![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক কথা বলার থাকে, কিন্তু সে সকল কথা আর ধ্বনি-বর্ণের সমন্বয়ে শব্দ হয়ে ওঠে না। কেন ওঠে না জানেন? কারণ কিছু কথা মনে ভেতর রাখলেই বেশি ভালো লাগে। প্রকাশ করার সাথে সাথেই অনুভূতি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একভাগ আনন্দের এক ভাগ দুঃখের। তখন কল্পনার আশ্রয় হাতড়াতে হবে অনুভূতিগুলো একত্রে জড়ো করবার জন্যে। কি প্রয়োজন... এত কষ্ট করার!! থাকুক না কথাগুলো ধ্বনি বর্ণ ছাড়াই ...
গভীর রাত এর প্রকৃতিটা কি কখনও দেখেছেন কেউ? ছাদে কিংবা বারান্দাতে দাড়িয়ে, যখন কারো কারো মাঝে মাঝে নির্ঘুম রাতগুলি কাটে। পুরনো ল্যাম্পপোস্টের হলদে সোডিয়াম আলোয় আলকিত রাস্তা। দু একটা কুকুর ছুটে যায়। কখনও বাঁশিতে কর্কশ আওয়াজ তুলে পাহারাদার চলে যায়। এদিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে এত রাতে এভাবে উদ্ভট বেশে হেটে যাওয়া আমার দিকে।
সেদিকে খেয়াল নেই, আমি আপন মনেই হাঁটতাম। দুপাশের দালানগুলি ভুতুড়ে ছায়া পুরো পরিবেশটাকে একটু অন্যরকম একটা রুপ দিয়েছিল। তাও ব্যাপারটা একটু একঘেয়ে, শহর তো... গ্রামের পথ হলে হয়তো ব্যাপারটা একঘেয়ে হতো না। কখনও দেখা যেত একপাশে কয়েকটা খুপড়ি ঘর আর অন্য পাশে সুপারির বাগান। কখনও বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। ধূসর আকাশে কখনও পূর্ণিমা, কখনও ফালি করে কাটা চাঁদ। সেই চাঁদ আর আর তার সঙ্গী তাঁরাগুলির আলোয় চারপাশ ক্যামন যেন ভুতুড়ে। মাঝে মাঝে মর্মর শব্দে কাঁটা দিয়ে উঠবে গায়ে। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে দেখবো কথাও কেউ নেই। বিবেকের একটা অংশ বলবে ঢের হয়েছে, এবার আস্তানায় ফিরে চলো। অন্য আরকটা অংশ বলবে, কাপুরুষের মত ফিরে যাবে! দেখছো না জোছনায় প্রকৃতির কি রুপ! এতো ভীতু হলে কবে থেকে? তখন কখনও হেঁটে যাওয়া, আবার কখনও নিজের আস্তানায় ফিরে যাওয়া।
শহরে অবশ্য এরকম না। এখানে হাঁটার পথে চোখে পড়ে বিচিত্র সব দৃশ্য। এই মনে করুন, রাস্তায় এলিফ্যান্ট রোড এর ফুটপাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে দেখবেন, উঁচু ঢিবির মত অবয়ব আশে পাশে। চাঁদর, আর পুরনো কম্বলের অবয়বের নিচে আশ্রয় নিয়েছে দুটো তিনটে করে মানুষ। এরা কেউ সকালটাতে উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে বেড়ায়, কেউ বা মানুষের কাছে হাত পাতে আবার কেউ আস্তাকুড়-আবর্জনা থেকে এটাওটা যা পা আর কি। জীবন সেখানে অনিশ্চিত কিন্তু আশ্চর্য জনকভাবে দুশ্চিন্তামুক্ত। মাঝে মাঝে খুব অবাক হই মাথার নিচে বালিশ রেখে খাটে শুয়ে কি অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তায় না কাটা রাতগুলি। ছটফট করতে থাকি সারাক্ষণ। আর এখানে যেন প্রকৃতি তার সব টুকু শান্তির আশীর্বাদ ঢেলে দিয়েছে।
আবার মাঝে মাঝে যখন ওই অদুরের রেলপথ ধরে হাঁটি, তখন চোখে পড়ে... স্টেশনের আশে পাশে দাঁড়ানো বগিগুলির ভিতরে আশ্রিত জীবনগুলি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমিও শুয়ে পড়ি ওদের সাথে, একটু দেখি প্রকৃতি তার কোন জাদুটা ছড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো এদের মুখে একদিন অন্ন জুটবে, দুইদিন জুটবে না। আর আমার আশে পাশে থাকবে খাবারের ছড়াছড়ি। কিন্তু ক্ষুধা টা আমার না, তাদের। প্রকৃতির এ ক্যামন খেলা আমার বোধগম্য নয়।
©somewhere in net ltd.