ছেলেটি পারে নি

২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২৫

এক



-হ্যালো । প্রীতম বলছি...

-জানি । আমি তোর নাম্বারেই কল দিয়েছি...

-ও ! তুই...।

-হ্যাঁ । আমি ... চিনতে পারছিস তাহলে

-গলার স্বর পাল্টায় নি খুব একটা । আছিস ক্যামন?

-তোর কি আসে যায়?

-এখনো রেগে আছিস ?

-আচ্ছা তুই আমার নাম্বার সেভ করে রাখিস নি ক্যান?

-মুখস্ত আছে । সেভ করার দরকার নেই ।

-তাহলে ওভাবে শুরু করলি যে...

-এমনি । তা এতদিন পর...

-ফেসবুকে দেখলাম আমার জন্মদিনে অনেক বড় বড় কথা লিখেছিস । প্রথমে কয়েকদিন পাত্তা দেই নি । পরে ভাবলাম একটা কল দিয়েই দেই ।

-ভালো করেছিস । আমারও তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল অনেক দিন থেকে ।

-একটা কল দিলেই তো পারতি । তুই একটু বেশিই ভাব নিস।

-দিলে তুই ধরতি না । এই কলটাও করতি না । শুধু শুধু করে লাভ কি?

-সব জায়গায় লাভ খুঁজে কি পাস বল তো ? তাই বলে একটা কলও দিবি না ?!

-ঐ যে বললাম, ধরতি না । দিয়ে কি লাভ ?

-আছিস ক্যামন ?

-চলে যাচ্ছে আর কি ...

-শুনলাম আমেরিকা যাইতে পারিস ...

-চেষ্টা করছি আর কি । দেখা যাক...

-এখনো কথা বলিস ওর সাথে?

-মাঝে মাঝে । মানে অপরিচিত হওয়ার ভান করি না । (মিথ্যে বলল । অন্য সবার সাথে কথা বন্ধ করে দিয়েছে ও)

-তাহলে আমার একটা কল পাওনা ছিল না?

-আমি ফোন দেই নি তো ...

-তাতে কি ? আমাকে তো দিতে পারতি ...

-বিদেশে কল করতে টাকা বেশি যায় ।

-তুই বদলেছিস বটে । কথা কিন্তু এতটুকু বদলায় নি ।

-আমাকে তোর থেকে বেশি কেউ চিনে না । ইন্ডিয়া তে যেদিন যাস ঐ দিন থেকেই...

-কি করলি এবার?

-কিছু না । রাজশাহীতে কিছু করার নেই ।

-তুই এ কথা বলছিস !! মনে আছে একদিন টিকেট পেলাম না সিনেপ্লেক্স এ । তুই রিকশায় করে সারা ঢাকা ঘুরার অদ্ভুত বুদ্ধি বের করলি...

-ঐ দিন হরতাল ছিল বলে । তাছাড়া আমার ৪৫০ টাকা রিকশার পিছনেই গেছিল...

-ক্লাস নাইনের কথা তোর মনে আছে??!!

-আমার স্মৃতি শক্তি ভালো ।

-ভালো থাক ...

-শোন...

-হ্যাঁ, চাইলে আমি কল দিব । তোর কল ধরব না ।

-পরে যে বলবি আমি দেই নি ।

-তুই দিবিনা দেখেই এ কথা বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি ।

-আচ্ছা যা...



(কল কেটে গেল ।)



এবার বাংলাদেশ থেকে কল যাচ্ছে... রিং হচ্ছে... ওপাশের কেউ বোধহয় সাইলেন্ট মুডে ফোন রেখে দাঁতে দাঁতে চিপে রবি ঠাকুরের গান আওড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেই যাচ্ছে ।





দুই



(দিন চারেক পর)



সকালে উঠে ছেলেটা অ্যালার্ম বন্ধ আগে করে না মেসেজ, ফেসবুক, টুইটারের নোটিফিকেশন চেক করে বলা মুশকিল ৷ তবে সেদিন মেসেজই আগে চেক করেছিল তা নিশ্চিত ৷ মেসেজটা দেখেই সে তাড়াতাড়ি উঠে আবার দেখে নিল ৷ ভুল দেখছে কিনা তাও নিশ্চিত নয় ৷ ওদিকে মা এসে তাগাদা দিয়ে গেল নাস্তার ৷ কোনকিছুতেই আর মন দিতে পারছে না সে ৷



"পরেরদিন একটা কল দিতে পারলিনা? শোন তোকে একটা অনুরোধ করি ৷ আর কাউকেই এতটা আহ্লাদ দিবি না ৷ সবার প্রতি খামখেয়ালি করে যখন কয়েকজনের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত অনুযোগ দেখাস তখন মানুষ ভুল বুঝে, এমনকি যাকে করিস সেও ৷ সবাই তুই নারে ভাই ৷ 'প্র্যাকটিকাল' হতে গিয়ে অমানুষ হয়ে যায়নি সবাই ৷ আর শোন এই কয়েকদিন ফোন পেয়ে নাচিস না ৷ লাভ নাই, আমি ফোন ধরব না তোর ৷ আর একটা কথা 'তুই' যে তুই এটা বারবার প্রমাণ করিস না ৷ ওতে তোর সাথে সাথে অন্যরাও কষ্ট পায় ৷ ভাল আছিস তো খুব তাই না ?"



শেষ লাইনের তাচ্ছিল্যে ছেলেটার সেই হাসির কথা মনে পড়ে গেল ৷ সে জানে না কী করা উচিত এখন ৷ আফসোস ওর করার কথা নয় ৷ কিন্তু আফসোস করা উচিত কিনা ভাবতে গিয়ে কিছু বুঝতে পারল না ও ৷ 'কিছু বুঝতে না পারা' অনুভূতিটাও ওর জন্য নতুন ৷



মা এখন ডাকা বন্ধ করে দিয়েছে ৷ ওদিকে কিন্তু ঘড়িটা বেজেই চলেছে...





তিন



ছেলেটা প্রতিদিন এখন হেলাল হাফিজের



"এক মানবী কতটা আর নষ্ট হবে

এক জীবনে কতটা আর কষ্ট দিবে "



এই দুই পঙক্তি পড়ে ।



কোন কিছুই আর পরিবর্তন হয় না ।

২ টি +১/-০