নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

উপন্যাস অসমাপ্ত জবানবন্দী, নিরু, গায়েবি শৃঙ্খল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘একাত্তরের অবুঝ বালক’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী। কর্মস্থল- হাইকোর্ট।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কারাগারে ডিভিশন কি? ডিভিশন সুবিধা কারা পায় এবং কিভাবে নিতে হয়?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১২


হঠাৎ কেউ গ্রেফতার হলে এবং গ্রেফতার পরবর্তী কারাগারে পাঠানো হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে ডিভিশনের বিষয়টি। বিশেষ করে ভিআইপি আসামীদের ক্ষেত্রে এটি একটি কমন বিষয়। এখন প্রশ্ন হলো ডিভিশন বিষয়টি কী? সহজে বললে কারাগারে ডিভিশন মানে হলো সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী একজন বন্দীকে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া, যা সাধারণ বন্দীদের দেওয়া হয় না। যেমন: আলাদা নির্ধারিত কক্ষে থাকা, ভালো মানের ও বেশি খাবার পাওয়ার সুযোগ, বই ও পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা, নিয়মানুযায়ী স্বজনদের সাথে বিশেষ অনুমতি নিয়ে অফিস রুমে তারা দেখা করার সুযোগ, ক্ষেত্র বিশেষ ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামিদের কাজকর্ম করে দেয়ার জন্য আরেকজন বন্দিও দেয়া হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে আরেকজন ছেলে বন্দি আর নারী আসামিদের জন্য একজন মেয়ে বন্দি ।

ডিভিশনের কথা কোন আইনে বলা রয়েছে?

ডিভিশন বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে জেল কোড বা কারা বিধিতে। জেল কোডের ৬১৭ নাম্বার বিধিতে কারা ডিভিশন পাবেন তা উল্লেখ রয়েছে।

কারাগারে কয় ধরনের ডিভিশন রয়েছে?

কারাবিধি অনুযায়ী বন্দিদের কারাগারে তিন ধরনের ডিভিশন দেয়া হয়ে থাকে। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩।

কারা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য?

জেলকোডের ৬১৭ বিধিতে বলা আছে, ‘যারা ভালো চরিত্রের অধিকারী ও অনভ্যাসগত অপরাধী; সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে যাদের জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের এবং যারা নৃশংসতা, নৈতিক স্খলন এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসামূলক অপরাধ বা বিস্ফোরক আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মারাত্মক অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত নন বা অন্য কাউকে এসব অপরাধ করতে প্ররোচিত বা উত্তেজিত করেনি তারা ডিভিশন-১ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।

এছাড়া বিধি ৬১৭ (২)-এ বলা হয়েছে, ‘নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে জীবনযাপনের ধরন উচ্চমানের বন্দিগণ ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন। অভ্যাসগত বন্দিগণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই শ্রেণির বহির্ভূত হবে না, সরকারের অনুমোদন বা পুনর্বিবেচনার শর্তে শ্রেণি বিভাজনকারী কর্তৃপক্ষকে বন্দির চরিত্র এবং প্রাক পরিচিতির ভিত্তিতে এ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ক্ষমতা দেওয়া হবে।
যেসব বন্দি ডিভিশন ১ ও ২-এর অন্তর্ভুক্ত নয় তারা তৃতীয়টির অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সহজ করে বললে ডিভিশন-১ পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন:

সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি:

সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী (সিআইপি) বা একই ধরনের সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হন।
সাধারণত ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সের ১ থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত অবস্থানে থাকা সব সাবেক ব্যক্তিবর্গ এই শ্রেণীর অন্তভুক্ত হয়ে থাকেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক বীরত্বসূচক মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সিআইপি, প্রফেসর অফ ইমিরেটাস হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরাও ডিভিশন-১ এর সুবিধা পাবেন। এর বাইরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শক্রমে সময়ে সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিবেচিত ব্যক্তিরাও এই সুবিধা পেতে পারেন।

ওদিকে নাগরিকত্ব নির্বিশেষে সামাজিক মর্যাদা, শিক্ষা এবং অভ্যাসের কারণে জীবনযাপনের ধরন বিবেচনায় অন্য উচ্চমানের বন্দিগণ ডিভিশন-২ প্রাপ্তির যোগ্য হবেন।

যেসব বন্দি ডিভিশন ১ ও ২-এর অন্তর্ভুক্ত নয় তারা তৃতীয়টির অন্তর্ভুক্ত হবেন।

ডিভিশন পেতে হলে করণীয় কী?

ডিভিশন পেতে হলে গ্রেফতারের পর যেদিন আদালতে তোলা হবে সেদিন জামিন শুনানির পর জামিন নামঞ্জুর হলে জেল কোডের বিধি-৬১৭ মোতাবেক ডিভিশনের দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। দরখাস্তের সাথে কেন ডিভিশন প্রাপ্ত হবেন তার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। যেমন; সাবেক সংসদ সদস্য হলে তার সংশ্লিষ্টতায় গেজেট টি ফিরিস্তি আকারে দিতে হবে। সিআইপি হলে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস্ দিতে হবে।
যদি আদালতে তা প্রদান করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করলেও কারা কর্তৃপক্ষস্বি-বিবেচনায় ডিভিশন প্রদান করতে পারে।

ডিভিশন না পেলে/দিলে করণীয়:

যদি কারা কর্তৃপক্ষ এমনটি না করে সেক্ষেত্রে ডিভিশন দেওয়ার জন্য প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আদালতের কাছে আবেদন করতে হয়। আবেদন অনুমোদিত হলে কারা কর্তৃপক্ষ নির্দেশ অনুযায়ী সেই বন্দীকে ডিভিশন সুবিধা প্রদান করে। অথবা আদালতে দরখাস্ত দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট আদালত তা মঞ্জুর না করলে বা কারা কর্তৃপক্ষের বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে সন্তুষ্ট না হলে হাইকোর্টে রীট করা যেতে পারে।

-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ (কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু, 'অসমাপ্ত জবানবন্দী' এবং 'গায়েবি শৃঙ্খল'; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৫

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লাগলো ।

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৪

বিজন রয় বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.