নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ভীরু মানুষ...

একজন ভীরু মানুষ...

তানজিমস্‌

একজন ভীরু মানুষ...

তানজিমস্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

যার নামটাই উদ্ভট আর হাস্যকর

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৫





ভাবুনতো একবার হলভর্তি মানুষের মাঝে আপনি বসে আছেন মঞ্চনাটক দেখবেন বলে, কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ আগে মঞ্চের পর্দা উঠার পরও সেখানে কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর দেখা নেই; শুধু তেপায়ার উপরে রাখা একটি টেলিফোন বেজে চলেছে একটানা। একবার,দুইবার,তিনবার,চারবার এভাবে বেজেই চলেছে ক্লান্তিকর টেলিফোন কিন্তু তখনও মঞ্চে একটা মানুষের ছায়াও পড়েনি। দর্শকদের মাঝে চাপা গুঞ্জন স্পষ্ট কথায় রূপ নিয়েছে। কিছু বেয়াড়া দর্শক দু’একটা গালিগালাজও শুরু করে দিয়েছে। এরই মাঝে থেকে একজন দর্শক মঞ্চে উঠে গেলেন ফোন ধরতে, কিন্তু কোথা থেকে এক ঘাতক বুলেট এসে কেড়ে নিল তার প্রাণ। কি কিছুটা অবাক হচ্ছেন কি? এমনই ধারা এই নাটকের আর তাই হয়তো সংগতি রেখে আর্টফর্মের ধারার নাম “থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড”। দারুন অদ্ভুত সব নিত্ত-নতূন কলা-কৌশল আর মানব চিন্তাধারার ভিন্ন এক ধারা প্রবাহিত হয়েছে এই আর্ট ফর্মে। পুরানো ধ্যান-ধারণা সড়িয়ে নতূন এক ধারার উন্মোচন ঘটেছে যেখানে দর্শক্ মিশে যায় গল্পের ধারায়। যেখানে আপনিও নিজেকে খুঁজে পাবেন খুব গভীরভাবে হঠাৎ করে।



মূল আলোচনায় আসার আগে বলে নিতে চায় কে এই বিষয়ে লিখছি... ইংরেজি সাহিত্য পাঠ একজন বাংলাদেশির পক্ষে সবসময় সুখকর হয় না এমনকি এমন একজন বাংলাদেশির পক্ষেও যে কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য-বিষয় হিসেবেও বেছে নিয়েছে ইংরেজি সাহিত্য। কিন্তু কিছু বিষয় শুধু প্রস্ন আর উত্তরের গোলক ধাঁধা থেকে বেরিয়ে চিন্তার খোরাক যোগায়, দেয় সাহিত্য পড়ার সত্যিকারের আনন্দ। ঠিক তেমনই একটি বিষয় “থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড”। বর্তমান অশান্ত পৃথিবীর লূ-হাওয়ার সাথে এই আর্টফর্মটির সর্ম্পক রেল-লাইনের মত। আর সর্বোপরি সাহিত্যের এই আপ্ত বিষয় গুলো আমাকে নিয়ে যায় আমার ফেলে আসা সুন্দর দিনগুলোর কাছে যা আমার বেঁচে থাকার নতূন প্রেরণা জাগায়।



চলুন এবার ফিরে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দিনগুলোতে যখন ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিষণ্নতার চাদরে মুড়ে আছে। ধ্বংস, মানবতার চরম অপমান আর আদর্শের অভাব মানুষের বেঁচে থাকাকে করে তুলেছে বেদনাদায়ক,ক্লান্তিকর এক অনুভূতি। মহাদূর্যোগের পর মানুষ মুখোমুখি হলো এক ভয়ংকর বাস্তবতার। যে জিনিসটি সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়ালো তার নাম বিশ্বাস বা আস্থা। মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি বিশ্বাস এমনকি নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাসও ছিল নিম্নমুখি। প্রাচীঙ্কাল থেকে নাটক ছিল প্রধানত রোমান্টিক ভাবালুতা বা ট্রাজেডির অতিরঞ্জিততায় আচ্ছন্ন। যা এই ভীষণ অনাকাক্ষিত বাস্তবাদী মানুষের সঙ্গে সংযোগ বা তাদের মনোযোগ আকর্ষণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। ঠিক সেই সময় ১৯৫০ সালের গোড়ার দিকে মূলত নাট্যকলার এক নতূন ফর্মের উন্মেষ ঘটে যা থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড হিসেবে পরিচিতি পায়, যদিও এর চর্চা চলে আসছিল আরও কিছুকাল আগে থেকে।



Absurd কথাটির আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় উদ্ভট বা হাস্যকর। তবে Theatre of The Absurd এর নির্ভূল প্রতিশব্দ নাই বললেই চলে। তবে এর গতি-প্রকৃতি থেকে চিন্তা করলে পারিপার্শ্বিকতার সাথে মানুষের অসঙ্গতিপূর্ন অবস্থান ও এর প্রেক্ষিতে অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন সংকটজনক পরিস্থিতিকে তুলে ধরাকে বোঝায়।

বাংলাদেশের ইংরেজি সাহিত্যের সর্বজন মান্য ব্যক্তি কবীর চৌধুরীর মতে, অনেকের জন্য আজকের পৃথিবীর ঘটনাবলির কোন গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা বা অর্থ নেই, কোথাও নেই কোন নিশ্চয়তা, বিশ্বাসের অনড় কোন ভিত্তিভূমি নেই। এই হতাশাগ্রস্থ, বিভ্রান্ত, বিপর্যস্ত মানুষের মনোজগতের প্লাটফর্মের উপর গড়ে উঠেছে থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ড। এ এমন এক শিল্পকলা যা অবদমিত ক্ষোভ-ঘৃণা-আতঙ্ক ভুলে চূড়ান্ত বাস্তবতার সত্যকে উপলব্ধি করার শক্তি যোগায়।



অনেক কচকচানি হলো এবার আসুন দেখা যাক আসলেই কতটা অদ্ভুত এই শিল্পকলা। এই কলার স্রষ্টারাও ছিলেন একেকটা অদ্ভুত মানুষ; কেউ খুঁজেছেন নিয়ম ভাঙ্গার নিয়ম, কেউ খুঁজেছেন নতূন স্বপ্ন, কেউবা আবার খুঁজেছেন আত্নহত্যার অব্যবহারকৃত নিয়ম। কিন্তু কোন জড়তা না রেখেই বলা যায় এরা প্রতেকেই একেকজন ক্ষণজন্মা মানুষ যার প্রমাণ তাদের একেকটি সৃষ্টি।স্রষ্টার মত তাদের সৃষ্টিগুলোও অদ্ভূত। নাটকগুলোর প্রেক্ষিত ও চরিত্র বিচিত্র ও অদ্ভুত। নাটকের পটভূমি,স্থান,কাল,পাত্র রহস্যময়। যা মাঝে মাঝে ভীষণ পরিচিত আবার মাঝে মাঝে মনে হবে ভীষণ অপরিচিত। কখনো চার চারিপাশ নিস্তব্ধ, থেমে গেছে সময়, ফুরিয়ে গেছে কথা, কখনো বা একই কথা উচ্চারিত হচ্ছে হচ্ছে বারবার। কখনো কোন চরিত্র ঠায় দাঁড়িয়ে আছে যার নির্দিষ্ট কোন পরিচয় নেই কিন্তু ঐ নিশব্দ ডাঁড়িয়ে থাকায় বলে চলেছে সমগ্র বিস্ববাসীর অব্যক্ত কথা। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি-

অ্যাবসারডিটির অন্যতম ধারক বাহক স্যামুয়েল বেকেট। তাঁর লেখা “ওয়েটিং ফর গডো” অনেকের কাছেই পরিচিত। এই নাটকে চরিত্র মাত্র পাঁচটি। জার ভেতর মূল দুটি চরিত্র ভ্লাডিমির ও এষ্ট্রাগন। নাটকে তাদের নির্দিষ্ট কোন পরিচয় পাওয়া যায় না, কারণ তার এখানে পুরো মানব জাতির প্রতিনিধি। শুনতে আজব হলেও সত্য পুরো নাটক জুড়েই কিছু ঘটেনা। নেই কোন সংঘাত, টানাপোড়েন, আগ্রসড়তা, চরিত্রগুলো শুধু একটি কাজই করে আর তা হলো অপেক্ষা। তারা অপেক্ষা করে গডো’র জন্য(শব্দটা গড নয় কিন্তু); যে গডো এলে তাদের সব সমস্যার সমাধান হবে, তার মুক্তি পাবে অভিশপ্ত জীবন থেকে। তবে মজার ব্যাপার হলো, যে গডো’র জন্য তারা অপেক্ষা করছে তারা তাকে চেনে না, দেখেনি কোন্দিন, এমনকি তার আসার ব্যাপারটাও নিশ্চিত নয়... এভাবে তারা অপেক্ষা করে দুটো’দিন, মাঝে পার হয় পাপ পঙ্কিলতায় ভরা ভীষণ দীর্ঘ একটি দিন, তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু না ঘটেও যা মানব জীবনের অতিবাহিত হতে থাকা দুঃসহ জীবনকাল কে নির্দেশ করে। বারবার কথা দিয়েও আসে না গডো। একসময় তার আত্নহত্যার কথা ভাবে কিন্তু পারে না। নাটকটি এভাবেই একসময় শেষ হয়। শেষ হবার পরে মনে হয় তারা চিরদিনই এভাবে অপেক্ষায় ছিল আর থাকবে, এই অপেক্ষার কোন অবসান কোন দিন হবে না আর গডোও কোন্দিন আসবেনা। মাত্র দু’অংকের এই নাটকে কি নিষ্ঠুর আর নিদারুণভাবেই না ফুটে উঠেছে মানব জ়ীবনের চিরায়ত রূপ।

এই উদ্ভট নাটকের বিচিত্র অদ্ভুত চরিত্রগুলো কখনো বা আপনাকে দাঁড় করিয়ে দেবে আপনার ভীষণ আপন এক আপনার সাথে, যে আপনিটা ভীষণ একা আর নিঃসঙ্গ। তেমনি এক উদ্ভট চরিত্রের দেখা আপনি পাবেন এডয়ার্ড এলবি’র ‘জ্যু ষ্টোরি’তে যে কিনা এতটাই নিঃসঙ্গ যে পাশে একজন মানুষ-কে বসিয়ে নিজের বুকে ছুরি বসিয়ে দেয় যাতে পাশে বসা অপরিচিত তাকে চাইলেও ভুলতে না পারে, যাতে ভীষণ নিঃসঙ্গ এই পৃথিবীতে অন্তত একজন মানুষের সাথে তার মানবীয় একটি সর্ম্পক গড়ে ওঠে। অথবা হয়তো মানব জাতির আর একরূপ দেখতে পাবেন কাফকার ‘মেটামরফোসিস’ রচনায়; যেখানে একজন মানুষ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করে সে তেলাপোকা হয়ে গেছে, যার ফলে পরিবর্তন ঘটে তার চারপাশে। যার ফলে তার অতি আপনজন তার পর হয়ে যায়, তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল আর অচ্ছূত মনে করে। আজ যার ধন-মান আছে তাকে আমরা কি না সন্মান খাতির করি কিন্তু সে যদি কাল সর্বসান্ত হয় ক’জনেই বা তাকে আমরা পূর্ব ব্যবহার উপহার দেব?



কি ভীষণ নিঃসঙ্গ অসহায় আমরা তারই এক একটি জ্বলন্ত উদাহরণ থিয়েটার অব দ্য অ্যাবসার্ডের নাটকগুলো; যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে মানব বর্বরতাকে দেখায় আর শক্তি যোগায় তা মোকাবেলা করতে, শেখায় পরস্পরের ভালবাসার শক্তিকে উপেক্ষা না করতে। তাই হয়তো বর্তমান অসহায় বিশৃংঙ্খল মানব সমাজের ফিরে তাকাতে হবে স্যামুয়েল বেকেট, হেন্রিখ ইবসেন, নিকোলাই গোগোল, চেখভ, বানার্দ শ, হফম্যান, কাফকা আর আর্থার মিলারদের মত ক্ষেপাটে সব অদ্ভুত উদ্ভট স্রষ্টাদের দিকে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২২

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর পোস্ট
ভাললাগা +

১৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫১

তানজিমস্‌ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আমার ব্লগটি পড়ার জন্য...

২| ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪০

েসাহাগ২৫কগগ বলেছেন: ভালোই লাগলো।

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:০৯

তানজিমস্‌ বলেছেন: আপনার মন্তব্য দেখে আমারও ভালই লাগলো...

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:১০

সানড্যান্স বলেছেন: অর্থমন্তীর ভাষায় বলতে গেলে কাফকা অদ্ভুত। যাইহোক আরো ডীটেল জানার ইচ্ছা রইল

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১১

তানজিমস্‌ বলেছেন:
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীও একজন ইংরেজীর ছাত্র; তার রসবোধও প্রচুর, তাই হয়তো তিনিও মাঝে-সাঝেই আমাদের বিমলানন্দ দিয়ে থাকেন। আপনাদের মত সঠিক পাঠক পেলে এধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে আর চলবেও ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.