নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
ভারত এ মুহুর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিজ স্বার্থের বিশ্বস্থ পাহারাদার চায়। সে কাজে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ যে ভারতের আপনজন সে সাক্ষ্যটি এসেছে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম এক নীতিনির্ধারকের মুখ থেকে।তিনি হলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী সুশীলকুমার শিন্দে। শেখ হাসিনার ভারতপ্রেমে তিনি এতটাই মোহিত যে,সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে “ভারতের আপনজন’ এবং “যেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে” রূপে আখ্যায়ীত করেছেন।সে খবরটি ছেপেছে কোলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা তার ৭ই নভেম্বর সংখ্যায়। সুশীলকুমার শিন্দে এ কথাটি বলেছেন পাঞ্জাবের আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তের ধাঁচে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনির সূচনা পর্বের এক সমাবেশে।প্রতিটি বিনিয়োগের পিছনেই থাকে মুনাফা লাভের আশা। মুনাফা লাভের সম্ভাবনা না থাকলে একটি টাকা ও একটি মুহুর্তও কেউ বিনিয়োগ করে না। আর বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগটি কোনকালেই খয়রাত ছিল না। খয়রাত ছিল না একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয়দের বিপুল অর্থ ও রক্তের বিসর্জনও। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুনাফা তোলার মাত্রাটি অত্যাধিক বেড়ে যায় যখন শাসনক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে যায়। ২০০৮ সালে হাসিনার ক্ষমতায় আসাতে ভারত যে প্রচুর মুনাফা তুলেছে সে সাক্ষ্যটি এসেছে খোদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী শিন্দের মুখ থেকে। বাংলাদেশ থেকে তারা এতই নিয়েছে যে এখন সাধ জেগেছে কিছু প্রতিদান দেয়ার। তবে সেটি বাংলাদেশের জনগণকে নয়,সেটি খোদ হাসিনাকে। সে প্রতিদানটি তারা দিতে চায় তাকে পুণরায় ক্ষমতায় বসানোর মধ্যদিয়ে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে ভারতের বিনিয়োগ এক হাজার কোটি রুপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দের ভাষায়ঃ “পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যে ভাবে সহযোগিতা করেছে,তার প্রতিদান দিতে নয়াদিল্লিও বদ্ধপরিকর”। তাছাড়া আগামী নির্বাচন শুধু বাংলাদেশীদের জন্যই নয়, ভারতীয়দের কাছেও অতি গুরুত্বপূর্ণ। সে অভিমতটি এসেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা RAW য়ের বাংলাদেশ ইনচার্জ ও সিনিয়ার অফিসার শ্রী বিবেকানন্দ থেকে। তিনিও সম্প্রতি জানিয়েছেন,বাংলাদেশের ২০১৪ সালের নির্বাচন ভারতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আর নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়লে তাতে ভারতীয়দের বিনিয়োগও যে বাড়বে সেটিই তো স্বাভাবিক।বাংলাদেশ আজ চরম রাজনৈতীক সংকটে।দেশ আজ রক্তাত্ব গৃহযুদ্ধের মুখে। সংকটের মূল কারণ,গদি ছাড়তে রাজী নন হাসিনা। মেয়াদ শেষ হলেও প্রধানমন্ত্রীর গদিটি তার চাই। হাসিনা চায় না,একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক এবং সবাই একই সমতলে দাঁড়িযে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাক। হাসিনার এ কৌশলটি গোপন নয়,দুর্বোধ্যও নয়। তিনি চান,নিজ তদারকিতে নির্বাচন দিয়ে নিজের স্বৈরশাসনের মেয়াদকে আরো ৫ বছরের জন্য বাড়িয়ে নিতে। সেটি যেমন বিরোধী দল বুঝে। তেমনি সাধারণ জনগণও বুঝে। স্বৈরাচারি সরকারকে যে নির্বাচনে পরাজয় করা যায় না সেটিও জনগণ বুঝে। জনগণ সেটি বুঝেছে স্বৈরাচারি এরশাদের ১১ বছরের শাসন থেকে।এরশাদ নির্বাচন দিলেও সেটি ছিল তার স্বৈরশাসনের মেয়াদ বাড়নোর কৌশল। সমগ্র প্রশাসন ময়দানে নামতো তাকে বিজয়ী করার কাজে। ভোট জালিয়াতি তখন একটি প্রশাসনিক শিল্পে পরিণত হয়েছিল। তার মত ধিকৃত দুর্বৃত্তকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র রাজপথেই। হাসিনার বিরুদ্ধেও বিকল্প পথ নাই। তাকেও পরাজিত করতে হবে রাজপথেই। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তারা নিজেরা যে শুধু বিপুল আনন্দ পেয়েছে তা নয় গভীর আনন্দ দিয়েছে বিশ্বের তাবত ইসলামের দুশমন কাফেরদের। ভারত তার প্রধানতম প্রতিদ্বন্দীকে দ্বিখণ্ডিত করে নিজে দক্ষিণ এশিয়ায় অপ্রতিদ্বন্দি হয়েছে সেটি সত্য। কিন্তু সবচেয়ে বড় লাভটি হয়েছিল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের বাজার লাভটি ছিল তার সবচেয়ে বড় বিজয়। এটি ছিল ভারতের পশ্চিম বাংলা,বিহার ও আসামের সম্মিলিত আভ্যন্তরীন বাজারের চেয়েও বিশাল। এক কালে এ বাজার দখলের জন্যই ইংরেজেরা হাজার হাজার মাইল দূর থেকে এ দেশটিতে ছুটে এসেছিল।ভারতের বিনিয়োগ:হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন যতই তীব্রতর হচ্ছে ভারতের শাসক মহলে ততই বাড়ছে বাংলাদেশভীতি।শেখ হাসিনার উপর ভারতীয় নেতাদের প্রগাড় আস্থা। কারণ শেখ হাসিনা ভারতকে যতটা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে তা অন্য কোন দেশ থেকে পেতে হলে ভারতকে যুদ্ধ করতে হতো বা সেদেশের অর্থনীতিতে বিশাল বিনিয়োগ করতে হতো। যেরূপ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশসমুহ ও জাপানকে বন্ধু রূপে পেতে মার্কিনীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেসব দেশের পুননির্মাণে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ ভারত বাংলাদেশ থেকে সেটি পেয়েছে কোনরূপ অর্থব্যয় না করেই। কারণ চাকর বাকর পেতে বড় কিছুই বিনিয়োগ করতে হয় না। তারা ভাবে, এজন্য কিছু উচ্ছিষ্ট ব্যয়ই যথেষ্ঠ। ভারতীয় বর্ণহিন্দুরা শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা কোন বাঙালী মুসলমানকে কোনকালেই কি চাকর বাকরের চেয়ে বেশী কিছু ভেবেছে? ভারতের মুসলমানদেরও কি তারা তেমন কিছু ভাবে? সংখ্যায় তারা জনসংখ্যার শতকরা ১৬ ভাগ হলে কি হবে,সরকারি চাকুরিতে মুসলমানদের হিস্যা শতকরা ৪ ভাগেরও কম। পাশের পশ্চিম বাংলার মুসলমানদের বঞ্চনা তো আরো করুণ।তারা সেখানে শতকরা ২৮ভাগ, অথচ সরকারি চাকুরিতে তাদেরকে শতকরা ৫ ভাগও দেয়া হয়নি।ভারতের একমাত্র বিনিয়োগ বাংলাদেশের রাজনীতি ও মিডিয়াতে। সেটি দেশের রাজনীতি,সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি,মিডিয়া, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে ভারতসেবী বিশাল দাসবাহিনী প্রতিপালনে। এরূপ বিনিয়োগের ফলেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলমানদের পিটাতে একাত্তরের ন্যায় নিজ দেশের সেনাবাহিনী নামাতে হচ্ছে না।প্রতিপালিত দাসরাই সেটি করছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ভারতের মূল স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় দাসদের শাসন প্রতিষ্ঠা। সেরূপ এক দাসশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ভারত একাত্তরে প্রকান্ড একটি যুদ্ধ লড়েছিল।তাদের সে যুদ্ধটির লক্ষ্য ভারতের পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা ছিল না। এ বিষয়ে ভারতীয় নেতাদের বক্তব্য আজও সুস্পষ্ট।২০০৮ সালে হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ভারতের ষড়যন্ত্র ও বিনিয়োগটিও ছিল বিশাল। তাকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারত অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে প্রকান্ড এক প্রচারযুদ্ধ। আসামের দৈনিক নববার্তা পত্রিকাটি গত ২১/১০/২০১৩ তারিখে প্রথম পৃষ্ঠায় লিড খবর ছাপে যে,হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। উক্ত পত্রিকায় ভাস্কর দেব আরো রিপোর্ট করে,ভারত গত ২০০৮ সনের নির্বাচনে ৮ শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি নির্বাচনেই ভারত বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে।ভারতের বাংলাদেশ ভীতি: প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের পিছনে ভারতের এরূপ বিনিয়োগের হেতু কি? হেতু,স্বাধীন বাংলাদেশ-ভীতি। ভারত ভয় পায় বাংলাদেশের ১৫ কোটি মুসলমানের ইসলামের মৌল বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠা নিয়ে। ইতিহাসের ছাত্র মাত্রই জানে,১৯৪৭য়ে হিন্দুদের অখন্ড ভারত নির্মাণের স্বপ্নকে যারা ধুলিতে মিশিয়ে দিয়েছিল তারা পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ,উত্তরপ্রদেশ,বিহার বা অন্যকোন স্থানের মুসলমান নয়,তারা ছিল বাংলার মুসলমান। ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা থেকে ১৯৪০ সালে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাব-পাশ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি পর্বে যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তারা ছিল এই বাংলার মুসলমানই। সে সময় মুসিলীম লীগের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়। আজও সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যে ভূখন্ডটিতে সবচেয়ে বেশী মুসলমানের বাস সেটিও পাঞ্জাব, সিন্ধু, আফগানিস্তান নয়, বরং সেটি বাংলাদেশ। আর যেখানে এত মুসলমানের বাস সেখানে ইসলামের জাগরণের ভয় থেকেই যায়। কারণ সিংহের ঘুম যত দীর্ঘই হোক,সেটি মৃত্যু নয়। একসময় সে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাংলার মুসলমান সাতচল্লিশে জেগে উঠেছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আবার ঘুমিয়ে পড়িছিল। আর সে ঘুমের ঘোরেই ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে তার দাসদের সহায়তায় বিরাট সর্বনাশটি করেছিল। কিন্তু বাংলার মুসলমানগণ যে আবার জেগে উঠেছে সে আলামত তো প্রচুর। আর তাতেই ভয় ধরেছে ভারতের।
©somewhere in net ltd.