নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ইতিহাসকে কখনো পরিবর্তন করা যায় না। কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রমের ১৯৭৪ সালের বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ওপর প্রয়াত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মীর শওকত আলী বীর উত্তম যে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখিছিলেন তা পড়ে আমার তাই মনে হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা এই গোপন প্রতিবেদনের বাংলা দাঁড়ায় -
'সাংগঠনিক ব্যাপারে এই কর্মকর্তার রয়েছে অসাধারণ ক্ষমতা। তিনি অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী এবং বর্তমান পদবি থেকেও বড় দায়িত্ব নেওয়ার সামর্থ্য তার রয়েছে। যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই কর্মকর্তা একদিন সেনাবাহিনীর সম্পদ হতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কার্যত তিনি ছিলেন প্রথম কর্মকর্তা যিনি ঝুঁকি নিয়ে নিজ উদ্যোগে একাত্তরের ২৫/২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপারে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন।'
এ মন্তব্যটি জেনারেল মীর শওকত লিখেছিলেন কর্নেল অলি আহমদের ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে ১৯৭৪ সালের ৮ মার্চ। এ দলিলটি স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত যে বিতর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে তার অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কারণ কর্নেল অলি সবকিছু অবহিত করার আগে জিয়াউর রহমান কোনো কিছুই অবহিত ছিলেন না। তিনি ব্যস্ত ছিলেন তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর খবর তাকে প্রথম কর্নেল অলি জানান।
উল্লেখিত বাৎসরিক প্রতিবেদনের শেষাংশে জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে লিখেছিলেন, 'তিনি (কর্নেল অলি) পরিপূর্ণভাবে অনুগত এবং অত্যন্ত সাহসী একজন অফিসার। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং কর্মোদ্যোগী।' জেনারেল জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় জেড ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক ভূষিত হয়েছেন বীর উত্তম খেতাবে। কর্নেল অলি আহমদ যুদ্ধের সময় জেনারেল জিয়ার অধীনে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।
জেনারেল শওকত ছিলেন অন্যতম সেক্টর কমান্ডার। এ তিনজনের মধ্যে দুজনই প্রয়াত হয়েছেন। এখন শুধু বেঁচে আছেন কর্নেল অলি আহমদ।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের যে ঘটনাপ্রবাহ তার সঠিকতা নিরূপণে এ তিনজনের স্বাক্ষরিত একটি দলিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। উক্ত প্রতিবেদনে জেনারেল শওকত লিখেছেন, ২৫/২৬ মার্চ রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে বলে কর্নেল অলি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন। অর্থাৎ ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাৎসরিক গোপনীয় প্রতিবেদনে ঊর্ধ্বতন অফিসাররা তাদের অধীনস্থ অফিসারদের অসাধারণ ও অনন্য কাজগুলো তুলে ধরেন, যাতে তা দালিলিক প্রমাণ হিসেবে ওই অফিসারের পেশা পরিকল্পনায় সহায়ক হয়।
এ ক্ষেত্রে জেনারেল শওকত কর্নেল অলির বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন, অন্য কিছু নয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান ওই একই প্রতিবেদনের একই পৃষ্ঠায় কর্নেল অলি সম্পর্কে সব ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ওই প্রতিবেদনে জেনারেল জিয়াউর রহমান জেনারেল শওকতেরও ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে তার মন্তব্য লিখেছেন।
সুতরাং জেনারেল শওকত প্রতিবেদনে যা লিখেছেন তাতে যদি কোনো অসত্য কথা থাকত তাহলে জেনারেল জিয়া ঊর্ধ্বতন অফিসার হিসেবে সে ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে নিজের মতামত দিতে পারতেন। বরং জেনারেল জিয়া কর্নেল অলি সম্পর্কে আরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। সুতরাং উপরোক্ত দলিল বলছে যে, জেনারেল জিয়া, জেনারেল শওকত ও কর্নেল অলি- তিনজনে একই সঙ্গে সত্যায়িত করেছেন ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল।
এ জন্য বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের সত্য তার আপন মহিমায় একদিন না একদিন সূর্যের আলোর মতো প্রস্ফুটিত হবেই, তা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। এখানে উল্লেখ্য, জেনারেল জিয়াউর রহমান তার জীবদ্দশায় নিজেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। জেনারেল জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপি '৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বলা শুরু করে যে, ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমানই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার আগে কেউ স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। এখন জেনারেল জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত দলিলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছিল ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে। তবে এ কথা সত্য এবং অনেক দলিলেও আছে যে, ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় জেনারেল জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথমে নিজের নামে এবং পরে তা সংশোধন করে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রচার করেছিলেন। তাই এ নিয়ে নতুন বিতর্কের অবকাশ নেই।
২০০৬ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সমকালে 'অলির বিস্ফোরক সব মন্তব্য' শিরোনামে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সেখানে কর্নেল অলি বিএনপির রাজনীতির অন্যান্য অনেক বিষয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন,
জিয়াকে ডেকে এনে যুদ্ধে নামিয়েছি, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করিয়েছি।
২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পূর্বমুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সে সম্পর্কে অনেক দালিলিক প্রমাণের সঙ্গে উপরোক্ত বাৎসরিক প্রতিবেদনটিও অন্যতম একটি দলিল।
পাকিস্তানি সামরিক অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিক তার লিখিত উইটনেস টু সারেন্ডার বইয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের রেডিওতে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি ধরা পড়ে।
জেনারেল জিয়া, মীর শওকত আলী, কর্নেল অলি এবং পাকিস্তানি অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিকের বক্তব্য এক এবং অভিন্ন। এ চারজনের বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ফুটে উঠেছে।
সুত্র
©somewhere in net ltd.