| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উদ্ধাস্ত৬১
পৃথিবীর সকল উদ্বাস্তুর মতই আমি নিজেও একজন উদ্বাস্তু। জীবন আমাকে তেমন কিছুই দিতে পারেনি কেড়ে নেয়া ছাড়া....শত শত উদ্বাস্তুদের ভীড়ে আরো একজন উদ্বাস্তু।
শব্দগত অর্থে উর্দু মানে হল সেনা ছাউনি।সেনা ছাউনিতে সৈন্যদের মুখে ব্রজভাষা থেকে উদ্ভুত হয়েছিল উর্দুভাষার।উর্দু শব্দটা হল তুর্কি ভাষার তবে উর্দুতে তুর্কি ভাষার শব্দ বিশেষ নেই বললেই চলে।উর্দুকে হিন্দুস্তানিও বলা হয়।হিন্দু শব্দটা ফারসি ভাষার।আধুনিক হিন্দি ভাষার উদ্ভব খুুব বেশীদিন হয়নি।উর্দুর প্রতিক্রিয়া স্বরুপ হিন্দির উদ্ভব।সাধারণ হিন্দুয়ানিকে রক্ষার জন্যেই মূলত হিন্দি ভাষা।উর্দু মূলত লেখা হয় ফারসি,আরবী অক্ষরে।হিন্দি লেখা হয় নাগরী অক্ষরে।সে সময়ের আদম শুমারিতে দেখা যায় তৎকালীন ভারতে মানুষ সবচেয়ে বেশী কথা বলত হিন্দি ভাষায় তারপরের ভাষাটির নাম বাংলা।মূলত তখন হিন্দি ভাষার তুলনায় বাংলা সাহিত্যের মান ছিল অনেক উন্নত।বাংলা ভাষা থেকে বহু গ্রন্থ এ সময় হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়।
কিন্তু যখন ভবিষ্যৎ ভারতের রাষ্ট ভাষার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠে তখন হিন্দুরা সমর্থন করে হিন্দি ভাষাকে আর মুসলিমরা উর্দুকে।কেউই ব্রটিশ আমলে বলেননি বাংলাকে করতে হবে ভারতের রাষ্ট ভাষা।১৯৩৮ সালে এ.কে ফজলুল হক All India Muslims Education Conference এর সভাপতির ভাষনে বলেন উর্দুই হবে ভারতের রাষ্টভাষা।ফজলুল হক সাহেবের মাতৃভাষা ছিল বাংলা কিন্তু তিনি সমর্থন করেন উর্দুকে।
অন্যদিকে মহাত্ব্যগান্ধী হিন্দিকে রাষ্টভাষার পক্ষে সমর্থন করেন যদিও ইনির মাতৃভাষা ছিল গুজরাটি।
অর্থ্যাৎ ব্রটিশ আমলে মাতৃভাষার প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল হিন্দি-উর্দুর মধ্যে।দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ বলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্টভাষা।তখন তিনি সেটি করেছিলেন পুরাতন ঐতিহ্যকে অনুসরন করেই।জিন্নার মাতৃভাষা ছিল গুজরাটি,তার বিভিন্ন বইও গুজরাটি ভাষায় লেখা।উর্দু বলতেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে।১৯৪৮ সালে ঢাকায় উর্দুকে রাষ্টভাষা করার তিনি যে ঘোষনা দেন তা ছিল বিশুদ্ধ ইংরেজী ভাষায়।
শুধু জিন্নাহ সাহেবই উর্দুকে রাষ্টভাষা করার দাবি তোলেন তা কিন্তু নয়।১৯৫২ সালেের ২৪ই ফেব্রুয়ারী সিন্ধুর হায়দারাবাদ শহরে সোহরাওয়ার্দী বলেন, যে আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই আদর্শ অনুসারে একমাত্র উর্দুই হওয়া উচিৎ পাকিস্তানের রাষ্টভাষা।২১ শে ফেব্রুয়ারী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি হওয়ার দুই দিন পর তিনি একথাটি বলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন অনেকের কাছে মনে হয়েছিল একটা পাকিস্তান বিরোধী ষড়যন্ত্র।ষড়যন্ত্র যে কিছু হয়নি তা বলা যাবেনা।অরুন ভট্টাচার্য নিউদিল্লি থেকে ১৯৭৩ সালে একটা বই বের করে যার প্রকাশক ছিল বিকাশ পাবলিকেশন্স।এ বইতে তিনি উল্লেখ করেন ভারতের তৎকালীন হাইকমিশন সি সি দেশাই নাকি গোপনে মাওলানা ভাষানীর সাথে দেখা করে বলেছিলেন বাংলাদেশ স্বধীন হলে ভারত তাতে মদদ দিবে!!আর এ সাক্ষাতটি ঘটেছিল ছাত্র মিছিলে গুলি হওয়ার পর।
উর্দুকে যখন নবীন পাকিস্তান এর রাষ্ট ভাষা করার প্রস্তাব উঠে তখন পশ্চিম পাকিস্তানে কোন প্রতিবাদ উঠেনি।কেননা তারা মানুষিক প্রকর্ষের ভাষা হিসেবে আগেই উর্দুকে গ্রহন করছিল।
কিন্তু পূর্ব বাংলা থেকে প্রতিবাদ উঠে।বাংলা ভষাভাষী মুসলমানেরা মনে করেন তারা যেহেতু উর্দুভাষী নন তাই উর্দু ভাষার প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা দিয়ে ভালো করতে পারবেন না।
পাকিস্তান হওয়ার পর সারা পাকিস্তানের অর্ধেকের বেশী হয়ে দাড়ায় বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষ।বাংলার চা,পাট,গম রপ্তানি করে অর্জিত হতে থাকে বৈদেশিক মুদ্রার একাংশ।
বাংলাভাষী মুসলমান তাই শক্তভাবে দাড়িয়ে দাবি তুলতে পারেন বাংলাকে দিতে হবে রাষ্টীয় মর্যাদা,অর্থ্যাৎ পাকিস্তানের রাষ্ট ভাষা হবে ২টি।
তথ্যসূত্র:এবনে গোলাম সামাদ এর কলাম।
©somewhere in net ltd.