নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা ব্লগ ভালবাসি আর সুযোগ পেলেই পড়ি। অনেক কিছু লিখতে মন চায়, কিন্তু লেখার যে হাত!...চেস্টা করে যেতে হবে তবুও।

কাতিআশা

বই এর পোকা, স্কেচ এর নেশা, পেশায় স্থপতী আর বাংলাদেশের প্রতি অসীম ভালবাসা

কাতিআশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার গল্প..আমাদের গল্প...

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৯

সেদিন দুপুরে হোস্টেলে ওয়ারডেন আপার রুম থেকে ডাক পড়ল আমাদের রুমে--আমার নাম ধরে শরিফা বুয়া ডাকছে, "--আপা, আসেন, আপনার ফোন!" (তখন ওয়ারডেন আপার রুমেই ফোন থাকত, সেটাতেই কেউ হলে আমাদের সাথে দেখা করতে আসলে, বা আমাদের ফোন এলে, তখন আমাদের ডেকে দেয়া হত)। দৌড়ে গেলাম, মেজ আপু ফোন করেছে, --ওর বাসায় যেতে বলেছে আগামীকাল (যেটা ছিল সে বছরের নতুন দিন- জানুয়ারী ১), কি যেন দরকারে! সে টা তখন বললনা আমাকে। জানালাম কাল বিকেলের আসব।
তো সেদিন ছিল অবশ্যই ৩১শে ডিসেম্বর, আর ফ্রেন্ডদের সাথে ঐ রাতে একটা গেট টুগেদের ছিল!।আমাদের এই ক্লোজ ফ্রেন্ডদের গ্রুপের মধ্যে আমি সহ দুজন মেয়ে আর ৪ জন ছেলে ছিল--সবাই আমরা ক্লাসমেট,-- বিভিন্ন সময়ে আমরা এর ওর বাসায় গ্রুপ স্টাডি করা, প্রজেক্ট করা, আড্ডা মারা সব হত এক সাথে। তো, সে রাতে এক বন্ধুর বাসায় সবাই জড় হলাম, খুব মজা করলাম আমরা প্রায় ভোররাত পর্যন্ত...অনেক গল্প, অনেক আড্ডা হল-- কেউ কেউ তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা পরিকলপনার কথা জানালো; বুয়েট থেকে পাশ করে কে কে বিদেশে চলে যাবে মাস্টার্স করতে, কে কে দেশে থেকেই ছোটখাট ফার্ম দেবে, ইত্যাদি! আমি চুপ চাপ রইলাম, আমার প্ল্যান শুধু আমিই জানি---আসলে, ছোটবেলা থেকেই আমার আমেরিকা নিয়ে অগাধ কৌতুহল, একটা গভীর টান ছিল! সেই পিচ্চিকাল থেলেই হলিউডের নায়ক, নায়িকাদের ছবি পত্রিকা থেকে কেটে রাখা, আমেরিকার সব শহর, রাস্তা ঘাটের নাম টুকে রাখা--সব জমা করে রাখতাম আমার ডায়রী কাম স্ট্যাম্প বুকে! এক সময় সবার চাপাচাপি তে আমার প্ল্যানটা বলতে বাধ্য হলাম, কিন্তু একটা নতুন কথাও জানালাম,--- আগামীকাল নিউ ইয়ারে যদি নতুন জিনিস আমার জীবনে আসে, সেটা আমি মাথা পেতে নিব! সবাই একচোট হাসাহাসি করল, -"এহ্‌! এটা একটা কথা হল?..তোর কি মাথা খারাপ যে, কিছু নতুন আসলে সেটা ভাল নাগলেও মাথা পেতে নিবি?..অবশ্য তুই যে গাধী, মেনে নিতেও পারিস..হা হা !" রাগ হলাম না ওদের কথায়, বন্ধুই তো সব আমার! ...আর কি্ই বা হবে আগামীকাল?..সেই তো আপুর বাসায় সারাদিন থাকা, টিভি দেখা, আর পিচ্চি ভাগনে টার সাথে খুনসুটি করা!
পরদিন, অর্থাৎ নিউ ইয়ারের দিন আপুর বাসায় চলে আসলাম। বিকেলের দিকে আপু আমাকে ভাল জামাকাপড় পড়ে, একটু সাজগোজ করতে বলল, ---সবাই আমরা ইস্টার্ন প্লাজায় যাব, শপিং করতে আর খেতে! আমার রাগ হল, আবার সাজগোজের কি দরকার? আমি খুবি সিম্পল ভাবে, সাধারন সুতি সালওোয়ার কামিজে, দুটে লম্বা বেণী ঝুলিয়ে ক্লাস করতে যেতাম..এটাই আমার স্টাইল! এর থেকে বেশী কিছু করতে ভাল লাগত না--কিন্তু বোনের চাপে একটু হালকা লিপ্স্টিক ছোঁয়ালাম আর পড়লাম মেরুন/সাদা কামিজ-পাজামা, এই যা!
তো, ইস্টার্ন প্লাজায় (তখন ওটা নতুন হয়েছে, সবাই খুব যেত ওখানে কেনাকাটা করতে) গিয়ে এক দোকানে কাপড় দেখছি--হঠাৎ দেখি এক মোটামত মহিলা আমার দিকে দ্রুত এগিয়ে এসে আমার নাম জিগ্যেস করছে, আর ওনার পেছনে শান্ত- স্নিগ্ধ চেহারার, সাদা সুতি শাড়ি পড়া ছোটখাট এক বয়স্কা মহিলা এক দৃস্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! আমি একটু মেজাজ খারাপ করে কড়া গলায় জানালাম,--- আমার নাম জেনে ওনার কি লাভ!..মহিলাটা যেন একটু লজ্জা পেলেন, --ওনারা কিছু না বলে অন্যদিকে ঘুরে দাড়ালেন, আর আমি আপুরা যে টেবিলে খাবার খাচ্ছিলো, সেখানে যেয়ে বসলাম। আমাদের পাশের টেবিলেই সেই মোটা মহিলা, সেই বয়স্কা, সাথে এক যুবক আর মধ্যবয়স্ক লোক বসে খাচ্ছেন আর একটু পরপর আমার দিকে তাকাচ্ছেন..আমি খেয়াল করলাম ওরা আমার আপু, দুলাভাইয়ের সাথে চোখাচোখি করে কোন ভাব বিনিময় করছেন! --এবার ব্যাপারটি বুঝতে আমার সময় লাগল না! ওরা আসলে আমাকে দেখতে এসেছে এবং আমার বোন-ভগ্নিপতীও সেটা জানেন ! আমি রাগে দুখখে আপুকে ফিসফিস করে, চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম "তোরা জানিস আমি এখন বিয়ে করবনা, পাশ না করা পর্যন্ত..তবুও আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছিস?" আপু আমার সোনা, লক্ষীবোন অনেক কিছয় বলে তোষামোদের সুরে আমাকে বোঝাতে লাগল যে, ছেলেটি নাকি খুবি ভালো, বুয়েট থেকেই পাশ করা, আমেরিকাতে এমএস করে ভাল চাকুরি করে, ভাল পরিবার, ইত্যাদি ইত্যাদি ! খুব করে আপু আমাকে বোঝালো ছেলেটার সাথে যেন আমি অন্তত একটু কথা বি, আর ভাল না লাগলে ওরা পিছিয়ে যাবে---
একরকম পিড়াপিড়িতে আমি তার সাথে কথা বলতে বাধ্য হলাম---এখনও মনে আছে ওর পরনে ছিল হালকা হলুদ পোলো শার্ট, নীল জীন্স প্যান্ট--কি গভীর, মায়াবী চোখ! --সেই চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সব ভুলে গেলাম! ....কে এই যুবক? একেই কি আমি এতদিন খুঁজেছি?..লাভ আ্যাট ফার্সট সাইট, একেই কি বলে? ভাবলাম, চুলায় যাক আমার পড়াশুনা!..আমি যাবই যাব এই মায়াবী চোখের ছেলের হাত ধরে আমার স্বপ্নের দেশে!----সে আমাকে অনেক কথে বলছিল বুয়েট লাইফ নিয়ে, আরও কি কি!...কিন্তু আমার কানে কিছুই যাচ্ছেনা!..আমি হঠাৎ premonition এর মতো ভবিষ্যৎ দেখতে পেলাম--- ওর হাত ধরে আমি একটা অচেনা শহরের, অচেনা রাস্তা পার হচ্ছি, পেছনে আমাদের আ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং আর সামনে একটা সিনেমা হল (এরকম সত্যই হয়েছিল,---- কেউ বিশ্বাষ করুক, আর না করুক---আমাদের প্রথম বাসাটা গ্লেন কোভ শহরের, ব্রুসটার রোড এর একটা হলুদ সাদামাটা আ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ ছিল, তার সামনের বড় রাস্তার পরেই কিছু দোকানপাট, একটা বড় পুরোনো গীর্জা আর ছিল একটা সিনেপ্লেক্স!)
এরপরে, ঘটনাগুলো দ্রুত ঘটতে লাগলো---সে রাতে বড় আপার বাসায় মিটিং বসল, সবাই জানালো ছেলের নাকি আমাকে খুবি পছন্দ হয়েছে, আর আমাদের সবারও তাকে পছন্দ হয়েছে! পরদিন ক্লাসে গেলাম, সবাইকে বলার পরে আমার ফ্রেন্ডরা খুবি অবাক হয়ে গেল---কিভাবে আমি একজন কে না জেনে, না শুনে বিয়ে করতে যাচ্ছি! ওরা আমাকে, বোকা, লোভী (আমার আমেরিকার প্রতি আগ্রহ এর কথা ওরা জানত) ইত্যাদি বলে বেশ লজ্জায় ফেলে দিল। বাসায় ফিরে অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম---এটা কি আমি ঠিক করছি?... না না, মুহুর্তের মধ্যে পরিবারের সব আপনজন, বন্ধুদের মুখ ভেসে উঠল, সেই সাথে আমার প্রিয় ক্যাম্পাস, আমার হলের জীবন, সেই বুয়েটের পাশের শহীদ মিনারে আডডা, সেই আহসানউললাহ হলের সামনে টং এর চা খওয়া!..হায় হায় একি করছি আমি?..কিনতু আবার সেই চোখ, সেই প্রেমোনিশনে দেখা অচেনা শহরে তার হাত ধরে হাটা, আমার হৃদয় কে ছাড়খার করে দিল!..অবশেষে আমার আবেগ তার সেই মায়াবী চেখের কাছে হার মানল! এক সপ্তাহের মাথায় আমাদের বিয়ে হয়ে গেল, আবার সে চলেও গেল তার দশদিনের মাথায় আমাকে কাঁদিয়ে!..।
এরপর তো সব আরেক গল্প..নেমসেক মুভীর মতো আমারও প্রবাসে জীবন শুরু হলো..নানা ঘটনা, নানা সুখ, দুঃখের মাঝে পার হয়ে গেল দীর্ঘ ২৪ টা বছর আমেরিকাতে! পেয়ে গেলাম দুটো দেবশিশু, ওরাও তো এখন বড়, বাসা ছেড়ে এখন অনেক দুরে! আবার আমরা দুজন...মাঝে কত বড়বড় সংঘাত এসেছে জীবনে, কত ঝগড়াঝাটি..কিনতু ঐ চোখ দুটো ওর এমনই আছে! ওখানেই আমি অসহায়! ..বার বার তার মায়ার বাধনে পড়ে যাই...হায়রে পোড়া চোখ!
(উৎসর্গ : আমার মায়াবী চোখের, আর তার চেয়েও মায়াবী মনের আমার স্বামী কে!...ভ্যালেনটাইন ডে এর জন্য কিছু একটা লেখার প্রচেস্টা!)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৫০

শের শায়রী বলেছেন: অনেক দেরী করে চোখে পড়ল। মায়াবী চোখের সেই ভাইকে আমার সালাম পৌছে দিয়েন। কেন যেন আপনার লেখার মানের তুলনায় আপনার পাঠক কম হয়, আপনি দারুন লেখেন।

ভালো থাকুন বোন।। ২৪ বছর। একটা হিসাব করলাম :) একটু এদিক ওদিক হতে পারে তবে কাছাকাছি যে থাকব নিশ্চিত।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১২

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ার জন্য!..কেন জানি, আমার লেখাটা প্রথম পাতাতে আসলই না! কয়েকবার ড্রাফট করে আবার পোস্ট করলাম, কিন্তু কিছুই হলনা!---যাকগে, আমি জনপ্রিয় ব্লগার নই মোটেই!.. মাঝেমাঝে সময় পেলে কিছু লিখি, এই যা!.ভাইয়ার আজ মেজাজ খারাপ, সোমবার তো! :) (বয়স হয়ে গেলে যা হয়! রিটায়ার করে ছোট কোন শহরে চলে যেতে ইচ্ছে করে..)

২| ১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:১৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ! কী মিষ্টি কাছে আসার গল্প !!
আপনার মায়াবী চোখের মায়া দীর্ঘতর হোক।

শুভ কামনা আপু :)

১৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:২৬

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আপুনি!

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৪৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: কাতিআশা,





ঠিক দিনটিতে মায়াবী এক ভালোবাসার গল্পই লিখলেন।

দুই যুগ আগে আপনার সব পূর্বাশঙ্কা যখন ঠিকঠাক মিলে গেছে আশা করি বাকী জীবনেও মিলবে। মিলুক............

১৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:২৫

কাতিআশা বলেছেন: ভাল লাগা আর পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া!

৪| ১৩ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৩৯

মলাসইলমুইনা বলেছেন: কাতিআশা,

গ্লেন কোভ শহরে শুরু করা আপনাদের টোনাটুনি জীবন দুটি দেব শিশুকে বড় করার পরেও (দু'জনেরই বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার কথা আমি জানি) ভালোবাসাবাসিতে ময়ূরপঙ্খী গতিতে অনন্তকাল এগিয়ে যাক সেই শুভ চাওয়া সব সময়ই আছে। আর এই সিন্ডারেলা গল্প পড়ে সেই চাওয়া আরো বেশি বেশি চাইলাম কিন্তু। নিউইয়র্ক স্টেটের কথাতো আগেই শুনেছিলাম কিছুক্ষন আগেই শুনলাম নিউইয়র্ক সিটি মেয়র সিটিতে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার করেছেন করোনা ভাইরাসের জন্য । ভালো থাকুন আর নিরাপদে থাকুন ।আশাকরি ছেলে মেয়েরা ভালো আছে । ওরা নিশ্চই এখন বাসায় ? আমাদের এখানে সব ইউনিভার্সিটিতো ইনক্লাস থেকে কোর্স অনলাইনে নেয়া শুরু করে ফেলেছে এরই মধ্যে ।

১৯ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:২৫

কাতিআশা বলেছেন: সবাই আমরা এখন বাসায়, পোলাপান সহ!..খুবি বাজে অবস্থা পার করছি, দোয়া করবেন..পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া!

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৩৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: খুব সুন্দর একটি ভালবাসাময়, ভালবাসার গল্প শোনালেন। চমৎকার লাগলো।

পেলে এমন মায়াবী চোখ, মায়াবী মন,
জীবনে আর কিসের প্রয়োজন? :)

আপনার এই মায়াবী মানুষটি কি একজন এক্স-এমসিসি ক্যাডেট? উনি স্থপতি জগলুল এর বন্ধু এবং ব্যাচমেট, এ কথাটা এর আগে আপনি একটি লেখায় অথবা মন্তব্যে জানিয়েছিলেন।

ভাল থাকুন আপনারা সবাই, সপরিবারে। করোনামুক্ত, নিরাপদ থাকুন।

ভালবাসার এই গল্পে পঞ্চম ভাললাগা (+) জানিয়ে গেলাম।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৩৬

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে পড়া এবং ভাল লাগার জন্য! হা উনি এক্স-এমসিসি ক্যাডেট আর স্থপতি জগলুল এর খুব কাছের একজন বন্ধু !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.