![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তালুকদার, তালুকদারিত্ব আমাকে করিয়াছে ত্যাক্ত, অবশেষে আমি হারায়েছি বিত্ত, তবুও আমি তালুকদারিত্ব নিয়ে মত্ত.......
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভাই-বেরাদার খ্যাত তরুণ নাট্য-পরিচালক রেদোয়ান রনির সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘চোরাবালি’। রেদোয়ান রনির মেধার পরিচয় আমরা পেয়েছি তাঁর পরিচালনায় নির্মিত বিভিন্ন টিভি নাটকে। তবে চোরাবালিতে ছবিতে তাঁর মেধার এবং অভিজ্ঞতার যে অপূর্ব মিশেল ঘটেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
একটি ছেলে কিভাবে শোষণ-বঞ্চনা এবং সামাজিক-পারিপার্শ্বিকতার নিষ্ঠুর নিষ্পেষণে সিরিয়াল কিলার হয়ে ওঠে তার ঘটনাচিত্র নিয়েই গড়ে ওঠেছে ছবির কাহিনী।
ছবিতে সমাজ-বাস্তবতার কিছু করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে (অন্তত আমার কাছে মনে হয়েছে)। যা দিয়ে মূলত পরিচালক সমাজ-ব্যবসস্থার মূলে নাড়া দিতে চেয়েছেন বা একটি সূক্ষ্ণ আঘাত হানার চেষ্টা করেছেন। এ নিয়ে একটু কথা বলাই আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য।
ছবিতে সুমনের (ছবির নায়ক, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) বিধবা গর্ভবতী মা যেই বাড়িতে কাজ করেন সেই বাড়ির কর্তার কুনজরে পড়েন। তাতে তিনি সাড়া না দেয়ায় কর্তা নাখোশ হন। সুমনের মা গর্ভবতী হবার পরপরই সুমনের বাবা মারা যায়। সেটা আমলে না নিয়ে সেই সমাজের হর্তাকর্তা এবং কপট শ্রেণির সেই লোক তার নামে অবৈধ অভিযোগ আনে। যার ফলে শরীয়তের রায় অনুযায়ী সুমনের মা কে ১০১ টি দোররা মারা হয়। সুমনের মা মারা যায়। সুমন মা মরার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে খুন করে সেই নরপশুকে। সুমন হয় খুনী। পার করে কিলার হওয়ার প্রথম ধাপ।
সুমনের মা কে দোররা মারার চিত্রটিতে চট করে আমাকে মনে করিয়ে দেয় শরীয়তপুরের সেই অভাগী মেয়ে হেনার কথা। যে ধর্ষিত হওয়ার পরেও সমাজপতিদের বিচারে দোররা খেয়ে মারা যায়। এর মাধ্যমে দেখতে পাই, সমাজ-সভ্যতার চরম উতকর্ষতার এই যুগেও আমরা দোররা প্রথার বেড়া থেকে বের হতে পারি নি।
ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র অন্ধকার জগতের রাজা, গডফাদার, রাজনীতিবিদ আলী ওসমান (শহীদুজ্জামান সেলিম)। রাজনৈতিক স্বার্থ-পূরণের জন্য মানুষ যে কতোটা হিংস্র হতে পারে তার এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হচ্ছেন আলী ওসমান। নিজের পথ পরিষ্কার রাখতে খুন করে চলেন একের পর এক। সাংবাদিককে হত্যা করলে হৈচৈ পড়ে যাবে, সুমন (কিলার) একথা মনে করিয়ে দিলে তিনি হো হো করে হেসে ওঠেন। তিনি বলেন খুন হলে প্রথমেই হবে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটিতে থাকবে আমার লোক। তদন্ত কমিটি কাজ করবে দিনের পর দিন। এরপর রিপোর্ট হয়তো হবেই না, অথবা হলেও আমার পক্ষেই যাবে সিদ্ধান্ত, অথবা সময়ের পরিক্রমায় ভুলে যাবে সবাই আসল ঘটনা।
এই ডায়ালগের দ্বারা আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি পরিহাস করা হয়েছে। আমাদের দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই তার জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়। যেন ঘটনা ঘটেই তদন্ত কমিটি করার জন্য। দিনের পর দিন চলতে থাকে তদন্ত কমিটির তদন্ত। এক ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট বের হতে হতে ঘটে যায় নতুন কোনো ঘটনা। সেই ঘটনার জন্য আবার তদন্ত কমিটি করা হয়। মিডিয়াগুলোও নতুন ঘটনা নিয়ে মেতে উঠে। ফাইলের ওপর ফাইলের চাপে চাপা পড়ে যায় পূর্বের ঘটনা। এভাবেই পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। ফলে অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে নতুন নতুন অপরাধ করে ঘুরে বেরায় এবং বিচারপ্রার্থিরা প্রাণ যাওয়ার হুমকিতে প্রহর কাটায়।
প্রত্যেকটি বড় ধরনের অপরাধ ঘটে থাকে পুলিশের সামনে। অধিকাংশই পুলিশের প্রত্যক্ষ যোগসাজসে। তাই নাহিদের (হিল্লোল) মতো পুলিশ অফিসারেরা অপরাধীদের অ্যারেস্ট করে এনেও বড় স্যারের ফোনে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এক সময় ভাল অফিসারগুলাও অন্যায়ের সাথে তাল মেলায়। ঘটে বিভিন্ন ধরনের অনাকাংক্ষিত ঘটনা। কলংকিত হয় পুলিশ এবং তাদের ওপর আস্থা হারিয়ে সংকটে ভোগে জনগন।
কেউ অপরাধী/সন্ত্রাসী হয়ে জন্মায় না। প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি তাকে অপরাধী বানায়, সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে তোলে। তাই প্রত্যেক অপরাধীর মনেই সুপ্ত সুন্দর বৃত্তি থাকে, অপরাধের জন্য সুক্ষ্ণ অনুশোচনাবোধ থাকে। যা কারও বিশেষ কোনো মুহূর্তে বিকশিত হয় কারও বা সারাজীবন সুপ্তই থেকে যায়। কিন্তু দলবদ্ধ-সাঙ্গগঠনিক অপরাধের জগতে একবার ঢুকে গেলে সেখান থেকে বের হওয়ার প্রায় সকল পথ বন্ধ হয়ে যায়। বের হতে গেলে প্রাণ যায় অথবা দিতে হয় চরম মূল্য। এ যেন ঠিক চোরাবালির চরে আটকে যাওয়ার মতো। একা সেখান থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। বের হতে গেলে কারও সাহায্য পেতে হয়। তবে সাহায্য করার জন্য সেই পরিস্থিতে কাওকে পাওয়ার সৌভাগ্য ক’জনের হয়! তবে ছবিতে সুমন পায়, নবন্তীকে (জয়া)। আর তাতেই কিলার সুমন হয়ে ওঠে একজন সুন্দর মনের সুমন।
ছবিটির প্রধান চরিত্র তিনটি। আলী ওসমান (শহীদুজ্জামান সেলিম), কিলার/নায়ক সুমন (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত), এবং সাংবাদিক নবন্তী (জয়া)। ইন্দ্রনীলের অভিনয় ভালোই হয়েছে তবে কিছু যায়গায় মনে হয় আরেকটু সিরিয়াসনেস দরকার ছিল। জয়া আহসান এর কথা নতুন কিছু বলার নেই। প্রতিনিয়তই নিজেই নিজেকে নতুন নতুন উচ্চতায় তুলে চলেছেন। জয়ার জন্মই যেন জয়ের জন্য। শহীদুজ্জামান সেলিমের এটাই প্রথম প্রধান-খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করা ছবি। তিনি তার অভিনয় দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছেন। তিনি শতভাগ সফল। তবে এই চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল প্রয়াত হুমায়ুন ফরিদীর। তিনি থাকলে হয়তো আমরা তাঁর ভুবনভোলানো শৈল্পিক খল-নায়কোচিত হাসি উপভোগ করতে পারতাম।
সর্বোপরি চোরাবালি ছবিটির কাহিনী, সংলাপ এবং ডিজিটাল উপস্থাপনার জন্য এটি বাংলা সিনেমার উত্তর-আধুনিক যুগের পথ-পথিকৃত হয়ে থাকবে। বাংলা সিনেমার যে নতুন যুগ শুরু হয়েছে তা এইসব মেধাবী তরুণ পরিচালকের হাত ধরে অনেকদূর এগিয়ে যাবে এবং বাংলা সিনেমার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে এই প্রত্যাশা করছি।
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
সেয়ানা বলেছেন: চমৎকার রিভিউ। অনেক ধন্যবাদ
৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
সাদরিল বলেছেন: ভালোই হইসে, কিন্তু আমার মনে হয় সমাজ বাস্তবতা তুলে ধরার চেয়ে বিনোদন দেয়াতেই সিনেমাতে বেশি জোর দেয়া হয়েছিলো।
৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৬
মাসু২০০৯ বলেছেন: দারুন একটা মুভি। কিন্তু সিলেটের নন্দিতা হলে এমন বাজে ভাবে দেখাচ্ছে । ডিজিটাল মুভি তা কে আগের বাংলা মুভি গুলার মত
৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৩
শয়ন কুমার বলেছেন: অসাধারণ লাগছে একটা ডায়ালগ,
"আমি নেতা হলে, পানির সমস্যা থাকবে না ,গ্যাসের সমস্যা থাকবে না ,বিদ্যুতের সমস্যা থাকবে না ,কোন সমস্যাই থাকবে না, মশার সমস্যা থাকবে না ,
.
.
.
.
.
.আমার বাসায় !!!!!!!! "
আমি ভাবছিলাম পাবলিকের কথা কইবো , কিন্তু নেতা হবার খায়েশকারী খল নায়ক কইলো নেতা হইয়া নিজের বাসার সমস্যা সমাধানের আকাঙ্খার কথা । তখনি বুঝলাম এটা আসলেই অন্যরকম চিত্রনাট্য
৬| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭
হুমায়ূন লিটন বলেছেন: ছায়াছবিটা এখনো দেখা হয়নি। রিভিউ পড়ে তো দেখার ইচ্ছা জেগে উঠলো! যাইহোক সুন্দর রিভিউ হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৭
হারকিউলিস রিটার্নড বলেছেন: দারূন মুভি