নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু উবায়দাহ তামিম এর লেখালেখি। সে যে গল্পকার।

তামিম উবায়দা

তামিম উবায়দা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেই সে কোথাও, হারিয়ে গেছে।

২১ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৫:২৯



|| নেই কোথাও, সে হারিয়ে গেছে ||


মেয়েটির নাম দেয়া যায় সুপ্তি, এই নামে ওকে কেউ চেনে না। এটা শুধুমাত্র ও আর আমি জানি। ডাকনাম এখানে লিখলে অহেতুক ঝামেলা পোহানোর সম্ভাবনা আছে। তাই লিখলাম না, সবাই বুঝে ফেলার চেষ্টা করবে এবং অযথা প্রশ্ন করবে। সো থাকুক না ওসব!

তো সুপ্তির কথা শুরু করি, ওর বিয়ে হয়ে গেছে প্রায় বছরখানেক আগে। এখনো ছেলে পেলের মা হতে পারেনি, মেবি চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেহেতু তার হাজব্যান্ট ইনজিনিয়ার, সুপ্তিরও দরকার তার কাছাকাছি পৌঁছানো। তাই দুর্দান্ত পড়ালেখাও করে যাচ্ছে। যদিও সে কলা বিভাগের ছাত্রী। সুপ্তি একটা মেয়ে, পড়ালেখা করবে, বিয়ে হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবু ওর কথা কেনো এমনভাবে জার্নালে তুলে ধরছি? অন্য কোন মেয়ের কথাও তো বলতে পারতাম। নাহ্। সোজাসাপ্টা বলে ফেলি- সুপ্তির সাথে ছিল আমার দারুণ, এবং রঙিন এক বন্ধুত্ব। সেকারণেই তার কথা বলছি। আমি ওকে খুব পছন্দ করতাম। ও আমাকে পছন্দ করতো কিনা জানিনা। তবে সবসময়ই আমার সাথে সাথে ঘুরতো, আর এর মানেই আমি বুঝে নিতাম ও আমাকে পছন্দ করে। তখন আমার বয়সটা ভালোবাসার মতো বয়স ছিল না বলেই কখনো 'ভালোবাসি' বলতে সাহস পাইনি। তবে বর্তমানে সাহস পাই কিন্তু। হা হা হা।

একদিন সাহস করে সত্যি সত্যিই একটা চিরকুটে লিখে দিলাম, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? তারপর চিরকুটটি ওর হাতে ধরিয়ে বললাম এটা পড়ো। ও মুখ বুজে চুপচাপ পড়ে আমার দিকে চোখ মোটা করে তাকিয়ে বলল, আমি নানুকে জানিয়ে দেবো কিন্তু। আমি বিরাট ভয় পেয়ে গেলাম। সে কি! এটা যদি জানাজানি হয়ে যায়, তখন লজ্জা ঢাকবো কোথায়? তারপর থেকে সুপ্তি পুরো একদিন আমার থেকে সিপারেট সিপারেট থাকল। আর এদিকে আমি বুকের ভেতরে ভয় জমিয়ে সকাল দুপুর বিকাল রাত করে কাটাতে লাগলাম। পরদিন থেকে দেখি ও আমার সাথে আবারো স্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করছে, বোধহয় গতদিনের কথা ভুলে গেছে। আমিও আর সাহস করে ওসব কথা বাড়াইনি বা জড়াইনি। তারপর একদিন ঘটে গেল মাথাকাঁটা যাওয়ার মতো ঘটনা।

আমাদের বাড়ির দোতালার ঘরটি নতুন করেছে, রং চুন টানা শেষ। তখনো কেউ থাকা শুরু করেনি সেখানে। শুধু একটা খাট আর তার উপরে চাদর পেতে রাখা হয়েছে। আমরা ক'জন ওখানে লাফালাফি করে বেড়াচ্ছি, সেখানে আছে আমার ছোট দু'ভাই, আমি এবং সুপ্তি। অনেক্ষণ লাফালাফি ছুটোছুটি করতে করতে আমি ঘরের ভেতরে শুয়ে আছি ক্লান্ত হয়ে, আর সুপ্তি আমার ভাই দুটোর সাথে দুষ্টুমি করতে করতে একপর্যায়ে ওদেরকে বাইরে রেখে ও ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে ফেলেছে। আর ওরা দরজায় বিকট শব্দ করে করে ধাক্কালেও সুপ্তি দরজা খুলছে না। আমি খাট থেকে নেমে বললাম, সুপ্তি, দরজা খুলে দাও। আম্মু দরজায় এতো ধাক্কাধাক্কি শুনলে রাগ করবে। সুপ্তি আমার কোন কথা না শুনে সেভাবেই দরজার ছিটকানি ধরে দাড়িয়ে থাকলো।

এরপরে আরো দু'তিন ধাক্বা মারার সাথে সাথে নিচতলা ছোটআপু উঠে আসলো। এসে তো দরজায় ধাক্কাধাক্কি করার জন্য বকাবকি শুরু করে দিল। তখন আমি আর সুপ্তি ঘরের ভেতরে, আমি সুপ্তিকে হাতজোড় করে বললাম, খোলো খোলো, আমার অবস্থা কিন্তু টাইট হয়ে যাবে। হঠাত দেখি আপুর বকবকানি বন্ধ, এবার দরজায় এসে বলল, উবায়দাহ, এক থেকে তিন পর্যন্ত গুণবো। এর ভেতরে দরজা খুলবি। এতটুকুন বলার মধ্যে সুপ্তি দরজা খুলে আপুর সামনে দাড়ালো। আর আমি কাঁপা বুকে খাটের পরে বসে থাকলাম। আপু খানেকটা সময় সুপ্তির দিকে চোখমোটা করে তাকিয়ে থেকে বলল,কী করছিলা দরজা আটকায়ে? সুপ্তি হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। ও যেন আপুর চেহারার ভাষা কিছুই বুঝতে পারছেনা। আমার মুখ থেকে কেমন যেন বেরিয়ে যাচ্ছিল, আপু তুমি যা ভাবছো তা-না। কিন্তু সাহসে কুলাল না। আপু আমার কাছে এসে রাগের নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আর তোমার খবর আসে, আব্বা আসুক।

সুপ্তি সেদিন বিকালে ওদের বাড়ি চলে গেলো, আর রাতে পুরো বাড়ি থমথমে হয়ে আসলো। আব্বু আমাকে ডেকে বলল, দরজা আটকাইলি ক্যান? আর তাও এট্টা মেয়ে নিয়ে...তুই জানিস, কত বড় অপরাধ তুই করিছিস। সেই রাতে একরাশ দুঃখ নিয়ে ঘুমাতে হয়েছিল আমার। তারপর বেশ কিছুদিন আমি অপরাধীর মতো ঘুরে বেড়ালাম।

এর ঠিক চার পাঁচ মাস পরে, একদিন বাজার থেকে বাড়ি ফিরে দেখি সুপ্তি আমাদের বাড়িতে এসেছে। মনে মনে ভালো লাগলেও ওর সাথে আমি কথা বলছিলাম না। ওর হয়ত পূর্বের সেসব কথা কিছু মনে নেই, মানে সেসব নিয়ে আমাদের বাড়িতে এতকিছু হবে, ওর ধারণায়তে আসেনি। দুপুরে আমি আমার ঘরে বসে ভাত খাচ্ছি। তখন ও একা একা এসেছে। আমি ওর দিকে চেয়ে আছি। ওর হাসি হাসি মুখ, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও আমাকে চমকিয়ে একটা চোখ টিপ মেরে চলে গেল। আমি তো গালে ভাত নিয়ো হা হয়েই বসে রইলাম। তখন কেমন যেন মনে হল আমি একটা মেয়ে, আর একটি লম্পট ছেলে আমাকে ইভটিজিং করে চলে গেল।


(একটি জার্নাল |)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:০১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আমি তো গালে ভাত নিয়ো হা হয়েই বসে রইলাম। তখন কেমন যেন মনে হল আমি একটা মেয়ে, আর একটি লম্পট ছেলে আমাকে ইভটিজিং করে চলে গেল। X(
ধন্যবাদ সুন্দর একটি ছোট্ট গল্প উপহার দেয়ার জন্য । তবে ভাল বাংলা শব্দ থাকতে লিখাতে ইংরেজীশব্দ প্রয়োগ না করলে লিখার মান অনেক বৃদ্ধি পায় । লিখার হাত ভাল লিখে যান ।
শুভ কামনা থাকল ।

২| ২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৭:২২

বিজন রয় বলেছেন: ছোট্ট, সুন্দর, আটোসাঁটো অনুভূতি।
++++

৩| ২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৮:০০

জ্ঞানহীন মহাপুরুষ বলেছেন: এমনটাই হয়।পছন্দের মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সবার ভাগ্যে সেটা থাকে না।

৪| ২৩ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭

তামিম উবায়দা বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। #এম এ আলী ভাই

৫| ২৩ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮

তামিম উবায়দা বলেছেন: বিজয় রয় ভাইয়াকেও ধন্যবাদ।

৬| ২৩ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:০০

তামিম উবায়দা বলেছেন: জ্ঞানহীন মহাপুরুষ নামের আইডি তো ফ্রেণ্ডলিস্টে আছে। ধন্যবাদ আপনাকেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.