নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বদলে দেওয়ার প্রয়াসে

অবুঝের মত কিছু শব্দ আসে, কালবৈশাখী ঝড়ের মত হৃদয়ে ঢেউ তোলে, তারপর অদৃশ্য হয়ে যায়......আর আমি তাদের খুঁজতে থাকি, হৃদয়ের পরম মমতায়.....! খুঁজে পাইনা জন্য বেঁচে থাকা, পেলে হয়ত মরে যেতাম....!

বি কে রায়

শুধু ভাবি আমি কে? কোথা থেকে আমার সৃষ্টি? আর কোথায় বা আমার শেষ?

বি কে রায় › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মার আর্তনাদ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

আজ আমার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। খুব অপেক্ষা করে আছি কাছের মানুষগুলো কি করে আজ দেখার জন্য। স্বর্গ নরক কোথাও যেতে চাইনি এই প্রিয় মানুষগুলোকে ছেড়ে। তবু দেহটাকে শেষ করে দিল মৃত্যুদূত, কিন্তু অনেক অনুরোধ করে অনুমতি নিয়েছি এই মনটাকে আর স্মৃতিগুলোকে জিইয়ে রাখার, একটি বছরের জন্য। আর আজ তার শেষ দিন। মৃত্যুর পরও কাছের মানুষগুলোর ভালোবাসা প্রত্যক্ষ করার লোভটা সামলাতে পারছি না।

কলেজে মিলাদের আয়োজন করেছে। পরীক্ষা রেখে বেশিরভাগ জুনিয়র মেয়েই যেতে চাচ্ছে না। ক্লাশমেটরা সবাই অবশ্য আসবে। সকাল থেকেই এরা গম্ভীর মুখে ঘুরছে। বেশীরভাগই নাকি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে আমাকে নিয়ে, অনেকে আবার আমার সাথে তোলা ছবি আপলোডও দিয়েছে। যে যার সাথে দেখা হচ্ছে আমার কথাই আলোচনা হচ্ছে। অনেকটা এরকম—

-আজ তো সমার মৃত্যুবার্ষিকী। মনে আছে?

-মনে থাকবে আবার, কাল থেকে শুধু ওর মুখটা মনে হচ্ছে!

-ভীষণ হাসিখুশী আর চঞ্চল ছিল। এত্ত খারাপ লাগছে! কোন পড়া পড়তে পারি নি।

-আমিও না। আজ আবার আইটেমও আছে। তোদের ব্যাচে কতদূ্র গেলো রে?

-খুব একটা হয়নি। নতুন ম্যাডাম আসছে তো।

-নতুন মিস্ কেমন রে? কোন বই ফলো করায়......

খুব কাছের যারা ছিল তারা অবশ্য সত্যিই পড়তে বসতে পারেনি। হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে উঠছে। আমার দেয়া জন্মদিনের গিফটগুলো বের করেছে। মোবাইলে গ্রুপ ছবিগুলো দেখে কত কাহিনী মনে পড়েছে ওদের। এইতো এই ছবিটাতে সমা নেই, এটা ও তুলে দিছিলো। তারমানে এই ছবিটাতে সমাকে অনেক মোটা দেখাচ্ছিলো বলে কি চিল্লায়ছিলো যে কেন ফেসবুকে দিছি। ব্যাচ বার্থডেতে এই পোস্টারটা ওর বানানো ছিল।

সবচেয়ে কাছের যেদুজন ছিলো এখানে, কাল রাত থেকে তারা সবার থেকে দূ্রে। একজন একটানা কাঁদছে ছাদে দাঁড়িয়ে। এই ক্যাম্পাসে আসার পর থেকে আমরা একসাথে। পাশাপাশি রোল, পাশাপাশি বেড। একসাথে ছাড়া রুমে উঠবো না, তাই আমরা পুরো গণরুমে একলা থেকে গিয়েছিলাম। সারাটা দিন একটা আরেকটার পিছে লেগে থাকতাম! কষ্ট হয় না রে?

আগে তো ঘুম থেকে উঠে সবার আগে দেখতি আমি ঘুমাচ্ছি কিনা, ঘুমালে আবার তুইও শুয়ে যেতি। এখন আর তোকে রাতে বাথরুমে যাওয়ার সময় ঘুম থেকে কেউ ডেকে তোলে না, তোকে কেউ তো আর ধুমসি, মোটি বলে খেপায় না, তোকে নতুন কেউ প্রপোজ করলে সারাদিন সেটা নিয়ে তোর সাথে শয়তানি করে না, ভালো আছিস না বল? তাইলে এসব ভেবে কাঁদছিস কেন রে বদ? আরেকজন সকাল থেকে জায়নামাজ়ে, দোয়া চেয়ে যাচ্ছে আমার শান্তির জন্য কাঁদতে কাঁদতে, তোরা এত ভালোবাসলে কিভাবে তোদের ছেড়ে শান্তি পাবো বল? শোন মাত্র তো দুটা বছর পরিচয়, আস্তে আস্তে আমার স্মৃতি ঝাপসা হয়ে যাবে, তখন এত খারাপ লাগবে না।

শেষবারের মতো আমার রুমটা হয়ে যাই। ও! জুনিয়র এক মেয়ে উঠেছে দেখা যায় আমার বেডে। পড়ার টেবিলটা ঠিকমতো সেট করতে পারেনি, আমারটা ছিল জানালার পাশে, তাইলে পড়তে পড়তে আকাশ দেখা যেতো! আর ঐখানে থাকতো আলমারিটা। কত আপন ছিল জায়গাটা। ক্লাশ শেষ করে এসে লম্বা হয়ে শুইয়ে যেতাম।

ধ্যাৎ! কি নোংরা করে রেখেছে এই মেয়েটা! যাক! আমার আর মায়া রেখে কি হবে! এটাতো এখন ওর জায়গা, যা খুশী তা করবে! কলেজটা শেষবারের মতো ঘুরে যাই। কত স্মৃতির যায়গা এইগুলো! ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা, মারামারি, জুটি দেখলে কমেন্ট করা, আবার মন খারাপ করে কখনো একাই এসে বসে থাকা। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে জায়গাটা যেখানে ঘাতক ট্রাক কেড়ে নিয়েছিল আমাকে। সবার থেকে দূ্রে। প্রথমে অস্তিত্ব থেকে, পরে মন থেকে। স্কুল কলেজের ফ্রেন্ডদের বেশিরভাগেরই মনে নেই। অনেকের আবার কারো স্ট্যাটাস দেখে মনে পড়ে বড়সড় রকমের র্দীঘশ্বাস পড়ছে। বাদ দেই এদের কথা।

এই একটা বছরে ও একটুও ভুলতে পারেনি আমাকে! এখনো সকাল হলে ঘুম থেকে উঠে হাত বাড়ায় আমাকে ফোন দিয়ে ঊঠাবে বলে! আমি আবার তার টোন না শুনে উঠতাম না। যখন ঘুমের রেশটা কাটে স্তব্ধ হয়ে যায়। মোবাইলে আমার ছবি বের করে হাত বুলাতে থাকে আর তার চোখের জল ফোঁটায় ফোঁটায় ভিজিয়ে দেয় আমাকে। তারপর ওর মা চলে আসলে চোখ মুছে উঠে যায়, সারাটাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমার কথা ভেবে ভেঙে পড়ে। আমার মোবাইল নাম্বারে, ই-মেইলে এত বড় বড় ভালোবাসার কথা লিখে পাঠায়। কখনো বা গিয়ে বসে আমাদের দুজনের প্রিয় জায়গাগুলোতে। হাত দিয়ে র্স্পশ করে মাটিগুলো, আমার ছোঁয়া কি এখনো ধরে রেখেছে নাকি এই মাটি? সে তো আর আমাকে তোমার মতো ভালোবাসেনি গো, তাই তো তোমার মতো আজো আগলে রাখে নি। রাতে বাসায় ফিরে আর ভাইয়ের সাথে খুনসুটিতে মাতে না, নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে বা ছাদে চলে যায়।

আচ্ছা, মানুষ মরে গেলে তো নাকি তারা হয়ে যায়, তুমি তারার মাঝে আমাকে খুঁজে পাও? তাইলে উপরের দিকে চেয়ে কেন অভিযোগ করতে থাকো যে কেন তোমাকে একা রেখে চলে গেলাম, এমন তো কথা ছিলো না। ছেড়ে যেতাম না গো, কিন্তু মৃত্যুতো সব কথার উর্ধে, কি করবো আমি বল? এই একটা বছরও তোমার পাশেই ছিলাম, প্রতিটা দিন তোমাকে শুধু কষ্ট পেতেই দেখিছি, আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার জন্য এত কাঁদছে, এই অপরাধবোধটা নিয়ে চলে যাচ্ছি। যাবার আগে তোমার হাতটা একবার ধরতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেই ক্ষমতা নিয়ে তো আসি নি গো। চলি!

এই শোন, আমি আজও তোমায় অনেক ভালোবাসি।

আরেকজন ছিল আমার সুখ দুঃখের সাথী। বারটা বছর ধরে একসাথে ছিলাম। একসাথে বড় হয়েছি, একসাথে পড়েছি, একসাথে হেসেছি, একসাথে কেঁদেছি। খুব গর্ব করে সবাইকে বলতো, আমি আর সমা জীবনেও আলাদা হবো না, দেখিস।

তোর কথার দামটা রাখতে পারিনি রে। অনেক অনেক ভালোবাসতো আমাকে। কিসে আমার ভালো, কিসে আমার খারাপ তা নিয়ে খুব ভাবতো। আমাকে এত ভালো বুঝতো যে, হঠাৎ আমাকে হারিয়ে থেমে যায়নি ও, কিন্তু হাপিয়ে উঠেছে। এখন আর সারাদিনের কথা কাউকে বলতে পারেনা, এমনিতে চুপচাপ, আরো গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে। ওর সাথেও অনেক পাগলামী করতাম, অনেক ভুলভাল কাজ করে আশ্রয় নিতাম ওর কাছে, ও আগলিয়ে নিতো। আগে লম্বা চিঠি দিতো আমাকে, আমিও দিতাম, সে সেগুলো খুব যত্ন করে পড়ে, হাতের লেখা ছুঁয়ে আমাকে অনুভব করতে চায়, চোখের জলে চিঠির জায়গায় জায়গায় দাগ পড়ে গেছে। কিন্তু আমাকে হারিয়ে ওর মনে যে দাগটা পড়েছে সেটা তো আরো অনেক গাঢ়, এই জীবনেও তা মুছবে না। বাড়ি এসে এখন আর কোথাও ঘুরতে যায়না একা, রিকশায় উঠলেই তো সব স্মৃতি জাপটে ধরে, তাই পালিয়ে বেড়ায়। তুইও ভালো থাকিস, সামনে তোর আরো অনেক সুখের দিন আসবে, থাকতে পারবো না তাই ঐদিনগুলোতে আমাকে ভেবে একটু কষ্ট পাস, বেশি না কিন্তু। কারণ কষ্ট নিয়েও কিভাবে হাসতে হয় আমি শিখিয়েছি না?

এখন যাব আমাদের বাসায়। যেখানে আমার মা-বাবা দেহটা নিয়ে শুধু বেঁচে আছে, কিন্তু মৃতপ্রায়। আমি মারা যাবার পর মা এখনো একটুও কাঁদে নি। কত চেষ্টা করলো সবাই, কিন্তু মা স্তব্ধ। এবং আজো। শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। বাবা চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছে, কার জন্য করবে আর। একমাত্র মেয়েকে মানুষ করতে সব কষ্ট করতো। এখন তো রিটায়ার্ডের টাকাতেই বুড়োবুড়ির চলে যাবে। সারাদিন আমার রুমটাতে ঘোরাঘুরি করে। আমার বই, পুতুল, হারমনি, গিটার, কম্পিউটার সব কিছু মুছে প্রতিদিন। আমার বালিশটা কাছে নিয়ে গন্ধ নেয়। বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে। এসে তার কান্না থামানোর কেউ নেই। এখন কেউ তো আর তার সাথে খবর দেখার সময় খেলা দেখার জন্য চিল্লায় না, খবরের কাগজ নিয়ে টানাটানি করে না। বাবা আবার তোমার সাথে দুষ্টামি করতে মন চায়, তোমার আদর পেতে মন চায়। বাসায় একা একা সারাদিন ঘুরঘুর করে বাবাটা আমার। মার কাছে যায়, হাত বুলিয়ে দেয় মায়ের মাথায়। কাঁদতে কাঁদতে কত কথা বুঝায়, কিন্তু মা স্তব্ধ।

ঐদিনের পর থেকে একটি কথাও বলেনি মা, কাজের মহিলাটা গোসল করিয়ে দেয়, তরল খাবার খাইয়ে দেয়, মাঝে মাঝে গিলে, মাঝে মাঝে মুখে নিয়েই বসে থাকে। তবে একটা কাজ করে, আমার ছবি নিয়ে কি যেন বিড়বিড় করে। যে মেয়েকে কষ্টের ছাঁচটুকু লাগতে দাওনি সে আজ কতো কষ্ট দিচ্ছে তোমায়। মা গো পারিনি মানুষ হয়ে তোমার কাছে ফিরে আসতে, পারিনা তোমার শূণ্য কোল ভরিয়ে দিতে, কিন্তু তোমাকে যে কাঁদাতে হবে, নাইলে আমি চলে গিয়ে শান্তি পাবো না। তুমি তো মা, কাছে গেলে আমার অস্তিত্ব তুমি ঠিক বুঝতে পারবে, তাই না? এই ভেবে মায়ের পাশে গেলাম আমি, খুব কাছে, শুধু ছুঁতে পারলাম না। মা তবুও স্তব্ধ, একটুপর যেন হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠলো। তারপর চিৎকার করে কেঁদে বলে উঠলো, এই দেখো সমা আসছে, সমা আসছে, তুমি এসে দেখো সমা আসছে।

বাবার ছুটে আসার শব্দ পাচ্ছি। আমার কাজ শেষ, আমাকে যেতে হবে মা, আমি গেলাম।



( সংগৃহীত )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯

আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: দুঃখময় স্মৃতি.............. :|

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২২

বি কে রায় বলেছেন: আমাবর্ষার চাঁদ আপনি ঠিকই বলেছেন, এমন দুঃখ যেন আর কারো ভাগ্যে না আসে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.