নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কমবুঝি কিন্ত কিছু একটা নিয়ে বোঝার চেস্টা করি তাই যত পারি বই পড়ি ।

ঠ্যঠা মফিজ

ঠ্যঠা মফিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়ারমুকের যুদ্ধের ইতিহাস ২য় পর্ব

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:৫৮


ইয়ারমুকের যুদ্ধের ইতিহাস ( প্রথম পর্ব)
লেভান্টে রাশিদুন খিলাফতের আক্রমণের বিস্তারিত মানচিত্র।ইয়ারমুকের যুদ্ধের পূর্বে মুসলিম ও বাইজেন্টাইন সৈনিকদের চলাচল। এতে বর্তমান দেশগুলো দেখানো হয়েছেঃ
৬৩৫ সালের প্রথমদিকে বাইজেন্টাইনদের প্রস্তুতি শুরু হয় এবং ৬৩৬ সালের মে নাগাদ হেরাক্লিয়াস উত্তর সিরিয়ার এন্টিওকে তার বিরাট বাহিনী প্রস্তুত করেন।[ সেই বাহিনীতে বাইজেন্টাইন, স্লাভ, ফ্রাঙ্ক, জর্জিয়ান, আর্মেনীয়, খ্রিষ্টান আরব বংশোদ্ভূত সৈনিক ছিল। পুরো বাহিনীকে পাঁচটি অংশে ভাগ করা হয়। সম্মিলিত কমান্ডার ছিলেন থিওডোর ট্রিথিরিয়াস দ্য সাকেলারিওস। ভাহান ছিলেন একজন আর্মেনীয় এবং এমেসার প্রাক্তন গেরিসন কমান্ডার। তাকে সামগ্রিক ফিল্ড কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। তার অধীনে সম্পূর্ণ আর্মেনীয়দের নিয়ে গঠিত বাহিনীকে প্রদান করা হয়। বুকিনেটর ছিলেন একজন স্লাভিক রাজপুত্র। তিনি স্লাভদের নেতৃত্বে ছিলেন। গাসানি আরবদের রাজা জাবালা ইবনুল আইহাম খ্রিষ্টান আরবদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাকি সৈনিকরা ছিল ইউরোপীয়। তাদেরকে গ্রেগরি এবং দাইরজানের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। হেরাক্লিয়াস ব্যক্তিগতভাবে এন্টিওক থেকে কর্মকাণ্ড তদারক করতেন। বাইজেন্টাইন সূত্রে পারস্যের সেনাপতি শাহরবারাজের ছেলে নিকেটাসকে অন্যতম সেনাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তবে তিনি কোনো অংশের নেতৃত্বে ছিলেন তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।

সেসময় রাশিদুন সেনাবাহিনী চারভাগে বিভক্ত ছিলঃ ফিলিস্তিনে আমর ইবনুল আস, জর্ডানে শুরাহবিল ইবনে হাসানা ও দামেস্ক কাইসারিয়া অঞ্চলে ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান এবং এমেসায় খালিদ বিন ওয়ালিদের সাথে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ সেই অংশগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন। মুসলিম সেনাবাহিনী ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে হেরাক্লিয়াস সেই সুযোগ কাজে লাগাতে উদ্যোগী হন এবং হামলার পরিকল্পনা করেন। তিনি কেন্দ্রীয় অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করতে চেয়েছিলেন। তার পরিকল্পনা ছিল বিরাট বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমদের প্রত্যেকটি বাহিনী সংগঠিত হওয়ার আগে পৃথকভাবে তাদের পরাজিত করা। মুসলিমদের পিছু হটিয়ে বা পৃথকভাবে বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে হৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। হেরাক্লিয়াসের ছেলে তৃতীয় কনস্টান্টাইনের অধীনে কাইসারিয়ায় বাড়তি সেনা সহায়তা পাঠানো হয়। ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ানের বাহিনীকে ধরাশায়ী করার জন্য এই বাহিনী প্রেরণ করা হয়ে থাকতে পারে। ইয়াজিদের বাহিনী শহরটি অবরোধ করেছিল।বাইজেন্টাইন রাজকীয় বাহিনী ৬৩৬ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে এন্টিওক এবং উত্তর সিরিয়া থেকে বের হয়।

বাইজেন্টাইন রাজকীয় বাহিনী নিচে দেয়া পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করার পরিকল্পনা করে

১। জাবালার খ্রিষ্টান আরবরা আলেপ্পো থেকে হামা হয়ে এমেসা যাত্রা করবে এবং এমেসায় মূল মুসলিম বাহিনীকে আক্রমণ করবে।
২। দাইরজানের পার্শ্বভাগ থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। উপকূল এবং আলেপ্পোর পথের মধ্যে চলাচল করে পশ্চিম দিক থেকে এমেসায় এসে মুসলিমদের বাম অংশকে আক্রমণ করার কথা ছিল। সেসময় সামনের দিকে জাবালা থাকবেন।
৩। গ্রেগরির মুসলিমদের ডান পাশ থেকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। মেসোপটেমিয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরপূর্ব দিক থেকে তাকে এমেসায় যেতে বলা হয়।
৪। কানাটিরের উপকূলীয় পথ দিয়ে গিয়ে বৈরুত দখল করার পরিকল্পনা ছিল। এখান থেকে পশ্চিম দিক থেকে দামেস্ক আক্রমণ করে এমেসার মূল মুসলিম বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করতে বলা হয়।
৫। ভাহানের বাহিনীকে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয় এবং তাদের হামা হয়ে এমেসায় যেতে বলা হয়।


মুসলিমরা যে কৌশল করেন
রোমান বন্দীদের কাছ থেকে মুসলিমরা হেরাক্লিয়াসের প্রস্তুতির খবর পায়। তাই যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য খালিদ পরামর্শ সভা আহ্বান করেন। তিনি আবু উবাইদাকে পরামর্শ দেন যাতে ফিলিস্তিন ও উত্তর এবং মধ্য সিরিয়া থেকে মুসলিম বাহিনীকে ফিরিয়ে এনে এক স্থানে জমায়েত করা হয়। আবু উবাইদা তারপর বাহিনীগুলোকে জাবিয়ার নিকটের বিস্তৃত সমভূমিতে জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকার কারণে অশ্বারোহীদের আক্রমণে নিয়োজিত করা এবং খলিফা উমরের পাঠানো সেনা সহায়তা পৌছানোও সহজ ছিল। ফলে বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করার জন্য মজবুত বাহিনী গঠন সম্ভব হয়। মুসলিমদের একটি শক্তঘাটি নজদ থেকে এই স্থান নিকটে থাকায় প্রয়োজনে পিছু হটার জন্য স্থানটি সুবিধাজনক ছিল। বিজিত অঞ্চলের অমুসলিম বাসিন্দাদের প্রদত্ত জিজিয়া ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ প্রদান করা হয়। জাবিয়ায় জড়ো হওয়ার পর মুসলিমদেরকে বাইজেন্টাইনপন্থি গাসানি বাহিনীর হামলার স্বীকার হতে হয়। কাইসারিয়াতে একটি শক্তিশালী বাইজেন্টাইন বাহিনীর অবস্থানের কারণে সেই অঞ্চলে অবস্থান বিপজ্জনক ছিল। কারণ তার ফলে সামনের দিকে বাইজেন্টাইন বাহিনী ও পেছনের দিকে কাইসারিয়ার বাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। খালিদের পরামর্শে মুসলিমরা দারা এবং দাইর আইয়ুবে পিছু হটে ফলে ইয়ারমুকের গিরিসংকট ও হারা লাভা ভূমির মধ্যবর্তী ফাকা স্থান সুরক্ষিত হয় এবং ইয়ারমুকের পূর্ব অংশের সমভূমিতে ক্যাম্পের সারি স্থাপিত হয়। এই পদক্ষেপ প্রতিরক্ষার দিক থেকে শক্তিশালী ছিল ও মুসলিম এবং বাইজেন্টাইনদের মধ্যে চূড়ান্ত যুদ্ধে সহায়তা করে। সেসকল পদক্ষেপের সময় খালিদের মোবাইল গার্ডদের সাথে বাইজেন্টাইন অগ্রবর্তী বাহিনীর খন্ডযুদ্ধ ছাড়া কোনো লড়াই হয়নি।যুদ্ধক্ষেত্রটি বর্তমানে গোলান মালভূমির দক্ষিণপূর্বে সিরিয়ার হাওরান অঞ্চলে অবস্থিত। সেই উচ্চভূমি অঞ্চলটি গ্যালিলি সাগরের পূর্ব দিকে সিরিয়া, জর্ডান ও ইসরায়েলের সীমান্তে রয়েছে। ইয়ারমুক নদীর উত্তরদিকে সমতল ভূমিতে সেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তার পশ্চিম অংশ ওয়াদি উর রুক্কাদ নামক গভীর গিরিসংকট দেওয়া ঘেরা। এই জলধারার তীর খাড়া পাড় বেষ্টিত যার উচ্চতা ৩০ মি (৯৮ ফু)–২০০ মি (৬৬০ ফু)। উত্তরে জাবিয়া সড়ক এবং পূর্বে আজরা পাহাড় অবস্থিত। তবে সেই পাহাড়গুলো মূল যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে রয়েছে। কৌশলগতভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে ১০০ মি (৩৩০ ফু) উচু তেল আল জুমা একমাত্র লক্ষণীয় স্থান। মুসলিমরা এখানে জড়ো হয়। এখান থেকে ইয়ারমুক সমভূমির দৃশ্য ভালভাবে দেখা যেত। ৬৩৬ সালে যুদ্ধক্ষেত্রের পশ্চিমের গিরিখাত মাত্র কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রবেশযোগ্য ছিল। এখানে পারাপারের জন্য আইন দাকারের কাছে রোমান সেতু ছিল। ইয়ারমুকের সমতল ভূমিতে দুই বাহিনীর টিকে থাকার মত পানির সরবরাহ যথেষ্ট ছিল। অশ্বারোহীদের জন্য স্থানটি উৎকৃষ্ট ছিল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:২১

নিউ সিস্টেম বলেছেন: যতই পড়ছি ততই ভালো লাগছে আপনার লেখা ইতিহাস গুলো ।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩২

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নিউ সিস্টেম ।

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:২৯

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: পঠিত হয়েছে কিন্তু মন্তব্য নেই।। কারন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরই ভুলে যাই, ইতিহাস তো দুরের কথা!!

১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সচেতনহ্যাপী । আমাদের ওখানেই মূল সমস্যা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.