নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-এটা কি ২১ নং সিট ?
তিতুমীর এক্সপ্রেস এর খ নং বগির মাঝামাঝি জানালার পাশে বসা মেয়েটিকে তার পাশের সিটটি দেখিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে হাসান।
-জ্বী । আমারটা ২০।
সিটের উপর রাখা ব্যাকপ্যাকটা নিজের কোলে রাখতে রাখতে জবাব দেয় মেয়েটি। ডানকানে আবার হেডফোনটি তুলে দেয় সে।
নিজের ব্যাগপ্যাকটি উপরের রেলিং এ রাখতে রাখতে আবার জানতে চায় হাসান,
-আপনার ব্যাগটি দিতে পারেন, উপরে রেখে দিই
মৃদু মাথা নেড়ে অসম্মতি জানায় মেয়েটি। হেডফোনে খুবই মগ্ন হয় মনে হয় তাকে।চিলাহাটি, সৈয়দপুর হয়ে আসা ট্রেনটিতে পার্বতীপুর স্টেশন থেকে উঠার সময় দুর থেকেই সে দেখতে পেয়েছে তার পাশের সিটে একটি মেয়ে বসা। এই বগির মোটামুটি ১৯, ২০, ২১, ২২ এই সিটগুলো সে দুর থেকেই চেনে। পার্বতীপুর স্টেশনে অনলাইনে এই কয়েকটি সিট পাওয়া যায়। এর আগেও সে এই সিট গুলোতে অনকবারই বসেছে। তবু জিজ্ঞেস করার কারন সহযাত্রী ভুল করে বসতে পারে। এইতো যেমন গতমাসে যাবার সময় একইরকমভাবে পাশের সিটে একজন ভদ্র মহিলা বসেছিলেন। সে কিছু না বলে বসতে গিয়েছিলো কিন্তু ভদ্র মহিলা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলেন তার দুটো সিটই নেয়া। পরে অবশ্য ভুল বুঝতে পেরে পেছনের সিটে উঠে গিয়েছিলেন।
সিটে আরাম করে বসে মনে মনে খুশি হয় হাসান। গত দশ বছর চাকরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেনে-বাসে যাতায়াত করতে হয় তাকে। প্রতিবার টিকেট করার সময় মনে মনে ভাবে নিশ্চয় পাশে কোন সুন্দরী অবিবাহিত মেয়ে বসবে। যাত্রাপথে টুকটাক গল্প করতে করতে জানাশোনা হবে, ফোন নং দেয়ানেয়া হবে । সেখান থেকে হবে গভীর প্রেম। প্রেমের পরে আর ভাবতে পারে না সে। কারন, বিয়ে বা সাংসারিক জীবন নিয়ে তার ব্যাপক অনীহা আছে। সে সব সময় নির্ঝঞ্ঝাট থাকতে চায়। বিয়ে একটা ঝামেলা। বউ, বাচ্চা, সংসার। যাত্রা করতে গেলে অন্তত ২টি বড় বড় ব্যাগ বা ট্রলি । আরও বেশী থাকতে পারে। সাথে বাচ্চা একটু পর পর প্যাঁ প্যাঁ করবে। ভাগ্য খারাপ হলে তো মা বাচ্চা সহ বমি । নাহ্, আর ভাবতে চায়না সে। এর চেয়ে বরং একটা ব্যাগই তার সংসার। যখন যেদিকে ইচ্ছে হবে, সংসার কাধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরবে।
ট্রেন ততক্ষনে ছেড়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচ মিনিট লেট। দেশের ট্রেনের জন্য শুভ লক্ষন । দিনটা এখন পর্যন্ত শুভ বলা যায়। সব কিছু ভালো ঠেকছে। শেষটাও হয়তো শুভ হবে ভাবতেই মনে মনে একটু তৃপ্তি বোধ করে সে । কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলে তো হবে না। কথা শুরু করা দরকার। যদিও ঘন্টা পাঁচেকের জার্নি, অনেক সময় আছে। মনে মনে কথা গোছাতে থাকে সে। হঠাৎ মাথায় আসে , পরের স্টেশনে যদি নেমে যায়। কিছুটা তাড়া অনুভব করে সে।
-কোথায় যাবেন ?
অন্তত সময় কতটুকু হাতে আছে জেনে রাখা দরকার। জিজ্ঞেস করে বসে সে। নিজের গলা শুনে মনে হয় আরও একটু জোরে বলা লাগতো । এমনি ট্রেনের শব্দ তাতে আবার তার কানে হেডফোন। আবার রিপিট করতে যায় সে,
-রাজশাহী।
ডানকান থেকে হেডফোনটা খুলে জবাব দেয় মেয়েটি। আবার হেডফোনটি কানে গুঁজে দেয় সে।
-আসছেন কি সৈয়দপুর থেকে ?
-জ্বী।
যাক । তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। সময় বহুত আছে।এখনই আরও কি কিছু জিজ্ঞেস করা উচিত কিনা বুঝতে পারে না সে। হেডফোন কানে দেয়া মানে কথা শুনতে চায় না । তবে সে খেয়াল করেছে, সে যখন কিছু জিজ্ঞেস করেছে প্রত্যেকবারই হেডফোন তার কানেই ছিলো। ডানকানের হেডফোনটি খুলে জবাব দিয়ে প্রত্যেকবারই কানে হেডফোন কানে তুলে দেয়। কথা তো ঠিকই শুনতে পায় কিন্তু কথা বলার সময় হেডফোনটি খোলার কি দরকার বুঝতে পারে না সে। এখন আর কথা নয়। হেডফোন খোলার অপেক্ষা করা যাক। ……..
(চলবে)
©somewhere in net ltd.