নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওস্তাদ বায়ে পেলাস্টিক চাইপা মারেন নাইলে কানবো।

সময় আমার সম্পর্কে বেশি জানে কারণ মানুষ সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।

ওস্তাদ বায়ে পেলাস্টিক

ওস্তাদ বায়ে পেলাস্টিক চাইপা মারেন নাইলে কানবো।

ওস্তাদ বায়ে পেলাস্টিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি আর আগের মত না আমার বয়স হয়েছে

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৫৮







এই বাস্তব ঘটনাটি আমার এক আংকেল থেকে শুনা। শেয়ার করার দরকার তাই শেয়ার করলাম। খুবই তাড়াতাড়ি করতে হয়েছে বলে বানান ভুল থাকতে পারে । ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে নিলে খুশি হবো।

...................................................................................................



প্রত্যেক মা-বাবা তার সন্তানকে ভালবাসেন। সন্তানের মঙ্গলে বিভুর হয়ে তাঁরা নিজের দুঃসময়ের জন্য রক্ষিত শেষ সম্বল অর্থ সম্পদ ব্যয় করেন। অনেক অপরিকল্পিত পরিবারের পিতামাতা পরিবারের ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে সংসারের বড় ছেলে বা মেয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন সংসারের বোঝা । এই বড়রা সংসারের বোঝা টানতে টানতে একদিন যখন ছোটদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে নতুন আশায় বুক বাধেন তখন ছোটরা বিয়ে করে সংসার থেকে আস্তে করে কেটে পড়েন। আর বড়রা ঘানিটানা কলুর বলদের মত অসহায় হয়ে শুধু অনুশোচনা করেন । হায় একি করলাম! এমনি এক বাস্তব জীবনের ঘটনা অবলম্ভনে এই গল্প।





আমিন ভাই আমার আমেরিকা প্রবাস জীবনের একজন সহকর্মী । মেরিল্যান্ডের এক কুইজিন ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতে গিয়ে তার সাথে পরিচয়। মাথায় লম্ভা কালো চুল , ক্লিন সেইভ , মোটা লম্বা দেহের অধিকারী । বয়স ৭০ এর উর্ধ্বে চেহারার চাকচিক্যে বয়সটা তেমন ধরা যায় না, হাস্য উজ্জল সদালাপী তার মুখের দিকে তাকালে মনে হয় একজন সুুখী মানুষ । কাজের প্রথম দিন তাই আমি খুব ব্যস্ত। দোকান খোলার কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমিন ভাইয়ের ডিউটি শেষ । আমিন ভাই বিদায় নিতে এসে আমাকে বললেন চৌধুরী ভাই চললাম কাল দেখা হবে । আমি হাতের কাজ ফেলে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলাম, কি চলে যাচ্ছেন ? উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, আমার ডিউটি শেষ । আমিন ভাই চলে যাওয়ার পর আমি তার রেকর্ড ফাইল চেক করে দেখলাম প্রতিদিন তাকে ২ থেকে ৩ ঘন্টা , সপ্তায় ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা কাজ দেয়া হয়েছে প্রতি ঘন্টা ৬ ডলার । সপ্তাহে ১২০ ডলার।



পরদিন কাজে এসে আমিন ভাই শুরু করলেন খোশগল্প । আমি কোথায় থাকি, দেশের বাড়ী কোথায় । আমেরিকায় কি ভাবে এলাম । কত বছর যাবৎ আমেরিকায় আছি কে কে আছেন, ছেলে মেয়ে কয়জন ইত্যাদি । তার পর শুরু করলেন নিজের জীবন নিয়ে বলা। তিনি নিজেকে হাফ সিলেটি মনে করেন, তার কর্ম জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে সিলেটে । তিনি দির্ঘ ৩০ বছর ফেঞ্চুগঞ্জে বি আই ডিসিতে কনট্রাকটরী করেছেন । সিলেটে কর্মÑব্যস্ত যৌবনের সৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেক মজার মজার গল্প বললেন যা আজো তার হৃদয়কে নাড়া দেয় । বিবাহিত জীবনে তিনি ৪ সন্তানের পিতা । বড়মেয়ে ঢাকায় মাষ্টার্স করার পর এক আমেরিকা প্রবাসী সিটিজেন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন । মেয়ে, মেয়ের জামাই দুজনি ডক্টরেক্ট ডিগ্রি নিয়ে টেক্সাসে ভাল বেতনে চাকুরি করছে । তাদের ঘরে এক নাতি ।

বললেন, আমার নাতিটা খুব সুু›˜র ওকে আমি ভীষন আদর করি । নাতির কথা বলতে গিয়ে আমিন ভাইয়ের বাকরুদ্ধ হয়ে দুচোখ জলে ভরে গেল । আমি প্রশ্ন করলামস আপনার এখন বয়স কত ? বললেন ৭০ । আপনার বউ কোথায় ? দেশের বাড়ীতে । কেন ? তিনি আমেরিকায় আসেননি ? এসেছিলেন । সে এক করুন ইতিহাস । বড় মেয়েকে আমেরিকান ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে আমাদের চাহিদা বেড়ে যায় । আমরা স্বপ্ন দেখি মেয়ে একদিন আমেরিকা যাবে । সিটিজেন হবে । আমাদের জন্য এপ্লাই করবে, আমরা সবাই একদিন আমেরিকা যাব । স্বপ্নœ সুুখের আমেরিকা । যে আমেরিকা নিয়ে বিশ্ববাসীর কল্পনার শেষ নেই।



আশার প্রহর শেষ করে একদিন ভিসার জন্য আমেরিকান এ্যাম্বেসীতে গেলাম কিন্তু ভিসা পেলাম শুধু আমি আর আমার স্ত্রী , বয়স বেড়ে যাওয়াতে আমার ছেলে মেয়েরা কেউ ভিসা পেলনা । আমরা দুই জন চলে আসলাম আমেরিকায় । দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা প্লেন জার্নি করে মেয়ের বাসায় পৌছে ক্লান্ত দেহে আমি শুয়ে পড়লাম । দুদিন কি ভাবে কেটেছে বলতে পারিনা । আস্তে আস্তে অবসাদ কেটে একে একে সপ্তাহ মাস পার হল। নাতিকে নিয়ে হেসে খেলে সময় কাটে । ভাবলাম বাকী জীবনটাও হয়তো এভাবে কেটে যাবে। সারা দিন অফিসে খাটা খাটুনির পর বাসায় ফিরে মেয়ের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য আমার স্ত্রী রান্না-বান্না থেকে শুরু করে ঘরদুয়ার ছুইপ মাপ দিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখেন । এভাবে প্রায় মাস তিনেক কাটলো । একদিন খবর পেলাম বড়ছেলে রাজু, গুপনে বিয়ে করে নতুন বাসায় উঠেছে । তারা স্বামী স্ত্রী উভয়েই এক প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন। এসংবাদে মনে বড় কষ্ট পেলাম। মনের কষ্টটা মনে রেখে, ঘটনাটি বড় মেয়ের কাছে গুপন রাখার চেষ্টা করলাম। কয়েকদিন পর দেখি মেয়ে মেয়ের জামাই ঘরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে বাইরে ম্যাগডোনাল্ডস, বার্গার, সাবোয়ে কুইজনসের স্যান্ডউইচ খেয়ে ঘরে ফিরে । আমরা কিছু বললে সহজে উত্তর দেয় না, মুখ ভার করে থাকে । নাতিও দূরে দূরে থাকে । আগের মত দৌড়ে এসে দাদুর কোলে বসে না এভাবে কয়েকদিন কাটার পর দেশ থেকে ছোট ছেলের টেলিফোন পেলাম তাদের খাবারের টাকা শেষ, কলেজ, ইউনিভারসিটির বেতন বাকী । এমনি পরিস্তিতে এক দিন রবিবার দুপুরে মেয়েকে তার ভাই বোনের অসুুবিধার কথা বললাম, মেয়ে নিরবে শুধু শুনেই গেল উত্তরে কিছুই বলল না। দুদিন পর মেয়ে আমদেরকে ডেকে দুই হাজার ডলার হাতে দিয়ে বলল বাবা তোমরা আমাকে আমেরিকান ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছিলে ।আশা ছিল আমেরিকায় আসবে, আমিও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এখন আইনের বাইরেতো কেউ কিছু করতে পারে না । আমি যাতটুকু পেরেছি ততটুকু করেছি । এখন তোমরা তোমাদের ছেলে মেয়েদের জন্য চেষ্টা কর । দিস ইজ আমেরিকা । এখানে কেউ কারো উপর নির্ভরশীল থাকে না । আমি এতদিন তোমাদেরকে রেখেছি । এই নাও দুই হাজার ডলার এটা দিয়ে বাড়ী ভাড়া করবা না দেশে পাঠাবা না কি করবা সেটা তোমাদের ইচ্ছা । আমার পক্ষে এর বেশী কিছু করা সম্ভব না।

মেয়ের কথা শুনে আমার হার্টবিট বেড়ে মাথায় চক্কর দিয়ে উঠলো । সমস্ত শরীর দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছিল । কোন রকম নিজেকে সামলে, ভাবলাম হয়তো স্বপ্ন দেখছি । আমার স্ত্রী একটু নাছোড়বান্দা । তিনি মেয়ের সাথে ঝগড়া বেধেদিলেন । মেয়ে কিছুই বলছেনা , নিরবে মায়ের বকুনি শুনছে ।দুচোখদিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি আমার স্ত্রীকে শান্ত করতেগিয়ে বললাম আরে তুমি চুপ কর । আমার মেয়ে জোক করে একটা কিছু বলেছে আর তুমি এমনিতে লড়াই শুরু করে দিলে । মেয়ে বলল । না বাবা । না । মাকে বলতে দাও । উনি সংসারের কি বুঝবে । বাংলাদেশের নারী । বিয়ে হলে গুটিকয়েক সন্তান দিয়ে স্বামীর ঘাড়ে চেপে বসেন । সংসার কিভাবে চলে সেটা স্বামী জানে ।



মেয়ের আসল উদ্দেশ্যটা বুঝতে আমার বাকী থাকলো না । মেয়েকে বললাম ঠিক আছে মা । ঠিক আছে । আমি তোমার মাকে নিয়ে আজ ই অন্যত্র চলে যাব । মনে রেখ আমি ও একদিন একা রোজগার করে তোমার চাচা ফুফু ওদেরে মানূষ করে বিয়েশাদি দিয়েছি । তোমাকে এবং তোমার আরো তিন ভাই বোন কে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি তোমাকে উপযুক্ত করে বিয়ে দিয়েছি কিন্তু কোন দিন তোমার মত এত হতাশ হইনি বা ভেঙ্গে পড়িনি। আমার কোন আতœীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবকেও এভাবে হতাশ হতে দেখিনি ।



উত্তরে মেয়ে বলল। তা সত্যি বলছ বাবা , তবে তুমি ভুলেগেলেও আমি ভুলিনি। তোমার মনে আছে। আমার এস এস সি পরিক্ষার ফিসের টাকা জোগাড় করতে না পেরে ছোট চাচার কাছে টাকা ধার চেয়েছিলে তখন ছোট চাচা তোমাকে কি বলে ছিল? বলে নাই! মেয়ে দেরকে এত পড়ানো ভাল না । যত তাড়াতাড়ি পার বিয়ে দিয়ে দাও। অথছ এই ছোট চাচাকেইতো তুমি নিজে কষ্ট করে লেখা পড়া করায়েছিলে। তুমি লেখা পড়ার খরচ না চালালে সে আজ কোথাও খেতের কাম করতো কিংবা কোন ফ্যাক্টরীতে শ্রমিকের চাকরি করতো। সে কথা কি তার মনে আছে। মনে আছে তবে সে স্বীকার করবেনা । এতে তার আতœমর্যাদার হানি হবে। কারন সে এখন বড়লোক, সে মানুষের কাছে দেখায় সে অনেক বড়লোকের ছেলে ছিল। তোমার মনে আছে আমার পড়া বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ান জন্য মেজচাচি আমার বিয়ের পাত্র ঠিক করে ছিলেন। ছোট চাচি মন্তব্য করেছিলেন জাকাতের টাকা বাইরে না দিয়ে আমাদেরকে দিলে সওয়াব বেশি হবে। সেদিন দাদি বা ফুফুওতো কিছুই করেননি। তোমার দুঃখের কাহীনি শুনে বড় মামা আমার এস এসসি পরিক্ষার ফিস ভরে ছিলেন।



আমি টিউশনি করে আমার পড়ার খরচ চালিয়েছি, ভাই বোনের পড়ার খরচ যুগিয়েছি, তোমার সংসারে যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি। ঈদে যখন তোমার ভাতিজা ভাতিজিরা দামি সুন্দুর সুন্দর পোষাক পরতো তুমি তখন আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু ফেলতে। মাঝে মাধ্যে দুঃখ্য করে তোমার ছোট ভাইবোনদের জন্য কত কষ্ট করেছ সে গল্পও আমাদেরকে শুনাতে। তুমি যদি তোমার যৌবনে উপার্জিত অর্থ তোমার এই নিমক হারাম ভাই-বোনদের পিছনে ব্যায় না করে তা সঞ্চয় করতে তবে তুমাকে আজ এদিন দেখতে হতোনা।



তোমার বড়ছেলে রাজু বিয়ে করেছে সে খবর কি তুমি জান? সেকি তোমার বা আমার অনুমতির প্রয়োজনবোধ করেছে? করে নাই ! কারণ সে এখন উচ্চশিক্ষিত, স্বামী- স্ত্রী উভয়েই ভাল চাকরী করে। আমেরিকায় আশার প্রয়োজন তাদের নেই্, বাংলাদেশেই তারা ভাল থাকবে। আমার প্রয়োজন তাদের শেষ হয়ে গেছে, তারা এখন স্বাবলম্বী। তোমার জীবন দর্শনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝতে পারছি একদিন রাজুর মত বাকীদের কাছেও আমার প্রয়োজন শেষ হয়ে যাবে । তোমার ভাইবোন তোমার সাথে যে আচরণ করেছে আমার ভাই-বোনও প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আমার সাথে সেই একই আচরণ করবে।



বিয়ের আগে পরে বিগত ১৫ টি বছর আমি নিজে না খেয়ে না পরে তোমার সন্তানদের জন্য টাকা পাঠিয়েছি, আজ আর না আমারও সংসার আছে। তোমরাকি চাও! আমি সব কিছু দিয়ে তোমাদের মত আমিও আমার ভাই-বোনদের দ্বারে দ্বারে করুণার ভিক্ষা করি। কাক আর কোকিলের রং এক কিন্তু আচরণ ভিন্ন। তাই আমাকে এখনই এ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আমি চাইনা আমার সন্তানরা আমার মত পুরান কাপড় পরে ঈদ করুক ।







এর পর আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিল সে এক মুহুর্তও আমেরিকায় থাকবে না সে আমাকে নিয়ে দেশে চলে যাবে । আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাকে দেশে পাঠালাম আর আমি চলে আসলাম ভার্জিনিয়ায় । দোকান মালিক আমাকে আশ¡াস দিলেন প্রতিদিন ৮/১০ ঘন্টা কাজ দিবেন কিন্তু এখন মাত্র ২/৩ ঘন্টা দেন ঘন্টায় ৬ ডলার । সপ্তায় বেশী থেকে বেশী ১২০ থেকে ১৩০ ডলার পাই । এই রুজিতে আমার থাকা খাওয়ায় চলে না । দেশে এক ছেলে এক মেয়ে প্রাইভেট বিশ¡বিদ্যালয়ে পড়ে । প্রতিদিন কাজে আসা যাওয়ায় ট্রান্সপোর্টে ৪ ডলার চলে যায় । মেসে খাওয়া থাকার পয়সা ঠিক মত দিতে পারি না । তাই ওরা আমার অনুমতি নিয়েই আমার সিটটা অন্যকে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে । আমি এখন বিনা ভাড়ায় ওদের দুই খাটের চিপায় মেঝেতে থাকি । রাতে মাঝে মধ্যে ওরা আমার উপর দিয়ে বাথরুমে যাওয়া আসা করে । ওরা আমার ছেলের বয়সী তাই ওরা সব সময় আমার কাছে মাফ চায়, আমাকে তাদের খাটে শুয়ার জন্য বলে কিন্তু আমি শুইনা । মাঝে মধ্যে ওদের মেহমান আসলে আমি আস্তে করে আমার বিছানা বালিশ নিয়ে সিড়ির নীচে আমাদের দেশী কুকুরের মত ঠান্ডায় বেড়ী পাকিয়ে শুয়ে পড়ি ! এই আমার জীবন জানিনা এভাবে আর কতদিন আমাকে চলতে হবে !



আপনি ম্যানেজার হয়ে এসেছেন আপনাকে দেখে আমার মনটা ভরে গেছে । আপনি ভাল মানুষ । আপনি যদি আমাকে কিছু আওয়ার দেন তবে আমার উপকার হবে । আমি টেক্স কাটাবো । ক্রেডিট বুইল্ড করবো । ভালো ক্রেডিট না হলে ছেলে মেয়েকে আনতে পারবোনা । আমি রেগে গিয়ে বললাম আপনার আবার কিসের ছেলে মেয়ে । যে সন্তান বৃদ্ধ বয়সে মা বাবাকে রাস্তায় ঠেলে দিলো সে সন্তানের জন্য আপনি আরো কষ্ট করতে চান ? কিছুক্ষন নিরব থেকে আমিন ভাই হাউমাউ করে কেদে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললেন চৌধুরী ভাই আমি যে ওদের বাবা ! আমি ওদের মত হতে পারিনা । সন্তান বড় হয়ে বিয়েশাদী করে যখন সন্তানের পিতা হয় তখন সে তার আপন পিতার ¯েœহ আদরের কথা ভুলে যায়। তারা এক মুহুর্তের জন্য বুঝতে চেষ্টা করেনা যে তারাও একদিন কারো না কারো সন্তান ছিল আর কেউনা কেউ তাদেরকে অতি আদরে অতি কষ্টে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছে ।



চৌধুরী ভাই আমি বাংলাদেশে থাকতে গল্প শুনতাম ইউরোপিয়ান আমেরিকান এর ছেলে মেয়ে ১৮ বছর বয়স হলে মা বাপ ছেড়ে অন্য ষ্টেটে চলে যায় এবং বুড়ো বয়সে ইউরোপিয়ান আমেরিকানরা কুকুরকে ভালবাসে এবং মৃত্যুর আগে তারা তাদের বিষয় স¤পতি সব কুকুরের নামে উইল করে রেখে দেয়। বাস্তবেও দেখছি তাই। আমি তাকে সান্তনা দিয়ে বললাম । আমি আপনাকে আওয়ার দেব। আপনি যত ঘন্টা কাজ করতে চান তত ঘন্টা কাজ করতে পারবেন আওয়ারের কোন সমস্যা হবেনা । কাল থেকে আপনি দুই ঘন্টার পরিবর্তে ৪ ঘন্টা কাজ করবেন ।



পর দিন আমিন ভাই কাজে আসলেন দুঘন্টা লেটে। আমি তাকে লেটের কারণ জানতে ছাইলে মুছকি হেসে ক্লান্তদেহে হাতের ইশারায় বুঝালেন একটু পরে কথা বলবেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি ভীষন টায়ার্ড শাস নিতে তার ভীষন কষ্ট হচ্ছে। আমি একটা চেয়ার টেনে তাকে বসতে দিলাম । আমি দুর থেকে দেখলাম তিনি শাষকষ্টে ভুগছেন, তার বিশ্রামের প্রয়োজন । অল্পক্ষন পর আমি কাজে বিজি হয়ে গেলাম । তার ঘন্টা দুয়েক পর ভিজির মধ্যে আমার পাশে এসে বললেন কি কাজ করবো । আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি এখন ও ক্লান্ত তাই একটু মুছকি হেসে বললাম পিছনে গিয়ে বসে বসে টমেটু কাটুন । ভাবলাম এতে রেষ্টও হবে কাজ ও হবে । তিনি খুশী মনে পিছনে চলে গেলেন । প্রায় ঘন্টা খানেক পর পিছনে গিয়ে দেখি অমিন ভাই মাত্র তিন কেজি টমেটুও স্লাইস করতে পারেননি । আমি তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম । এত দূর্বল শরীর নিয়ে উনি কাজ করবেন কি ভাবে । শুধু আওয়ারতো দিলে হবেনা । কাজ ও তো করতে হবে । কাজ না করলে দোকান চলবে কি করে । অন্যরা যেকাজ ঘন্টা দেড়েকে করতে পারে সেকাজ তিনি ৪ ঘন্টায় ও করতে পারেন না। ছুটির সময় আমি প্রশ্ন করলাম । কালকে কাজে আসবেন না ছুটি কাটাবেন । তিনি উত্তরে বললেন, না । আমাকে কালকেও ৪ ঘন্টা কাজ দিবেন । পর দিন কাজে আসলেন কিন্তু কাজের মধ্যে কোন গতি নেই । প্রতিদিন সহকর্মীরা তার কাজ নিয়ে মন্তব্য করে । তার অসমাপ্ত কাজ গুলো কেউ করতে চায়না । এতে দোকানে কাজের গতি কমে গেছে তাই আমি আবার আওয়ার কমিয়ে দিলাম ।



আমিন ভাই আমার উপর রাগ করলেন । আমি তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম । তিনি মালিককে ও দোষারোপ করতে লাগলেন যে ৮/১০ ঘন্টা কাজ দেওয়ার কথা বলে এখন তাকে ৩/৪ ঘন্টা ও কাজ দিচ্ছেন না । আমি আমিন ভাইকে বুঝালাম । আমিন ভাই মালিক আপনাকে যে আওয়ার দিচ্ছে সেটা আপনার প্রতি তার একটা সহানুভূতি বা দয়া । কারণ আপনার শরীরের যে অবস্থা তাতে কেউ আপনাকে কাজ দেবেনা।



আমি জানতে চাইলাম তার বাসা কাজের জায়গা থেকে কতটুক দূরে । কি ভাবে আশা -যাওয়া করেন । তিনি এই এলাকার অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে যা বললেন তা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য । কালোয়াদের এলাকা, জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। সিকুরিটি খুব টাইট তারপর ও একা রাস্তা দিয়ে হেটে যেত প্রতি ঘন্টায় একটা কালোয়া ছিনতাইকারীর কবলে পড়তে হয় । বাসের ঠিক টাইম মত বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয় । বাস স্টপজে টাইমিং লেখা আছে । বাস আসার ১৫ মিনিট আগে গেলে কালোয়ারা মানিব্যাগ পরনের শার্টÑপেন্ট খুলে নিয়ে যায় । বাস আসে অফিস আওয়ারের এক ঘন্টা পর । অফিস আওয়ার শেষ হলে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর। তার বাসা কাজের যায়গা থেকে তিন মাইল দূরে । দুটো বাস বদলাতে হয় এতে বাসায় যেতে মাঝে মধ্যে দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় লেগে যায়। মাঝে মধ্যে জীবনের ঝুকি নিয়ে পায়ে হেটে যেতে হয় । প্রায় তিন শত গজ রাস্তার পথচারি চলাচলের জন্য কোন আইল্যান্ড নেই । নির্জন রাস্তার দুইধারে জঙ্গল উচু পাহাড় এসব রাস্তা দিয়ে দিনের বেলা গাড়ী নিয়ে চলতেও ভয় হয় । তিনি বললেন এখন আপনি আছেন মাঝে মধ্যে আপনার গাড়ীদিয়ে আমাকে একটু বাসায় নামিয়ে দিবেন ।



একদিন অবসর মহুর্তে গাড়ী নিয়ে তাকে বাসায় নামিয়ে দিতে গিয়ে রিতিমত ভয় পেয়ে গেলাম রাস্তার কিছু অংশ খুবই ভীতিকর । পাহাড়ী রাস্তা কোন কোন জায়গা পায়ে চলার জন্য কোন আইল্যান্ড নেই প্রায় ১৫/২০ ফুট ঢালু পায়ে চলা খুবই কঠিন। আমি তার কষ্ট দেখে তাকে তার মেয়ের কাছে টেক্সাসে চলে যেতে বললাম । সেখানে অল্প বেতনে হালকা কোন কাজ যেমন বিল্ডিং এর দারোয়ান, নাইট গার্ড এসবের চাকুরি করলে তার জন্য ভাল, তার পর মেয়ের বাসায় থাকলে বাসা ভাড়ার ৩/৪ শত ডলার বাচঁবে। শরীরের যে অবস্থা কখন যে কি হয় এ বয়সে স্ত্রী কিংবা ছেলে মেয়ের কাছে থাকা দরকার । আমিন ভাই আমার যুক্তিতে অনেকটা শান্তি পেলেন তবে তিনি মেয়ের কাছে যাবেন না । আমাকে অনুরোধ করলেন আমি যেন তাকে এধরনের একটা হালকা কাজ জোগাড় করে দেই । এখন প্রতিদিন কাজে এসে তার একি প্রশ্ন তাঁর কাজের কোন ব্যবস্থা হয়েছে কি না ? এ নিয়ে কারো সাথে আলাপ হয়েছে ? কি বলেছে ? ইত্যাদি।



মাঝে মধ্যে হতাশ হয়ে বলতেন চৌধুরী ভাই আপনি বুঝতেছেন না আমি কত অশান্তিতে আছি । ছেলে মেয়েদের পড়ার খরচ পাঠানো তো দূরের থাক নিজের মেসের টাকাটা জোগাড় করতে পারছি না । এই পয়সায় আমি কেমনে চলি , আপনি বলেন ? তার পর ছেলে মেয়েরা ও বুঝতেছেনা আমি কত কষ্ট করে চলছি । তাদের পড়ার খরচ সেই সাথে তাদের বিভিন্ন অভাব অভিযোগের চিঠি পেলে আমার মাথাটা ঠিক থাকেনা । তাদের চিঠির ভাষায় মনে হয় আমি ইচ্ছা করে তাদের জন্য কিছু করছি না । আমার বয়স হয়েছে আমি আর আগের মত না এটা আমার সন্তানেরা একটি বার ও বুঝার চেষ্টা করে না। ওরা স্বার্থপরের মত নিজের যুক্তিটাকে প্রাধান্য দিয়ে চিঠি লিখে। আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। একদিন আমি পাগল হয়ে যাব এই বলে মাথার ল¤¦া চুলগুলোয় দুই হাতের আঙ্গুলে গুছিয়ে টানতেন । এটা তিনি প্রায় সময় করেন । চিন্তায় অস্থির হয়ে প্রায় সময় তাকে এভাবে চুল টানতে দেখেছি । তিনি আমকে চাকুরীর জন্য প্রেসার দিতে লাগলেন এভাবে দিন, সপ্তাহ কেটে গেল । এমনি একদিন শনিবার সকাল দশটায় ছুটির দিন আমার মোবাইল বেজে উঠল । মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মালিকের টেলিফোন। আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম যে, কি ব্যাপার এভাবে ছুটির দিনে মালিক তো কখনো টেলিফোন করে না । কি হল ? কো¬জিং এ কোন ভুল হয়েছে , না, ওপেনিং এর লোক আসে নাই। না কি ষ্টোরে ডাকাতি হয়েছে । মুহুর্থে মধ্যে সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটিয়ে মালিক কান্না জড়িত কন্ঠে প্রশ্ন করলেন চৌধুরী ভাই খবর জানেন কি ? আমিন ভাই মারা গেছেন ! কি ভাবে ? গত রাতে কাজ থেকে ফেরার পথে হার্ট এট্যাক হয় রাস্তায় । বাসার ছেলেরা হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা গেছেন ।



টেলিফোন বন্ধ করে আমি দাড়াঁনো অবস্থা থেকে ধপ করে সোফায় বসে পড়লাম । আমার স্ত্রী এসে পাশে বসে আমায় সান্তনা দিলেন। আমরা আমিন ভাইয়ের বেদনা বিধুর হতাশার দিন গুলোর কথা সৃতিচারণ করলাম । ছেলে-মেয়ের উজ্জল ভবিষৎ গড়তে গিয়ে আমিন ভাই নিজের জীবনের সুুখ স্বাচ্ছন্দ্য আরাম আয়েশ সব কিছু ভুলে গিয়ে, শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে হতাশার জীবন কাটিয়ে ছিলেন ।



মনে পড়লো মাকড়সার জীবনীর কথা । দেখলাম আমিন ভাইয়ের জীবন আর মাকড়সার জীবনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই কারণ মাকড়সা নিজের সন্তানের নিরাপত্তার জন্য ডিম গুলো তা দিতে বুকের মধ্যে রেখে অনেক কষ্ট করে নিজের আহার জুগাড়ে চলাফেরা করে তার পর ডিম ফুটে যেদিন বাচ্ছা বের হয় সে দিন বাচ্চারা পেটের ক্ষিধায় মায়ের দেহটা খেয়ে ফেলে । ওরা একটি বার ও ভাবেনা তাদের জন্য তাদের মা কত কষ্ট করেছেন । এই নিষ্টুর পৃথীবিতে আমিন ভাইয়ের বাচ্চারাও তার বুক খেয়ে ফেলেছে। তারা কেউ বুঝতে চেষ্টা করেনি যে, তাদের বাবা সারাটি জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাদের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন এখন তার অনেক বয়স হয়েছে তার এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। যদি তাই তারা বুজতো তবে তারা তাদের বাবাকে এ বয়সে কাজে দিতো না। আমিন ভাই রেষ্টে চিন্তামুক্ত থাকলে হয়তো আরো অনেকদিন বাচতেন।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫

অণুজীব বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং

২৭ শে নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৮

ওস্তাদ বায়ে পেলাস্টিক বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.