নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তাওহীদ হাসানের ব্লগ

বিএসসি প্রকৌশলী ও এক সময়ের তুখড় টিভি সাংবাদিক

তাওহীদ হাসান

বিএসসি প্রকৌশলী ও একসময়ের তুখড় টিভি সাংবাদিক

তাওহীদ হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জর্ডন রোডে রেখে আসা দিন গুলি !

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১

১৯৯৪ সালের কথা। আমার অবশ্য স্কুলে যাওয়ার তেমন কোন ইচ্ছাই ছিলনা, বাবা-মা’র চাপেই ভর্তি হওয়া। ভর্তির আগের দিন সব প্রস্তুতি সাঙ্গ। পড়াশুনার নাম নাই, আত্মীয় পরিজন বহুত আগেই স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স ইত্যাদির কর্ম সাধন করে দিয়েছিলেন। যাই হোক যেদিন ভর্তি হলাম সেদিন নানুর অফিসের একটা অর্ধ ভঙ্গুর গাড়ীতে কখনো নিজে দুলতে দুলতে কখনো গাড়ী দুলতে দুলতে জর্ডন রোডে পৌছালাম। সরাসরি গেলাম সহকারি প্রধান শিক্ষিকার রুমে। জিজ্ঞাসা করা হল আমার নাম ও আমি কেমন আছি। উত্তর দিয়ে আবার তারা কেমন আছেন তাও জিজ্ঞাস করে ফেললাম। আল্লাহ সহায় তখন লেখা পড়ার কিছু আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নাই। করে ফেললেতো একবারে বাসায়! জীবনে সেদিন থেকে যে লেখা পড়া শুরু হয়েছে, আজ অবধি থামেনি। এটাই ছিল জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত। সেদিন বাবা-মা’র সাথে আর একটু যুদ্ধ করে স্কুলে না গিয়ে পারলে হয়তো বর্তমানে ২২ বছর বয়সে একজন প্রকৌশলী হয়েও সামনে বই নিয়ে থাকতে হতনা। যাক বাদ দিলাম সেই দূঃখের কথা।

ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ, এবার ক্লাশ শুরু। আরম্ভটা ভালই হয়েছিল। বেঞ্চ নেই। নেই কাগজ কলমের ঝামেলা। খেলনা দিয়ে খেলেই জীবনটা পার হচ্ছিল। একদিন ঘোষনা দেয়া হয়েছিল, কাল থেকে বেঞ্চ আসবে শুরু হবে লেখা পড়া। সেদিনই মাথার ভিতর চক্কর দিয়ে উঠেছিল তবে কারন বুঝতে পারছিলাম না। এখন অনুধাবন করতে পারছি, সেদিন কেনইবা মাথা চক্কর দিল। স্কুলের সেদিন গুলোতে যেমন “স” আর “শ” এর পার্থক্য করতে কষ্ট হতো, আজ কারেন্টের ডিরেকশন বুঝতে পারা আমার জন্য ঢের সমস্যার (নিজে তড়িৎ প্রকৌশনী বলে কথা)। বুঝতে পারছি, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্ষেত্র অনেক হুমকির মুখে। আর ভালই লাগে না, কোন সালে বিজ্ঞানী ওহম কি বলে গেছে তাই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের চারটা বছর নষ্ট করতে বাধ্য হলাম। সামনে আর কত বাকি আল্লাহই জানে। ল্যাবে এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে যে পরিমান কারেন্টের শক খেয়েছি, অন্য কাউকে তড়িত প্রকৌশল পড়ার পরামর্শ আমি দেইনা।

এবার আবার আসা যাক, জর্ডন রোডে। “প্লে” ক্লাশ কিন্তু বেশ ভালই লাগছিল। অক্ষর গুলো ফোটা ফোটা দেয়া ছিল। চোখ বন্ধ করে হাত ঘুরিয়ে গেলেই কম্ম সাড়া। প্রতিবন্ধকতা শুরু হল মারিয়া ম্যাডামের “নার্সারী ক্লাশে” এবার যা লিখতে হবে ডাইরেক্ট। বাবা-মা’র সাথে সেবার শেষ বোঝাপরা করেছিলাম, যে ছেলে ওয়ান পাশ থাকলে তাদের কোন সমস্যা আছে কিনা। কিন্তু আমার কথা শুনে বাবা চড় মেরে হোম ওয়ার্ক করাতে বসিয়েছিল, তাতে বুঝেছিলাম, আল্লাহ যত দিনে দয়া না করে আমাকে তুলে না নিবেন, ততদিন লেখপড়া আমাকে ছাড়বে না।

জীবনে যতবার ভিক্ষারীদের খুশি করতে পেরেছিলাম তারা দোয়া করত, “ভালো পাশ করো”। সম্ভবত তাদের দোয়াতে একবারেই ক্লাশ ওয়ানে। যতদূর মনে করতে পারি ক্লাশ ওয়ানে সেবার ফাষ্ট হয়েছিল সতের জন। এখবর অবশ্য আজ অবদি বাইরের কোন মানুষকে আমি বলনি। মাশাল্লাহ বলেন সবাই, নাহলে আমাদের ক্লাশ মেইটদের যে, দৃষ্টি লাগবে। কার কার মনে আছে জানি নাহ, রচনা লেখার পেরা শুরু হয়েছিল এখান থেকে। সেদিন এ ঝামেলাতে না জড়ালে আজ আমাকে দেশ বিদেশে ১২ টা গবেষনা, টেকনিকাল বা কনফারেন্স পেপার লিখতে হত না।যাই হোক এটাই হবার ছিল কপালে। বাসার টিফিন খেতে খেতেই এখন ক্লাশ টুতে। স্কুকের বড় ভাই, স্থানও সবার উপরে। ডিক্টেশন লেখা আমার জন্য একটা বড় মুশকিল ছিল। কিছুই বুঝতামনা আমি। ম্যাডাম বলতেন আমি মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। বলা শেষ, আমার শোনা শেষ, খাতা খালিই রয়ে যেত। আচ্ছা শোনা আর লেখা দুইটা কি একসাথে করা যায়? আপনারাই বলুন। যাক ছোট ছিলাম ব্যাপারনা।

স্কুলে ক্লাশ করার পিছনে অনুপ্রেরণা ছিল, মামার বাদাম। ক্লাশ করে বের হলেই মা বাদাম নিয়ে বসে থাকবে এ কথা ভেবেই মূলত ক্লাশ করতাম। এই যাহ, “পিছনে” কথাটা বলতেই অন্য কথা মনে পড়ে গেল। আপনারা যা ভাবছেন হয়তো তা নয়! স্কুলের পিছনের দিকে আমাদের ছিল বিশেষ আকর্ষন। টিফিনে পালিয়ে পালিয়ে যেতাম। ওখানে হাতের কাজ সেখানো হত। ভালতো ভালোনা !!

স্পোর্সের দিন গুলো ছিল বেশ। চকলেট দৌড়টা বেশ কমন ছিল। সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল রেজাল্ট আউটের দিন। ধুর মেজাজটাই খারাপ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে আমার একটা কথা মনে পড়ে। ব্যাপারটা নিয়ে আমি আই স্পেশালিস্টদের সাথেও কথা বলেছি। রাগ হলে শেফালী ম্যাডামের আই বল এতো বড় হয়ে যেত কিভাবে ? আর মুনমুন ম্যাডামকে কিন্তু আমার খারাপ লাগত না। একটা মজার অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেল। একবার আমার বাবার কলেজের গাড়ীতে করে ক্লাশ শেষে বাবার কলেজে যাচ্ছিলাম, আমরা কয়েকজন সহপাঠী মিলে। ড্রাইভার আংকেল কতক্ষন পর আমাদের বেশি কথা বলতে মানা করেছিলেন, কেননা গাড়ীতে নাকি ব্রেক কাজ করছিল না। YWCA থেকে বিএসসি প্রকৌশলী সেথেকে দেশের বাইরে লেখা পড়া। জীবন থেকে সময় কম কাটেনি। তবে YWCA ‘র প্রতিটি দিনের কথা হুবহু মনে আছে। দিন গুলো ভোলার নয়।সদা সার্ট নেভি ব্লু পেন্ট।

“পুরানো সেই স্কুলের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, ম্যডামদের কথা সে কি ভোলা যায়”

মাশি দু জনের কথা না বললেই নয়। সুলতা মাশি আর বুড্ডা (বুড়া) মাশি। YWCA স্কুল জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন জিলা স্কুলে প্রথম বারেই চান্স পেয়ে যাওয়া। নাহলে খবরই ছিল। কৃতজ্ঞতার সাথে আর একটি কথা না বললেই নয়, এই স্কুল থেকে যেসব কার্টেশি শিখেছিলাম, তা আজও বিক্রি করে খাচ্ছি। আসলে একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার সুযোগ পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার।



মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬

তাওহীদ হাসান বলেছেন: প্রতি শিক্ষার্থীর ভিতরেই বিদ্যাপীঠের জন্য সম্মান থাকা উচিত।

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:২৯

আকরাম বলেছেন: একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার সুযোগ পাওয়া অনেকটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
চলুক। অতি পরিচিত জায়গা আমার।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭

তাওহীদ হাসান বলেছেন: @আকরাম:
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার অতি পরিচিত কিভাবে ?

৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: তাপমাত্র স্থির থাকলে কোন নির্দিষ্ট পরিবাহকের মধ্যে দিয়ে যে তড়িৎ প্রবাহিত হয় তা উহার দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক । :P :P :P :P

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৪

তাওহীদ হাসান বলেছেন: বিভব, এই স্কুলের একজন অতি পরিচিত ছাত্র।

৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫

আকরাম বলেছেন: লেখক @@@ ওটা যে আমারও শহর। অলিগলি, রাস্তা ঘাট, পরেশসাগরের মাঠ, কীর্তনখোলা নদী সব কিছুইতো আমার নিঃশ্বাসে এখনও!

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫

তাওহীদ হাসান বলেছেন: শুনে ভালো লাগলো।

৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪

আমিনাথিং বলেছেন: জর্ডান রোড , জিলা স্কুল , পরেশসাগরের মাঠ , বেলস পার্ক , বিবির পুকুর পাড় ...................নস্টালজিক

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

তাওহীদ হাসান বলেছেন: আমিনাথিঃ
ঘুড়ে আসবেন সুযোগ পেলেই।

৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬

আকরাম বলেছেন: আমিনাথিং@@@ ঠিক বলেছে।....... নস্টালজিক

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫২

তাওহীদ হাসান বলেছেন: সেটাই . . .

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.