বুড়িগঙ্গা থেকে বো(Bow) নদী........................................
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৩৪
এইপথে, কানাডার তেলবানিজ্য শহর ক্যালগেরি থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর/পশ্চিমে 'Bow(বো) নদীর পারে ছোট্ট শহর Cochrane(ককরেইন)
ডাউন টাউন ককরেন(Cochrane), কানাডার এই শহরে আমার প্রথম কর্ম জীবন শুরু।
Cochrane শহরের পাশদিয়ে বয়ে চলা Bow(বো) নদী।
নদীর নাম 'বো', The River Bow . কানাডার সাসকাচুয়ান পাহাড়ী গ্লেসিয়ার থেকে উৎপত্তি এ নদী আলবার্টা প্রদেশের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত । লম্বা প্রায় ৩৭০ মাইল।
না, এ নদীর পানি কেউ বাঁধ দিয়ে প্রত্যাহার করে না। এখানে টিপাই/ফারাক্কা জাতিয় কোন সমস্যা নেই । বো নদীর পাড়ে ছোট্ট শহর কোকরেন(Cochrane), কানাডার তেল বানিজ্য নগরী ক্যালগেরির সামান্য উত্তর/পশ্চিম এর ১৮ মাইল উজানে। সাজানো গুছানো, ছিমছাম। ওর্য়াইল্ড ওয়েস্ট্রান শহর। আমি তখন এই শহরে থাকি। ব্যাংকে নতুন চাকরী নিয়ে সবেমাত্র এসেছি। পদের নাম ব্যাংক টেলার, মানে ব্যাংকের কেরাণী।
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমনটি বলেছিলেন "বেতন পঁচিশ টাকা, সওদাগরী আপিসের কনিষ্ঠ কেরাণী" অনেকটাই তাই। সপ্তাহে পাঁচদিন কাজ-বাসা আর বিকেলে সামান্য অবসর। শনি/রবি ছুটি।
কনর্ফাম ব্যাচেলর তখনো, বিয়ে হয়নি। বিকেলে আমি আর আমার ব্যাংক কলিগ বেন (বেঞ্জামিন ইলিয়ট ফয়লার) সাইকেলে বো নদীর দুপাশ চষে বেড়াই। খুব আমুদে/মিশুক ছেলে এই বেন, ভিষন অমায়িক, বন্ধু সুলভ। বয়স আমাদের মতই, ব্যাংক ডিপ্লোমা করেছে। দেখতে শুনতে দারুন, তা প্রায় ছয় ফিট লম্বা। মারাত্মক মাসক্যুলিন, হুমমমমম। মাঝে মাঝে মনে হত ব্যাটাকে ধরে জন্মের মত গাল টিপে দিই। না, আসলে ওরকম কিছু হয়নি। বেঞ্জামিনের গার্লফ্রেন্ড আছে, নাম ক্রিষ্টিন। যাগ্গে, আমি আর বেন বিভিন্ন সময় বো নদীতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরতেও যেতাম, বিশেষ করে উইকেন্ডে। বো নদীর পানি ; পরিস্কার, সছ্ছ, টলটলে, ঝলমলে। নদীর অনেক গভিরেও মাছ/পাথর/শৈবাল দেখাযায়। বো নদীর মাছ ভীষন সুস্বাদু, গার্লিক/বাটার দিয়ে বার্বাকিউ দারুন মজাদার।
এভাবে কেমন করে যেন আমদে-আলহাদে বো নদীর বাঁকে বাঁকে চোখের নিমিশে চলে গেল প্রায় এক বছর। এর মধ্যে টরন্টো থেকে নতুন চাকরীর অফার এসেছ, বড় বেতন, বড় পোষ্ট। এখন বিদায়ের পালা। ক্যালগেরি থেকে টরোন্ট, টিকেট কর্নফার্ম।
চলে আসার একদিন আগে, তখন জুন মাস। আমি, বন্ধু/কলিগ বেন শেষ বারের মত বো নদীর পারে এক গ্যাজিবোতে অনেকক্ষন আড্ডা দিলাম, ম্যাকডোনাল্ড থেকে খাবার এনে খেলাম। এত দিনের সুখ/দুঃখের স্মৃতি, কর্মজীবন, ভবিষ্যত স্বপ্ন এবং বিদায় বিষন্নতা সব কিছুই মিলে এক বিয়োগান্ত ক্ষন। এর ভিতর অসাবধনতা বসতঃ আমি আমার হাতে থাকা পেপসির খালি বোতলটি কি কারনে যেন নদীতে ছুড়ে মারলাম। আমি তো অবাক, বন্ধু বেন প্রায় হাটু পানিতে নেমে পেপসির বোতল টি তুলে এনে নিরবেই পাশের গার্বেজ বিনে ফেলেদিল। শুধু বল্লো
Plastic bottles are not river friendly, মানে, প্লাস্টিকের বোতল নদীর জন্য ভাল না। ওর কারবার দেখে লজ্জায় আমি তো বাকরুদ্ধ। যাক সে কথা। পরদিন শনিবার, আমার ফ্লাইট। বেন, ক্রিষ্টিন দুজনেই ওদের গাড়ীতেই আমাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিয়ে ফাইনাল সি আফ(see off) করে গেল। এরপর বন্ধু বেনের সাথে আমার আর কখনো দেখা হয় নি। ইদানিং মাঝে মাঝে ফেসবুকে হাই/হেলো হয়। বেন-ক্রিস্টন ওদের ছেলে হয়েছে। বয়স এখন নয় বছর।
আর এভাবেই কাঁন্না-হাসির দোলায় দোলে আমাদের পৌষ-ফাগুনের মেলা। গত রমজান ২০১১ তে ঢাকায় এসেছি সবার সাথে ঈদ করতে। ঈদের কিছুদিন পর বুড়িগঙ্গায় নৌ-ভ্রমনের প্লান। বুড়িগঙ্গা!! এ কোন বুড়িগঙ্গা ?? দম নিতেও কষ্ট হয়। অত্যাচার, অবহেলা, দখল, আবর্জনায় খুব বেশি বুড়িয়ে গেছে আমাদের বুড়িগঙ্গা।
ভ্রমন শেষে বাড়ী ফিরে নিজেকে তুছ্ছ-তাছ্ছিল্য করে প্রশ্ন করলাম,
'আমরা তো মুক্তি যুদ্ধ করে এই দেশটাকে স্বাধীন করেছি! আমরা কেন ; বেঞ্জামিন ইলিয়ট ফয়লার দের মত নদীকে ভালবাসতে জানি না'।???????????
১|
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৩
নীলতিমি বলেছেন: