![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়াশুনা কিম্বা অন্যকারণে এদিক সেদিক থাকা বন্ধুরা একত্র হলেই প্রথম কাজটা হতো কারো গ্রামের বাড়ি হামলা দেয়া । সবচে কাছে কুশলের বাড়ি । বাড়িতে নারকেল গাছ লিচু গাছ আম গাছ বড়ই গাছ । ওর বাসায় গেলে ওর মা আমাদের খুব আদর যত্ন করতেন । কবুতরের মাংসের ঝোলের সাথে বড়সড় মুরগীর ডিমভাজা । সব মিলিয়ে বছরে মিনিমাম দু বার হামলা দেয়া । কুশলের মা , খালামনি এই হামলার দাওয়াত শহরে এলেই দিয়ে যেতেন ।
সেই বার বছরের এমন সময়ের এক দুপুরে কুশলদের বাড়ি যাওয়া ঠিক করলো পাভেল । ঠিক করলো বলতে , আমরা দু একজন রাজি ছিলাম না । ওদের গ্রামে সকাল গিয়ে বিকেল থাকতেই বেরিয়ে আসা উত্তম মনে করতাম । বিকেলে ফিরতে গেলেই যানবাহন পাওয়া কঠিন হয়ে যেত । না পেলে মেইন রোড অব্দি হাটতে হতো , মাইল তিনেকের মতো । এবারে তেমন হলো ।
গ্রামের পথ দিয়ে হাটতে শুরু করেছি , মাইল তিনেকের মাটির পথে । চারিদিকে শেষ বিকেল ।
পাচ বন্ধু দু ভাগে হাটছি । সামনে দুই বন্ধু অনেকটা এগিয়ে । আমার দলের এক বন্ধু , মেহেদি হাতের কনে আঙ্গুলের ইশারায় জানালো তার প্রসাব পেয়েছে ।
সাথে আয় ' পথের পাশে জঙ্গলময় এক বাগানের দিকে ইশারা করে বললো ।
আমরা এখানে দাড়ায় আছি, ভয় নেই ' পশ্চিম দিক হয়ে মুতিস না ' দাড়ায় করিস না ' সন্ধায় তোর লাগলো ' ভুতে ধরবেনি'। আমাদের ফাইজলামি কানে তোলেনা সে । বাগানের দিকে যাওয়া চিকন এক রাস্তা দিয়ে হারিয়ে গেল মেহেদী । একটু পড়েই বেশ হরমরিয়ে ছুটে আসে সামনের দলে থাকা কুশল ।
মেহেদী ভাই কই গেল ?
মুততে'
হায় হায় ওদিক তো কবরস্থান'। মেহেদী ফিরে আসে একটু পর । তার কাজ শেষ। আমাদের কিছুটা অপ্রস্তুত থেকে ভীত হয়ে যাওয়া চোখ দ্যাখে । কুশল বিড়বিড় করে ...কাজটা ঠিক হলো না' !
এইসব নিয়ে ভাবনাটাকে একটু দুরে রাখার চেষ্টা করি। গ্রামের রাস্তায় সন্ধাবেলা এমনিতেই ভয় লাগছে তখন । শেষ গ্রামটা ফেলে এসেছি অনেকক্ষণ আগেই । মেইন রোডে , হাইওয়েতে উঠতে এখন প্রায় মাইল দেড়েক । পা ব্যথা করছে । একটা ভ্যানকে আসতে দেখে থামি । চালককে অনেক বুঝিয়ে রাজি করলাম হাইওয়ে পর্যন্ত আমাদের পৌছে দিতে । ভ্যানে উঠে শরীর একটু এলিয়ে দিলাম । ঠান্ডা বাতাস , ভ্যান ছুটছে ।
আমার সাথে জ্বীন আছে ''
এক ঝটকায় ঝিমুনি কেটে গেল । দোস্ত মেহেদী ভ্যানের উপরে উঠে দাড়িয়েছে । চিত্কার করছে ।
আমার সাথে জ্বীন আছে' । হাত পশ্চিম আকাশের দিকে বাড়ানো । চোখ লাল । আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ''ওই যে জ্বীন , তানিম ওই যে জ্বীন । আমাকে নিয়ে যাবে । '' আবার ধপ করে বসে পরে । আমার হাত চেপে ধরে বলে উঠলো 'আমার সাথে জ্বীন আছে বন্ধু । আমায় চেপে ধরা হাত চেপে ধরে বলি 'বন্ধু তোমার সাথে পরী থাকবে,জ্বীন না ,আর ফাইজলামি কম করো , ভ্যানওয়ালা ভয় পেলে হেটে মেইনরোড যাওয়া লাগবে'। বন্ধু এক ঝটকায় আমার হাত ছাড়িয়ে ভ্যান থেকে লাফিয়ে পরে । রাস্তার উপর দাড়িয়ে পরে 'আমার কাছে জীন আছে' । ভ্যান থামিয়ে ওকে ধরি । পানি খাবো পানি খাবো তিষ্ণা লাগছে বলে রাস্তার পাশের ধান ক্ষেতে লাফিয়ে পড়ল । ক্ষেতে সেচ দেয়া পানি তুলে খাওয়া শুরু করলো। রাস্তায় হতভম্ব হয়ে আমরা চার বন্ধু দাড়িয়ে। ভ্যানওয়ালা ভয় পেয়ে ভ্যান নিয়ে ছুট দিয়েছে ।
যিনি এই লেখাটা পড়ছেন তিনি রাস্তায় থাকলে আর পড়বেন না ।
অনেক কষ্টে মেহেদীকে নিয়ে মেইন রোডে এসে দাড়িয়েছি । সন্ধা পেরিয়েছে তখন । মনের মধ্যে সাহস আরো কমে যাবার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে । একটা ফাকা টেম্পু পেয়ে সব দোস্তরা মিলে মেহেদীকে মাঝে নিয়ে উঠে বসলাম । ড্রাইভার আমাদের বয়সী । মেহেদির চোখ দেখে বললো 'ভায়ে কিছু খাইছে নাকি ? । হ্যা ভাই ...আপনে একটু দ্রুত চলেন ।'' হে হে করে একটা হাসি দিয়ে টেম্পু চালু করে সে ।
ওই যে আসতেছে । আমাদের সবাইরে নিয়ে যাবে । আজরাইল আসে । '' মেহেদী হাত বাড়িয়ে আঙ্গুল দিয়ে সোজা সামনের দিকে দেখায় । একটা ট্রাক আসছে । পিছনে আরেকটি বাস কিম্বা ট্রাক । অন্ধকার ভেদ করে তাদের আধ হলদে আলো আমাদের চোখে মুখে । তীব্র আলোতে আমার ভেতরের সব সাহস ধুপ করে নিভে যায় । টেম্পু ড্রাইভার হাউমাউ করে পেছন ফেরে আমাদের দিকে । ভায়ে এগুলা কি কয় '' তোমার এগুলায় কান দেয়ার দরকার নাই , তুমি রাস্তার সাইড দিয়ে চালায় নিয়ে যাও ।'
আমার সাথে জ্বীন আছে । জ্বীন বলছে '' কি বলছে 'আমি বলি । আমাদের পিসে দিবে গাড়ি , এক্সিডেন্ট হবে ,তোরা আমারে নামায় দে '' বন্ধুর হাত দুই পাশ থেকে ধরে রেখে দেই আমরা । মুখে হাত দিই । বন্ধু সুযোগ পেলেই বলে ওঠে '' ঐযে আরো একটা গাড়ি আসতেছে , আমরা সবাই মরবো , আমার সাথে জ্বীন আছে ...'' । এক একটা বাস ট্রাক হুশ করে পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় , আমাদের ভিতর থেকে শিওরে ওঠে । এই বুঝি মেরে দিয়ে গেলো। দুরের আরেকটা গাড়ীর আলোর দিকে তাকিয়ে দেখেই চোখ বুজে ফেলি, তাতে কি ? শব্দ তো কানে আসছে , দানবীয় খুনে শব্দ !
সেই রাতে আমার জ্বর হয়েছিল । এরকম ভয় জীবনে পাই নাই । টেম্পুতে সেই আধা ঘন্টা কেপেছি শুধু । সেই কাপুনিতেই হয়তো জ্বর হয়েছিল !
বন্ধুর সাথে কি হয়েছিল ? আমাদের এলাকায় আসার পর একটু একটু কমতে থাকে ওর কথাবাত্রা । ওর বাসায় পৌছানোর পর ওর বাবা মাকে সব বললাম । মেহেদির চোখ তখনও লাল । কিন্তু চুপচাপ। ওর বাবা বললেন ওকে গোছল করিয়ে দিতে। গোছল করানোর পর এক গ্লাস পানি চাইল শান্ত ভাবে । খেয়ে নিজের বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল । দিন দুয়েক পর জানতে পারলাম সেদিন ভ্যানে ওঠার পর থেকে তার কিছুই মনে নেই । ভ্যানে উঠে তার ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো , জেগে দেখে সে বাসায় , পরদিন ঘুম ভাঙ্গে বাসায় তার বিছানায় ।
এরপর আর এখনও কুশলদের বাড়ি , গ্রামের বাড়ি খোট্টাপাড়ায় যাওয়া হয়নি ।
০৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৫৮
তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: ভয়টা পেয়েছিলাম টেম্পুতে ওঠার পর । জার্নির সময়ে দুর্ঘটনার কথা বলছিল বার বার ।
ধন্যবাদ রাজীব ভাইয়া ।
২| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:১১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ভয় পাওয়ারই কথা। জ্বীনের আছর। যাক ভালয় ভালয় ফিরেছেন সবাই।+++
০৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:০৭
তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: বন্ধুর কি হয়েছিল এটা রহস্য হয়ে থাকলেও ওর কার্যকলাপে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। ওর ঠান্ডা হাত দ্রুত ঘন ঘন নিশ্বাস নেয়া জোরে জোরে কালিমা পড়া লাল চোখ !
সেই ঘটনার পর বন্ধুদের মধ্যেও একটা দুরত্ব তৈরী হয়ে গ্যালো , বন্ধু আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে জানাজানি হলো । এমনকি হুজুর পানিপড়া তাবিজের ঘটনাও হয়েছিল ।
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:১৮
জুল ভার্ন বলেছেন: আমি জ্বীন-পরির বহু গল্প শুনেছি কিন্তু দেখিনি। লেখায় প্লাস।
০৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:২৫
তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: সেদিন প্রথম প্রথম বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেখানো উপরে পশ্চিম দিকে তাকিয়ে আমিও সম্ভবতঃ তেমন কিছু দেখার চেষ্টা করছিলাম । আর বন্ধুর তো মনেই নেই ।
ধন্যবাদ জুলভার্ন ভাইয়া ।
৪| ২২ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১০:৪৮
জটিল ভাই বলেছেন:
ফাবিআইয়্যিআলাইরাব্বিকুমাতুকাজ্জিকান?
আল্লাহ্ সবাইকে রহমত করুন।
২৩ শে মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৫৮
তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: আমিন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: এত ভয় কেন পেলেন বুঝতে পারছি না।