![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা ১৯৯৮ সালের কথা , তারুন্যের প্রানবন্ত উচ্ছাসে ভাসচ্ছি । সেই সময়ে বেঁচে থাকাটাই ছিল চরম আনন্দের । সামান্য প্রেয়সীর মুখের হাঁসি টা কে মনে হত স্বর্গীয় । যখন স্বপ্নের তরী করে জীবন নদী পাড় হবার স্বপ্ন দেখছিলাম ঠিক সেই সময়ে ধুম করেই মুখ থুবরে পড়তে হল । প্রেয়সী চলে গেল অভিমান করে ।
মুহুর্তে বদলে গেল জীবন টা , পড়াশোনায় অমনযোগী , আড্ডাবাজী , সিগারেট খেতে শেখা , বাজে ছেলেদের সাথে মেশা । ক্রমশ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছি । সেই সময়ে বেঁচে থাকাটাই অসহ্য মনে হচ্ছিল ।
আমার এই পরিবর্তনে পরিবারের সকলেই উৎকন্ঠিত , চিন্তিত । সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল আমাকে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেয়া হবে , আমাকে জিজ্ঞেস করতেই কোন রকম চিন্তা না করেই রাজি হয়ে গেলাম । মনে হচ্ছিল পরিচিত সবার থেকে দূরে থাকলেই ভাল থাকবো , এরচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে তার স্মৃতি থেকে পালাতে চেয়েছিলাম ।
সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল বেশ দ্রুতই , দেশ ছাড়ার মাত্র ৩ দিন আগে প্রেয়সীর কানে পৌছালো চলে যাচ্ছি বহু দূরে! তাকে খুব বেশী ভালবাসতাম বলেই আমার পাগলামীর পরিমান টাও ছিল বেশী । পড়াশোনা , ভবিষ্যতের চেয়ে সে ছিল বেশী গুরুত্বপূর্ন , আর তার কাছে ছিল ভবিষ্যত ! আমাকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন ছিল বলেই সে চাইতো আমি যেন ঠিকভাবে পড়াশোনা করি , উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে তুলি কিন্তু আমার অবুঝ মন বুঝে নি । আমাদের ৭ বছরের সম্পর্কে যে কিনা শুধু মাত্র হাতটি ধরলেই লজ্জায় চুপসে যেত , সেদিন সে আমার বুকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল ।
আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এলো প্রবাসে পাড়ি জমানোর সময় , বিদায় নেবার সময় মা , বোনদের কান্না দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল ঠিকই , কিন্তু যে বাবাকে কোন দিন কাদতে দেখি নি , তার কান্না দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি , দু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল কষ্ট গুলো ।
সাহিত্যে একটি বাক্য আছে , " নাড়ী ছেড়ার টান" আমাদের বিমান টি যখন মাটি থেকে শুন্যে ভেসে উঠে ঠিক সেই সময়ে উপলব্ধী হয়েছিল এই বাক্যটির , এই অনুভতি বলে বুঝানো সম্ভব নয় । সত্যি বলতে সেদিন বুঝি নাই প্রবাসী নামক দুর্ভাগ্য টা কে এইভাবে বয়ে বেড়াতে হবে ।
প্রবাসের বাস্তবতায় নিজেকে খুব অসহায় মনে হলেও , ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে হল । জীবন নামের প্রতিযোগীতায় নেমে কেটেই যাচ্ছিল সময় । একদিন হুট করেই খবর পেলাম তার "বিয়ে" , আরো কিছুদিন পর খবর আসলো জন্মদাতা পিতা সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে ।
প্রিয় মানুষ টি কে হারানো , শেষ সময়ে পিতার পাশে না থাকার যন্ত্রনা , হাঁসি কান্নায় পরিবার-পরিজন কে পাশে না পাওয়া , উৎসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত সহ হাজার ও কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে আজ আমি প্রবাসী ।
এই গল্প আমার একার নয় । আমার মত হাজারো প্রবাসী , আমার চেয়ে অনেক বেশী দুঃখ নিয়ে প্রবাসে আছে । নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যের আশায় কেউ বা পরিবার পরিজনের মুখে হাঁসি ফোটাবার জন্য নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় বিক্রি করে উপার্জন করছে রেমিটেন্স ।
এতকিছুর পরও যখন আমরা দেখি একমাত্র মা ছাড়া অন্য সবার কাছে আমাদের চেয়ে আমাদের উপার্জন বেশী গুরুত্বপূর্ন তখন মনে হয় আমরা প্রবাসীরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী অবহেলিত আর দুর্ভাগা ।
২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:২৬
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: অনেক সুন্দর এবং গোছিয়ে লিখেছেন, আসলেই আমরা প্রবাসীরা অনেক কষ্টে দিন কাটাই কেও তা জানতে চাইনা।
যা চলে গেছে তা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই, এখন সামনের দিকে এগোতে হবে।
শুভ কামনা রইল, প্রবাস জীবন আনন্দময় হোক।
২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯
তানভির রানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য , তবে যা চলে গেছে তা নিয়ে চিন্তা করি না তবে স্মৃতির পাতায় রয়ে গেছে ।
৩| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩
স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
আনন্দময় হোক সকল প্রবাসীর জীবন।
২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২৯
তানভির রানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ,
আমার কাছে মনে হয় প্রবাস জীবনটাই অভিশপ্ত , তবুও ভাল থাকার বৃথা চেষ্টা করি , হয়তো আমার মত সবাই সেটাই করে ।
৪| ২৩ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২
রফিকুজজামান লিটন বলেছেন: খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখছেন তো। ভাল থাকুন, শুভকামনা সবসময়।
২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩১
তানভির রানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সেই সাথে শুভকামনা রইলো
৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:২১
আমিনুর রহমান বলেছেন:
ভালো থাকুক প্রবাসীরা।
২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৩২
তানভির রানা বলেছেন: শুধু প্রবাসী কেন ভাই ?
পৃথিবীর সকলেই ভাল থাকুক ।
ধন্যবাদ
৬| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৫২
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: আপনার লিখাটি পড়লাম, হৃদয়ের আকুতি দিয়ে অল্পকথায় মনের কথাগুলো যেভাবে প্রকাশ করলেন তা সত্যিই শীল্পীর কথামালা। এ যেন প্রতিটি প্রবাশীর হৃদয়ের কান্না। আমি আজ ৩৫ বছর যাবত প্রবাসী।
আমরা প্রবাসীরা যে ত্যাগ স্বীকার করে প্রিয় জনদের ও দেশের কল্যানের চেষ্টা করি তার কি যথযত মূল্যায়ন হয় ???
আজ ৩৫ বৎসর পর এ প্রশ্নটি করতে ইচ্ছা করে পরিবারের কাছে ও দেশের প্রশাষনের কাছে ???
আপনার প্রতি সুভকামনা র'ল।
২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:৪১
তানভির রানা বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে উৎসাহিত বোধ করছি । আমি কোন লেখক নই কাচা হাতে মনের ভাব গুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি মাত্র ।
//আমরা প্রবাসীরা যে ত্যাগ স্বীকার করে প্রিয় জনদের ও দেশের কল্যানের চেষ্টা করি তার কি যথযত মূল্যায়ন হয় ???//
না, হয় না । বাংলাদেশে যারা বসবাস করে তাদের মাঝে এই ধারনা টুকু বিদ্যমান টাকাই সুখের মূল উপকরন । আর আমরা প্রবাসীরা যেহুতু একটু বেশী আয় করি তাই সবার ধারনা আমরা বেশ আরামেই থাকি ।
কথায় আছে অভিজ্ঞতার বিকল্প কিছু নেই , প্রবাস জীবন কতটা কঠিন সেটা দেশে বসবাসরত কাউকে বলে বুঝানো সম্ভব নয় ।
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা , ভাল থাকুন সর্বদা
৭| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
আম্মানসুরা বলেছেন: এভাবে ভাবিনি !
এই লেখাটা পরে খারাপ লাগছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:১০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: পরে পড়ব