নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হওয়ার সাধনা আমার চির বহমান, যদি চূড়ান্ত নিশ্বাসেও না হতে পারি তবে ক্ষমা করো বিধাতা, ক্ষমা করো হে প্রভু আর রহমান। ক্ষমা করো তোমরা যারা পেয়েছো আঘাত, তোমরা যারা পাবে অথচ থাকবে নিরাপরাধ।
বাতাসে গুঞ্জন, রাস্তায় ঝাঁজালো শ্লোগান আর প্রেমহীন বক পক্ষীর মত ছুটে চলছে কিছু মানুষ। আমুদে সময় হুট করে অতীত হয়ে গেছে, শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়। কেমন যেন অনিশ্চয়তা বারবার ঘিরে ধরছে খোকার মনে। গ্রামের মেঠো পথ ছেড়ে যে জীবন পিচ ঢালা রাস্তায় মিশেছে তা কি খুব বেশী নির্মম?
এই তোমার নাম কি? আ আ আমি? হ্যা তুমি। আমার নাম খোকা। এত বড় ছেলের নাম খোকা? হা হা হা। ইশরে মাথার চুল বাঁধা ব্যান্ড টা ভেঙে গেল মনে হয় পড়ে। পড়লো তো আবার আমার টেবিলেই! তোমার সামনের ব্রেঞ্চে বসা কোন মেয়ের মাথার ব্যান্ড পড়লে তো তার পেছনের হাই বেঞ্চেই পড়বে নাকি? তারপর বেঞ্চ গুলি যে চাপাচাপি করে রাখা। এই ভাঙা ব্যান্ড তোমার উপহার খোকা বাবু। তোমার নাম কি? আমার নাম কুহুকি মায়া। তা প্রথম পরিচয়ে কেউ এভাবে কথা বলে তা জানতাম না কুহু। না মানে আমার মনে হল তুমি একটু বেশীই বোকা তাই একটু দুষ্টুমি করলাম।
শুরুটা প্রথম ক্লাসে ছিল এমনই ভাবে। তারপর মায়া ছায়া হয়েছিল খোকার সাথে অনেকদিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পার করে নারী পুরুষের বন্ধুত্বের উদাহরন সৃষ্টি করে মায়া এখন বড় ব্যাংকারের বউ। গাড়ি, বাড়ি অনেক কিছু সেই জীবনে। মাঝেমাঝে কথা হয়, মায়ার সংসারের সুখ দুঃখ নিয়ে। ভিষণ সুখি ওরা, মায়ার পতিদেব খুবই ভাল মানুষ।আগে বন্ধুরা দুজনের বন্ধুত্ব নিয়ে আড়ালে আবডালে অনেক কথা বলত। যাতে কোন বাস্তবতাই ছিলনা।বন্ধুত্ব না ঢঙ, দেখ গিয়ে বিকালে পদ্মার পাড়ে বসে হাওয়া খাচ্ছে। এই ছিল পেছনের কথার শুরু, তার সাথে কত রঙ মাখিয়ে সহপাঠিরা পেছনে কথা বলত। কিন্তু ওদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরেনি কখনো। একবার অবশ্য মায়া কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়েছিল খোকার প্রতি। অনেকটা সহপাঠিদের কান কথার ফলে অচেনা অনুভূতিতে। তা অবশ্য মুখ ফুটে বলতে পারেনি। খোকা ঠিকই বুঝেছিল সে কথা। মায়া জানতো খোকা রোমান্টিক, আমুদে, হাসি-ঠাট্টা নিয়ে থাকলেও প্রেমিক পুরুষ নয়।
পড়ে অবশ্য খোকা পরীর মত একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে বলেছিল এই হাত যদি একবার ধরো তবে আর কোনদিন ছাড়তে পারবে না। খোকা শক্ত করে ধরেছিল হাত। খোকা ছাড়েনি সে হাত কিন্তু মেয়েটি হাত ছেড়ে বিদেশ ফেরত এক ইঞ্জিয়ারের হাত ধরেছে। তাদের সুখের সংসার বলে শোনা গিয়েছিল। এখন অবশ্য খোকা ওসব খবর রাখেনা তবে মাঝেমাঝে খুব একা আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে।
খোকা এখন একই শহরে থাকে। কয়েক বছর চলে গেল এখনো চাকরী হয় নাই। সব বন্ধুরাই ভাল চাকরী করছে, অনেকে বিয়েও করে ফেলেছে। নিমন্ত্রণ আসে, নিমন্ত্রণ যায় কিন্তু খোকার অপেক্ষা শেষ হয় না।
হ্যালো স্লামুলাইকুম। আপনার একটি ভাইভা আছে.... খোকার স্বপ্নের শুরু এবার বোধহয় চাকরীটা হবেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরী খোকার আজন্ম লালিত স্বপ্ন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মেসের কাপড়ের হ্যাঙ্গারে ঝুলে থাকা কোট আর টাই খোকা গায়ে চড়ালো। ঠিক বেলা এগারোর সময় নির্দিষ্ট সময়ে ভাইভা বোর্ডে খোকা বসল। সবাই ঢাকা থাকতে চায় কিন্তু আপনি এই মফস্বল শহরে কেন আসতে চাইছেন? "আমি সব সময় শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম।একটা দেশের সামগ্রীক অর্থনীতি নির্ভর করে তার গ্রামীণ অর্থনীতির উপর। সেই অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে উদ্যোক্তারা। তাই গ্রামীণ জনপদ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। শহরে যে সব বিশ্ববিদ্যালয় আছে তারা মূলত সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করে। কিন্তু গ্রামে তরুণেরা সুবিধা বঞ্চিত, তাদের নিয়ে আমি কাজ করতে চাই যাতে দেশ গড়ার কাজে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারি।"
ভিসি স্যারের প্রশ্নে এক নিঃশ্বাসে উত্তর দেয় খোকা। একে একে রেজিস্টার, ডিপার্টমেন্ট হেড, ডিন সহ সবার প্রশ্নের উত্তর দেয় খোকা। খোকার ভাইভায় সবাই খুব খুশি হয় একাডেমিক জ্ঞান ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখে । সবশেষে ভিসি স্যার সর্বসম্মতি ক্রমে ভাইভা বোর্ডেই বলে দেন আপনি আগামী ৩১ তারিখের আগে সবগুছিয়ে নিন, এক তারিখে আপনার জয়নিং। এর মাঝে আপনি এপোয়েনমেন্ট লেটার পাবেন।
এক তারিখ চলে আসছে কিন্তু লেটার আসেনা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোনও আসেনা। স্লামুলাইকুম স্যার, আমার জয়নিং কবে? আমি তো এখনো লেটার পেলাম না। একটু সমস্যা হয়েছে বুঝলেন। ভিসি, রেজিস্টার সবাই সাইন করেছে আপনার এপোয়েনমেন্টের ডকুমেন্ট এ কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি করছেন না। এখন সবকিছু ঝুলে গেছে, সবকিছু অনিশ্চিত। হ্যালো আপনি শুনতে পাচ্ছেন? একটু ধৈর্য ধরে দেখতে পারেন।
খোকার বিধবা মা খুব খুশি হয়েছিল ছেলের চাকরীর কথা শুনে। কি যে খুশি তা বলে বোঝাতে পারবে না কেউ। ২৯ তারিখ বিকাল বেলা, হ্যালো খোকা জয়নিং কবে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানিয়েছে কিছু? খোকা মুখে কিছু বলতে পারেনা, মাথা নাড়ায় তাতে ফোনের ওপাস থেকে কি বোঝা যায় তা খোকা জানেনা। মা নিরবতায় আরেকটি ভাঙনে শব্দ পায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই গল্পের সাথে আমার জীবনের কোন মিল নেই। আপনার জীবনের মিল থাকলে তা কাকতালীয়।
তানজির খান
কবি ও নাগরিক সাংবাদিক
[email protected]
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৪
তানজির খান বলেছেন: সুমন ভাই অনেক ধন্যবাদ। এই লেখার সাথে আমার দীর্ঘশ্বাস মিসে আছে। কিছুই ভাল লাগছে না।
শুভকামনা ভাই
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১
হাসান মাহবুব বলেছেন: চেনা দুঃখ চেনা সুখ
চেনা চেনা হাসিমুখ
চেনা আলো চেনা অন্ধকার...
কবীর সুমনের গানটা বড্ড প্রাসঙ্গিক মনে হলো এখানে।
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৯
তানজির খান বলেছেন: আজ আমার যখন সব অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় তখনও আমি প্রাসঙ্গিক আছি। ভাল লাগছে এই ভেবে ভাইয়া। আমার এখন সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। বেঁচে আছি, শ্বাস নেই এই আমার প্রাপ্তি। ধন্যবাদ ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৮
সুমন কর বলেছেন: একটু ভিন্ন রকম, ভালো লাগল। +।