![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় দর্শক! সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানুল মুবারক এর শুভেচ্ছা। এ মাসে মানুষের মাঝে সংযম, শৃঙ্খলতা ও নিয়মানুবর্তিতা তৈরি হয়। মানুষের মাঝে “তাকওয়া” বা খোদাভীতি তৈরি হয়। ফলে মানুষ আল্লাহর আরও বেশি কাছের হয়। আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। তাই আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রথম রাত আসা মাত্রই আসমানে “৪ টি ঘোষণা” প্রদান করেন। আজকে আমরা ঐ ৪ টি বিশেষ ঘোষণা সম্পর্কে এবং এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী- তা নিয়ে কুরআন-সুন্নার আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ।
প্রিয় দর্শক! রমজান মাস বরকত ও কল্যাণের মাস। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভের মাস। কারণ এ মাসে বিশেষ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এই মাসে আছে লাইলাতুল কদর;কদরের রাত। হাজার রাতের চেয়ে উত্তম সেই লাইলাতুল কদরেই অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র আল-কুরআন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন :
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
‘নিশ্চয় আমি লাইলাতুল কদরে (আল-কুরআন) অবতীর্ণ করেছি।
আপনি লাইলাতুল কদর সমন্ধে জানেন কি?
লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ [সূরা কদর, ৯৭: ১-৩]
আসলে রমজান মাস হলো ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে “নবম মাস”। এ মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ আল্লাহর আদেশে রোজা রেখে থাকেন। সাওম পালন করে থাকেন। অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকেন। পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা সংঘটিত গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকেন। এমনকি বৈধ স্ত্রীসঙ্গম থেকে পর্যন্ত বিরত থাকেন। এবং এভাবে তারা “তাকওয়ার প্রাকটিস” করার মধ্য দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরো বেশি প্রিয় বান্দা হওয়ার চেষ্টা করেন। কেননা তারা এই সংযম শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টির জন্যই করে থাকেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোনো পার্থিব উদ্দেশ্যে এ কাজ করেন না।
তাই এ মাসে আল্লাহ তায়ালাও বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত খুশি হয়ে যান। তাদের প্রতি নিজ রহমতের ধারা অবারিত করে দেন। এমনকি তাঁর সেই রহমতের অমীয় ঝর্ণাধারা উন্মুক্ত করার জন্য তিনি মোটেও দেরি করেন না। বরং রমজানের ১ম রাত ঘনিয়ে আসা মাত্রই তিনি আসমান জুড়ে এক বিশেষ ঘোষণা প্রদান করেন। আল্লাহ তায়ালার সেই বিশেষ ঘোষণা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :
"إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَابٌ. وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَابٌ وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ"
রমজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্ট জিনদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং (রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত) এর দরজাগুলো আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং এর একটি দরজাও আর বন্ধ করা হয় না। (এ মাসে) একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন- হে কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত ব্যক্তি! বিরত হও। আর এ মাসে আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক রাতেই এরূপ হতে থাকে। [সুনান তিরমিযী: ৬৮২। সুনান ইবনু মাজাহ: ১৬৪২]
এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায়- মূলতঃ গোটা রমজান মাস ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক রহমত। গোটা মাসেই মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে নাজাত হয়। রমজান মাসের বিশেষ কোনো অংশ এ মর্যাদাগুলোর কোনো একটির জন্য খাস নয়। এটি আল্লাহর বিপুল রহমতের নিদর্শন। যেমন: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে অপর একটি হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন :
إِذَا دَخَلَ شَهْرُ رَمَضَانَ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتْ الشَّيَاطِينُ
যখন রমজান মাস আসে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় (রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়)। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানগুলোকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। [সহীহ বুখারী: ১৮৯৯ (ইফাবা: ১৭৭৫)। সহীহ মুসলিম: ১০৭৯। সুনান নাসায়ী: ২০৯৯। মুসনাদ আহমাদ: ৭৭৮০]
প্রিয় দর্শক! আলোচ্য হাদিসের ভিত্তিতে বলা যায়- আল্লাহর নিকট রহমত ও মাগফিরাতের ক্ষেত্রে রমজানের সকল দিন সমান। প্রথম দশক রহমতের জন্য, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের জন্য অথবা শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য- ইসলামী শরিয়তে এর কোনো জোরালো ভিত্তি নেই। কারণ হাদিসে এমন কোনো বিশেষ বিভক্তির কথা বলা হয়নি বরং রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদিসটির প্রতি লক্ষ্য করে দেখুন- রাসূলুল্লাহ সা. বলছেন : রমজান মাস আসলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। [সহীহ বুখারী: ১৮৯৮, ১৮৯৯ (ইফাবা: ১৭৭৫)। সহীহ মুসলিম: ১০৭৯]
অপর একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন: যখন রমযান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শৃংখলিত করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষক ডেকে বলেন : হে কল্যাণ প্রত্যাশী! অগ্রসর হও; হে অকল্যাণ প্রত্যাশী! নিবৃত্ত হও। আর (এ মাসের প্রতি রাতে) আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দান করেন। [সুনান ইবনু মাজাহ্: ১৬৪২]
তাহলে দেখা যাচ্ছে- যখন রমজানের প্রথম রাত আসে অর্থাৎ রমজান মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই রমজানের কিছু নিদর্শন প্রকাশ পেতে থাকে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য পুরস্কার ও হাদিয়া নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর এসব নিদর্শন ও হাদিয়ার প্রথম কয়েকটির বর্ণনা রাসূল সা. এর হাদিসে এসেছে। যেমন:
· প্রথম নির্দেশ বা হাদিয়া হলো—
শয়তানদের বন্দী করে ফেলা হয় অর্থাৎ তাদেরকে শিকল ও বেড়ি পরানো হয়। ঠিক একইভাবে শিকল ও বেড়ি পরিয়ে অবাধ্য জ্বিনদেরকেও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। কারণ তারা শয়তানদের নেতৃস্থানীয় সদস্য, যারা শুধুমাত্র খারাপ কাজের জন্যই নিয়োজিত থাকে।
তাদেরকে বেড়ি পরানোর হিকমত হলো যেন তারা রোজাদারদের মাঝে কুমন্ত্রণা ছড়াতে না পারে এবং তাদের রোজা নষ্ট করতে না পারে। বলা হয়ে থাকে, অবাধ্য শয়তানের কুমন্ত্রণা কমে যাওয়ায় অধিক প্রতিদান, সাওয়াব ও ক্ষমা পাওয়া মুসলিমদের জন্য সহজ হয়ে যায়। কারণ তখন শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার কারণে তাদের পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট করা এবং কুমন্ত্রণা ছড়ানো একেবারেই কমে যায়।
আসলে যারা রমজানের হক সম্পর্কে সচেতন অর্থাৎ যারা রমজান মাসকে পরিপূর্ণরূপে সম্মান করে, রমজানের হক পরিপূর্ণরূপে আদায় করে, রমজানের শর্তসমূহ, রমজানের আদাব-আখলাক পরিপূর্ণরূপে বজায় রাখে, শয়তান শুধু তাদের থেকেই বিরত থাকে। পক্ষান্তরে যারা শুধু খাদ্য আর পানীয় থেকে বিরত থাকে কিন্তু রমজানের আদব সম্পর্কে সচেতন নয়, যথাযথভাবে রমজানের হক আদায় করে না, তারা রমজানের সুবিধাগুলো পায় না। তাদের থেকে শয়তানকে ফিরিয়ে রাখা হয় না
শয়তানকে কিছু জিনিস থেকে বেঁধে রাখা হয় আর কিছু জিনিস থেকে বেঁধে রাখা হয় না। কিছু মানুষ থেকে বেঁধে রাখা হয় আর কিছু মানুষ থেকে বেঁধে রাখা হয় না। সম্ভবত বিষয়টি এ রকম যে, শয়তান রমজান মাস ছাড়া অন্য সময়ে মানুষকে যত সহজে ফিতনায় ফেলতে পারে, রমজান মাসে ততটা পারে না। কারণ, মানুষ রমজান মাসে রোজা রাখে, কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরে মশগুল থাকে যা তাদের যৌন প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা এবং গুনাহ করার আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
· রমজানের ২য় নির্দেশ বা হাদিয়া হলো—
জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, পুরো রমজান মাসে সেগুলো আর খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, পুরো রমজান মাসে সেগুলো আর বন্ধ করা হয় না।
কোন কোন ইসলামিক স্বলার বলেন : জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ হলো শয়তানের ফিতনা ছড়ানোর সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়ার অর্থ হলো কল্যাণের সকল রাস্তা খুলে দেওয়া হয়।
আবার কোন কোন ইসলামিক স্বলার বলেন : এই বরকতময় মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি সম্মান জানাতে বাস্তবেই জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজাগুলোও আক্ষরিক অর্থেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।
· রমজানের ৩য় নির্দেশ বা হাদিয়া হলো—
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একজন ঘোষণাকারী বলেন: হে কল্যাণ প্রত্যাশী! আল্লাহর দিকে এগিয়ে যাও। আর হে অকল্যাণ প্রত্যাশী! থামো, নিবৃত হও। অর্থাৎ কল্যাণপ্রত্যাশী মানুষের কাছে এ মাসটি নেক আমল করার জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি মাস। কেননা, এ মাসে নেক আমলের অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকে। এ মাসে নেক আমলের অনেক সহযোগী উপকরণ পাওয়া যায়। সুতরাং মহান আল্লাহর কাছে ও তাঁর আনুগত্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, আল্লাহর নিকটভাজন হওয়া যায়।
আবার এ মাসে গুনাহ করার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ বজায় থাকে। তাই এ মাসে মানুষ অকল্যাণকর কাজ করা থেকে বিরত থাকে। গুনাহ করা থেকে বিরত থাকে। কেননা এটা এমন এক সময়, যখন মানুষের আত্মা তাওবা-ইস্তিগফারের প্রতি ঝুকে পড়ে। সুতরাং এ মাসে মানুষ বেশি বেশি তাওবা করে এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
· রমজানের ৪র্থ নির্দেশ বা হাদিয়া হলো—
এ মাসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। রমজান মাসে প্রত্যেক রাতে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।
এটা মূলত বান্দাদেরকে এই মর্যাদাপূর্ণ মাসে তাকওয়া অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। যেন মানুষ এই মাসে অধিক পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগী করার সাধনা করে। জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের একজন হওয়ার জন্য সাধনা করে। যেন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাত লাভ করতে সাধনা করে। তাই প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তির উচিত- মুক্তিপ্রাপ্তদের দলভুক্ত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে জান্নাত চাই আর জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাই। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে জান্নাত চাই আর জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চাই।
§ রমজান মাসে আমাদের করণীয় :
প্রিয় দর্শক! হাদিস শরীফে মাহে রমজানের মত এই ফজিলতপূর্ণ ও কল্যাণকর মাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অপার অনুগ্রহের কথা, বান্দার প্রতি তাঁর অসীম দয়ার কথা উল্লেখ করার মাধ্যমে মূলতঃ একদিকে নিজেকে নফস, কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বিরত রাখতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যপূর্ণ কাজ করা এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাওবা-ইস্তিগফারের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। দোয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই রমজান মাসব্যাপী একজন মুমিন-মুসলিমের প্রধান করণীয় হলো :
· যথাযথভাবে রোজার হক আদায় করে রোজা রাখা।
· দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা।
এ প্রার্থনার মধ্যে রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের দোয়াও থাকবে। কারণ সূরা বাকারার যে স্থানে (১৮৩, ১৮৪, ১৮৫ ও ১৮৭ নং আয়াত) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রমজানের রোজা রাখা বাধ্যতা মূলক করার কথা বলেছেন, রোজার সীমা-রেখার কথা বলেছেন, রোজার বিভিন্ন হুকুম-আহকামের কথা বর্ণনা করেছেন, সেখানে তিনি বর্ণনার “মধ্যম পর্যায়ে” এসে দোয়া করার কথাও বলেছেন। যেমন: সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন :
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ .
‘আর আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে (তখন আপনি বলে দিন)- বস্তুতঃ আমি তাদের খুব কাছেই রয়েছি। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই- যখন তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের একান্ত কর্তব্য। যেন তারা সৎপথে আসতে পারে।’ [সূরা বাকারা, ২: ১৮৬]
এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইবনু কাসীর রহ. বলেন : রোজার হুকুম-আহকাম বর্ণনার মাঝখানে দোয়া বিষয়ক এ আয়াত উল্লেখ করার মধ্যে কয়েকটি হিকমত রয়েছে। আর তা হলো-
· মানুষকে আল্লাহর নিকট দোয়া করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
· রোজার সময়-সীমা বা রমজান মাস পূর্ণ হওয়ার সময় দোয়া করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
· এমনকি প্রতিদিন ইফতারের সময় দোয়া করার দিক নির্দেশনা দেওয়া।
এ কারণে দেখা যায় প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রা. নিজ পরিবারকে নিয়ে ইফতারের সময় দোয়া করতেন। অন্য একটি সূত্রে রয়েছে- আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : “ইফতারের সময় রোজাদারের অবশ্যই একটি দোয়া আছে, যা প্রত্যাখান করা হয় না (বরং কবুল করা হয়)”। ইবনু আবূ মুলাইকা রহ. বলেন : আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা.কে ইফতারের সময় এই দোয়া করতে শুনেছি :
اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي.
“হে আল্লাহ্! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর ওপর পরিব্যপ্ত। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন’’ (সুনান ইবনু মাজাহ্: ১৭৫৩)। [তাফসিরে ইবনে কাছির, সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতের তাফসীর দ্রস্টব্য]
প্রিয় দর্শক! এতক্ষণের আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়- কল্যাণ ও বরকতের এ মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে আমাদের উচিৎ বেশি বেশি দোয়া করা। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে- আল্লাহর কাছে দোয়া কারীর দোয়াটা সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাই আমাদের উচিৎ কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত বাক্য দ্বারা দোয়া করা। আদব ও শিষ্টাচার বজায় রেখে দোয়া করা। এ প্রসঙ্গে আলিমগণ বলেন : রমজান মাস এবং রমজানের বাইরেও যে দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়া উত্তম সেগুলোর মধ্য হতে বিশষ কয়েকটি হলো:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ .
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।’ বাঁচান। [সূরা বাকারা,২: ২০১]
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
অর্থ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।’ [সূরা ফুরক্বান,২৫: ৭৪]
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ .
অর্থ- ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এবং বংশধরদের নামায প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ [সূরা ইব্রাহিম,১৪: ৪০]
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
অর্থ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে আর মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিও।’ [সূরা ইব্রাহিম,১৪: ৪১]
প্রিয় দর্শক! আমরা আমাদের আলোচনার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। শেষ করার আগে আবারও সংক্ষেপে বলতে চাই- এতক্ষণ আমরা রমজানের প্রথম রাত থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ ৪ টি ঘোষণার কথা আলোচনা করেছি। রমজানের প্রথম রাত থেকেই রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি শুরু হয়ে যাওয়ার কথা আলোচনা করেছি। এবং রমজান উপলক্ষ্যে আমাদের করণীয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। রমজানে দোয়া ও ইস্তগফারের প্রতি মনোনিবেশ করার কথা আলোচনা করেছি। তাই পরিশেষে আজকের আলোচনাটিও রাসূলুল্লাহ সা. এর একটি দোয়ার মাধ্যমেই শেষ করছি।
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সকল কল্যাণ প্রার্থনা করছি- চাই সেটা আসন্ন হোক অথবা বিলম্বে হোক, সেটা আমার জানার ভিতরে হোক অথবা আমার অজানা হোক। আর আমি সকল অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে যেসব কল্যাণ প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব কল্যাণ প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও নবী আপনার কাছে যেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন আমিও সেসব অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জান্নাতের নৈকট্য অর্জন করার মত কথা ও কাজের প্রার্থনা করছি। আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নামে নিয়ে যাবে এমন কথা ও কাজ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি,আমিন!
©somewhere in net ltd.