![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৌদি জোটের ১৩ শর্ত: দস্যুগিরির নিকৃষ্ট উদা
সৌদিতে ঘটে যাওয়া প্রাসাদ ক্যু নিয়ে লেখব লেখব করে আর লেখিনি। রমজানের এমন মুবারাক সময়গুলোকে এদের বস্তাপচা কাহিনী লিখে নষ্ট করতে মনে সায় দেয়নি। কিন্তু আজকে তাদের রাজনৈতিক দস্যুগিরি দেখে দুটি বাক্য হলেও লিখতে মনে বাধ্য করলো। তারা আজকে ১৩ দফা দাবীর যে লিস্ট দিয়ছে তাতে সৌদি আরবসহ তাদের দোসর দেশগুলোর রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বই প্রকাশ পেয়েছে। দেশগুলোর আচরণ দেখে মনে হচ্ছে এগুলোকে কোন মানুষের বাচ্চা নয়; বরং কতগুলো বেজন্মা গাধার বাচ্চা শাসন করছে। সোমালিয়ার জলদস্যুরাও নিশ্চিতভাবে এদের চেয়ে অনেক বেশী উদার। এদের শর্তগুলো দেখলে মনে হবে এরা এই যুগে নয়; বরং মধ্যযুগে বসবাস করছে, যখন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো গায়ের জোরে তাদের ইচ্ছে আরেক দেশের উপর চাপিয়ে দিতো। ইদানিং সৌদি রাজপরিবারের সব সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় ভোর রাত্রে। কাতারের উপর অবরোধ আরোপ, প্রাসাদ ক্যু এর মাধ্যমে বিন নায়েফকে সরিয়ে দেয়াসহ যাবতীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে হয়েছে ভোর রাতে। এর ধারাবাহিকতায় আজও কাতারের হাতে তাদের দুর্বৃত্তপনার নতুন ডকুমেন্ট ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ভোর রাতে। কাতারকে শর্ত দেয়া হয়েছে যে, এগুলো গোপন রাখতে হবে। কাতার যখন সেগুলো ফাঁস করে দেয় তখন আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন- কাতার আমাদের দাবিগুলো ফাঁস করে মূলত সংকট সমাধানের পথকেই রোধ করে দিলো।” কেন? ডাকাতের মতো আচরণ কেন? যদি সৎ সাহস থাকে, যদি তাদের দাবীগুলো যৌক্তিক হয় তাহলে তো দুনিয়ার সামনে বুক ফুলিয়ে বলতে পারে। এতো লুকুচুরির কী আছে? তাদের দাবীগুলো এবার দেখুন-
১. কাতারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনতে হবে। কাতারে ইরানি কূটনীতিক মিশন বন্ধ করে দিতে হবে। ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডদের বহিষ্কার করতে হবে এবং ইরানের কাছ থেকে সামরিক ও গোয়েন্দা সাহায্য নেওয়া বন্ধ করতে হবে। উপসগারীয় জোটের ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত না করে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ মেনে ইরানের সঙ্গে শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা যেতে পারে।
২. কাতারে নির্মিয়মাণ তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কাতারি ভূখণ্ডে তুর্কি সেনা অবস্থান বন্ধ করতে হবে।
৩. সকল ‘সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করতে হবে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুড, আইএসআইএল, আল-কায়েদা, ফাতেহ আল শাম (নুসরা ফ্রন্ট) এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
এর আগে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর যে তালিকা দিয়েছিল, তার ভিত্তিতে সেসব সংগঠনগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে কাতারকে। এমনকি ভবিষ্যতেও যদি এ তালিকার সঙ্গে আরো নতুন কোনো সংগঠন যুক্ত হয় সেক্ষেত্রেও এ কাজ করতে হবে।
৪. যেসব ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, বাহরাইন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলো সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেগুলোকে সব ধরনের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করতে হবে।
৫. সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন থেকে ‘পলাতক সন্ত্রাসী’ ‘ওয়ান্টেড ব্যক্তি’দেরকে সেসব দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাদের সব তথ্য সরবরাহ করতে হবে যেমন- তাদের অবস্থান, তারা কোথায় যাচ্ছেন, তাদের আর্থিক বিষয়াদি ইত্যাদি।
৬. আলজাজিরা এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে।
৭. সার্বভৌম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন থেকে পালিয়ে আসা অপরাধীদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এরকম যাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো বাতিল করতে হবে।
৮. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাতারের নীতির কারণে যেসব প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের অংকটা কাতারের সাথে সমন্বয় করে ঠিক করা হবে।
৯. ২০১৪ সালে সৌদি আরবে গৃহীত চুক্তির ভিত্তিতে অন্যান্য উপসাগরীয় ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারকে সামরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে জোট করতে হবে।
১০. অতীতে যেসব বিরোধীদেরকে কাতার সমর্থন জুগিয়েছে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাদি শেয়ার করতে হবে। সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সকল বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। যেসব বিরোধী গ্রুপকে এর আগে কাতার সমর্থন দিয়েছে তাদের তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
১১. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেসব সংবাদমাধ্যমগুলোকে সাহায্য দেওয়া হচ্ছে সেটা বন্ধ করতে হবে। যেমন- আরাবি ২১, রাসদ্, আল আরাবি, আল জাদিদ, মেকামেলিন, মিডল ইস্ট আই-এর মতো সংস্থাগুলো।
১২. কাতারের কাছে দাবিগুলো পেশের ১০ দিনের মাথায় সবগুলো দাবিতে সম্মতি জানাতে হবে। তা না হলে তালিকাটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
১৩. সবগুলো দাবি মেনে নিলে প্রথম বছরে মাসিক অডিটের জন্য সম্মতি দিতে হবে। দ্বিতীয় বছরে প্রতি চার মাসে একবার অডিট এবং তার পরবর্তী দশবছর বছরে একবার করে অডিটে সম্মতি দিতে হবে।
এই দাবীগুলো পড়ার পর কি মনে হয় যে এগুলো কোন সুস্থ মস্তিস্ক থেকে বের হয়েছে? রাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তপনার কতো নিম্মস্তরে নামতে পারলে এগুলো লেখা সম্ভব হয়! তারা তো তাদের ঘরের বউকেও এধরণের শর্ত মানতে বাধ্য করতে পারবেনা। তাদের অভিযোগ হচ্ছে কাতার তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এজন্য কাতারকে তারা শাস্তি দিচ্ছে। তাহলে এই দাবীগুলোর মাধ্যমে তারা কী করলো? তাদের যা করার বাকী ছিল তা হচ্ছে- একটি শেকল পাঠানো এবং তামীমকে তা গলায় পরার নির্দেশ দেয়া। কাতারকে নির্দেশ দিচ্ছে তুরস্কের সাথে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে। বিপরীতে তারা ইসরাইলের সাথে একই বিছানা শেয়ার করছে (একটি আরবি পত্রিকায় এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয়েছে)। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তো দূরের কথা, একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জন্যও তো এগুলো প্রযোজ্য না। চীন সরকারও এধরণের শর্ত তাইওয়ানকে মানতে বাধ্য করতে পারবেনা। ৮ নং টা দেখুন। কাতারের কারণে তাদের যা ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং তা নির্ধারণ করবে ওরা নিজেরাই। আমার তো মনে হয় ঔপনিবেশিক আমলের সবচেয়ে বড় ডাকাত রাষ্ট্রটিও এমন শর্ত দেয়নি।
শর্তগুলো ফাঁস হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্রূপের ঝড় উঠেছে। কাতারের ‘বাওায়াবাত আশ শারক’ পত্রিকার সম্পাদক বলেন- “এই দাবীগুলো তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বেরই প্রমাণ। কিছু গাঁজাখুরি বক্তব্য আর বাচ্চাদের খেলা ছাড়া আর কিছু নয়।” জাসেম আল হাবাবী নামে একজন লিখেছে- “আমার মনে হয় লিস্টটা এখনও অপূর্ণ, কারণ সবাই কিছু না কিছু চেয়েছে একমাত্র সিসি ছাড়া। তিনি ‘চাউল’ তলব করেন নি। সম্ভবত বেচারা ডাইট করছে।” আবু আব্দিল্লাহ নামে আরেকজন লিখেছে- “১৫ নং শর্ত হচ্ছে- কাতারের কোন নাগরিক এই চার রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া নিঃশ্বাসও নিতে পারবেনা। বিশেষ করে যখন পূর্ব দিক অর্থাৎ ইরানের দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়ে কাতারে ঢুকে তখন নিঃশ্বাস নিলে জরিমানা গুণতে হবে।” হামেদ নামে একজন লিখেছে- তাদের লেখার আর বাকী রইলো- কাতারের সকল নাগরিককে রাত ৯ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তে হবে। পাশাপাশি আমরা কী খাব, কী পরবো তাও রিয়াদ থেকে বলে দেয়া হবে। কী ভেবেছিস তোরা? কাতার কোন দিনই নতি স্বীকার করবেনা।” আরেকজন লিখেছে- আমি নিশ্চিত ওরা ওদের বউকেও এই শর্তগুলো মানাতে পারবে না।”
এখানে ক্ষোভ তো আছেই। কিন্তু ক্ষোভের চেয়েও দুশ্চিন্তার কারণ বেশী। কারণ এই ১৩ শর্তের মধ্য থেকে আবাল টাইপের কথাগুলো বাদ দিলেও কিছু কিছু কথা খুব সযত্নে ঢোকানো হয়েছে। দেখে মনে হয় যে এগুলো তেলআবিব বা ওয়াশিংটনে লেখা হয়েছে। মাথায় চাক্কাওায়ালা গর্দভগুলো দাবার ঘুঁটি মাত্র। আসল সুতো অন্যদের হাতে। এর মানে হচ্ছে সংকটের আসু কোন সমাধান হবে না। তারা নিজেরাও জানে যে, এই শর্তগুলো কাতার মানবেনা। কোন রাষ্ট্রের পক্ষে তা মানা সম্ভবও নয়। তারপরও এমন অসম্ভব শর্তারোপ করার মানে হচ্ছে তারা সহসাই এই সংকটের সমাধান চায় না। এর অর্থ হচ্ছে ঘটনার আসল টার্গেট কাতার নয়, বরং তাদের পরিকল্পনা আরও সুদুর প্রসারী। তুরস্কের সেনা উপস্থিতির বিষয়টি শর্তের মধ্যে উল্লেখ করার পর এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ থাকতে পারেনা। সৌদি আরবের প্রাসাদ ক্যুও এই পরিকল্পনার একটি অংশ। বিন সালমানের মতো এমন অনভিজ্ঞ ও অপরিণামদর্শী একজনকে ক্ষমতায় বসানোর মানে হচ্ছে আগামী ৫০ বছরের জন্য তারা মধ্যপ্রাচ্যের ছক এঁকে ফেলেছে এবং তার বাস্তবায়নও শুরু করে দিয়েছে। বিন সালমান এবং বিন যায়েদ এই দুই কুচক্রী যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আরব উপদ্বীপে আর শান্তি ফিরে আসবে না। কুয়েত, ওমান এবং কাতারকে অবশ্যই বিকল্প ভাবতে হবে। রাজনীতিতে স্থায়ী কোন শত্রু মিত্র নেই। তাই পুরনো শত্রু মিত্রের দেয়াল টপকাতে হবে। তা যত কঠিনই হোক না কেন.............copy,, , Muhammad Noman
©somewhere in net ltd.