![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[লেখাটির অনেক অংশে স্পয়লার আছে]
Nonexistent বা অস্ত্বিত্বহীন বিষয়ের প্রতি Extreme level এর ঝোঁক আমার ছোটবেলা থেকেই,এই প্রবনতা কবে কখন থেকে শুরু আমি ঠিক জানিনা,আমি শুনশান নিরবতা পছন্দ করি!সেই নিরবতাটা এমনি যে গাছ থেকে একটা শুকনো পাতা ঝরে পড়ার আওয়াজটাও শোনা যাওয়ার মত!
চিন্তা করলাম এই Nonexistent বিষয়ে লিখব,এখন লিখতে গেলেইতো হলোনা,ঐ স্পেসিফিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা তো থাকা লাগবে?ভাবলাম এই রিলেটেড লেখাজোখার জন্য Science-fiction এ চলে যাওয়া বেটার,তাই এই রিলেটেড লেখার এটাই প্রথম পর্ব ধরে নিতে পারেন।
Nonexistent আলাপের প্রথম পর্বটি করবো ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া Science-fiction, thriller মুভি Source code নিয়ে;Jake Gyllenhaal অভিনীত অস্তিত্বহীন বিষয়ের একটা পারফেক্ট উদাহরণ এই মুভিটি।এই মুভিতে দেখানো প্রযুক্তি হয়তো ভবিষ্যতের কোন একদিন বাস্তব রুপ লাভ করবে!কারণ মানুষ কি কি করতে পারে? না বলে বলা উচিৎ মানুষ কি করা সম্ভব না?
মুভির গল্পের সাথে প্রযুক্তি এবং ব্যাখ্যা:
ইউ এস আর্মি অফিসার ক্যাপ্টেন কোল্টার স্টিভেন্স কে রিয়েল লাইফের এর ৮ মিনিটের এক একটি ভার্চুয়াল রিক্রিয়েশন পরিস্থিতিতে পাঠানো হয় একজন potential offender বা সাম্ভাব্য অপরাধীকে খুঁজে বের করে আনার জন্য!যেই অপরাধী কয়েকঘন্টা আগে শিকাগো গামী মেট্রোরেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে!
ব্যাপারটা হচ্ছে এটা একটা "সিমুলেশন" প্রযুক্তি যা ঐ মেট্রোরেলে বোমা বিস্ফোরণ হওয়ার ৮ মিনিট আগে যেকোন স্পেসিফিক ব্যাক্তিকে নিয়ে যাবে!
অদ্ভুত না ব্যাপার টা?
সিমুলেশন বিষয়টা নিয়ে হালকা বলে রাখি,এই ধরনের প্রযুক্তি অলরেডি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে,যেমন :বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ, ভিডিও গেম,বিজ্ঞান গবেষণায়।
বিমান চালানোর সময় যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, তাই প্রশিক্ষণার্থী পাইলটরা ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহার করে। এতে তারা বাস্তবের মতো পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ নেয়, কিন্তু সেটা আসলে ভার্চুয়াল।
FIFA বা Bus Simulator — এখানে আপনি গাড়ি চালান বা ফুটবল খেলেন, কিন্তু বাস্তবে কিছু ঘটছে না — এটা হচ্ছে গেমের মধ্যে সিমুলেশন।
ক্যাপ্টেন কোল্টার আসলে এই বোমা বিস্ফোরণ হওয়ার দুই মাস আগে আফগানিস্তানে একটি অপারেশনে মারা গিয়েছেন!তবে তার মস্তিষ্কের সাইনাপ্সের কিছু অংশ এখনো জীবিত!
সাইনাপ্স (Synapse) হলো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ (নিউরন)গুলোর মধ্যে যোগাযোগের সংযোগস্থল।
একটি নিউরন থেকে আরেকটি নিউরনে তথ্য বা সংকেত পাঠানো হয় এই সাইনাপ্সের মাধ্যমে।
প্রযুক্তিটি নাম "Source Code", যা একজন মৃত ব্যক্তির মস্তিষ্কের স্মৃতিকে রিক্রিয়েট করে ৮ মিনিট সময়ের একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তৈরি করে। ওই ৮ মিনিটে ক্যাপ্টেন কোল্টার স্টিভেন্স বারবার ফিরে যায় এবং ধ্বংসের আগে ঘটনা বিশ্লেষণ করে বোমা ও সন্ত্রাসীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
মুভির এক পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই ক্যাপ্টেন কোল্টারের দেহের প্রায় এক দ্বিতীয়াংশ নেই!শুধু মাথা থেকে বুকের কিছু অংশ অবশিষ্ট, এবং সে একটা Source Code Capsule এ আবদ্ধ, যেটাকে Military-grade neuro-simulation chamber বলা হয়ে থাকে।ক্যাপ্টেন কোল্টার আসলে একটা সিমুলেশনের মধ্যে আটকে আছে, যেখানে তার শরীর বাস্তবে মারা গেছে বা মারাত্মকভাবে আহত, কিন্তু তার মস্তিষ্কের কিছু কার্যক্ষম অংশ (বিশেষ করে সাইনাপ্স) এখনো জীবিত আছে।
এই জীবিত থাকা অংশটাকে একটা লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রেখে তাকে বারবার একই ৮ মিনিটের ট্রেন বিস্ফোরণের স্মৃতিতে প্রেরণ করা হয়, যেন সে সন্ত্রাসীকে খুঁজে বের করতে পারে।
৮ মিনিটের সিমুলেশন এবং এন্ডিং ব্যাখ্যা :
পুরো মুভিতে ক্যাপ্টেন কোল্টারকে বেশ কয়েকবার এই ৮ মিনিটের ট্রাভেলে বার বার পাঠানো হয়,আর কার্যক্রম টি পরিচালনা করেন গুডউইন নামে এক নারী মিলিটারি অফিসার,যিনি Source Code প্রজেক্টে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি হচ্ছেন ক্যাপ্টেন কোল্টার-এর একমাত্র সরাসরি যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতিবার যখন কোল্টার সিমুলেশনে প্রবেশ করে আবার ফিরে আসে, গুডউইন তার সঙ্গে কথা বলেন, নির্দেশ দেন, পরিস্থিতি বোঝেন।
কোল্টারকে ব্রিফিং দেওয়া,
তার মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা,
প্রজেক্ট পরিচালকের (Dr. Rutledge) নির্দেশ বাস্তবায়ন করা,
সিমুলেশন শেষ হলে তাকে ফিরিয়ে আনা এসব কিছু পরিচালনা করে গুডউইন।
মুভির শেষের দিকে যখন হামলাকারীকে কোল্টার চিনে ফেলে তখন কার্যত তাদের এই প্রজেক্ট সাকসেসফুল হয়ে যায়,কিন্তু বারবার কোল্টারকে সিমুলেশনে পাঠানোর পর যখন গুডউইন খেয়াল করে সে ক্লান্ত এবং পরিশ্রান্ত তখন কোল্টারের প্রতি মানবিক হয়ে পড়ে।
এটাই হচ্ছে এই মুভির ক্লাইম্যাক্স!
Project successful হয়ে যাওয়ার পর আসলে কোল্টারকে আবার সেইম সিমুলেশনে পাঠানোর প্রয়োজন পরেনা,কিন্তু গুডউইন এখানে প্রফেশনালিজমের বাইরে চলে গিয়ে ক্যাপ্টেন কোল্টারের আকুতির কাছে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আবার তাকে ৮ মিনিটের সিমুলেশনে এন্টার করান!
কিন্তু এবার আমরা দেখি মুভির আসল টুইস্ট!
৮ মিনিটের সিমুলেশন শেষ হলে গুডউইন চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দেন কোল্টারকে, কারণ গুডউইন মনে করেছিলেন এই প্রজেক্ট সাকসেসফুল হলে হয়তো ক্যাপ্টেন কোল্টারের কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং সে মুক্তি পাবে,কিন্তু দেখা যায় কোল্টার যেহেতু এই কজে সাকসেসফুল হয়েছে তাই Dr. Rutledg তার মেমোরি রিসেট করে আবার অন্য কোন প্রজেক্টে তাকে পাঠানোর প্ল্যন করে ফেলেন।আর গুডউইনের বিষয়টিকে অমানবিক মনে হয় তাই সে কোল্টারকে সিমুলেশনে পাঠিয়ে ৮ মিনিট পর তার সাইনাপ্সের জেগে থাকা অংশকে ক্লোজ করে দেন।
আবার অন্যদিকে সিমুলেশনে যাওয়ার ৮ মিনিট পর কোল্টার নিজে খেয়াল করে সে সিমুলেশনেই আছে!বারবার সিমুলেশনে যাওয়ার ফলে সে অপরাধীকে এবার আটক করে ফেলে এবং ট্রেনে থাকা বোমার ডিটোনেটর ও নিস্ক্রিয় করে ফেলে, ফলে বিস্ফোরণ ও হয়না,
৮ মিনিট পর সে তখন আসলে ঐ ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিতেই তার জীবন কাটাতে থাকে!
মুভির শেষ দৃশ্যে কোল্টারের যে মেইলটি গুডউইন পড়ছিলো তা ছিলো আসলে ঐ ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিতে অন্য গুডউইন!যে আসলে জানেই না
এই ধরনের প্রজেক্টের ব্যাপারে,তবে সেই গুডউইনের অফিসে এই প্রজেক্ট এর ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে এবং অন্য কোন কোল্টারকে সেই সিমুলেশনে হয়তো পাঠানো হবে!!
Source code একিসাথে সায়েন্স ফিকশন এবং মানবিক একটি মুভি,আমরা যতই প্রযুক্তিগত অগ্রসর হইনা কেন সেটা কোন অংশেই মানবিকতার উর্ধ্বে নয়,প্রযুক্তি আমাদেরকে সহজলভ্যতার পথে এগিয়ে নিলেও আমরা যে আসলে মানুষ এবং মানুষের মানবিক স্বত্বা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি সেই বার্তাটায় মুভির শেষের অংশে পরিচালক
Duncan Jones খুব চমৎকারভাবে অংকিত করেছেন,আর মুভির মূল Protagonist কোল্টাররুপী Jake Gyllenhaal দুর্দান্ত পারফর্ম করছেন সাথে গুডউইনের ভুমিকায় প্রফেশনালিজমের বাহিরে গিয়ে যেভাবে ইমোশনাল হয়ে পরেছিলেন তা পুরোই টপনচ পারফরম্যান্স ছিলো Vera Farmiga'র।মুভির নায়িকা মিশেল মোনাঘনের চাইতেও ভেরা ফারমিগা আমাকে আপ্লুত করেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখিনি।