নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্বাক

"I may disagree of what you say, but I will defend to the death - your right to say it." – Voltaire

Mukit

লেখালেখির সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত©লেখক

Mukit › বিস্তারিত পোস্টঃ

কানে কানে বলি...

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩২

সপ্তাহখানেক আগে একটা রোগী আসল আমার সান্ধ্যকালীন ডিউটির শেষ দিকে। তার ডানকান থেকে একটা দেশলাই কাঠি বেরিয়ে আছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, সহজ কেস- কেবলদেশলাই কাঠিই তো ঢুকিয়েছে। হিস্ট্রি নিতে গিয়ে জানলাম এতো পুরো লিকুইডইঞ্জিনিয়ারিং করে এসেছে। ঘটনা সামান্য, কানে সে মটরদানা ঢুকিয়েছিল। বের করতেচেষ্টা করতেই তা আরো ভেতরে ঢুকে যায়। তারপর তার এক বন্ধু তাকে পরামর্শ দেয়, দেশলাইকাঠির একপ্রান্তে সুপার গ্লু লাগিয়ে তা কানে আলতোভাবে ঢুকিয়ে মটরদানার গায়ে স্পর্শকরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই মটরদানা আটকে যাবে। তারপর টুক করে বের করে নেওয়া যাবে।যেই ভাবা, সেই কাজ। কিন্তু বিধি বাম। গ্লু এর পরিমাণ বেশী হওয়ায় মটরদানা আর দেশলাইকাঠি দুটোই কানের ভেতর আটকে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া এ ধরনের কেস কারো চেষ্টাকরা অনুচিত। কারণ বেশী টানাটানি করলে কানের ভেতরের চামড়া এমনকি কানের পর্দা সহ চলেআসতে পারে।

যাই হোক, কানের ভেতরে অনাকাঙ্খিত জিনিষ এবং তা নিয়ে আপনাদের কি করনীয় এবং বর্জনীয়তা জানাতে আমার এই লেখা। আপনারা চাইলে নামে-বেনামে এই লেখা শেয়ার করতে পারেন, আমারবিন্দুমাত্র আপত্তি নেই এবং আমার অনুমতিরও প্রয়োজন পড়বে না।



(ক) প্রথমত কানে খৈল বা ময়লাঃ কানে খৈল জন্মানো, জমা হওয়া সম্পূর্ণস্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে কারো কারো বেশী পরমাণে জন্মে এবং জমে। অনেক ক্ষেত্রেশ্রবণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।সচেতন প্রাপ্ত বয়ষ্করা সাধারণ গোসল ও অন্যান্যভাবে যেমন ওযু করার সময় বা কান চুলকানোর মাধ্যমে পরিষ্কার করে ফেলেন। বাকিটাসাধারণত আমাদের চাপার হাড়ের যে নড়াচড়া তাতেই বেড়িয়ে আসে। কিন্তু শিশুরা, বাচ্চারাএবং অসচেতন মানুষেরা কানে খৈল নিয়ে সমস্যায় পড়েন। এক্ষেত্রে ঘরে কটন বাড (cotton bud) ব্যবহার করা হয়। এতে অনেক সময় কানে কটন বাড আটকেকিম্বা কানের পর্দাকে ময়লা মনে করে বের করে আনার মত দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমারপরিচিত অনেকেই এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। মনে রাখবেন, কানের পর্দা ছিড়ে গেলেতা শিশুদের ক্ষেত্রে জোড়া লেগে যেতে পারে। কিন্তু বেশ খানিকটা ছিড়ে গেলে, কিম্বাপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে জোড়া লাগার সম্ভাবনা কমে যায়, কানে ঘন ঘন সংক্রমণ (ইনফেকশন)হবার হার বেড়ে যায় এবং শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে কমে যায়। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কানেখৈল হলে কি করবেন? খুব সহজ সমাধান। বাচ্চাদের এবং বড়দের জন্য সমাধান একই। ওলিভওয়েল (olive oil)বা লিকুইড প্যারাফিন (liquid paraffin) হল নিষ্ক্রিয় তেল। অর্থাৎ এরা কোন ধরনের প্রতিক্রিয়াসৃষ্টি করে না। কিন্তু কানের খৈলকে নরম করে এবং আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে সাহায্যকরে। রাতে ঘুমানোর আগে আপনার বাচ্চার বা আপনার নিজের কানে কয়েক মাস পর পর দু-তিনফোটা করে দিতে পারেন। এতে করে কানে খৈল জমবে না। তবে কানে আগে থেকে প্রদাহ (ব্যথা)বা সংক্রমণ (ইনফেকশন) থাকলে অবশ্যইবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।



(খ) কানে জীবন্ত কিছু ঢুকেছেঃ এটা আসলেই খুব কষ্টকর একটা ব্যপার। কারণজীবন্ত পোকা নাড়াচাড়া বা কামড় দিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করে তোলে। যদি আপনি বুঝতে পারেন কানের ভেতরের পোকাটা জীবন্ত অবস্থায় রয়েছে তবে কানের সামনে একটা আলোর উৎস যেমন জ্বলন্ত মোমবাতি কিংবা লাইট ধরতে পারেন । কেননা সাধারণত , পোকা মাকড়েরা আলোর দিকে আকৃস্ট হয়। অনেক ক্ষেত্রে আলো দেখে তা আপনা আপনি বের হয়ে আসতে পারে । তা না হলে, দ্রুততার সাথে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন। তবে তা যদি দ্রুত সম্ভব না হয়, আক্রান্ত ব্যক্তির একটা উপকার আপনি কতে পারেন পোকাটি মেরে ফেলে। কিভাবে? ঐ যে অলিভ ওয়েল বা লিকুইডপ্যারাফিন। এর কোনটাই যদি না থাকে, আমি আবার বলছি, এ দু’টোর কোনটাই যদিনা থাকে তবেই কেবল পানি ব্যবহার করবেন। তারপর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।ডিসপেন্সারী বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে নেবেন না। ওরা কেরোসিন তেল, সয়াবিন তেলএমনকি সর্ষের তেলও ব্যবহার করে দেখে। আর যেনতেন রকমের যন্ত্র দিয়ে কানের ভেতরখুঁচিয়ে দফারফা করে রাখে।



(গ) কানে জড় পদার্থঃ সাধারনত বাচ্চারা ঘড়ির ব্যাটারী, মটরদানা, পুঁতি,পাঞ্জাবীর বোতাম (এটা আজ পেয়েছি), বালি, নাকফুল ইত্যাদি ঢুকিয়ে থাকে। বড়দেরক্ষেত্রেও এর খুব একটা ব্যতিক্রম হয় না। অনেক মা আসেন বাচ্চা তাঁর ঘুমিয়ে থাকারসুযোগ নিয়ে কিছু একটা কানে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কানে ব্যাটারী ছাড়া অন্য কিছু ঢুকলেআপাতত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কানে কোন ড্রপ বা তেল দেবেন না, কারণ তা ঐ বস্তুটাকেআরো পিচ্ছিল করে তুলবে যার কারনে বের করে আনা আরো কষ্টসাধ্য হবে। আর মটরদানা, বুট,শিমবিচি ইত্যাদি হলে ফুলে ফেঁপে আরো আটকে যাবে। তাই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন।কারণ এ ধরনের জিনিষ বের করে আনার যন্ত্রটা দেখতে সামান্য হলেও কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞচিকিৎসক বা তার তত্ত্বাবধানে থাকা নবীশ চিকিৎসকের হাতেই আপনার জন্য নিরাপদ।অন্যথায় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যাটারী ঢুকলে একটু দ্রুততার সাথে চিকিৎসকের কাছেআসবেন, কারণ অনেক সময় ব্যাটারী থেকে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ বেরিয়ে কানের ক্ষতিকরতে পারে।



আজ এটুকুই। ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। বিশেষ জিজ্ঞাসা থাকলেআমাকে সরাসরি বলুন। আমার ভুল থাকলে শুধরে দিতেও পারেন।

ভালো থাকবেন।

অনেক অনেক ভালো...

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫১

খাটাস বলেছেন: ভাই হাজার টা দায়িত্ব জ্ঞান হীন অসচেতন ডাক্তারের চেয়ে একজন সচেতন ও দায়িত্তবান ডাক্তার সমাজের জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। মাফ করবেন আমি কাও কে ছোট করে দেখাতে চাই নি। যা বোঝাতে চেয়েছি আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনার পোষ্ট টা অসম্ভব দরকারি। +++++++++++ খুব ভাল একটা কাজ করেছেন ভায়া :) :)

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:২১

Mukit বলেছেন: অপ্রাসঙ্গিক।
শুধু ডাক্তার না, সব শ্রেণী পেশার মানুষেরই সচেতন ও দায়িত্ববান হওয়া দরকার। আপনি সচেতন আর আপনার গাড়ির ড্রাইভার অচেতন হলে তো দুইজনই নাই হয়ে যাবেন।

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫২

কালোপরী বলেছেন: nice post

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:২৪

Mukit বলেছেন: thanks.

৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৩

মানস সেন বলেছেন: এইখানে দেখুন তো ঠিক আছে কিনা? আপনার বিস্তারিত দিতে পারলে ভালো হতো।

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:১৮

Mukit বলেছেন: আমি ডাঃ মুকিত ওসমান
অনারারী মেডিকেল অফিসার
নাক, কান,গলা ও হেড-নেক সার্জারী বিভাগ,
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

Mukit বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৫| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

খাটাস বলেছেন: ভাই মাফ করবেন। আপনি যা বলেছেন সেটা ই বোঝাতে চেয়েছিলাম।তবে পুরা কথা টা সাজাতে পারি নি। আর যা বললাম টা সম্ভবত বোঝাতে পারি নি। দুঃখিত।

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫১

Mukit বলেছেন: ব্যপার নাহ। সারাদিন গাধার খাটুনি খেটেও যখন কেউ বলে সচেতন হতে হবে, দায়িত্ববান হতে হবে, তখন আসলে বলার মত কথা থাকে না।
অনারারী মেডিকেল অফিসার তো, টাকা ছাড়া কাজ করি। আর কাজের অসুবিধা হবে দেখে ক্ষেপ মারি না। ঘরের খেয়ে হাসপাতালের রোগী দেখি।

৬| ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫৯

খাটাস বলেছেন: ভাই সরি আমি আমার কমেন্ট টা নিজেই এখন ই দেখলাম যে একটা লাইন বাদ পড়ে গেছে। আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম যে হাজার টা দায়িত্ব জ্ঞান হীন ও অসচেতন ডাক্তারের চেয়ে এক জন সচেতন ও দায়িত্তবান ডাক্তার সমাজের জন্য বেশি প্রয়োজনীয়। আপনার মত সকলের এভাবে দায়িত্তবান হউয়া উচিত। মাফ করবেন আমি কাও কে ছোট করে দেখাতে চাই নি। যা বোঝাতে চেয়েছি আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আপনার পোষ্ট টা অসম্ভব দরকারি। +++++++++++ খুব ভাল একটা কাজ করেছেন ভায়া :) :)
ভাই পুরা কমেন্ট হবে এটা। আপনি নিজেই বুঝুন আমি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছিলাম। শুধু ডাক্তার না, সব শ্রেণী পেশার মানুষেরই সচেতন ও দায়িত্ববান হওয়া দরকার। আপনার সাথে একমত। কিন্তু পোস্টের শুরুতেই আপনি ডাক্তার জেনে ডাক্তারদের কথা শুধু বলেছি। সম্ভবত আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। এটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ভায়া। মাফ করবেন ভাই। আমার আর কিছু বলার নাই। সম্ভবত কমেন্ট পোস্টের আগে আমার একবার পুরাটা পড়া উচিত ছিল, যা না করে আমি নিজেই দায়িত্ব হীন কাজ করেছি। নিজে না করে অন্যকে কে ( সেটা আপনি না, অন্যান্য অনেক ডাক্তার কে) কিছু করতে বলা অন্যায়। আমি অন্যায় করেছি। স্বীকার করলাম। মাফ করবেন। ভাল থাকবেন।

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৯

Mukit বলেছেন: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।

৭| ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:০৫

রুদ্রাক্ষী বলেছেন: ভালো পোস্ট। একটা সহজ ব্যাপার একটু যোগ করে দিয়েন, কানে পানি ঢুকলে করনীয়, একটু কাত করে রাখা বা ভালসালভা মেথড একটু বিস্তারিত যদি এড করে দিতেন আরো ভালো হত।

সুন্দর পোস্টের শুভেচ্ছা রইলো।ভালোলাগা দিয়ে গেলাম ।ভালো থাকবেন।

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১১

Mukit বলেছেন: সাকশান ক্লিয়ারেন্সই ভালো মনে হয়, কি বলেন?

৮| ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২১

রুদ্রাক্ষী বলেছেন: তা তো ভালোই এবং এটাই করা উচিৎ কিন্তু কজনই বা পানি ঢুকার কারনে সাকশান করাতে আসে বলুন???????????
যতক্ষন কানে ব্যাথা, শো শো শব্দ বা এটলিস্ট 'আসোম' না হচ্ছে ততক্ষন আসেনা.............। তাই বলছিলাম আর কি যদি প্রাথমিক নলেজ টুকু দিয়ে দিতেন তাহলে অন্তত নিজেদের উপকার না করতে পারুক ক্ষতি করবে না ..................

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৩

Mukit বলেছেন: জ্বী, তাই ইচ্ছে করেই ওটা বলি নি, তখন শুধু সেই কাজটিই করত। আমাদের কাছে আসত না যতক্ষন না কানে ব্যাথা, শো শো শব্দ বা এটলিস্ট 'আসোম' না হচ্ছে ততক্ষন আসেনা.............। তাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.