![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক কথা বলার থাকে, কিন্তু সে সকল কথা আর ধ্বনি-বর্ণের সমন্বয়ে শব্দ হয়ে ওঠে না। কেন ওঠে না জানেন? কারণ কিছু কথা মনে ভেতর রাখলেই বেশি ভালো লাগে। প্রকাশ করার সাথে সাথেই অনুভূতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একভাগ আনন্দের এক ভাগ দুঃখের। তখন কল্পনার আশ্রয় হাতড়াতে হবে অনুভূতিগুলো একত্রে জড়ো করবার জন্যে। কি প্রয়োজন... এত কষ্ট করার!! থাকুক না কথাগুলো ধ্বনি বর্ণ ছাড়াই ...
সমস্যাটা খুব যে নতুন তা না। আবার খুব পুরনোও না। কলেজে থাকতে খুব হতো। সেটার অবশ্য কারণ ছিল। কিন্তু এখন কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এইটাই পার্থক্য।
যাই হোক, তাড়াতাড়ি সমস্যার কথায় আসি। তা নাহলে মানুষ আবার কি না কি ভেবে বসে, কে জানে। প্রায় রাতেই ঘুম হয় না। একরাত দুরাত হলে ব্যাপারটা না হয় উড়িয়ে দেয়া যেত। কিন্তু এভাবে তিন চার রাত জেগে পরের রাতে ঘুম আসাটা কেমন জানি। আবার তখন ঘুম আসলেও তিনটে কি চারটের দিকে ঘুমটা আসে। আবার সাতটা-আটটার দিকে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয় কোন অদ্ভুত উপায় যেন শরীরে একটা অ্যালার্ম ক্লক সেট হয়ে গেছে। মানুষ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেও তো এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ে। চোখটা বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে মনে হয় নাল ভয়েড কিংবা ব্ল্যাক হোলে ঢুকে পড়েছি। বেশিক্ষণ এভাবে থাকা সম্ভব হয় না। একরকম অস্থিরতা অনুভুত হয়। এরকম অস্থিরতা আরেক সময়ে অনুভূত হয়। যখন পড়তে বসি। তখন আবার মনে হয় কে যেন চেয়ারের উপর গরম গরম কয়লা বিছিয়ে রেখেছে। পশ্চাৎদেশ তখন মনে হয় একেবারে ফ্রাই হয়ে যাবার যোগাড়। যাই হোক কথা সেটা না, কথা হল নির্ঘুম রাত।
এর মধ্যে অবশ্য সময়টা কাটানোর জন্যে মোটামুটি একটা অলিখিত রুটিন হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরপর ফ্রিজ খুলা, বিরামহীন পায়চারি, ঘরের দুনিয়ার জিনিষপত্র খুটুর-খাটুর করে ঘাটাঘাটি, ল্যাপটপ নিয়ে বসা। এরপর ফজরের সময় হলে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকা। মা-বাবা কেউ একজন এসে উঠিয়ে দিয়ে যাবে। ঢুলু ঢুলু চোখে টলতে টলতে কোন রকমে উঠে যাবার ভান করে নামাযটা পড়ে এরপর সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আবার সেই অলিখিত রুটিন। এভাবেই পর হচ্ছে রাতগুলি। মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করা হয়। খুব হাসি পায় আবার রাগও উঠে। এত গাধা ছিলাম কেন? এখন যে চালাক হয়ে গিয়েছি তাও না। আশেপাশের মহান ব্যক্তিদের সিদ্ধিলাভ করে যা একটু অর্জন হয়েছে, এই আর কি। এই আর কি না, অনেক কিছু হয়েছে।
দশটা মিথ্যার সাথে একটা সত্য ঢুকিয়ে দিলে ওইটাও মিথ্যা হয়ে যায়। আবার একইভাবে দশটা সত্যর সাথে একটা মিথ্যা ঢুকিয়ে দিলে ওইটাও সত্য হয়ে যায়। এত মহান মানুষের ভিড়ে আমি কোনোরকমে ঢুকে যাবার কারণে আমাকেও মানুষ মহান বলে ভেবে নিচ্ছে। ব্যাপারটা যদিও ধোঁকার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। টিকে থাকতে হলে মানুষকে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যেতে হয়। সেই অভিনয় টিভি-চ্যানেলের অভিনেতাদের অভিনয় থেকেও দুর্দান্ত। ঝড়ের গতিতে মাথায় স্ক্রিপ্ট লিখতে থাকে নিউরনগুলি। একই সাথে অনেকগুলি স্ক্রিপ্ট। প্ল্যাট ফর্মে বুঝে স্ক্রিপ্ট মত অভিনয়।
কখনও হয়তো কারোর শোকে চোখ ফেটে রীতিমত অনেকের বন্যা বয়ে যাবার দশা। কিন্তু সে পাথর হয়ে কিংবা মেকি হাসির আড়ালে তা লুকিয়ে রাখে। আবার একরাশ আনন্দকে ঢেকে রাখে বিষণ্ণতার মরীচিকার চাঁদরে।
কখনও এই অভিনয় সমবেদনার দৃষ্টি এড়াতে। কিছু মানুষ বাঁচে মানুষদের করুণাকে পুঁজি করে। আবার কিছু মানুষ বাঁচে করুণা আর বিদ্রূপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
কখনও এই অভিনয় নিজেকে আড়াল করতে। বৈচিত্র্যময় এই জগতে কিছু গুরুত্বহীন মানুষ আছে। এরা কখনও গুরুত্বপূর্ণ হতে চায় না। নিজেদের আড়াল করে রাখতে এরা আলাদা একটা জগত সৃষ্টি করে। সেখানেই তাদের সকল গুরুত্বের বসবাস।
আবার কখনও সে অভিনয়, আকর্ষণ করতে। এ অভিনয় কখনও সত্য আবার কখনও মিথ্যা। সততা-ধৃষ্টতার ব্যাপারগুলিই এ অভিনয়কে পবিত্র কিংবা নোংরা করে তোলে।
অভিনয় শব্দটাকে আমি ঋণাত্মক অর্থে ব্যবহার করছি না। প্রতিনিয়ত মানুষকে অভিনয় করে যেতে হচ্ছে। কখনও জেনে, আবার কখনও নিজের অজন্তেই।
আমিও এই নির্ঘুম রাত্রি যাপনে মহাভাবুকের অভিনয়ে অবতীর্ণ হয়ে গিয়েছি। যদিও এসব চিন্তায় কোনকিছু হবে না জানি। হয়তো সময়টাই নষ্ট হচ্ছে। অনেকে এই সময় পড়াশুনা করবে। আবার অনেকে সুখ-দুঃখের কথা বলবে। আর আমি এইখানে উদ্ভ্রান্তের মত পায়চারি করছি, কিছুক্ষণ পরপর ফ্রিজ খুলে দাড়িয়ে আছি কিংবা ঘরের দুনিয়ার জিনিষপত্র খুটুর-খাটুর করে ঘাটাঘাটি করছি। আগে অবশ্য মাঝে মাঝে ঘর থেকে বের হয়ে রাতটাকে উপভগ করা যেত।
মাথায় ঝড়ের বেগে চিন্তা ভাবনা ঘুরতে থাকে। বিচ্ছিন্ন সব চিন্তা। পকেটে হেডফোন রাখলে তা যেমন কুণ্ডলী পাকিয়ে যায়, চিন্তা গুলিও একইভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে গেছে। এই চিন্তার জট ছাড়ানো যেন তেন ব্যাপার না। জট ছাড়াতে চাই উর্বর মস্তিষ্ক। আর সেটা তো শুধু স্বপ্ন আমার জন্যে। তাও এই নগন্য মস্তিষ্কে যা একটু ধরা পড়ে, তার ঠাই হয় ছন্দের তালে কিংবা বকবকানীতে।
মস্তিষ্কের চর্চা খুবই জরুরী। অস্ত্র ধারের মতোই মানুষকে মস্তিষ্ক ধার দিতে হয়। অপব্যবহারে ইস্পাতের তৈরি ধারালো অস্ত্রেও মরিচা ধরে। আচ্ছা কথাটা অপব্যবহারে, নাকি অবহেলায়? মানুষের হাত-পা নড়াচড়া না করলে তাতে ঝিঁঝিঁ ধরে যায়। এরপরও যদি না নাড়ায়, তবে তাতে হয় গ্যাংরিন। এখানে না হয় অবহেলার কথা বলা গেল। কিন্তু মস্তিষ্ক তো আর ফাঁকা পড়ে থাকে না। তাও তাতে কেন মরচে পড়ে? সেটাই কি তাহলে অপব্যবহার?
আমিও হয়তো মস্তিষ্কের অপব্যবহারই করছি তাহলে। এই রাত বিরাতে যেখানে ঘুমিয়ে মস্তিষ্কটাকে একটু বিশ্রাম দেয়া উচিত ছিল, সেখানে আমার চোখ দুশো ওয়াটের বাল্বের মত জ্বলজ্বল করে মস্তিষ্কের অপব্যবহারটা মনে হয় এই এখানেই জানান দিচ্ছে। জানি না। অনেক কিছুই অজানা। জানিনা কি। হয়তোবা জানি। তবে এই জানা বিষয়টাও নতুন করে জানতে কষ্ট হয়। নাহ্, আমি কিছুই জানি না। সবকিছু জেনে গেলে হল কিছু ? তাহলে তো সবাই শুদ্ধ মানুষই হে যেত।
সবাই শুদ্ধ মানুষদের খুঁজে বেড়ায়। সে এক ধরনের গোপন অনুসন্ধান – “যদি কখনও সেই শুদ্ধ মানুষটার দেখা পেয়ে যাই।” কিন্তু মানুষ তো আর পুরোপুরি শুদ্ধ হতে পারে না। তাই তারা শুদ্ধতম মানুষটাকেই খুঁজে ফিরে। বিলবোর্ড আর বিজ্ঞাপন দিয়ে তো তাদের খোঁজা সম্ভব নয়। তাদের খোঁজ চলে আশেপাশে পরিচিত মানুষদের ভিড়ে। হয়তো কেউ শুদ্ধতম মানুষটার দেখা পায়। যারা পায় না তারা শুদ্ধতম মানুষটাকে সৃষ্টি করে নেয় কল্পনায়। সেই কল্পনাকে কাজে লাগায় অভিনয়ে। এ অভিনয় কখনও আত্মপ্রকাশে, কখনও আত্মগোপনে। পুরোপুরি শুদ্ধ মানুষ তো কেউই হতে পারবে না। কিন্তু শুদ্ধতম তো হওয়া যায়। যতটুকুই হতে পারা যায় তাতে ক্ষতি কি ?
তবে নিজের ব্যাপারে এইটুকু বলতে পারি, আমি শুদ্ধতম মানুষ হওয়া তো দুরের কথা, ওটার প্রচেষ্টা কিংবা সম্ভাবনার ধারে কাছে দিয়েও বোধ হয় নেই। সবাই যদি শুদ্ধ হতে চায়, তাহলে অশুদ্ধ থাকবে কে ? মানুষ কিভাবে বুঝবে শুদ্ধ আর অশুদ্ধের পার্থক্য ? এই জন্যই হয়তো প্রকৃতি সবাইকে পূর্ণতা দান করেনি। কাউকে দিয়ে আবার কারোর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে টিকিয়ে রেখেছে তার ভারসাম্যের খেলা। সে খেলায় টিকে থাকতে অনেককেই অভিনয় করে যেতে হয়। ভালো থাকার অভিনয়।
প্রচুর চিন্তা। মেঘের কুণ্ডলীর মত ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই মেঘগুলি আড়াল করে রেখেছে নক্ষত্রগুলিকে। জোছনা হয়তো দেখার কথা ছিল। কিন্তু দেখছি চাপা অন্ধকার। চোখে মুখে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে। কিন্তু চোখে ঘুম নেই। মহা ভাবুক হয়ে গেছি। কি নিয়ে ভাবছি তা জানি না। এইটাই সমস্যা।
অনেক কথাই তো বলা যায়, কিন্তু সব কথা আর ধ্বনি-বর্ণের সমন্বয়ে শব্দ হয়ে ওঠে না। কিছু কথা মনে ভেতর রাখলেই বেশি ভালো লাগে। প্রকাশ করার সাথে সাথেই অনুভূতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একভাগ আনন্দের এক ভাগ দুঃখের। তখন কল্পনার আশ্রয় হাতড়াতে হবে অনুভূতিগুলো একত্রে জড়ো করবার জন্যে। কি প্রয়োজন এত কষ্ট করার।
কিছু কথা থাকে যা কোন দিনও বলা যায় না। আসলে প্রকৃতি বলতে দেয় না। কথাগুলো সে নিজের করে রাখে। কাউকে ভাগ দেয় না। সেখানেও অভিনয় করে যেতে হয়, না জানার। থাকুক না কথাগুলো ধ্বনি বর্ণ ছাড়াই।
দূর থেকে ফজরের আযানের শব্দ ভেসে আসছে। ঘুমে কাঁদা হয়ে থাকার অভিনয় করতে হবে এখন।
চললাম।
©somewhere in net ltd.