![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মা নিয়ে বেশ কটা লেখা পড়ার পর নিজের মাতৃত্বের ক্ষমতা আর সক্ষমতা নিয়ে বড়ই সন্দিহান হয়ে পড়েছি। এতদিন ভেবেছিলাম বুঝি বেশ ভালভাবেই মায়ের দায়িত্ব পালন করে এসেছি। কিন্তু কিছুদিন যাবত বিভিন্ন মায়ের ত্যাগ তিতিক্ষার কাহিনী পড়ে আর শুনে আমি নিশ্চিত যে আমি এ বিষয়ে ফেল। আসলে সন্তানের প্রতি দায়িত্ববোধের পারসেপশনটার অভাব রয়েছে আমার। সাবলিলভাবে অন্তর থেকে যা আসে তাই করেছি, করছি, আর তাই যদি দায়িত্ববোধের মধ্যে পড়ে যায় তাহলে তা অচেতনভাবেই পালন করেছি। বড় হয়েছি খুব অদ্ভূতভাবে, মাঝে মাঝে মনে হয় খুব অসঙ্গতিপূর্ণ আমার বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যসমূহ। বিয়েই করতে চাইনি। বিয়ে থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেঁচেছি বেশ অনেক কটা বছর। কিন্তু শেষে বলা চলে একেবারে জোর করে হাত পা বেধে আমাকে অপরিচিত একটি মানুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হল। আমি তো ভাই অন্য চিড়িয়া, ঐ লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট টাইট যে আমার কম্ম নয়, বোঝেনি বাছাধন। বড়ই মিইয়ে গিয়েছিল বিয়ের পর পর। ওতে আমার কোনো ভাবান্তর নেই। আমি তো আর যেচে বিয়ে করিনি, আমার কি? কিন্তু বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায়। নিজেকে যখন সামাজিক নিয়মের একজন বলি হিসাবে সমাজের গুষ্টি উদ্ধার করছি, তখন হঠাৎ মনে হল এ বিয়ে থেকে পালানোর তো কোনো পথ নেই। ব্যাপারটা বেশ পাকাপোক্ত একটা ব্যাপার, আর এ থেকে পালালেও না খেয়ে মরতে হবে। বাপ ভুলেও ঘরে ফিরিয়ে নিবে না। আমার মত বাউন্ডেলে অগোছালো মেয়েকে পার করতে পেরে হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল। বিয়ের পর নাকে সরষে তেল দিয়ে টানা তিনদিন ঘুমিয়েছিল নির্ঘাত। এখন আমকে দোরগোড়ায় দেখলেই তো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠবে। কিন্তু এই অজানা অচেনা একটা লোকের সাথে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে? রাগে দুঃখে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করলো। কোনো উপায় নেই কি করবো? তখন আমার এক বান্ধবী যে কিনা আমার বিয়ের সময় ঘরের শত্রু বিভীষণের ভূমিকা পালন করেছিল, আমাকে পরামর্শ দিল বেবি নেয়ার জন্য। আমি আবার বাচ্চা বলতে পাগল। বড়দের থেকে বাচ্চাদের সাথে সময়টা কাটে ভাল। সত্যিকথা বলতে পারতপক্ষে বড়দের ছায়াই মারাই না। এরা বড় পেচুয়া পাবলিক। যাই হোক ঐ বিভীষণ বান্ধবী কথাটা আমার কল্যানের জন্যই বলেছে ভেবে, মনে ধরে গেল বুদ্ধিটা। কিন্তু এই কাজ করতে হলে সেই চিরাচরিত ভয়ঙ্কর পথে পা দিতে হবে এই অচেনা লোকটার সাথে। ছি ছি ছি কি ডিসগাস্টিং! মনে হল মা ধরনী দ্বিধা কর। চোখে পানি চলে এল। যাই হোক একবার যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আর পিছাব না। কিন্তু আমি বড়ই আনাড়ি মানুষ, এ বিষয়ের কোনো অনুশীলনও নেই, বিপাকে পড়ে গেলাম। শেষমেশ উপায়ন্তু না দেখে আমার বরমশাইয়ের শরণাপন্ন হলাম, আর যাই হোক এর সাহায্য ছাড়া তো সম্ভবও না। এক সময় না এক সময় সব কথা তো খুলে বলতেই হবে। মাথায় বারি মেরে অজ্ঞান করে তো কর্ম সাবাড় করা যাবে না। তাকে বলার পর সিনেমার ভিলেনের মত দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল। নাসারন্ধ্র বিস্ফোরিত হয়ে কেমন যেন হায়না হায়না ভাব ধারন করল। দেখেই ব্রহ্মতালু জ্বলে উঠল। রাগের চোটে চোখ মুখ খিঁচিয়ে তাকিয়ে থাকলাম। আমাকে দেখেই ফাটা ফানুসের মত চুপসে গেল। মনে মনে ভাবলাম বাছাধন এখনো চেননি আমাকে!
সন্তান আমার তিনটি। তিনটি ছেলে। বড় দুজন জমজ। বয়স এগার। তার সাড়ে তিন বছর পর ছোটটি। এমনিতে ভালই তবে মাঝে মাঝে যুদ্ধ করে একসাথে। আমার তখন পাগল পাগল লাগে। পাশের ঘরে বসে টিভি দেখি, ডাউনলোড করা প্রিয় প্রিয় সিনেমা। আমার টিভি দেখার ইচ্ছাকে ছাপিয়ে ডোরিমন দেখা এদের কারোই সাধ্যি নেই। “রিমোট ধরিস তো মাইরা ফেলামু তোদের” এই আমার ওদের সাথে কথা বলার ভাষা। বড় দুজন বড় হচ্ছে দেখে মাঝে মাঝেই বলি, “কয়েকদিন পর তোদের এমন হবে যে মেয়ে দেখলেই মাথা ঘুরে যাবে। মনে হবে এই মেয়েরে ছাড়া বাচুম না। খুব সাবধান, সব মেয়েরা ভাল না, তোদের ধোকা দিবে, ইউস করবে। কোনো মেয়েরে ভাল লাগলে আমারে কইবি, আমি দেইখ্যা শুইন্যা ভাল বুঝলে তারপর আগাবি। তা না হইলে কইলাম থাবড়ে গাল ফাটায় দিমু” আমি আসলে বুঝিও না জানিও না কিভাবে বাচ্চাদের মানুষ করতে হয়। যা মনে আসে তাই করি। মনে ইচ্ছা হল, বললাম, “চল খেলি” “আম্মু কালকে ক্লাস টেস্ট, পড়তে হবে” “পড়া লাগবে না ফেল করবি, চল খেলি” এ কাজ করি মাঝে মাঝে। তবে বড় পরীক্ষাগুলোতে করিনা। আবার মাঝে মাঝে আমার কাছে বকাও খায় ভাল, তাও তিনজনই আমার ঘেষা। বেচারাদের আসলে আরো কয়েকজন মা থাকলে, সবার মধ্যে বেছে নিতে পারত। সেই সুযোগ তো নাই। কিছুক্ষণ পরপরই কোলের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে আদর নিয়ে যায়। রাগ, দুঃখ, অভিমানের যত কথা সব আমার সাথে তাদের। মন রক্ষা করে এক একটা সমস্যার সমাধান যে কি কঠিন! বাইরের কেউ ওদের কাউকে কিছু বললে বা করলে, যেখানে ওদের দোষ নাই, সাক্ষাৎ কালির রূপ ধারন করি। আবার ওরা কিছু করলে তখন ওদেরও ছেড়ে দেই না, কিন্তু মনে মনে খুব দুঃখ লাগে, বুঝতে পারি এই বদগুনটা পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত, ওদের করনীয় কিছুই নেই।
শেয়রিংটা খুব সাংঘাতিক ব্যাপার। কোনো কোনো জিনিস আছে যা সমান তিন ভাগে ভাগ করা যায় না। এই যেমন পিজ্জা, এক্কেবারে মাইক্রোস্কোপের নিচে ফেলে কি তিনভাগ করা সম্ভব? তখন বানরের পিঠা ভাগের মত অবস্থা হয়। আমি সমানে কাটতে থাকি আর খেতে থাকি। বাচ্চাদের কল্যানে হাতি প্রমান সাইজ হয়েছি। ওরা সব খ্যাংরা কাঠি। ওদের বাবা তো বিশাল সাইজ। খেয়ে খেয়ে নিজেকে এ কটা বছর কি যে বানিয়েছে! ও’ অবশ্য দুঃখ হলে খায়। তা বাবা ওর জীবনে দুঃখ আছে বটে! কেন কে জানে।
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭
আধার আলো বলেছেন: হা হা হা। তা যা বলেছেন ভাই। আমার সব বন্ধুরা মহানন্দে আপনার সাথে একমত হবে। ভাল থাকবেন।
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: আহারে এমন আম্মা যদি পাইতাম.........
সামনে টেস্ট পরীক্ষা দেইখা আম্মায় বাইরে যাওয়া বন্ধ কইরা দিছে......
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪১
আধার আলো বলেছেন: আমার মত অদ্ভুত আম্মা কারো ভাগ্যেই যেন না জোটে, জুটলে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার!
খুব ভাল একটা আম্মা পেয়েছেন। ছেলের জন্য অনেক চিন্তা করে। দোয়া করি। ভাল থেকেন।
৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৫
স্বপনচারিণী বলেছেন: লেখার ধরণটা এত ভাল লাগল। আপনি কেমন মা তাতো বোঝাই গেল। আমরা বড়রা অনেক ভাল অভিনয় করতে পারি। কাউকে অপছন্দ করলে অবলীলায় বলতে পারি আপনাকে আমার খুব ভাল লাগে। বাচ্চারা তা পারেনা। তিনজনই আপনার ঘেঁষা, আর একটু পর পর যে ওরা আপনার কাছ থেকে আদর নিয়ে যায় এটাই তার প্রমান। সন্তানেরা ভালবাসলে মায়ের ভাণ্ডার যে পূর্ণ হয়ে যায়। দুনিয়া সেখানে তুচ্ছ। ভাল থাকুন এইসব পাগলামি নিয়ে। অনেক শুভ কামনা।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৬
আধার আলো বলেছেন: বেশ কদিন দেরি হয়ে গেল উত্তর দিতে, প্লিজ কিছু মনে করবেন না। মাঝে মাঝে এত কাজের চাপ পরে যায় যে দুটো লাইন লেখার অবসরটুকুও খুজে পাওয়া দায় হয়ে পরে। ‘সন্তানেরা ভালবাসলে মায়ের ভাণ্ডার যে পূর্ণ হয়ে যায়। দুনিয়া সেখানে তুচ্ছ।’---- কথাটা খুব সুন্দর। তা ভাই, ভালই তো আছি এইসব পাগলামি নিয়ে, কিন্তু এর ভবিষ্যত যে কি, সেটা নিয়েই যা একটু চিন্তা। ধন্যবাদ ভাই, ভাল থেকেন।
৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
অর্ধমানব ও অর্ধযন্র বলেছেন: #Respect... মা তোমায় সালাম। দোয়া দিয়েন যাতে বিয়ের পর ভাল স্বামী ও ভাল বাবা হতে পারি।
১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩০
আধার আলো বলেছেন: যিনি বিয়ের আগেই ভাল স্বামী ও ভাল বাবা হওয়ার ব্যাপারে এমন সচেতন তিনি অবশ্যিই তা হবেন। দোয়া করি। মন প্রাণ দিয়ে দোয়া করি।
ভাল থেকেন।
৫| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৪৫
গ্রীনলাভার বলেছেন:
একবার পরীক্ষায় ফেল মাইরা মন খারাপ কইরা ঘরে আসছি। আম্মা দেইখা বলে, যা কিছুক্ষন কান্নাকাটি কইরা আয়। মন ভাল হইব। তো আমিও ভ্যা ভ্যা কইরা কিছুক্ষন কানলাম। মনটা মনে হইল একটু হাল্কা হইছে। এরপর শুনি আম্মায় চিৎকার কইরা বলতেছে, কাইলকা থেইকা ঠেলাগাড়ী চালাইতে যাইবি। ফেল করছস। ঘরে ভাত নাই তোর।
তো ভার্সিটি পড়ার সময় আম্মা আমার জন্য মেয়ে খুজতেছে বিয়ে করায়ে দিবে। নানার বাড়িতে গিয়া এর ওর ঘরে ঢু মারে আর জিজ্ঞেস করে, এই মাইয়া কার? তো একদিন এক মামার বিয়েতে এক মেয়ের পিছ পিছ ঘুর ঘুর কইরা আম্মা আমারে ডাইক্কা কয়, দেখতো মাইয়াডারে। ফিগারটা ভালোই। কি কস্?
-- মাকে মিস করি খুব।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৮
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: আপনার তো দেখা জায় মাথা নষ্ট! হা হা হা!