নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিকতুহিন

আমার ব্লগ হবে গঠনমুলক ও সুশীল।

তৌফিকতুহিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মঙ্গলি।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯

আজকে ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়লো।সেবার আমাদের এলাকায় একটা কুকুরের জলাতঙ্ক দেখা দিলো।পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো।আমাদের প্রতিবেশী ইয়াজদানীদের গরুকে কুকুরটি কয়দিন আগে কাঁমড়ে দিয়েছিলো।ফলে সেই গরুটি সবার আগে আক্রান্ত হলো ,গরুটি হঠাত করে উম্মুত্তের মতো হিংস্র আচরন শুরু করতো,দড়ি ছিরে ফেলার উপায় করতো,তারপর হঠাত চার-পা ছড়িয়ে মাঠে শুয়ে পড়তো।



আমার আব্বা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লো আমাদের এবং আমাদের দুইটা গরু

নিয়ে।আমাদের কালো গাভীটার নাম ছিলো মংগলি।সে অত্যান্ত ক্ষিপ্ত মেজাজের এক গাভী ছিলো,আমাদের যে ছেলেটা গরু গুলো রক্ষনাবেক্ষন করতো তার নাম ছিলো ইউসুফ।আমি নিজে দেখছি আমার আব্বা অফিস থেকে আসলে আব্ববার গলা শোনা মাত্রই মঙ্গলির হাঁকডাক বেড়ে যেতো।আমার আব্বা তার গলায় হাত বুলিয়ে না দিলে সে কোনমতেই শান্ত হতো না।



সেই মঙ্গলিকে যেদিন কুকুরটা কাঁমড়াতে এলো সেদিনটার কথা বলি।সাধারনত জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুর থেকে সুস্থ কুকুর নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে।আর কারো পালা কুকুর এ রোগে আক্রান্ত হলে কেবল রোগের চুড়ান্ত আক্রমনের সময়েই সে মালিককে চিনতে পারে না,ফলে মালিককেও কামড়াতে আসে।কারন এ রোগ কুকুরের মস্তিস্কতে ছড়িয়ে পড়ে।



আমার আব্বা কুকুরটা আসছে খবর পেয়েই গরুর রশিটা খাটো করে বেধেছিলো,কারন গরু এই অবস্থায় মারাত্বক ভীত হয়ে অহেতুক ছোটাছুটি করতে চায়,এতে কামড়ের থেকে সে বাঁচতে পারে না।কারন কুকুরের সাথে

দৌড়ে পারা যায় না,উপরন্ত এটি পাগলা কুকুর।আমার আব্বা মঙ্গলিকে গলায় হাত বুলিয়ে খুব ধীর গলায় র-র-র বলে তার পাশে মোটা একটা মুগুর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।সাথে ইউসুফ,এই এক পোলা আছিলো দুর্দান্ত সাহসী।সে আমার আব্বাকে মারাত্বক বিশ্বাস করত।মঙ্গলি দাঁড়িয়ে থেকে থরথর করে কাঁপছিলো।আমার আব্বা পায়ের দিকটায় মুগুর নিয়ে আর ইউসুফ লাঠি নিয়ে মাথার কাছে।



এইসময়ই কুকুরটা আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো,সেটার মুখ দিয়ে লালা গড়াচ্ছিলো।আমার আব্বা অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায় চরম ধৈর্য্যের সাথে কুকুরটির দিকে লক্ষ্য রাখছিলো,কোনরকম তাড়াহুড়া দেখাচ্ছিলো না।কুকুরটা যখন কেবলি গরুর পিছনের পায়ের দিকে এগোতে লাগলো।আমার আব্বা বিদ্যুৎ বেগে সেটার মাথায় মুগুর দিয়ে আঘাত হানলো।কুকুরটা ছিটকে গিয়ে দূরে পরা মাত্রই ইউসুফ আর আমার আব্বা ক্রমাগত মাথায় আঘাত হেনে গুড়িয়ে দিলো।



এই মঙ্গলিকে নিয়ে গল্পটা শেষ করি।এর চার-পাঁচ বছর পর রাস্তা পেরোতে গিয়ে মঙ্গলিকে ট্রাক মাঝায় আঘাত করে পালিয়ে যায়।আমার আব্বা যখন অফিস থেকে ছুটে আসে তখনও মঙ্গলি প্রান হারায় নি।আমার আব্বা তার কাছে যায়,মঙ্গলির চোখে পানি কিন্তু সে আমার আব্বার হাত চেটে দেয়।আমি কখনো আমার আব্বাকে এর আগে চিৎকার করে কাঁদতে দেখি নাই।আমার আব্বা এই একটা চিতকারই দেয়।এরপর সারারাত ধরে নীরবে কেঁদে যায়।এরপর বাকী দুইটা গরুকে বাড়িতে কাকার কাছে পাঠিয়ে দেয়।আর জীবনে কখনো গরু পালেন নাই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫

গ্রাম্যবালিকা বলেছেন: দুঃখজনক।

ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা।

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯

শ্রাবন প্রধান বলেছেন: হায় রে !

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫

doha057 বলেছেন: পোষা প্রাণী হারানোর দুঃখ অসহনীয়, তাই এখন আর কিছু পুষতে ইচ্ছা করে না :(

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৬

মাক্স বলেছেন: পোষা প্রাণী মারা গেলে খুবই খারাপ লাগে :(

৫| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৬

ইলুসন বলেছেন: আগের যুগের মানুষের পোষা প্রাণীর জন্য যে মায়া ছিল আজকাল মানুষের জন্যও সেই মায়া দেখা যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.