামাল যায়যায়দিনকে বলেন, সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স দিতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। তারা ট্রাফিক বিভাগের সহায়তায় নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। অবৈধ রিকশা শনাক্ত করে মদনপুরে ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, লাইসেন্স নেয়ার সময় এককালীন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এরপর প্রতি ৩ মাস পর পর ৪৫০ টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট সমিতিকে। অথচ নিবন্ধিত রিকশাগুলোর লাইসেন্স নবায়নের জন্য সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত বার্ষিক ফি মাত্র ১০০ টাকা।
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের তথ্যমতে, ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় গত তিন বছরে আড়াই হাজারের বেশি অবৈধ রিকশা জব্দ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ১ হাজার ৭৮টি, ২০১৫ সালে ১ হাজার ১৫টি এবং ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫০৫টি রিকশা জব্দ করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহায়তায় মদনপুর ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে।
সংগঠনের নেতারা জানান, সিটি করপোরেশন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে রিকশা মালিক সংগঠনের বৈঠকে রাজধানীতে নতুন ৩৫ হাজার রিকশা ও আট হাজার ভ্যানসহ মোট ৪৩ হাজার রিকশা-ভ্যানের নতুন নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে মালিক ফেডারেশন এক হয়ে ঢাকার নিম্ন আদালতে একটি মামলা করেছে যেটি এখনো চলমান।
জাতীয় রিকশা-ভ্যান মালিক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী বলেন, সরকার ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল সেই অনুযায়ী তারা সিটি করপোরেশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সিটি করপোরেশন পরবর্তীতে সেগুলোর নিবন্ধন দেয়নি। পরে একান্ত বাধ্য হয়ে তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে নাম্বার প্লেট দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাত্রাবাড়ী এলাকার এক রিকশা মালিক জানান, প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রতিটি রিকশার জন্য বাংলাদেশ রিকশা মালিক সমিতিকে ৪৫০ টাকা দিতে হয়। আর নতুন রিকশার জন্য ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগে। আবার কেউ কেউ বলছেন এক হাজার টাকাও এসব রিকশার লাইসেন্স পাওয়া যায়। তবে সমিতির নেতারা বলছেন তারা কোনো লাইসেন্স দিচ্ছেন না। তাদের সমিতির রিকশা চিহ্নিত করার জন্য এগুলো সদস্যদের ক্রমিক নাম্বার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের এক নেতা বলেন, ১৯৮৭ সালের পর রাজধানীতে নতুন করে রিকশার কোনো নিবন্ধন দেয়া হয়নি। বারবার সিটি করপোরেশন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। এখনো পর্যন্ত নতুন রিকশা নিবন্ধনের ব্যাপারে তারা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
এদিকে রাজধানীর ভিআইপি সড়কসহ কিছু কিছু এলাকায় রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভিআইপি সড়কেও রিকশা চলাচল করছে। ১২-১৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত নগরীর রিকশারচালক। যে যেভাবে পারছে, প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে নতুন নতুন রিকশা রাস্তায় নামাচ্ছেন।
জানতে চাইলা ডিএমপির ট্রাফিক (দক্ষিণ) বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, অবৈধ রিকশার ব্যাপারে সিটি করপোরেশন চাইলে সবসময়ই সহায়তা করা হয়। আর মোড়ে মোড়ে যানজট সৃষ্টি করলে শুধু রিকশার চাকার হওয়া ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। কারণ এদের বিরুদ্ধে এর চেয়ে বেশি ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া অবৈধ রিকশার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে তাদের নিয়মিত নজরদারি থাকে।
সূত্র
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৩১
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: প্রায় আশি হাজার রিকশার নিবন্ধন থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসহ প্রভাবশালী সমিতির নেতারা প্রকাশ্যে ১০ লক্ষাধিক রিকশার অবৈধ লাইসেন্স বিক্রি করেছেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ইহা বর্তমান জামানায় জায়েজ। কারণ, যারা রিক্সার অবৈধ লাইসেন্স দিচ্ছেন তারাই বর্তমানে দেশের বড় কর্তৃপক্ষ। অফিসের কেরানী-ফেরানিরা হল খোড়পোষে পালিত প্রাণী। তাদের এ্যাকশনে যাওয়া নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ। যারা এ্যাকশনের কথা ভাবেন তাদের তওবাতুন নসুহা পড়া উচিত। নয়ত গুনাহ মাফ হবে না।