নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নগরবাউল জেমস ও বাংলা রকসংগীত ।

ওয়ালিদ আজিজ

আমি বাংলা ব্যান্ড সংগীতের বিশেষ অনুরাগী, বিশেষ করে নগরবাউল জেমসের গান আমার অনেক বেশি ভাল লাগে । তাই গান নিয়েই ব্লগে, ফেসবুকে লেখালেখি করি ।

ওয়ালিদ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর্ক ব্যান্ড নিয়ে সুখ- দুঃখের স্মৃতিঃ ১৯৯১- ২০১৬

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৪

#আর্ক আমাদের কাছে শুধুই একটি ব্যান্ড নয়, আমাদের অনুভুতির সঙে মিশে আছে তাদের গান ! তৎকালীন তমুল জনপ্রিয় ব্যান্ড চাইম থেকে বের হয়ে বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ আশিকুজ্জামান টুলু ভাই ১৯৯১ সালের দিকে গড়ে তুলেছিলেন এই ব্যান্ডটি, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত আর্ক বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন মাত্রা যোগ করছিল আর্ক । ঐ অল্প সময়ে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আর্ক যে অবদান রেখেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় । তবে আর্ক ব্যান্ডটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ভাঙাগড়ার খেলার মাঝে পড়েছে আর্ক ! বাংলাদেশ আর কোন ব্যান্ড মনে হয় এতবার ভাঙাগড়ার মাঝে পরেনি, ২০০২ পর থেকে ২০১০ পর্যন্ত আমাদের এই প্রিয় ব্যান্ডটির কোন কার্যক্রম ছিলনা, তবে ২০১০ থেকে তারা আবার চেষ্টা করছে নতুন কিছু দেয়ার, অচিরেই আসতে যাচ্ছে নতুন অ্যালবামও । আজ চেষ্টা করছি আর্ক ব্যান্ড নিয়ে/ প্রকাশিত সবগুলো অ্যালবাম নিয়ে একটু আকটু আলোচনা করতে ! এই প্রচেষ্টা সেই সময়ের শ্রোতাদের স্মৃতিকাতর করতে আর নতুন প্রজন্ম জানুক ৯০দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ব্যান্ডটি সম্পর্কে ।



মুক্তিযুদ্ধে যাওয়াঃ ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরই আর্ক নিয়ে আসে তাদের প্রথম অ্যালবাম "মুক্তিযুদ্ধ"(তখনও আমাদের প্রিয় রকস্টার হাসান ভাই ও পঞ্চম ভাই আর্কের সদস্য নন) , এই অ্যালবামে আশিকুজ্জামান টুলু ভাই তার মেধার সাক্ষর রেখেছিলেন ভাল ভাবেই । আজও আর্কের মুক্তিযুদ্ধ অ্যালবামের "সেদিনও আকাশে ছিল চাঁদ" গানটি সকলের মুখে মুখে ! মুক্তিযুদ্ধ অ্যালবাম প্রকাশের পর পরই আর্কের সেই সময়ের সদস্যদের অনেকেই ব্যান্ড ছেড়ে যায়, টুলু ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামের প্রজেক্ট নিয়ে । ঐসব মিক্সড অ্যালবাম করতে গিয়েই আর্কে যোগ হয় নতুন দুই মাঝি, একজন সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদী কণ্ঠের অধিকারী পরবর্তীতে সারা বাংলা তোলপাড় করা রকস্টার হাসান ভাই, আরেক জন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় মাহমুদ উন নবী সাহেবের সুযোগ্য সন্তান, অত্যন্ত মেধাবী মিউজিশিয়ান পঞ্চম ভাই ।



তাজমহল দর্শনঃ ১৯৯৩/৯৪ সালের দিকে টুলু ভাইয়ের সঙে হাসান ভাই, পঞ্চম ভাই, শামিম ভাই, রেজওয়ান ভাই যুক্ত হয়ে পথ চলা শুরু করে আর্কের নতুন ও শ্রেষ্ঠ লাইনআপ । তারা টানা দুই বছরের বেশি সময় নিয়ে তৈরি করে আর্কের দ্বিতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম "তাজমহল", অ্যালবামটি সম্ভবত ১৯৯৬ সালের দিকে প্রকাশ পায় । এই অ্যালবামে থাকা ওরে আমার পাগল মন, একাকী, সুইটি, গুরু সহ প্রতিটা গান সারা বাংলা কাপিয়ে দেয় । সেই সময় পাড়ায় মহল্লায় আর্কের তাজমহল অ্যালবাম বাজেনি, এমন এলাকা বাংলাদেশে খুব কম ছিল । এই অ্যালবামের প্রতিটা গানই ছিল অত্যন্ত উচু মানের কথা, সুর ও সংগীতের । অ্যালবামের জন্য গান লিখেছিলেন হাসান ভাই সহ আরও কয়েকজন, সুর টুলু ভাই, হাসান ভাই ও পঞ্চম ভাইয়ের করা ছিল । শামিম ভাইয়ের গান দুইটার সুর কে করেছিল, এই মুহূর্তে মন করতে পারছি না । আর্ক ব্যান্ডের তাজমহল আজও আমাদের প্রায় প্রতিদিনের প্লে-লিস্টে থাকে ।



জন্মভুমির টানেঃ তাজমহল অ্যালবামের মহা সাফল্যের পরে আর আর্ক ব্যান্ডকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, যদিও এরই মাঝে আবার ভেঙেছে ব্যান্ড- ছেড়ে গেছেন শামিম ভাই ও রেজওয়ান ভাই । নতুন যোগ হয়েছেন বেজ গীটারে বুলবুল ভাই, আর ড্রামসে তৎকালীন ফিলিংস(বর্তমান নগরবাউল) ব্যান্ডের বিখ্যাত ড্রামার ফানটি ভাইয়ের অনুজ টনটি ভাই । ব্যান্ড ভাঙলেও আর্কের মূল তিন মাঝি টুলু ভাই, হাসান ভাই ও পঞ্চম ভাই কিন্তু ঠিকই সক্রিয় ছিলেন, তাই আর্ক তাদের তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম প্রকাশ করতে খুব বেশি সময় নেয়নি । ১৯৯৮ সালেই আসে আর্কের তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম "জন্মভূমি", এই অ্যালবামের কোন একটি গান আলাদা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না, প্রতিটা গান আজও আমাদের অন্তরে গেথে আছে । টুলু ভাই ও হাসান ভাইয়ের কথা, এবং টুলু ভাই, হাসান ভাই ও পঞ্চম ভাইয়ের সুরে সারা বাংলাদেশের রক মিউজিকতো বটেই, যারা ব্যান্ডের গানের প্রতি ভিন্ন ধারনা ছিল তাদের অন্তরেও ঠাই করে নেয় আর্ক । তবে এই অ্যালবামের দুইটি গানের কথা বিশেষ ভাবে বলতেই হবে, ধারনা করি এই গান দুইটি আগামী ৫০ বছর পরেও মানুষের ভাল লাগবে । একটি হচ্ছে আসিফ ইকবালের কথা ও টুলু ভাইয়ের সুর ও সংগীতে "এই দূর পরবাসে তারা গুনি আকাশে আকাশে/ কাটে নিঃসঙ্গ রাত্রিগুলো" আরেকটি হচ্ছে হাসান ভাইয়ের "চাঁদের আলোয় সূর্যের তেজ যেমনি যায়না পাওয়া, সূর্য কিরণে তপ্ত বিরহে চাঁদের সুরভী হয়না" মানে যারে যা গানটির কথা বলছি । জন্মভূমি অ্যালবাম রিলিজের পর আর্ক বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যান্ড হিসেবেই আবির্ভূত হয় তখন ।





স্বাধীনতার সংগ্রামঃ জন্মভূমি অ্যালবামের পরে বা আগেই আশিকুজ্জামান টুলু ভাই কানাডায় চলে যান, আর্কের দায়িত্ব তখন পঞ্চম ভাই ও হাসান ভাইয়ের কাধে । টুলু ভাই দেশে না থাকলেও আর্কের চতুর্থ অ্যালবামে ঠিকই টুলু ভাই কাজ করেছিলেন , ২০০০ সালের শুরুতেই আসে আর্ক ব্যান্ডের চতুর্থ ধামাকা "স্বাধীনতা" অ্যালবামটি । এর আগে ১৯৯৭ সালে ধুন নামে একটি মিক্সড অ্যালবাম, ও ১৯৯৯ সালে '6 Band 99" নামে আরেকটি মিক্সড অ্যালবামে ব্যান্ড হিসেবেই কাজ করেছিল আর্ক, আর আর্কের প্রধান ভোকাল হাসান ভাইতো ততদিনে রকস্টার হিসেবে বাচ্চু ভাই, জেমস ভাই, শাফিন ভাইদের সঙে সমান তালে অনেক অনেক মিক্সড অ্যালবামে কাজ করেছেন । বলছিলাম স্বাধীনতা অ্যালবামটির কথা, আর্কের আগের অ্যালবামগুলোর মতই এই অ্যালবামের গানও অনেক অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল । বিশেষ করে প্রেমা, বন্ধু গান দুইটি আজও প্রায় মাঝে মাঝেই শুনতে হয় । এই অ্যালবামে দেশ নিয়ে সুন্দর একটি টাইটেল গানের পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি জানানো একটি বিষয়ভিত্তিক গানও ছিল । আসলে তাজমহল, জন্মভূমি, স্বাধীনতা- এই তিনটি অ্যালবামে হাসান ভাইয়ের লেখা গানগুলো আজও আমাদের অন্তরে বিশেষ দাগ কেটে আছে, এর পরে তো আবার ভাঙাগড়ার ইতিহাস- পরবর্তীতে হাসান ভাইকে গীতিকার হিসেবে আর দুই একটি গানে পেয়েছিলাম, তাও অন্য ব্যান্ডের অ্যালবামে । সে গল্প আরেকদিন হবে ।



বৃহস্পতির পরেঃ আর্ক ব্যান্ডের বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই টুলু ভাই বিদেশে চলে যান, ব্যান্ডের সকল দায়িত্ব দুই তরুন হাসান ভাই ও পঞ্চম ভাইয়ের হাতে- তারা তখন দেশসেরা রকস্টার/ মিউজিশিয়ান দের কাতারে চলে গেছেন । সেই সময়ে আর্কে বাজাতেন আজকের জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান হাবিব ভাইও, টুলু ভাইয়ের জায়গায় তিনিই কিবোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন । ঐ সময়ে করা আর্কের গানের কিছু মিউজিক ভিডিও আজও আমাদের মুগ্ধ করে । যা হোক, ২০০১ সালের শুরুতে নগরবাউল জেমসের সঙে "বৃহস্পতি" নামে একটি ডুয়েট অ্যালবাম কাজ করে আর্ক, শিরোনামটা এমন ছিল "বৃহস্পতিঃ জেমস ও আর্ক" । এই অ্যালবামে প্রকাশ হওয়া আর্কের পাঁচটি গানও বেশ জনপ্রিয় হয় । কিন্তু ব্যান্ডের বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা অবস্থায়ই হাসান ভাই ও পঞ্চম ভাইয়ের মাঝে সৃষ্টি হয় দেয়াল(সম্ভবত), দুজন দু দিকে চলে যান । ২০০২সালের শুরুতে দুজনই ঘোষণা দেন নতুন ব্যান্ডের । হাসান ভাই গঠন করেন স্বাধীনতা নামে একটি ব্যান্ড, পঞ্চম ভাই এইজেস নামে একটি ব্যান্ড । এর মাঝে অনেক জল গড়িয়ে ২০১০ সালে হাসান ভাই আবার আর্কে ফিরে এসে আর্কের হাল ধরলেও, পঞ্চম ভাই ২০১৬ সাল পর্যন্ত আর আর্কে ফেরেননি ।



হারান মাঝি দিয়ে হারিয়ে যাওয়াঃ এইভাবে মাঝিশুন্য আর্ক ব্যান্ড প্রবাসী আশিকুজ্জামান টুলু ভাইকে খুব ব্যথিত করে, ২০০২/০৩ এর দিকে তিনি মুন নামে একজন মেধাবী মিউজিশিয়ান নিয়ে তৈরি করেন আর্ক ব্যান্ডের ব্যানারে সর্বশেষ অ্যালবাম "হারান মাঝী", আগের তিনটি অ্যালবামের মত না হলেও- হারান মাঝী অ্যালবামে কয়েকটি গান মুগ্ধ করেছিল আর্ক ভক্তদের । এরপর আর আর্ক ব্যান্ডের কোন কার্যক্রম ছিল না ।



আবার আর্কের সংগীত সমুদ্রে যাত্রাঃ ২০১০ সালে টুলু ভাই দেশে আসলে হাসান ভাইকে নিয়ে আবার আর্কের কার্যক্রম শুরু করেন , যদিও টুলু ভাই আবার বিদেশ চলে যান- কিন্তু হাসান ভাই ২০০৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত করা ভুল বুঝতে পেরে আর্ক ব্যান্ডকেই আঁকড়ে ধরেন । সঙে যুক্ত হন আরেক মেধাবী মিউজিশিয়ান আজিজুর রহমান টিংকু ভাই । বর্তমানে এই দুজনের নেতৃত্বেই আর্ক ব্যান্ড তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছেন । ইতিমধ্যে হাসান ভাইয়ের লেখা ও সুরের কয়েকটি গান শুনেছি, বোঝাই যাচ্ছে সেই ৯০ দশকের আর্কের মতই হতে যাচ্ছে নতুন অ্যালবাম । খুব তারাতারিই প্রকাশ পাবে এই অ্যালবামটি, অধীর অপেক্ষায় রইলাম আমরা আর্ক ভক্তরা । অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো শুরু থেকে এই পর্যন্ত আর্ক ব্যান্ডের সাথে জড়িত সকলের প্রতি ।

বন্ধুরা, সকলে অনুসরন করুন আর্ক ব্যান্ড নিয়ে আমাদের ফেসবুকে পেইজঃ https://www.facebook.com/ARKHassanFanClub/ , নগরবাউল জেমসকে নিয়ে আমাদের ফেসবুক পেইজঃ Click This Link এবং আমার ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/Walid42

আর্ক ব্যান্ডের বিভিন্ন সময়ের কিছু ছবিঃ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.