![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার ছোঁয়ায় ধরন পাল্টেছে সব কিছুরই। মানুষের ব্যবহার্য থেকে আহার্য পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই তথাকথিত উন্নতি সাধনের নামে চলছে বহুবিদ গবেষণা। লক্ষ্য নতুন কিছু আবিষ্কার। আবিষ্কৃতও হয়েছে নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য ও তার উপকরণ, চিকিৎসা ও তার উপাদান। যেন সর্বত্রই চলছে আবিষ্কারযজ্ঞ। বিশ্বমানবতার শান্তি সফলতার লক্ষ্যে সর্ব প্রকারের নবআবিষ্কারকে ইসলাম সাধুবাদ জানায়। তবে একজন মুসলমানের জন্য যে কোনো ধরনের নবআবিষ্কৃত বস্তুর ব্যবহারপূর্ব জানতে হবে, এতে ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ রয়েছে কি না? কারণ একজন মুসলমানের চিরস্থায়ী জীবনের শান্তি নির্ভর করে এটির ওপরই। সাম্প্রতিক সময়ে নবআবিষ্কৃত খাদ্য উপকরণ ও ঔষধীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত একটি পদার্থের নাম জেলেটিন (Gilatin)। পদার্থটির ব্যবহার কতটুকু শরীয়াসম্মত তার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা নিয়ে আজকের দরসে ফিকহ।
যেসব বস্তু থেকে সংগ্রহ করা হয় জেলেটিন : বিভিন্ন প্রকার জন্তুর চামড়া, হাড় থেকে সংগ্রহ করা হয় জেলেটিন। পাশ্চাত্য দেশসমূহে মূলত এটি সংগ্রহ করে শূকরের চামড়া ও হাড় থেকে। কিছু কিছু দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি জন্তুর চামড়া, হাড়ও ব্যবহার করে। সম্প্রতি কিছু কিছু মুসলিম দেশে বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকেও জেলেটিন সংগ্রহ করছে।
যেসব ক্ষেত্রে জেলেটিন ব্যবহৃত হয় : Gilatin মূলত ব্যবহৃত হয় সব ধরনের ক্যাপসুলের ওপরের আবরণটিতে। বিশেষ কিছু চকোলেট, আইসক্রিম ইত্যাদিতেও Gilatin ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
(Gilatin) জেলেটিনের শরয়ী হুকুম : জেলেটিন পদার্থটি যেহেতু বেশ কিছু জন্তু ও উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে, তাই এর শরয়ী হুকুম মূল উপাদানের দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন হবে।
১। সর্ব প্রকারের উদ্ভিদ থেকে সংগৃহীত জেলেটিন-মিশ্রিত ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার ও খাওয়া শরীয়ত মতে বৈধ।
২। শূকরের চামড়া ও হাড় থেকে সংগৃহীত জেলেটিন সম্পূর্ণ হারাম।
৩। গরু, মহিষ, ছাগল বা অন্য কোনো হালাল জন্তুর চামড়া ও হাড় থেকে সংগৃহীত জেলেটিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখতে হবে; জন্তুটিকে শরয়ী পদ্ধতিতে জবাই করা হয়েছে কি না? যদি শরয়ী পদ্ধতিতে জবাই করা হয়ে থাকে তাহলে উক্ত জেলেটিন-মিশ্রিত ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার ও খাওয়া শরীয়ত মতে বৈধ। শরয়ী পদ্ধতিতে জবাইকৃত নয় এমন জন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃতই ধরা হয়। যেহেতু মৃত জন্তু হালাল নয়, তাই এই ধরনের জন্তুর হাড় থেকে সংগৃহীত জেলেটিন-মিশ্রিত খাদ্য দ্রব্য হালাল নয়।
তবে এ ধরনের জন্তুর চামড়া থেকে সংগৃহীত জেলেটিন ব্যবহার করা যাবে কি না? সে ব্যাপারে ফকীহদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নমত। ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মতে খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহার বৈধ। হানাফী মাযহাব মতে খাদ্যদ্রব্যে এ ধরনের জেলেটিনের ব্যবহার অবৈধ। তবে বাহ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই।
উল্লেখ্য, স্বাভাবিকভাবে যে সমস্ত দ্রব্য খাওয়া শরীয়ত মতে নিষেধ সেসব দ্রব্য ওষুধ হিসেবে খাওয়া যাবে কি না? এ ব্যাপারে বর্তমান সময়ের ফকীহদের মত হলো কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসক (যদি এ ধরনের দ্রব্যাদি মিশ্রিত ওষুধ ব্যতীত নিরাময়ের কোনো পথ না থাকে) কর্তৃক নির্বাচিত এ ধরণের ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
আরো উল্লেখ্য যে হারাম দ্রব্যের মূল ধাতু পরিবর্তন হয়ে কোনো হালাল দ্রব্যে রূপান্তরিত হলে শরীয়ত তার ব্যবহার বৈধ বলেছে।
যেমনÑলবণের কূপে কোনো জন্তু পড়ে লবণে রূপান্তরিত হয়ে গেলে উক্ত লবণ ব্যবহার বৈধ, মদ যদি সিরকায় পরিণত হয় সে সিরকা ব্যবহারও বৈধ হয়ে যায়। এরই ভিত্তিতে হারাম জন্তু/মৃত জন্তুর চামড়া, হাড় ইত্যাদি থেকে সংগৃহীত জেলেটিনের ক্ষেত্রে যদি চামড়া ও হাড়ের মূল ধাতু পরিবর্তন হয়ে অন্য কোনো হালাল দ্রব্যে রূপান্তরিত হলে এর ব্যবহারও বৈধ হতো। তবে এটির মূল ধাতু পরিবর্তন হয় কি না এই ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ফক্বীহ শায়খুল ইসলাম আল্লামা মুফতী মুহাম্মদ তকী উছমানী সাহেব লিখেছেনÑ“আমি বিশ্বের বহু জেলেটিন প্রস্তুতকারী কারখানায় গিয়ে সরেজমিনে জেলেটিন প্রস্তুত প্রণালি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। জেলেটিন প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে যেসব প্রসেস গ্রহণ করা হয়ে থাকে এর দ্বারা চামড়া ও হাড়ের মূল ধাতু পরিবর্তন হওয়ার ব্যপারে আমি নিশ্চিত হতে পারিনি।” (ইনআমুল বারী ২/৩৭৮)
তাই
শূকরের চামড়া ও হাড় থেকে সংগৃহীত জেলেটিনের কোনো প্রকার ব্যবহার শরীয়ত মতে বৈধ হতে পারে না।
শরয়ী পদ্ধতিতে জবাইকৃত হালাল জন্তুর চামড়া ও হাড় থেকে সংগৃহীত জেলেটিনের ব্যবহার বৈধ হবে।
শরয়ী পদ্ধতিতে জবাই ব্যতীত যে কোনো জন্তুর চামড়া, হাড় থেকে সংগৃহীত জেলেটিনের ব্যবহার বৈধ নয়।
বিধায় জেলেটিন-মিশ্রিত ওষুধ বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যদ্রব্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন সকলের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
মুফতী শাহেদ রহমানী
মাসিক আল-আবরার
২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:১২
একনিষ্ঠ শ্রোতা বলেছেন: যদি সবগুলি জেলেটিনের উপাদান বা ইনগ্রেডিয়েন্টস্ একই হয় তবে পার্থক্য করা যাবে কিভাবে? তখন এদের মধ্যে কোন পার্থক্য আসলেই থাকবে কিনা?
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
আল্লামা ইকবাল বলেছেন: ধন্যবাদ - যদিও আগেই জানতাম । বিদেশে খাবার ক্রয় করার আগে এটা চেক করে একটা আবশ্যকীয় কর্তব্য ।