নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সাধারণ মুসলমানের ব্লগে স্বাগতম

হ্যা আমি সেই সত্যবাদীকে সত্যবাদী মনে করি

সাধারণ মুসলমান

একজন সাধারণ মুসলমান। সাধারণ মানুষ কি বলতে কি বলি তাই জ্ঞানী লোকদের উপকারী কথা শেয়ার করে আপনাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।

সাধারণ মুসলমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে যা না জানলেই নয়

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৭

কাদিয়ানী মতবাদের সাথে ইসলামের বিরোধ কোথায় এবং কেন সচেতন মুসলিম সমাজ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি করে-এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে কয়েকটি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া প্রয়োজন।



ইসলামের মৌলিক আকীদা



আল্লাহ তাআলা মানব জাতির যোগ্যতা ও উপযোগিতা হিসাবে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (অর্থ) ‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’’ (সূরা মায়েদা : ৩) পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, (অর্থ) ‘‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’’-সূরা আহযাব : ৪০





রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যান্য নবীর মুকাবিলায় আমাকে ছয়টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা হয়েছে, ১. আমাকে অল্প কথায় বেশি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, ২. আমাকে গাম্ভীর্যজনিত প্রতাপ-প্রতিপত্তি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, ৩. আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, ৪. সমগ্র ভূপৃষ্ঠকে আমার জন্য নামায পড়ার উপযোগী জায়গা ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ হিসেবে স্থির করা হয়েছে, ৫. আমাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে, ৬. আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম, মাসাজিদ, হাদীস : ৫২৩)



অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার ও নবীদের উদাহরণ এমন একটি প্রাসাদ, যা খুব সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে, তবে তাতে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ সে ঘর ঘুরে ফিরে দেখে, আর ঘরটির সুন্দর নির্মাণ সত্ত্বেও সেই একটি ইটের খালি জায়গা দেখে আশ্চর্য বোধ করে (যে, এতে একটি ইটের জায়গা কেন খালি রইল!) আমি সেই একটি ইটের খালি জায়গা পূর্ণ করেছি। আমার দ্বারা সেই প্রসাদের নির্মাণ পরিসমাপ্ত হয়েছে, আর আমার দ্বারা রাসূলদের সিলসিলা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’’ অপর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আমি হলাম সেই খালি জায়গার পরিপূরক ইটখানি। আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’’ (সহীহ বুখারী ১/৫০১; সহীহ মুসলিম, ২/২৪৮) অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের কর্মকান্ডে নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা দান করতেন। যখন তাদের এক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নিতেন, তাঁর জায়গায় আর একজন নবী অধিষ্ঠিত হতেন। কিন্তু আমার পরে কোনো নবী আসবেন না। তবে আমার পরে খলীফা হবে এবং তারা সংখ্যায় অনেক হবে।’’-সহীহ মুসলিম, ইমারা, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৮৭



এরূপ অগণিত কুরআনের আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকীদা এই যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানব জাতির হেদায়াতের জন্য প্রেরিত সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী প্রেরিত হবেন না।



গোলাম আহমদ কেন নবী নয়?



এ প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রথমত উল্লেখ্য যে, ইসলামের উপরিউক্ত মৌলিক ও অকাট্য আকীদার উপস্থিতিতে কেউ যদি নবী হওয়ার দাবি করে তবে সেটা মুসলিম সমাজের নিকট মিথ্যা বলে সাব্যস্ত হবে এবং তা



আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। শুধু তাই নয়, এরূপ দাবি পোষণকারী ব্যক্তি ইসলামের সর্ববাদী বিশ্বাস মুতাবিক মুসলিমই নয়; বরং সন্দেহাতীতভাবে কাফের। সুতরাং গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এরূপ দাবি করার কারণে সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী ও কাফের-এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদীর জন্ম হবে। তাদের প্রত্যেকে নিজেকে নবী বলে দাবি করবে। অথচ আমি হলাম সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোনো নবীর আগমন হবে না।’’-আবু দাউদ, ফিতান, পৃ. ৫৮৪; তিরিমিযী, খন্ড ২, পৃ.৪৫



উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে বিশ্বাস করা মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যার এ বিশ্বাসে ত্রুটি রয়েছে, তার ঈমান বহাল থাকার কোনো অবকাশ নেই।



দ্বিতীয়ত ধরে নেওয়া যাক যে, যদি আল্লাহ তাআলা মানব জাতির প্রতি নবী প্রেরণের সিলসিলা বন্ধ না করে অব্যহত রাখতেন তবু কুরআন, হাদীস ও পূর্ববর্তী নবীগণের জীবনেতিহাস পর্যালোচনা করলে যে শিক্ষা পাওয়া যায় তাতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বা তার মত স্বভাব-চরিত্রের কোনো লোক নবী হওয়ার জন্য অযোগ্য প্রমাণিত হয়। এ বিষয়টি সহজে বোধগম্য করার জন্য এখানে চারটি মৌলিক নীতিমালা পেশ করা হচ্ছে। এ নীতিগুলো ‘‘দুয়ে দুয়ে চার’’-এর মত সতত সিদ্ধ ও স্বীকৃত সত্য।



প্রথম মৌলিক নীতিটি এই যে, প্রত্যেক সত্যবাদী নবী তাঁর পূর্ববর্তী সকল নবীর প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখেন এবং অন্যদেরও সকল নবীর সম্মান ও মর্যাদার প্রতি যত্নশীল থাকতে শিক্ষা দেন। কেননা, প্রত্যেক নবী হলেন আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি। তাই কোনো মুসলমান কোনো নবী-রাসূলের প্রতি এরূপ কোনো আচরণ করতে পারে না, যা নবীর জন্য অসম্মানজনক ও অমর্যাদাকর। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহ তাআলার একজন সত্যবাদী মহান নবী হযরই ঈসা আ. সম্পর্কে অত্যন্ত অশোভনীয় কটূক্তি করেছে। এখানে তার একটি উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। সে তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে বলেছে, ‘‘মাসীহের সততা তার সময়কার অন্যান্য সৎ লোকের চেয়ে বেশি বলে প্রমাণিত হয় না; বরং তার চেয়ে ইয়াহইয়া নবীর মর্যাদা এক গুণ বেশি। কেননা, সে মদপান করত না এবং কোনো ব্যভিচারিণী নারী নিজের ব্যভিচার থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা সুগন্ধি ক্রয় করে তার মাথায় মালিশ করেছে এমন কোনো কথা তার ব্যাপারে শোনা যায় নি। অথবা এমনও জানা যায়নি যে, এরূপ কোনো নারী নিজের হাত বা মাথার চুল দ্বারা তার শরীর স্পর্শ করেছিল অথবা কোনো আনাত্মীয় যুবতী নারী তার সেবা করত।



এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইয়াহইয়াকে হাসূর (নারী বিরাগী) বলেছেন। কিন্তু মাসীহের এ নামকরণ করা হয়নি। কেননা, উক্তরূপ ঘটনাবলী এরূপ নামকরণের অন্তরায় ছিল।’’



উপরোক্ত উদ্ধৃতিটুকুতে গোলাম আহমদ কায়িদানী হযরত মাসীহ ইবনে মরিয়ম আ.-এর প্রতি কয়েকটি অপবাদ দিয়েছে। তারমধ্যে একটি হল, তিনি মদ পান করতেন। দ্বিতীয় হল, তিনি ব্যভিচারিণী নারীদের অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত সুগন্ধি তাদের দ্বারা মাথায় লাগাতেন এবং তাদের হাত ও চুল দ্বারা তার নিজের শরীর স্পর্শ করাতেন। তৃতীয় হল, অনাত্মীয় যুবতী নারীদের সেবা নিতেন।



হযরত ঈসা আ.-এর মত একজন মহান নবীর প্রতি এসব অশ্লীল ও কদর্য অপবাদ আরোপ করার পর সে এ রায়ও দিয়েছে যে, এসব ঘটনার কারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র কুরআনে ‘হাসূর’ (নারী বিরাগী) বিশেষণ দ্বারা বিশষায়িত করেননি।



যে কোনো নবীর মর্যাদা তো অনেক উর্দ্ধে, একজন সম্ভ্রান্ত ও ভদ্র মানুষের প্রতি এরূপ অপবাদ আরোপ করা নিশ্চয় তাঁর জন্য অতি অপমানকর। যার মধ্যে অণুপরিমাণও ঈমান আছে, এমন কোনো ব্যক্তি কোনো নবী সম্পর্কে এরূপ অশ্লীল অপবাদ দিতে পারেন না।



কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে থাকে যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এসব কথা নাকি খৃস্টান পাদ্রীদের জবাবে তাদের উপর চাপ প্রয়োগার্থে লিখেছে। এটা তাদের নিছক মিথ্যা প্রলাপ ও প্রতারণা। কেননা, ‘দাফেউল বালা’ নামক বইটি মুসলমান আলেমদের উদ্দেশ্যে রচিত। যার ইচ্ছা বইটি যাচাই করে দেখতে পারে। এছাড়াও সে ‘যমীমায়ে আঞ্জামে আথম’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘তার (ঈসা আ.এর) খান্দানও ছিল অতি পূত পবিত্র (?)। তার তিনজন দাদী-নানী ছিল ব্যভিচারিণী ও পেশাদার পতিতা। তাদের রক্ত থেকে সে জন্ম লাভ করেছে। হয়ত এটাও খোদা হওয়ার একটি পূর্বশর্ত হবে! পতিতাদের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ও দহরম-মহরম সম্ভবত তাঁর উত্তরাধিকারের রক্তের টানেই হয়ে থাকবে। অন্যথা কোনো সৎ পুরুষ একজন যুবতী পতিতাকে এ সুযোগ দিতে পারে না যে, সে নিজের নাপাক হাত তার মাথায় লাগাবে এবং পতিতাবৃত্তি থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত অপবিত্র সুগন্ধি তার মাথায় মালিশ করবে, আর নিজের মাথার চুল তার পায়ে ঘষবে। সুধীজন বুঝে নিন, এরূপ লোক কোন চরিত্রের!’’ (যমীমায়ে আঞ্জামে আথম, পৃ. ৭)



উপরে উদ্ধৃত অংশটুকুতেও মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সেই বক্তব্যই পেশ করেছে, যা সে তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে বলেছে। ‘যামীমায়ে আঞ্জামে আথম’ বইটি যদিও খ্রিস্টান পাদ্রীদের জবাবে লেখা বটে, তবে তার পূর্বোক্ত বক্তব্যের সাথে এটাকে সংযুক্ত করলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এসব বক্তব্য কেবলই কারও মুখ বন্ধ করার জন্য বলা হয়নি; বরং এটা তার মনের কথা। কেননা, সে ‘দাফেউল বালা’র এক জায়গায় বলেছে, ইবনে মরিয়মের আলোচনা ছাড়, গোলাম আহমদ তার চেয়ে উৎকৃষ্ট।’’ (পৃ. ২)



দ্বিতীয় মৌলিক নীতি এই যে, আল্লাহ তাআলার প্রেরিত কোনো নবী নিজের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না। তাঁরা সব সময় সত্যের উপর অটল-অবিচল থাকেন। কিন্তু মির্জা গোলম আহমদ কাদিয়ানী এক্ষেত্রে অবলীলাক্রমে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এর অগণিত উদাহরণ রয়েছে। এখানে প্রবন্ধের কলেবরের প্রতি লক্ষ্য করে একটি মাত্র উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। মির্জা গোলাম আহমদ তার ‘আরবাঈন-৩’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসূরী ও মৌলবী ইসমাঈল আলীগড়ী নিজ নিজ বইতে আমার (গোলাম আহমদের) ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে যে, আমি যদি মিথ্যাবাদী হই, তবে তাদের আগে মারা যাব। তাদের দাবি মতে আমি যেহেতু মিথ্যাবাদী তাই আমি অবশ্যই আগে মারা যাব। তাদের এ বইগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর অতি দ্রুত তারা মারা গেছে।’’ (আরবাঈন-৩, পৃ. ১১) উপরে উদ্ধৃত অংশে মরহুম মৌলবী গোলাম দস্তগীর কাসূরী ও মৌলবী ইসামঈল আলীগড়ী সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহম কাদিয়ানী যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এতে সত্যের বিন্দু-বিসর্গও নেই। তারা এ ধরনের কোনো কথা তাদের বইতে বলেননি। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জীবদ্দশায় স্বয়ং তাকে এবং তার প্রয়াণের পর তার অনুসারীদেরকে বহুবার এ চ্যালেঞ্জ পেশ করা হয়েছে যে, যদি উক্ত আলিমদ্বয় এরূপ কোনো কথা তাদের কোনো বইতে লিখেছেন বলে কোনো প্রমাণ তোমাদের কাছে থেকে থাকে তবে পেশ কর। কিন্ত তারা আজ পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি এবং কিয়ামত পর্যন্তও দেখাতে পারবে না। (কাযিবাতে মির্জা পৃ. ৭৩)



মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এরূপ মিথ্যাচার প্রচুর। পাঠক জেনে হয়ত আশ্চর্যবোধ করবেন যে, তার বিভিন্ন রচনাবলী থেকে তার মিথ্যাচারগুলো সংকলিত করা হলে বেশ বড়সড় একটি বই হতে পারে। এটা শুধু মুখের কথা নয়; বাস্তবেও যথাযথ উদ্ধৃতিসহ মির্জার মিথ্যাচারের একাধিক সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। তারমধ্যে উর্দূ ভাষায় সংকলিত ‘কাযিবাতে মির্জা’ বইটি বেশ প্রসিদ্ধ। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৭৯; সংকলক মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহিদ মাখদূম।



তৃতীয় মৌলিক নীতি এই যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এবং সে দাবি করেছে যে, সে সত্যবাদী নবী। এটা প্রমাণ করার জন্য তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হবে। আর তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদি সত্যে পরিণত না হয় তবে সে মিথ্যবাদী বলে সাব্যস্ত হবে। আল্লাহ তাআলার বিশেষ ফজল ও করম যে, তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা প্রমাণিত করে তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে দিয়েছেন।



উল্লেখ্য যে, যেখানে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও অসংখ্য হাদীসে এ ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেছেন আর এ থেকে প্রমাণিত আকীদার উপর মুসলিম সমাজের ঈমান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে যে-ই নবী হওয়ার দাবি করুক এবং তার হাতে যত অলৌকিক ঘটনাই প্রকাশ পাক, তাকে কোনো মুসলিম সত্যবাদী নবীরূপে বিশ্বাস করতে পারে না, বরং সে এরূপ যে কোনো অলৌকিক কর্মকান্ডকে দাজ্জালের অলৌকিক কর্মকান্ডের মতই মনে করবে। এ ছাড়া জাদুকরদের কাছেও এ অলৌকিক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়, তাতে কেউ তাদের নবী বলে স্বীকার করে না। তেমনি মির্জা গোলাম আহমদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদি সত্যও হত তবু সে নবী বলে প্রমাণিত হত না। তবু আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি তার সত্য-অসত্যের মাপকাঠিরূপে উপস্থাপিত ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে অসত্য প্রমাণিত করে তাঁর দুর্বল ঈমানের অধিকারী বান্দাদেরকে এ পরীক্ষা থেকে রক্ষা করেছেন। এখানে আমি কেবল তার দুটি ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করব, যেগুলোর মাধ্যমে সে অকাট্যরূপে মিথ্যাবাদী সাবস্ত্য হয়েছে। একটি হল, ডেপুটি আবদুল্লাহ আথম নামক জনৈক খ্রিস্টানের মৃত্যু সংক্রান্ত। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেছে যে, ‘‘আথম ৫ জুন ১৮৯৩ঈ. থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ঈ. পর্যন্ত অর্থাৎ পনেরো মাস সময়ের মধ্যে মারা যাবে।’’ তারপর পুনরায় ১৮৯৩ ঈ. সালের সেপ্টেম্বরে এ ঘোষণা দিয়েছে যে, ‘‘তার বেঁধে দেওয়া সময় সীমা অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই মারা যাবে।’’



উল্লেখ্য যে, তখন আথমের বয়স ছিল সত্তরের কাছাকাছি। এসময় তার মারা যাওয়া বিচিত্র কিছু ছিল না। সে ভরসা করেই হয়ত মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এরূপ উক্তি করার সাহস পেয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাআলার মর্জি ছিল ভিন্ন রকম, মির্জা গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা, তাই সে বয়ঃবৃদ্ধ আবদুল্লাহ আথম গোলাম আহমদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে মারা যায়নি; বরং তার পরও প্রায় দু’বছর বেঁচে থেকে ২৭ জুলাই ১৮৯৬ঈ. মারা যায়। মির্জা গোলাম আহমদ যেহেতু উক্ত ভবিষ্যদ্বাণীটিকে তার সত্য ও অসত্য হওয়ার মাপকাঠিরূপে পেশ করেছে, তাই তার বেঁধে দেওয়া সময়সীমার পরে আথম যতদিন জীবিত ছিল, তার প্রতিটি মুহূর্ত গোলাম আহমদকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার সাক্ষ্য বহন করেছিল।



আর তার একটি ভবিষ্যদ্বাণী হল মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ সংক্রান্ত। এটি তার সবচেয় প্রসিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। এটাকে সে তার বইপত্রে নিজের সত্যতার মাপকাঠি হিসেবে পেশ করেছে। মির্জা গোলাম আহমদের এক আত্মীয় ছিল মির্জা আহমদ বেগ। ভারতের হুশিয়ারপুরের অধিবাসী। অনিন্দ্য সুন্দরী মোহাম্মাদী বেগম তারই কন্যা। মির্জা গোলাম আহমদের মনে তাকে বিয়ে করার আগ্রহ জাগে। একদিন সে কন্যার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু আহমদ বেগ সম্মত হননি। মির্জা গোলাম আহমদ মির্জা আহমদ বেগকে প্রভাবিত করার জন্য জোরে শোরে দুটি কথা ঘোষণা করতে থাকে। একটি হল, মুহাম্মাদী বেগম তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এটা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম দ্বারা জানতে পেরেছে। দ্বিতীয়টি হল, কন্যার পরিবার যদি এতে অমত পোষণ করে তবে তারা নানা রকম বিপদ-আপদে আক্রান্ত হবে। মুহাম্মাদী বেগমের উপরও বিপদ আসবে। মির্জা গোলাম আহমদ এসব কথা তার চিঠিপত্রে, বইপুস্তকে ও প্রচারপত্রে এত জোরে শোরে লিখতে শুরু করল যে, আহমদ বেগ যদি কোনো কাঁচা মানুষ হতেন তবে ভয়ে কন্যা দান করেই বসতেন। কিন্তু তিনি এসবে প্রভাবিত হননি; বরং তিনি নিজের অমতের উপর অবিচল থাকলেন। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে যায়, আর মির্জা গোলাম আহমদ মুহাম্মাদী বেগমকে বিয়ে করার জন্য নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। এক পর্যায়ে লাহোরের অধিবাসী সুলতান মুহাম্মাদ নামক এক লোকের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ ঠিক হয়ে গেলে এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার জন্য মির্জা গোলাম আহমদ অনেক আশ্চর্য রকমের চেষ্টা-তদবির শুরু করে। যখন তার সকল চেষ্টা-তদবির ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন সে তার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহর ইলহামের বরাত দিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করে। তাতে সে বলে যে, যদি সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিয়ে হয় তবে বিয়ের পর আড়াই বছরের মধ্যে মুহাম্মাদী বেগমের পিতা মির্জা আহমদ বেগ মারা যাবে। আর মুহাম্মাদী বেগম বিধবা হয়ে তার বিবাহ বন্ধনে আসবে। আল্লাহর লীলা, সুলতান মুহাম্মাদের সাথে মুহাম্মাদী বেগমের বিবাহ হয়ে যাওয়ার পরও মির্জা গোলাম আহমদের পূর্ব ভবিষ্যদ্বাণী আরো জোরে চলতে থাকে। সে বলতে থাকে যে, এটা অদৃষ্টের অলঙ্ঘনীয় লেখা, কেউ এটাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। সুলতান মুহাম্মাদ মারা যাওয়ার পর অবশ্যই মুহাম্মাদী বেগম তার স্ত্রী হবে। যদি এটা না হয় তবে সে মিথ্যাবাদী ও নিকৃষ্টতম জীব বলে সাব্যস্ত হবে। (আঞ্জামে আথম ও তার যমীমা) কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার এসব ধোঁকাবাজিকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং তার দম্ভ, অহঙ্কার ও দাবিকে



গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর মুখপত্র

মাসিক আলকাউসার

ফেব্রুয়ারি ২০১৩, রবিউল আওয়াল-রবিউস সানী ১৪৩৪

কাদিয়ানী ধর্মমত : সমস্যা উপলব্ধি ও সমাধানের সহজ পথ

মাওলানা আহমদ মায়মূন

থেকে



[ইসলামবিরোধী অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের পরিচয় দেয় ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাত’ বলে। এ মুখোশের আড়ালে তারা তাদের বর্ণচোরা ও প্রতারক চরিত্রতটিকে সক্রিয় রাখে। বাংলাদেশে কাদিয়ানী তৎপরতার ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে নিজেদের কর্মকান্ড ও ‘কৃতিত্বের’ বর্ণনা তুলে ধরেছে। এতে নতুন করে সরলপ্রাণ বহু মুসলিমের প্রতারিত হওয়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে। আমরা তাই কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস, মিথ্যাচার ও প্রতারণার প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরতে মাসিক আলকাউসার-এর ২০০৫ সালের মে সংখ্যায় প্রকাশিত এ নিবন্ধটি পুনঃমুদ্রণ করছি।-সম্পাদক]

http://www.alkawsar.com/

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

চ।ন্দু বলেছেন: কাউকে অমুসলিম ঘোষণা করার দাবীর পক্ষে আমি কখনও নই এবং ইসলাম এটাকে সাপোর্ট করে না। তবে আপনি বেঁছে বেঁছে গোলাম আহমেদের দোষগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন যা নিতান্তই দৃষ্টি কটু। মুসলমান হিসেবে মানুষের ভাল দিকটাই আমাদের বলা উচিৎ আর ঐ ব্যক্তিটি এখন মৃত- আর আল্লাহ অবশ্যই ন্যায় বিচারক। প্রতিটি মানুষই তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে।

এই আমলে, যখন জ্ঞান সহজলভ্য, তখন সহজে কোন মানুষকে আপনি আপনার মতামতকে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারবেন না, যদি না উপযুক্ত তথ্য প্রমান সরবরাহ করেন। আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি, যারা কাদিয়ানী, তারা কি ঘাস খায়? তাদের মধ্যে কোন বোধ শক্তি নেই? আপনি বলেন তো কেন তারা মুসলিম পরিবারের মধ্যে থেকেও পরবর্তীতে কাদিয়ানী হয়েছে?

দেখেন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আমিও একটি আর্টিকেল লিখে ছিলাম-যদিও তার ধর্মমতে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস আমার নেই তথাপি আমি তাকে কিভাবে উপস্থাপন করেছি তা উপলব্ধি করতে আর্টিকেলটি একবার পড়ে দেখেন- "Qadiani: প্রতিজ্ঞাত মসিহ দাবীকারী মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানীর সংক্ষিপ্ত পরিচয়।"। কেন আমি তাকে এভাবে উপস্থাপন করেছি? আপনি কি মনে করেছেন আপনি যেটুকু জানেন তা আর কেউ জানে না বা বুঝে না? প্রত্যেক জ্ঞানী লোকের উপরে আছে আরও বড় জ্ঞানী।
আমি তাকে ঐভাবে উপস্থাপন করেছি শুধু তার অনুসারীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে।-

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:০৯

ইহসান আকসার মাহমুদ বলেছেন: http://www.ahmadiyyabangla.org/
https://www.alislam.org/

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.