নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা ব্লগ ভালবাসি আর সুযোগ পেলেই পড়ি। অনেক কিছু লিখতে মন চায়, কিন্তু লেখার যে হাত!...চেস্টা করে যেতে হবে তবুও।

কাতিআশা

বই এর পোকা, স্কেচ এর নেশা, পেশায় স্থপতী আর বাংলাদেশের প্রতি অসীম ভালবাসা

কাতিআশা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসা বদল

২০ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:২৮

আমেরিকাতে কেউ এক বাসায় সারাজীবন কাটিয়েছে- এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম। নানা প্রয়োজন, চাকুরীর নীয়োগস্থল, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, ইত্যাদি কারনে সবাই বেশ বাসা বাড়ী বদলায়। আমার ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে--এই ২৫ বছর প্রবাস জীবনে বেশ কয়েকবার বাসা বদল হয়েছে--এখন যেখানে আছি, সেটা কিনেছিলাম এগারো বছর আগে, ছেলেমেয়েদের ভাল স্কুলে পড়ানো জন্য (এ দেশে এলাকা ভিত্তিক স্কুল-School District)। যে এলাকার স্কুল যত ভালো, ট্যাক্সও তত বেশী! ওদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেশী দাম, বেশী ট্যাক্স, উপরন্ত কাজ থেকে ৩০ মাইল দূরে এই বাসা কিনেছিলাম ২০১০ এ। আমাদের যাতায়াতে কস্ট হত,... কিন্তু বাচ্চারা ভাল স্কুলে যেত, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, ছিমছাম এলাকায় থাকত- এটাই দেখে সব কস্ট, পরিশ্রম পানি হয়ে যেত! ওরা এই ভাল School District এর সুযোগ কাজে লাগিয়েছে..দুজনেই আলহামদুলিল্লাহ ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে, ...এখন আমাদের বিদায়ের পালা এই বাসা থেকে। কারন, এত ট্যাক্স দিয়ে এখানে থাকার কোন মানে হয়না! আমরা দুজন শুধু এই বাড়ীতে পড়ে আছি, বাসা থেকেই অফিস করছি..তাই ভাবছি এটা বিক্রী করে কম ট্যাক্সের আর আত্মীয়স্বজনের কাছাকাছি এলাকায় চলে যাব। এই বয়সে লোকজনের কাছে থাকতে ভাল লাগে, কারন কোভিডের জন্য সবার মাঝেই একটা ডিপ্রেশন চলে এসেছে! আমাদের বর্তমান বাসার কাছে আত্মীয়স্বজন কেউ থাকেনা। যদিও সেই শহরে গেলে কাজ থেকে আরও ২০ মাইল (টোটাল্ = ৫০ মাইল) দুরে চলে যেতে হবে, তবুও ভাল! একটা পর্যায়ে মানুষ অন্য মানুষের সংগ ছাড়া থাকতে পারেনা!
..এই বাসা আগে কত মুখরিত ছিল বাচ্চদের কেলাহলে, ছুটাছুটিতে, পড়াশোনায়, খেলনাপাতি..কত কিছুতে! একটু করে করে বাসার জিনিসপত্র গোছাচ্ছি, পুরোনো জিনিসপত্র ফেলে দিচ্ছি---আর সেই সাথে বের হয়ে আসছে কত স্মৃতি, কত আবেগ! ছেলেমেয়েদের ছোটবেলার খেলনাপাতি, স্কুলের বইখাতা, গল্পের বই, হারানো পুতুল কতকিছু!..অনেক যত্ন নিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে বাসাটা সাজিয়েছিলাম..দিনের সাথে সেগুলোও আস্তে আস্তে পুরনো, ফিকে হয়ে আসছে! মায়া বড় বাজে জিনিস! অথচ কত বছর আগে আমার প্রিয় মাতৃভুমি, প্রিয় বাসা, আমার সেই হোস্টেলের গোছানো রুম নং ১২৩ ছেড়ে এসেছিলাম! কিভাবে সেগুলোর জন্য দিনের পর দিন কেঁদেছি..একসময় কেমন করে যেন সেই স্মৃতিগুলো ফিকে হয়ে এলো এখানকার নতুন জীবন গোছানোর উত্তেজনায় আর সংসার বড় করার আনন্দে! এখন হৈচৈ, ভরাট সংসার টাও ছোট হয়ে আসছে, ...আবার বাসা বদল, আবার নতুন করে সংসার দুজনের! আর বিকেলের শান্ত রোদের আলোয় মাখা ডেকে বসে আমাদের বাচ্চাদের ছুটিতে বাসায় আসার অপেক্ষা!.... ঠিক যেভাবে আমার বাবা মাও আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেন হাজার হাজার মাইল দূরের সেই ছায়া মাখা, হাসনাহেনা ফুলের গন্ধে ভরা আমাদের বাড়ীর দক্ষিনের বারান্দায়!



বার্কলি লেনের আমাদের প্রিয় বাসাটি..







কত যত্নেই না সাজিয়েছিলাম বাসাটি

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর সাজানো গোছানো বাসা। আপনি ভাগ্যবান।

২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪০

কাতিআশা বলেছেন: নেক ধন্যবাদ ভাল লাগার জন্য!

২| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৫৩

করুণাধারা বলেছেন: লেখাটা আগে চোখে পড়েনি। পড়ে মন বিষন্ন হলো।

ছেলে মেয়েরা ছোট থাকতে কীভাবে সময় কেটে যেত... এখন বড় হয়ে তাঁরাও পড়াশোনা করার জন্য বাড়ি ছেড়ে গেছে, আপনার সন্তানদের মতোই। মাঝে মাঝে তাদের শৈশবের কিছু খেলনা বের হয়... খুব বিষন্ন লাগে, বিশেষ করে এই করোনা কালে। সবকিছু এত অনিশ্চিত, আমার ছেলেমেয়ে মিড ওয়েস্টের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

আপনার বাসা চমৎকার সাজানো।

২৫ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৩:৩০

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য আপুনি!..কেমন আছেন? আসলেই কেমন খালিখালি লাগে সবকিছু! খুব আশায় আছি আমার মেয়ে নিউ ইয়র্কে যদি কাজ পায়, ও এই মে মাসে গ্রাজুয়েশন করবে ইনশাল্লাহ..এখানে কাজ হলে বাসা থেকে করতে পারবে!
ঘর সাজাতে ভাল লাগে---এটা একটা আ্যন্টি ডিপ্রেসান্ট হিসেবে কাজ করে আমার জন্য...

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০৯

ওমেরা বলেছেন: সুইডেনে আমরাও অনেক বার বাসা বদল করেছি। আর হয়ত বাসা বদল হবে না আমিই বদল হয়ে যাব :D
আপু যেমন সুন্দর বাসা তেমনি গুছানো খুব ভালো লেগেছে।
যেখানেই যান অনেক ভালো থাকুন আপু।

২৭ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১:০৩

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ওমেরা আপুনি ভাল লাগার জন্য!..আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজিন সুইডেনে থাকে..একবার বেড়াতে যাওয়ার খুব ইচ্ছা!

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৩:৪১

মলাসইলমুইনা বলেছেন: কাতিআশা,
হ্যা, এগারো বছরতো কম সময় না । এই বাসা বদলাতেতো খারাপ লাগবেই । তাছাড়া আপনার বাচ্চারা বড় হলো এই বাসায়ই এর স্মৃতিতো সারা জীবন থেকে যাবে মনে। আপনাদের এই বার্কলে স্ট্রিটটা কি আপস্টেট নিউইয়র্কে ? এখন কোন দিকে বাসা নেবেন লংআইল্যান্ডের দিকে ? আপনিতো আমেরিকাতে যেয়ে ওদিকেই কোথাও ছিলেন মনে হয় তাই না ? আপনি নিজে আর্কিটেক্ট আর তাই আপনার নতুন বাসাও আপনার কারণে অনেক সুন্দর হযে জানি আমরা । নতুন বাসায় উঠে সেটা নিয়েও আমাদের জানাবেন। আপনার ছেলেমেয়েদের ইউনিভার্সিটি কি অনালাইনে হচ্ছে ? না কি ওরা অন ক্যাম্পাস ক্লাস করছে ? ভালো থাকুন ।

২৭ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১:১১

কাতিআশা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ভাইয়া!..না এই বার্কলে স্ট্রিটের বাসাটা লং আইল্যান্ডেই..আমি এই দীর্ঘ ২৫ বছর এই এদিকেরই বিভিন্ন শহরে কাটালাম! আমার ছেলে এই সেমস্টার অনলাইনে ক্লাস করছে বাসা থেকে, কিনতু মেয়েটা ইউনিভার্সিটির ডরমে থেকে ক্লাস করছে..কারন এটা ওর লাস্ট সেমেস্টার (মে তে গ্রাজুয়েশন), তাই। দোয়া করবেন ওদের জন্য..

৫| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০৮

শায়মা বলেছেন: আপুনি!!!!!!!!

নতুন বাসাও সাজিয়ে গুছিয়ে ছবি দিও।

তুমিও ঘর সাজাতে কত ভালোবাসো!!!!!!!

আমিও!!!!!!! :)

০৩ রা এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:২৬

কাতিআশা বলেছেন: আপু এই বাসাটা দেখতো, কেমন লাগে?..এটা মোটামুটি পছন্দ হয়েছে, কিন্তু অফিস থেকে বেশ দূরে, তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা আর এ বাসার মায়াও ত্যাগ করতে পারছিনা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.