![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত যাওয়া হয়নি নানা বাড়ি। বগুড়া থেকে অনেক দূর, যেতে সময় লেগে যায় আট নয় ঘন্টা, এটা বড় কারণ নয়। মন টানেনা। অথচ একটা সময় খুব যেতাম। মন টানতো। বেশ কজন মামা আর খালা নিয়ে ছিলো আমার নানাবাড়ি। অনেকখানি এলাকাজুড়ে আম গাছ, পুরনো কিছু জাম গাছ, সীমানায় নারকেল গাছ। দুইটা মিষ্টি পানির পুকুর, হাফ মাইল দুরে জোয়ার ভাটার নদী। ছুটির দিন শুরু হলেই রকেট নামক আন্তনগর ট্রেনে ভ্রমন, জমজমাট ছিলো সেই দিনগুলি।
সেবার স্কুল ছুটির পরপর নানাবাড়ি গিয়েছি। নানির ঘরে আমার ঘুমানোর বন্দোবস্ত। প্রতিবছর এই ঘরটা যেভাবে দেখে রেখে যেতাম ঠিক সেভাবেই পেতাম। নানুর ঘর পরিস্কার পরিছন্ন থাকতো সবসময়, ঘরের আসবাবে পরিবর্তন আসতনা। সেইবার দেখি বেশ পরিবর্তন। ঘরের শো-কেস দক্ষিন দেয়াল থেকে উত্তরে গিয়েছে, বিছানার চারকোণে মশারি টাঙ্গানোর স্ট্যান্ড উধাও। নতুন ভাবে একটা লম্বা আয়না সহ ড্রেসিং টেবিল যুক্ত হয়েছে। নানুর দেখাশোনার জন্য নতুন একজন মানুষ।
কাজল খালা।
সারাদিন ট্রেন জার্নি করে আমি তখন ঘুমানোর কথা ভাবছি, অচেনা এক মানুষ ঘরে এসে বললেন আগে খাওয়া তারপর ঘুম। আমি একটু অবাক হয়ে মানুষটাকে দেখছি। কাজল খালা বললেন ' তুমি আমাকে চিনবে না ভাগ্নে, আমি তোমার আম্মুর দুরের ফুফাতো বোন '। অচেনা, দুরের মানুষটি থেকে খুব চেনা, ঘরে বানানো খাটি নারকেল তেলের একটা সুগন্ধ ভেসে আসছে, নানাবাড়ি থেকে প্রতি বছরে আসা তেল আম্মু বড় বোন ব্যবহার করতেন। পরিচিত সুবাস। কাজল খালাকে আপন ভাবতে এক মুহূর্ত দেরী করেনি মন।
খালার নাম দিয়ে দিলাম কাজলা দিদি।
যতীন্দ্র মোহন বাগচীর 'কাজলা দিদি' আমার খুব পছন্দের কবিতা। কাজল খালা আমাকে শোলক শোনাতেন। ঘুম পাড়ানোর জন্য গল্প শোনাতেন। ঘুমানোর সময় 'কাজলা দিদি' শোনাতেন। স্কুল পড়ুয়া আমার অদ্ভুত লাগতো। রাতে অনেক শান্তির ঘুম হতো। শীল পাটায় মশলা বাটা শেষে সেটায় ভাত দিয়ে মজার এক মশলা ভাত মাখা তৈরী করে আমাকে খেতে দিতেন। ডাবের পানিতে মুড়ি ভিজিয়ে আনতেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার তিনমাস ছুটিতে দ্বিতীয় মার আদর যত্ন ভালবাসা পেয়েছিলাম। কাজল খালা কতো সুন্দর করে, উদাসী কন্ঠে একদিন 'কাজলা দিদি' শোনালেন। ' কাজলা দিদি ' কবিতার সেই কাজলা দিদির জন্য শুন্যতা পূর্ণ করে দিল কাজল খালা।
আমার সেই কাজলা দিদি আত্মহত্যা করলেন।
সেবার ছুটি শেষে বাড়ি এসে কলেজে ভর্তি হয়েছি। একদিন সংবাদটা পেলাম। সংবাদ পাওয়ার পর প্রচুর কেদেছিলাম। বাসা থেকে কেউ নানাবাড়ি গেলেন না, শেষ বারের মতো কাজলা দিদি কে দেখা হলো না। একটা শুন্যতা শুরু হয়েছিল, কিন্তু কাউকে জিজ্ঞাসা করিনি কোথায় গেলেন আমার কাজল খালা। সময়ের সাথে সাথে ঘটনাটা চাপা পরে গিয়েছিল। নানাবাড়ি, আমার বাড়ির কেউ খালাকে নিয়ে আলোচনা করত না। নানাবাড়ি গেলে ছাদের উপর থেকে কাজল খালার গোলপাতার বাড়িটা দেখতাম। নানাবাড়ির উপর থেকে মন উঠে যাওয়া শুরু হয়েছিল তখন থেকেই।
সেখানে কদিন আগে ঝামেলা শুরু হলো, সম্পত্তি ভাগাভাগি সম্পর্কিত। মৃদু তর্ক বিতর্ক চলল মামা মামী খালাদের মধ্যে। আমি আমার আম্মু সহ নানাবাড়ি গেলাম। একদিন তুমুল তর্কাতর্কি চলছে, তুই অতীতে কি করেছিলি, বাবা মায়ের আদর যত্ন ভালবাসা কে বেশি দেখিয়েছেন তা নিয়ে কথায় কথায় কাটাকাটি চলছে। বড়খালা ছোটমামার উদ্দেশ্যে বললেন
তুই কি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা ?
কি করছি বড় আপা ?
কাজল যে গলায় দড়ি দিল, কি জন্য দিল কার জন্য দিল জানি না আমি, সবাই ভুলে গেছে মনে করিস !
ঝগড়া আচমকা থমকে গেল। ছোট মামার মুখ থমথমে। বড় খালাও চুপসে গেলেন যেন। একটা চিরগোপন সত্য খানিক সময়ের জন্য সকল ঝুট ঝামেলায় ইতি টেনেছিল কি?
সে রাতের ট্রেনেই বাড়ি ফিরছিলাম । অনেক অনেকবার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে হয়েছিল
' মাগো আমার শোলক্-বলা কাজলা দিদি কই? '
২| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ ভোর ৪:২৫
অধীতি বলেছেন: কাজলা দিদিরা এভাবেই হারিয়ে যায় একরাশ মোহ রেখে।
৩| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ ভোর ৬:২৮
নেওয়াজ আলি বলেছেন: নিরবে কাজলা দিদিরা চলে যায় আর অন্যরা নিরবেই ভুলে যায়
৪| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:০৫
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: তাহলে আপনার মামা ই মূল হোতা কাজলা দিদির আত্মহত্যার পিছনে। আহারে!
৫| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:০৯
ফারহানা শারমিন বলেছেন: কাজল খালার মায়ায় জড়িয়ে গেলাম। চমৎকার লিখেন!
৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: বিষাদের গল্প পড়ে বিষাদগ্রস্থ্য হয়ে গিয়েছি!
৭| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:৫৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: লিখা ভালো হয়েছে। রহস্য রেখে দিয়েছেন, এটাই মূল আকর্ষণ।
৮| ২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ৯:০৬
জটিল ভাই বলেছেন:
মনে হচ্ছে যেনো যতীন্দ্র মোহন বাগচীর লিখা গল্প। একদমই সাধারণ নয়!
৯| ২১ শে জুন, ২০২২ রাত ১০:৪৫
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: গল্পটা না পড়লেই মনে হয় ভালো করতাম। শুধু গল্প হলে উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু গল্প না হয়ে সত্যি ঘটনা বলেই এর শেষ মন খারাপ করে দেয়।
১০| ২১ শে জুন, ২০২২ রাত ১১:৪০
মনিরা সুলতানা বলেছেন: মন খারাপের গল্প !
এমন কত কাজল হারিয়ে যায়, যাদের নাম কারো মুখে উচ্চারিত হয় না অথচ হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়।
১১| ২২ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:০১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: 'কাজলা দিদি' কবিতাটা পড়ে জন্মের কান্না কেঁদেছিলাম। এখনও মন খারাপ হয়ে যায়। এই লেখার 'কাজলা দিদি'র জন্যও কষ্ট লাগল। আহারে!
১২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:৫৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: হৃদয়স্পর্শী গল্প! (তথা সত্য ঘটনা
এবারে আমার নানাবাড়ির একটা ছোট্ট গল্প বলি। সেটা ছিল লালমনিরহাট জেলার হাড়িভাঙ্গা গ্রামে। আমি তখন হয়তো বড়জোর পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর আমরা প্রতিবছর নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি বেড়াতে যেতাম। দুটোই ছিল দশ-বার কি.মি. এর মধ্যে। সেবার একই সময়ে আমার মেজ খালাও নানাবাড়ি এসেছিলেন। আমার চেয়ে দেড় বছরের ছোট এক খালাতো ভাই ছিল, তার চেয়েও দেড় বছরের ছোট এক খালাতো বোন ছিল, যার নাম ছিল রানী। অর্থাৎ রানী আমার চেয়ে বছর তিনেকের ছোট ছিল। সেবারে আমরা খুব আনন্দে নানাবাড়িতে কাটিয়েছিলাম। সারাদিন ধরে নানা ধরনের খেলা খেলতাম, গাছের বড়ই পেড়ে খেতাম। পাখির বাসা খুঁজতাম, চড়ুইভাতি খেলতাম। একটা পেয়ারা গাছ ছিল যেটার ডালপালা এমনই সুবিন্যস্ত ছিল যাতে আমরা সহজেই গাছে চড়ে তিনজন তিনটা ডালে বসে পেয়ারা চিবাতাম আর নানা রকমের গল্প করতাম। 'কাজলা দিদি' কবিতাটা আমাদের তিনজনেরই মুখস্থ ছিল। আমরা সুর করে কবিতাটি আওড়াতাম (আবৃত্তি করতাম বললে ভুল হবে)। সেটা আজ থেকে প্রায় পঞ্চান্ন বছর আগের কথা।
স্কুল খোলার সময় হয়ে যাওয়াতে আমাদের সুখের দিনগুলো খুব দ্রুত পার হয়ে গেল। আমরা ঢাকায় ফিরে এলাম, রানীরা খালুর কর্মস্থল কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারিতে চলে গেল। এর কয়েকমাস পরে নানার চিঠিতে এক ভয়ানক দুঃসংবাদ পেলাম। তখন তো ঢাকা থেকে মফস্বল এলাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি অথবা বড় জোর টেলিগ্রাম। চিঠিতে নানা জানিয়েছিলেন যে রানী হঠাৎ করে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমরা যখন চিঠিটি পেয়েছিলাম, ততদিনে মারা যাওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এই দুঃসংবাদটি আমার বালক মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। আজও মনে পড়ে সেদিন আমি খুব কেঁদেছিলাম। বেশি করে কেঁদেছিলাম নানার চিঠির ঐ অংশটুকু পড়ে, যেখানে তিনি লিখেছিলেন যে মৃত্যুশয্যায় রানী কয়েকদিন ধরে অনবরত, এমনকি ঘুমের মধ্যেও 'কাজলা দিদি' কবিতাটি আওড়াতো। এমনিতেই 'কাজলা দিদি' একটা দুঃখের কবিতা। তার উপর মৃত্যুশয্যায় রানী'র অনবরত এ কবিতাটি আওড়ানোর তথ্যটা আমার অপরিণত মানসে শেলের মত বিঁধেছিল। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি আর এই কবিতাটি পাঠ সম্পূর্ণ করতে পারি নাই। জীবনের এ দীর্ঘ চলার পথে অনেক সময় অনেক বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কণ্ঠে সুর করে এ কবিতা পাঠের শব্দ শুনে আমি থমকে দাঁড়িয়ে নীরবে দু'ফোঁটা চোখের জল ফেলেছি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মার্চ, ২০২২ রাত ২:০০
রাজীব নুর বলেছেন: কাজলা দিদির আত্মহত্যা করার কারন কি?