নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা ব্লগ ভালবাসি আর সুযোগ পেলেই পড়ি। অনেক কিছু লিখতে মন চায়, কিন্তু লেখার যে হাত!...চেস্টা করে যেতে হবে তবুও।

কাতিআশা

বই এর পোকা, স্কেচ এর নেশা, পেশায় স্থপতী আর বাংলাদেশের প্রতি অসীম ভালবাসা

কাতিআশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হঠাৎ মন খারাপ!..বাবুর কথা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৭

আজ সকালে অফিসে যাবার আগে সোফায় বসে বাইরের শীতের হিম হয়ে যাওয়া, পত্রহীন প্রক্‌তি দেখছিলাম আর অপেক্ষা করছিলাম আমার হ্যাসবান্ডের জন্য--ও ছেলেকে স্কুলে নামাতে গেছে, ফিরে এলে একসাথে বের হব। এর মাঝে মেসেন্জারে বড় আপার একটা মেসেজ এল,-- একটা ছবি পাঠিয়েছে ও আমাকে..খুব উৎসাহ নিয়ে খুললাম--খুলেই মন হুহু করে উঠল, দুচোখ ভিজে উঠল কান্নায়! এ যে আমাদের বাবুর ছবিসহ এ লেভের এডমিশন কার্ড আর কিছু ওর ডায়রীর ছেড়া পাতা!
আজ থেকে ১৫ বছর আগে বাবু (বড়আপার বড় ছেলে) মাত্র ১৯ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে গেছে! আজ আপা এতদিন পর, ছোট ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ঘর গোছাতে যেয়ে বাবুর অনেক কিছু খুজে পেয়েছে! ..আপা এবার আমাকে ভিডিও কল দিল, আর আমার অঝোর কান্না দেখে আপা বিব্রত হল---" আমাকে কেনতুমি বাবুর ছবি আর ওর ডায়রীর লেখা পাঠিয়েছ? আমি কিভাবে আজ সারাদিন পার করব?.." আমি কাঁদছি ! আপাও কাঁদছে..
বাবুকে মাত্র চল্লিশ দিনের বাচ্চা অবস্থায় আপা আমাদের কাছে রেখে হোস্টেলে ফিরে গিয়েছিল..আপা রাজশাহী মেডিকেলে পড়ত তখন। দুলাভাই ঢাকায় হসপিটালে কর্মরত, উনিও ডাক্তার, তবে জীবনের প্রথম দিকের স্ট্রাগলের দিকে তখন ওরা, তাই বাচ্চাকে আমাদের কাছে, মানে আমার আম্মা ওকে পালবে বছর দুয়েক, এমন কথা্ই হয়েছিলো।
বাবুকে পেয়ে আমরা কি খুশি তখন হয়েছিলাম, বলে বোঝাতে পারবনা এখানে! আমি আর আমার ছোটবোন তখন স্কুলে পড়ি, আমাদের কোন ভাই ছিলনা, বাবুকে পেয়ে আমরা একটা খেলনা ভাই পেলাম যেন, যদিও ও আমাদের ভাগনা ছিল!..স্কুল থেকে ফিরে আমরা ছুটে যেতাম বাবুকে কোলে নেবার জন্য, ওকে শিশিতে দুধ খাওয়ানো জন্য! ভাইহীন পরিবারে আপা আমাদের ভাইয়ের দ্বায়িত্ব নিতে গিয়ে একটা বিশাল স্যাক্রিফাইস করল! মাঝেমাঝে আপা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে আসত বাড়িতে, একটু বাবুকে কোলে নেবার জন্য! তখন দুলাভাইও কাজ ফেলে চলে আসত....
তারপর সেই ভয়াবহ দিনগুলো আসল!--বাবুর প্রথম জন্মদিনের পর প্রথমবারে মত ঢাকায় গেল, কথা ছিলো মাস খানেক থেকে চলে আসবে, দুলাভাই ডাক্তার মানুষ ছিলেন বলে কিছু একটা সন্দেহ করেছিলেন বাবুর চেখের দিকে তাকিয়ে...দিন যেন যায়না! আমি আর ছোটবোন জানালার শিক ধরে বাইরে বাংলা ঘরের ওপারে, বড় রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকি,--- এই বুঝি কোন রিক্সা টুংটাং করে বাড়ির সামনে আসল, আর সেটা থেকে আপা, দুলাভাই বাবুকে কোলে করে নামল!..
২ সপ্তাহও যায়নি, বাবু চলে যাবার পরে---একদিন দেখলাম আব্বা আম্মা ওঘরে খুব কাঁদছে আর ফিসফিস করে কি যেন বলছে!
সব জানলাম, বাবু আর আসবেনা,-- ওর কি যেন একটা অসুখ হয়েছে, তার জন্য চিকিৎসা শুরু হবে। আমরা দুবোন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম,-- অত অলপ বয়সে বিশাল একটা ধাক্কা পেয়ে বুকটা যেন ফেটে গেল, এর ভার নিতে পারছিলামনা!, বিশেষত আমি একেবারে অসুস্থ হয়ে গেলাম (আমি এমনিতেও ছোটবেলায় একটু রোগাভোগা ছিলাম), আমাদের সংসারের সুর কেটে গেল যেন একেবারে--আব্বা কেমন যেন হঠাৎ বুড়ো হয়ে গেলেন, আম্মা বিছানায় পড়ে গেলেন! ইস্‌ কি কস্ট! কি কস্টের সেই দিনগুলো!
বাবুর রেয়ার জেনেটিক রোগের তখন কোন ভাল চিকিৎসা ছিলোনা বাংলাদেশে, (থ্যালাসেমিয়া)..মাসে মাসে রক্ত দিতে হত ওকে। আমাদের বাবু রিয়াল ফাইটার ছিলো,-- এই ভয়াবহ অবস্থায় থেকেও ও লেভেল শেষ করেছিলো সাউথব্রীজ স্কুল থেকে, ভাল ক্রিকেট খেলত! মাসটারমাইনড থেকে এ লেভেল দেবার কিছুদিন আগে আর পারলনা, হেরে গেল....ফাঁকি দিয়ে চলে গেল আমাদের! আমি তখন ণিউ ইয়র্কে, ঘটনা দিনে সকালে ভীষন ভাবে আমার হাত কেটে গিয়েছিলো, রান্না ঘরে ছুরি দিয়ে সবজি কাটার সময় (ষেই সময় বাবুকে নিয়ে টানাটানি হাসপাতালে) ! শুধু মনে আছে, আমার হ্যাসবান্ড সারাদিন আমার কাছে লুকিয়ে রেখেছিলো ওর কথা,..পরে জানতে পেরে আমি কেমন যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলাম..আমি নাকি শুধু ছুটে বাইরে বের হয়ে রাসতায় যেতে চাচ্ছিলাম আর একটু পর পর সেন্স হারাচ্ছিলাম, কেউ ধরে রাখতে পারছিলনা!....
সুদুর বিদেশে বসে আপনজনের মৃত্যু সংবাদের মত অকল্পনীয় কস্টের আর কিছু নেই, ..আমার বাবুর মত ১৯ বছরের কাউকে দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই এখনো!..আল্লাহ তুমি আমাদের বাবুকে বেহেস্তের সর্বচ্চ শিখরে আসীন করো! আমীন!

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:২৪

অন্তরন্তর বলেছেন: খুব মন খারাপ হয়ে গেল লিখাটা পড়ে। এমন লিখায় মন্তব্য করা কষ্টকর। আল্লাহ্‌ বাবুকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আসলেই প্রবাসে বসে আপনজনের মৃত্যু সংবাদ খুবই কষ্টের। আমার বাবার মৃত্যু আমি প্রবাসে বসে শুনেছি। দেশে পর্যন্ত যেতে পারিনি।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৪৩

কাতিআশা বলেছেন: আপনি আমার কস্ট টা বুঝতে পারছেন আশাকরি! আল্লাহ্‌ আপনার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:২৩

ওমেরা বলেছেন: প্রবাসের জীবন নিয়ে এমন একটা গল্প লিখেছি মাস খানেক আগে কালকে পোষ্ট করব ভেবে কিছু এডিট করতেছিলাম তখনই আপনার লিখাটা চোখে পরল ও পড়লাম ।
আল্লাহ বাবুকে জান্নাত দান করুন ।আমীন।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৪

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদওমেরা আপুনি বাবুকে দোয়া করার জন্য!

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৪৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এসব স্মৃতি খুবই কষ্টের। আল্লাহ সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করার তওফিক দান করুন...

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৫

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!..আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা দিন!

৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৭:৪৪

চাঙ্কু বলেছেন: কষ্টের স্মৃতি। আল্লাহ বাবুকে জান্নাত দান করুন

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৩

কাতিআশা বলেছেন: বাবুকে দোয়া করার এবং পোস্ট পড়র জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:২২

রাজীব নুর বলেছেন: ঘরোয়া গল্প।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৩

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য!

৬| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: কষ্টের স্মৃতি.....
প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি সবারই থাকে....
এই জীবন বড়ই নিষ্ঠুর....

মহান আল্লাহ বাবুকে জান্নাত দান করুন।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৬

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!.আললাহ আপনার দোয়া কবুল করুন!

৭| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬

করুণাধারা বলেছেন: পড়ে খুবই মন খারাপ হলো কাতিআশা। আল্লাহর কি ইচ্ছা জানিনা, এত অল্প বয়সে ছেলেটি চলে গেল, ডাক্তার মা বাবাকে অসহায়ের মতো শুধু তাকে চলে যেতে দিতে হল...........

আল্লাহ আপনাদের এই শোক সইবার ক্ষমতা দিন, বাবুকে জান্নাত বাসি করুন- দোয়া করি।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪০

কাতিআশা বলেছেন: বাবু চলে যাবার পরের বছরেই নাসাউ মেডিকেল সেন্টার (নি্উ ইর্য়্ক) এ প্রথম বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সাক্সেসফুলি হয় এই পেশেন্ট দের জন্য...আমাদের কপালে ছিলনা বাবুকে বেশিদিন পাবার এই জীবনে!

৮| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯

নীল আকাশ বলেছেন: শুভ সকাল।
আপনার এই খুব দু:খী কাহিনী পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। রোগের নাম দেখে মনে হচ্ছে ওর বাবা মা দুই জনই এই রোগের একটিভ ক্যারিয়ার ছিল। একজন হলেও বাচ্চাটা বেঁচে যেত। বাবা মা দুই জন একই রকম হলে খুবই ভয়ানক হয়ে এটার অবস্হা। আমরা অনেকই জানি না আমাদের ব্লাডে কি আছে। বিয়ের আগে সেটা টেস্ট করে নিতে পারলে অনেক সময় পারিবারিক বিয়েতে এই সব ঝুকি এড়ানো যায়। সেদিন শুনলাম সরকার দেশে বিয়ের আগে এটা চেক করা মাস্ট করে দিচ্ছে।
ভালো থাকবেন, আপু সব সময়।
শুভ কামনা রইল!

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৪১

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!.হা, ওরা দুজনেই এই রোগের একটিভ ক্যারিয়ার .।পরের দুই ছেলেমেয়েদের কিছুই হুয়নি!

৯| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৪

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: সুদুর বিদেশে বসে আপনজনের মৃত্যু সংবাদের মত অকল্পনীয় কস্টের আর কিছু নেই, .
.........................................................................................................................
আমাদের জীবনটাই যেন এভাবে গড়া
একবার হাসব, একবার কাদঁব !!!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৮

কাতিআশা বলেছেন: :(

১০| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

পুলক ঢালী বলেছেন: ম্যাডাম কাতিআশা আপনার হৃদয়ের চিৎকার শুনে চোখ ভিজে গেল । সৃষ্টিকর্তার দরবারে ভীষন ফরিয়াদ জানাতে ইচ্ছে করছে কেন এমন হয় ??? নিষ্পাপ শিশুটির আত্মা বেহেশতে নাজেল হোক এই কামনা রইলো।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

কাতিআশা বলেছেন: আললাহ আপনার দোয়া কবুল করুন! ...পড়ার আর ফিল করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!.

১১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৪

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



ওপারে ভাল থাকুক বাবু

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৩৭

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!.আললাহ আপনার দোয়া কবুল করুন!

১২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬

ইসিয়াক বলেছেন: সুন্দর

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২২

কাতিআশা বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৩

ফাহিমা জেরিন জেবা্ বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করার তওফিক দান করুন...মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আসলে যে আপনজন হারায় সেই বুঝে এর কষ্ট কতটুকু।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৩

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!

১৪| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল।

আল্লাহ্‌ উনাকে বেহেশত নসীব করুন।

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৯

কাতিআশা বলেছেন: আললাহ আপনার দোয়া কবুল করুন!

১৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৬

আরাফআহনাফ বলেছেন: আমিন!
আল্লাহ আপনার ও পরিবারের সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করার তওফিক দান করুন - আমিন!

১৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪৭

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আর আললাহ আপনার দোয়া কবুল করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.