![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“আজ খবরের কাগজ আসতে বড্ড বেশি দেরি করছে”, চশমাটা পঞ্চমবারের মত মুছতে মুছতে ভাবলেন হাফিজ আলী। তাদের বাড়িটা শহরের শেষ প্রান্তে হওয়াতে পত্রিকার হকার সবার শেষে তার বাসায় খবরের কাগজটা ফেলে যায়। তবে আজ যেন আরো বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে। ৩পুত্র আর ১ মেয়ের জনক হাফিজ আলী। হাফিজ আলীর চাকরি জীবনটা কেটেছে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে ব্যস্ততার ভেতর কবে যে বুড়ো হয়ে গেলেন বুঝতেই পারেননি। চাকুরি জীবনের ব্যস্ততা বা অবসর জীবনের স্থবিরতা কোনটাই তাকে খবরের কাগজ পড়তে আগ্রহী করেনি। কিন্তু গত ২ মাস যাবত সকালে খবরের কাগজ হাতে না আসা পর্যন্ত তিনি কোন কাজই শুরু করেন না। এমনকি তার বর্তমান প্রধান কাজ খবরের কাগজটা দিনের ভেতর কয়েকবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া।
বড় ছেলে আর ছেলের বউ থাকে দূরের শহরে। বাড়িতে স্ত্রী, মেয়ে আর মেজ ছেলের বউয়ের ত্রিমুখো ঝগড়ায় কাগজ পড়ার ভীষণ সমস্যা হওয়াতে হাফিজ আলী কিছুদিন মোড়ের চায়ের দোকানটা বেছে নিলেন। কিন্তু সেখানে আরো কিছু উপদ্রব বাড়লো। কিছু গায়ে পড়া ছ্যাচড়া লোক পত্রিকা দেখলেই হাতটা বাড়িয়ে দেন এক নজর চোখ বুলাবার জন্য তারপর স্থান-কাল-পাত্র ভুলে চোখ বুলাতেই থাকেন। তিনি আজকাল রেল-ষ্টেশনের শেষ মাথায় গিয়ে বসেন, বড় আজিব এই জায়গাটা প্লাটফর্মের কোলাহল শেষ হয়ে হঠাত যেন সব কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে এখানে। তাই নিরিবিলিতে খবরের কাগজ পড়ার জন্য এখানেই বসেন তিনি। এমন-ই একদিন দুপুরে ঘরমুখো হতেই নিজেকে এলাকার হ্যাডম(!) হিসেবে পরিচয় করে দেয়া পল্লবের সাথে দেখা। পল্লব তার নোংরা দাঁতগুলো বিশ্রীভাবে বের করে বলে, “কাকার, শরীলডা ভাল-তো?” হাফিজ আলী ‘হুঁ’ বলেই পাশ কাটাতে চান কিন্তু পল্লব সামনে এসে গলা খাঁদে নামিয়ে বলে, “ কোন খবর কি পাইলা কাকা?” হাফিজ আলী আর দাঁড়ায় না।
হাফিজ আলীর খবরের কাগজ পড়ার বহর দেখে অনেকেই তার কাছে আসে দেশ আর দশের অবস্থা জানতে। কিন্তু কোন খবর জানতে চাইলেই তিনি কেমন যেন ক্যাবলা মত হয়ে যান। কিছুদিন আগে তার মেজছেলে এসে বললো, “ আব্বা, আমাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর খবরটা দেখেছেন?” কথাটা শোনার অনেকক্ষণ পর বলেছিলেন, ‘এই রকম কোন খবর আজ ছেপেছে নাকি?’ অথচ সেদিনের প্রায় সবগুলো দৈনিকের শিরোনাম-ই ছিল সরকারী বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে।সবাই ভাবে এ কেমন সংবাদপত্র পাঠক যে জানেই না আজকের শিরোনাম কি! কিন্তু তাকে দেখে যে কেউ ভাববে তিনি প্রতিটি খবরের গভীরে গিয়ে তন্ন তন্ন করে কি যেন এক খবর খুঁজছেন।
বেশ কয়েকদিন পরের কথা…
গত চারদিন ধরে হাফিজ আলী বাসায় খবরের কাগজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ঠিক পাঁচদিন আগে হাফিজ্ আলী ১৩০ কিলোমিটার পথপাড়ি দেন একটা বেওয়ারিশ লাশের কবর জিয়ারত করতে। যে ২০/২২ বছর বয়সী বেওয়ারিশ লাশটার বাম কপালে একটা কাটা দাগ ছিল, পরনে ছিল হলুদ গেঞ্জি আর কালো প্যান্ট। খবরটা দৈনিক সংবাদপত্রের ছোট একটা অংশ দখল করেছিল।
১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৯
তানজিমস্ বলেছেন: মন্তব্য-টি পড়ে আমারও গল্প লিখা স্বার্থক হলো… অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:০২
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: বেওয়ারিস লাশটা কার ?
২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:০১
তানজিমস্ বলেছেন: গল্পটাতে এতটুকু কি বোঝাতে পারিনি। দুঃখিত বোধ করলাম।
৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৩
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: দুঃখিত ভাইয়া। প্রথম বার ভাল করে পড়িনি হয়ত। এইবার বুঝতে পেরেছি। খুব কষ্ট হচ্ছে এখন বাবার জন্য।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
তানজিমস্ বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৮
খেয়া ঘাট বলেছেন: অসম্ভব শক্তিশালী একটা স্বার্থক ছোট গল্প। চমৎকার।
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫২
তানজিমস্ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৩
বোকামন বলেছেন:
সার্থক ছোটগল্প .......।