নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হওয়ার সাধনা আমার চির বহমান, যদি চূড়ান্ত নিশ্বাসেও না হতে পারি তবে ক্ষমা করো বিধাতা, ক্ষমা করো হে প্রভু আর রহমান। ক্ষমা করো তোমরা যারা পেয়েছো আঘাত, তোমরা যারা পাবে অথচ থাকবে নিরাপরাধ।
রাজশাহী শহরে থেকেছি প্রায় নয় বছর।এই শহর নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর শহর।যারা সাম্প্রতিক কালে রাজশাহী গিয়েছেন তারা আমার এই দাবী মেনে নেবেন নিঃসন্দেহে, এটা নিশ্চিত।রাজশাহী আমার চেতনার জন্মভূমি। এই শহরে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছি কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। শহরের পাস দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী আমার রক্তে মিশে আছে।কলেজ জীবনে নিউ ডিগ্রীর সামছুদ্দিন ছাত্রাবাসে থেকেছি। সেটাই শুরু ছিল রাজশাহীর জীবনের। সবে মফস্বল থেকে বিভাগীয় শহরে গিয়েছিলাম তখন। ৮-১০ দিন পরপর বাড়ীর টানে গ্রামে চলে যেতাম। বাড়ী ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হতো সে সময়। আর বাড়ী থেকে রাজশাহী গেলেই মন খারাপ লাগতো বাড়ীর জন্য। বিভাগ পরিবর্তন করে ব্যবসা শিক্ষা নিয়েছিলাম তাই প্রথম প্রথম বুঝতে কষ্ট হতো পড়াশোনা। একগাদা প্রাইভেট পড়তাম সে সময়, আর বিকালে সি এন্ড বি মোড় পার হয়ে পদ্মার পাড়ে মন খারাপ করে বসে থাকতাম। কখনো কখনো একদম একা,আবার কখনো হোস্টেলের কোনো বন্ধুর সাথে। হোস্টেল জীবনে পদ্মার পাড়ে একবার খুব বিপদে পড়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন প্রথম বর্ষ ছিল কলেজ জীবনের। ফার্স্ট ইয়ারে হোস্টেলে আমার রুমমেট ছিল বন্ধু নিরঞ্জন আর রবিউল। খুব সাধারণ পরিবার থেকে মফস্বল হতে রাজশাহী এসেছিলাম আমরা তাই অনেক কিছুতেই ভয় পেতাম। একদিন এক রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা আমাদের রুমে এসে বললো আজ মিটিং আছে এই হোস্টেলে, তাই তোমাদের সবাইকে সেখানে উপস্থিত হতে হবে। যদি না আসো তবে আমরা রুম নাম্বার সহ নাম লিস্ট করে রাখবো।তারা সবার রুমে গিয়েই এটা বলছিল। না আসলে বিচার হবে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরে হোস্টেলে আরেক রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা এসে বললো তোমরা যদি ওই মিটিং এ যাও তবে তোমাদের বিচার হবে। আমরা তো পড়ে গেলাম বিভীষিকায়। কি করি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো যাই করি হোস্টেলে থাকব না। তাহলে কোথায় যাওয়া যায়? শেষতক আমরা তিন বন্ধু সন্ধ্যা থেকে রাত এগারো টা পর্যন্ত পদ্মার পাড়ে বসে ছিলাম উনাদের ভয়ে। ফিরে ছিলাম সেই সভা শেষে।আমার রামেক থেকে পড়া ডাক্তার বন্ধু নিরঞ্জন আর বুয়েট থেকে পড়া ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু রবিউল এর সেই স্মৃতি নিশ্চয়ই মনে আছে।তারপর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেষ করেছি। এর মাঝে কত বিকাল, সন্ধ্যা কেটেছে পদ্মার পাড়ে তার ইয়াত্তা নেই।মন খারাপে, ভাল লাগায়, আড্ডায় কত সময় গেছে পদ্মার পাড়ে! পরীক্ষার সময় সারাদিন পড়াশোনা করে নির্জনে একা একা কত বিকাল কাটিয়েছি পদ্মার পাড়ে, তা আজও অম্লান স্মৃতি পটে। আজ এখন জানলাম সেই পদ্মার পাড়ে দাড়াতেও টাকা লাগবে।রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন উঁচু কাটাতারের বেড়া দিচ্ছে পদ্মার পাড়ে।আর সেই জায়গা ফার্স্টফুড ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। সবকিছু টিকিট কাউন্টারে চলে যাবে। একটি রাষ্ট্র যখন ব্যবসায়ী হয়ে ওঠে তখন তা হয়ে যায় বৃহৎ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। যেমন ইউরোপ, আমেরিকায় কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর আছে যেখানে আলু থেকে শুরু করে এরোপ্লেন কিনতে পাওয়া যায়।সেখানে পণ্য,বিনোদন সব পাওয়া যায়। কানাডা এক বড় ভাই থাকেন, উনি একদিন কিছু ছবি দিয়েছিলেন একটি শপিং মলের যেখানে কৃত্রিমভাবে নদী তৈরী করা হয়েছে। সেখানে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকাও চলে। কিন্তু দেখে একদম সত্য মনে হয় সব, কিছুতেই বোঝা যায় না যে সব কৃত্রিম। আমাদের দেশ এখন তেমনই একটা পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। পদ্মার হাওয়া এখন বিক্রি হবে, যেমন ঔষধ বিক্রি হয় ফার্মাসীতে। সকালে, বিকালে হেটে শরীর ঠিক রাখতে চান তাহলে চলে আসুন পদ্মার পাড়ে!আমরা এখন প্রকৃতিকে কৃত্রিমভাবে সাজাব ফার্স্টফুডের দোকান বসিয়ে ময়লা আবর্জনা সাজিয়ে!
সংসদে আইন প্রণেতা বা জনপ্রতিনিধিদের বেশীর ভাগই যখন শিল্পপতি হয় এবং তাদের দ্বারা দেশ পরিচালিত হয় তখন একটি দেশ ধীরে ধীরে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হয়ে ওঠে। দেশপ্রেম, মৌলিক অধিকার, নদীর হাওয়া,পিয়াজ, মরিচ, কদু, গাড়ি, বাড়ি সবই তখন এক কাতারে পণ্য বলে বিবেচিত হয়। ভয় হচ্ছে কখন যেন পরিপত্র জারি হবে যে যারা ট্যাক্স দিতে পারবে তারাই শুধু রাস্তায় বেড় হতে পারবে আর অক্সিজেন থেকে শ্বাস নিতে পারবে। আমাদের নীতি নির্ধারকদের বোঝা উচিৎ শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো মানে বাণিজ্যকরন নয়, শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো মানে ইজারা দেয়া নয়।শহর সুন্দরভাবে গড়ে উঠুক, নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকুক কিন্তু দরজা খোলা থাক সাধারণ মানুষের জন্য।
তানজির খান
কবি, ব্লগার ও নাগরিক সাংবাদিক
[email protected]
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
তানজির খান বলেছেন: আপনার জন্মস্থান আর আমার চেতনার জন্মভূমি। অনেক ভালবাসি এই শহরকে। শহরটি আমার চোখের সামনে সুন্দর হয়ে উঠলো। সে সময়ের মেয়র কে দেখেছি রাস্তায় রাস্তায় হেটে হেটে কাজ করতে। অনেক ভাল কিছু দেখেছি এই শহরে।
২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৪
ডার্ক ম্যান বলেছেন: বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করে। তাই তাদের কাছে টাকাটা মুখ্য। অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে তারা যে কত কিছু যে বিসর্জন করছে সেটা তাদের খেয়াল থাকে না।
শুধু রাজশাহী না দেশের সব এলাকায় আজ জাতীয় ডাকাতদের দখলে।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
তানজির খান বলেছেন: আমাদের সবাইকে এসব লিখতে হবে। তবেই দেশ হিসাবে মাথা তুলে দাড়াব আমরা।
৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: তৃষ্ণার্ত দানব ঢকঢক করে গিলে ফেলবে সকল নদীর জল। দুঃখজনক পরিস্থিতি।
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৫
তানজির খান বলেছেন: খুব ভাল বলেছেন ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
রিকি বলেছেন: ক্লিনসিটি ভাইয়া আর কিছু না হলেও, এখানে ওখানে ভাগাড় বানিয়ে রাখে না !!!! অনেক কিছুই নাই, আবার মেলা কিছু আছে। নিজের জন্মস্থানের দুটো প্রশংসা করে দিলাম আরকি।
আমাদের নীতি নির্ধারকদের বোঝা উচিৎ শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো মানে বাণিজ্যকরন নয়, শহরকে সুন্দরভাবে সাজানো মানে ইজারা দেয়া নয়।শহর সুন্দরভাবে গড়ে উঠুক, নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকুক কিন্তু দরজা খোলা থাক সাধারণ মানুষের জন্য।
সহমত