নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চায়না...২

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৩





কুনমিং নামলাম ভোরে। কুনমিং এয়ারপোর্ট আর পূর্বের মত নেই। এটি এখন দর্শনীয় জিনিস। ঢাকার এয়ারপোর্টের বেশ কয়েকগুন বড় এটি। মাথার ওপরে বিশাল উঁচু শৈল্পিকভাবে তৈরী স্টিল সিলিং এবং আপাদমস্তক মূল্যবান মার্বেল টাইলসে মোড়া,আছে অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। চেকআউট করে পরবর্তী ফ্লাইট ধরতে করিডোর ধরে বহুদূর পর্যন্ত হাটতে হল। এতদূর পর্যন্ত যারা হাটতে পারেনা তাদের জন্যে ইলেকট্রনিক কার রয়েছে। নিঃশব্দে সেগুলো করিডোর ধরে ধীর গতিতে চলে যাচ্ছে। একইসাথে এলিভেটর রয়েছে ফ্লোর সমান্তরালে যার ওপর দাড়িয়ে বা হেটে আরও দ্রুত গন্তব্যে পৌছানো যায়। আমার নির্ধারিত গেটের সামনে একা একা বসে ছিলাম। হঠাৎ আই.সি.ডি.ডি.আরবির একজন প্রফেসর চিকিৎস্যকের সাথে পরিচয়। তিনি যাচ্ছেন জাপানে একটি সম্মেলনে যোগদান করতে। তারসাথে খানিকক্ষণ গল্পগুজব হল। তিনি হলেন এক অতি অমায়িক লোক। মনে হল তার মন ,মস্তিষ্ক সব মাখনের তৈরী। তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলে আমি বসে থাকলাম। ইতিমধ্যেই অনেকে আমার সহযাত্রী হিসেবে জুটেছে। কয়েকজন বাঙ্গালীকেও দেখলাম কিন্তু মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস হয়নি। চোখাচোখী হওয়াতে তাদের যে অভিব্যক্তি দেখলাম তাতে মনে হল আমি এক আন্তর্জাতিক ক্ষ্যাতিসম্পন্ন প্রতারক দাগী আসামী এবং তাকে/তাদেরকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করতে আমার একটুও সময় লাগবে না। এমন মানুষদের সাথে না জড়িয়ে তাদেরকে আশু ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করলাম।



দুপুরে সাংহাইএর হংকিও বা হংচাও এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম। আমার গন্তব্য চেইচিয়াং প্রদেশের শাওশিং সিটি। সাংহাইতে দুটি বিশাল এয়ারপোর্ট আছে। দুটিই আন্তর্জাতিক। একটি পুডংএ অরেকটি হংচাওতে। পুডং এবং হংচাও এয়ারপোর্ট দুটি বিশাল। হংচাও দুটি টার্মিনালে বিভক্ত। আমি এসেছি টার্মিনাল-২তে। আমার উদ্দেশ্য ট্রেনে চেপে গন্তব্যে পোৗছানো তাই সাংহাইএর পুডং এয়ারপোর্টে না নেমে আমি এসেছি হংচাওএ। এই এয়ারপোর্টের সাথেই আছে দূরবর্তী এবং কাছের গন্তব্যে যাবার জন্যে বুলেট ট্রেন এবং ম্যাগনেটিক ট্রেন। ৩নং লেভেল বরাবর প্রায় এক কি:মি: করিডোর ধরে হাটলে ট্রেন স্টেশন । ১নং লেভেল বরাবর এতদূর পর্যন্ত হাটলে দূরবর্তী স্থানসমূহের বাস পাওয়া যায়। ২নং লেভেলের মাঝামাঝি স্থানে সিটি বাস এবং ট্যাক্সি পাওয়া যায়। এখান থেকে রেলওয়েতে শাওশিংএর দূরত্ব ২২০কি:মি:। ট্যাক্সিতে গন্তব্যে পৌছানো যায় তবে বাংলা টাকায় ১৩/১৪ হাজার টাকা গুনতে হয়। টাকার জন্যে নয়, সময় এবং নিরাপত্তা,আরাম সবকিছু হিসাবে এনে বলা যায় বুলেট ট্রেনের ওপর কোনো যানবাহন হতে পারেনা। ঢাকা থেকে প্রয়োজনীয় কিছু কথা-বার্তা জনাব গুগল ট্রান্সস্লেটরের মাধ্যমে চায়নিজে লিখে প্রিন্ট করে রেখেছিলাম। আমি নিজেও কিছু চায়নিজ শব্দ জানি তবে আস্থা না থাকায় এ কান্ড। এতে সুফল পেয়েছি ১৬ আনা। অনাকাঙ্খিত ঘটনার উপস্থিতি ছাড়াই চলে গেছে।



এয়ারপোর্ট থেকে যারা বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে চায়,তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে এমনভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে,খুব সহজেই যে কেউ তার কাঙ্খিত স্থানে উপস্থিত হতে পারবে। এছাড়া সাহায্য করার জন্যে অনেকেই উদগ্রীব। আমি যখন চেকআউট হয়ে ভাবছিলাম এখন কোনদিকে যাব ? তখন কয়েকটি কাউন্টার থেকে কয়েকজন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-‘কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি ? যে কোনো তথ্যের ব্যাপারে কথা বলতে পারেন।’ আমি এগিয়ে গেলাম। তারা আমাকে একটি ম্যাপ দিলেন এবং সেখানে কলমের সাহায্যে দাগ কেটে দেখিয়ে দিলেন আমি এখন কোথায় এবং কোথায় যেতে হবে। ইন্টারনেট থেকে ট্রেনের তথ্য নিয়ে জানালেন, আমার জন্যে বিকেল সাড়ে তিনটায় শেষ ট্রেন রয়েছে। আমাকে হোটেল সংক্রান্ত তথ্য দিতে যাচ্ছিলেন কিন্তু এটির প্রয়োজন নেই। আমি এমনিতেই সন্তুষ্ট হয়েছি। ভেতরে বিভিন্ন স্থানে পুরো এয়ারপোর্টের বিশাল ম্যাপে,ট্যাক্সি,বাস,ট্রেনের যাবতীয় তথ্য চিত্রের সাহায্যে বর্ণিত হয়েছে এবং যিনি দেখছেন তার অবস্থানও চিহ্নিত রয়েছে।



বেশ খানিক হেটে ট্রেন স্টেশনে আসলাম। ট্রেন স্টেশন সম্পর্কিত পূর্বের সকল ধারনা বাতিল হয়ে গেল। এটি এয়াপোর্টের চাইতেও বেশী উন্নতমানের। তথ্যকেন্দ্র থেকে জেনে নিলাম কোথা থেকে টিকেট কাটব। পাসপোর্ট দেখিয়ে ৬৫ ইউয়ানে টিকেট কেটে ফেললাম। টিকেটটি দেখতে চমৎকার। পিভিসি শিটের ওপর কালার প্রিন্ট করা ভিজিটিং কার্ড সাইজের। ৬তলা সমান উচু এবং বিশাল বড় হলরুমে শতশত মানুষকে অপেক্ষমান দেখলাম। সুশৃঙ্খল, সারিবদ্ধভাবে সাজানো আরামদায়ক চেয়ারে বসে যাত্রীরা অপেক্ষমান। সামনে তাদের বিশাল বিশাল ইলেকট্রনিক বোর্ড,যেখানে ট্রেনের নাম এবং সময়সূচী একের পর এক উঠছে। প্রতি ১৫মিনিট পরপর দুটি করে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। দুটি ট্রেনের উদ্দেশ্যে দুটি বড় গেটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ট্রেন ছাড়ার ১৫ মিনিট পূর্বে ট্রেনের নাম্বারটি সবুজ রং ধারন করে এবং স্পিকারেও ঘোষণা হতে থাকে। তখন টিকেটটি কম্পিউটেড সিস্টেমে চেক করলেই প্রবেশপথ উম্মুক্ত হয়। অনেকগুলো প্রবেশ পথে প্রবেশ করে নির্ধারিত গেটের ভেতর দিয়ে সচিত্র নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হয়। এভাবে ট্রেনের কাছে চলে আসলাম। এবং করিডোরের সমান্তরালে অবস্থান করা ট্রেনের ভেতর ঢুকে পড়লাম। ট্রেনটির মাথা প্লেনের মাথার মত এবং পেছনের দিকটিও সামনের মত,কারন সামনে পেছনে দুটি ইঞ্জিন ফলে এটি দু-দিকে চলতে পারে,এতে ট্রেন ঘুরানোর ঝামেলা নেই। ভেতরটা বেশ চমৎকার। নির্ধারিত আসন গ্রহন করলাম। এটি বুলেট ট্রেন। সাধারণ ব্রডগেজের ওপর দিয়েই এটি চলে। তবে এই লাইনগুলো অন্যান্য যান চলাচলের কোনো রাস্তার প্রতিবন্দক নয়। লাইনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চলেছে। শতশত মাইলের ফ্লাইওভার তৈরী হয়েছে এটির জন্যে এবং মাটি অনেক উঁচু করে রেল লাইন তৈরী করা হয়েছে। লাইনের দুদিক থেকে লোহার মোটা গ্রিল দিয়ে ঘেরা। এতে কোনো অঘটনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বুলেট ট্রেন ঘন্টায় ৩০০কি:মি: এর অধিক গতিতে চলতে পারে। মজার ব্যাপার হল এত গতিতে চললেও ভেতর থেকে মনে হয় এটি বড়জোর ৮০কি:মি: গতিতে চলছে। ম্যাগনেটিক ট্রেন চলে ঘন্টায় ৪৫০ কি:মি: গতিতে এবং এর জন্যে বিশেষ লাইনের দরকার হয়,তবে তাতে আমি চড়িনি।



কোনো রকম ঝাকুনি এবং শব্দের উপস্থিতি নেই ভেতরে। প্রত্যেকটি কম্পার্টমেন্টের ভেতর একাধিক মনিটর রয়েছে এবং মনিটরে ভিডিও দেখার সুবিধা রয়েছে আর প্রত্যেক কম্পার্টমেন্টের স্ক্রিনে ট্রেনটির সকল গন্তব্যের তথ্য,উপস্থিতির সময়,ট্রেনের গতিবেগ,পরবর্তী স্টেশন ইত্যাদী তথ্য চায়নিজ এবং ইংরজী ভাষায় একের পর এক প্রদর্শিত হতে থাকে। ফলে যাত্রীদের চলাচলে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও চিন্তায় ছিলাম ,কারন এরা ইংরেজী ভাষা বুঝেনা। কেউ কেউ জানে তবে তাদের খুজে বের করা সম্ভব নয়। দোয়া দুরুদ পড়তে থাকলাম। কবুল হল। আমার পাশের ছিটের যাত্রীটি খুব চমৎকার ইংরেজী বলতে পারে। সে ইংরেজীতে অনার্স পড়ছে সাংহাই এর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। চমৎকার সময় কাটল মি:টিমের সাথে। তার চায়নিজ নাম মনে নেই, অবশ্য মনে থাকার মত নামও সেটি নয়। সামনে থাকা ফোল্ড করা টেবিলটি খুলে সেট করল এবং সেখানে তার ব্যাগে থাকা নানারকম খাদ্য সামগ্রী,পানীয় ,বই রেখে আরাম করে আমার সাথে গল্পে মাতল। আমাকে সেসব খেতে বলাতে ভদ্রতা করে কেলাম না, এ কারনে সেও খেলনা। তার গন্তব্য অনেক দূর,তাই আরামে বসে গল্প করতে লাগল।



চলছে...



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১১

এক্সপেরিয়া বলেছেন: ভ্রমন কাহিনী আমার খুব ভাল লাগে ।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৩৮

কেএসরথি বলেছেন: প্লাস।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৭

রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলেছেন: চীনাদের নাম অনেক জটিল। তবে যা লিখে উচ্চারণ তা ই। কোরিয়ানদের নাম যা লিখে, উচ্চারণ করে অন্যরকম, এক বিশাল ঝামেলা।

ধারাবাহিকটি চলুক। ভালো লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.