নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সদা সুন্দর চিরন্তন

অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর। -নজরুল

ওয়েলকামজুয়েল

লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।

ওয়েলকামজুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামী খিলাফতর অগ্রযাত্রা

০২ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:১০



করিত থেকে ইসলামী রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের হটানোর অভিযানে হোঁচট খেয়ে ইরাকি সরকারি সৈন্যরা পিছু হটেছে। জিহাদিরা একটি হেলিকপ্টার গানশিপ ভূপাতিত করেছে। রয়টার্স জানায়, শনিবার  ইরাকি সেনাবাহিনী ও মিলিশিয়া ট্যাংক ও হেলিকপ্টার গানশিপের সমর্থনে তিকরিতে ইসলামী রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের হঠিয়ে শহর পুনর্দখলের জন্য প্রচ- হামলা চালায়। কিন্তু দুদিনের লড়াইয়ের পরও তারা সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। রোববার তিকরিত শহর জিহাদিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দেখা যায়। বিবিসি জানায়, সরকারি বাহিনী দক্ষিণে পশ্চাৎপসারণ করেছে। তবে লড়াই চলছে।  এদিকে রোববার জিহাদিরা একটি ইরাকি হেলিকপ্টার গানশিপ ভূপাতিত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা একটি গানশিপকে ভূপাতিত হতে দেখেন। সেটি একটি বাজারের কাছে বিধ্বস্ত হয়। ইরাকি  হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষিপ্ত রকেটের আঘাতে শনিবার সন্ধ্যায় তিকরিতের বাইরে আল বু হায়াজি নামক একটি গ্রামে বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়। তাদের মধ্যে দুজন মহিলা। রোববার সকালে বাগদাদ থেকে ৫৩ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত জুরফ আল সাখার শহরের উপকণ্ঠে ইসলামী রাষ্ট্রের যোদ্ধাদের সাথে সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরু হয়। পুলিশ ও প্রাদেশিক গভর্নর সূত্রে বলা হয়, তাদের সংখ্যা কয়েকশ’ বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডাররা তাদের মোকাবিলার জন্য বাগদাদের কাছে আরো সৈন্য চেয়েছেন। এদিকে ইরাকি রাজনীতিকরা দেশের সংকটের মুখে নতুন সরকার গঠন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছেন। রোববার এক বিবৃতিতে ইরাকে জাতিসংঘ মিশন মঙ্গলবার আহূত পার্লামেন্ট অধিবেশনে সকল প্রতিনিধিকে যোগদান করার আবেদন জানিয়েছে।ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণাকে অভিনন্দন জানিয়ে রোববার সিরিয়ার রাক্কা শহরে জিহাদি যোদ্ধারা মিছিল করেছে। সাইট মনিটরিং সার্ভিস জানায়, অনলাইনে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায় তারা গাড়ি থেকে পতাকা ধরা হাত নেড়ে ও অস্ত্র উঁচিয়ে এ ঘোষণাকে অভিনন্দিত করছে।অন্য একটি ভিডিওতে সীমান্ত বিলোপের আহ্বান জানিয়ে সিরিয়ার উত্তরাংশে আল হাকসাহ প্রদেশ ও ইরাকের নিনেভেহ প্রদেশের মধ্যকার সীমান্ত চৌকি বিলুপ্ত করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, আমরা ইসলামী উম্মাহকে জানাতে চাই যে, আমরা এখন ইরাকে রয়েছি। সাইকস-পিকোট চুক্তির অধীনে যে সীমান্ত তৈরি করা হয়েছিল আমরা তা ভেঙে দিয়েছি। এখন কোনো মুসলমান পাসপোর্ট ছাড়াই ইরাকে প্রবেশ করতে পারবে। উল্লেখ্য, ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইকস ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিকোটের মধ্যকার গোপন চুক্তিতে অটোম্যান সাম্রাজ্য ভেঙে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সীমান্ত রেখা আঁকা হয়।ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া  (আইসিস) রোববার ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। ওয়েবসাইট ও টুইটারে পোস্ট করা বিবৃতিতে মুখপাত্র আবু মুহাম্মদ আল আদনানি বলেন, সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশ থেকে ইরাকের দিয়ালা প্রদেশ পর্যন্ত এ রাষ্ট্র বিস্তৃত। এখন থেকে আর ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া নয়, এর সরকারি নাম দ্য ইসলামিক স্টেট বা ইসলামী রাষ্ট্র।  আইসিসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদী এর রাষ্ট্রপ্রধান বা খলিফা। সকল মুসলিমের তিনি খলিফা। তার প্রতি আনুগত্য ঘোষণার জন্য সকল শাখা সংগঠনের প্রতি বিবৃতিতে আহ্বান জানানো হয়।আরবি, ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি ও রুশ ভাষায় প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়, আইসিস খিলাফত বা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আইনি চাহিদা পূরণ করেছে এবং বর্তমান সকল জিহাদি সংগঠন ও বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা নয়া খলিফা ইব্রাহিমের (আল বাগদাদীকে আইসিসের দেয়া নাম) প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে ধর্মীয়ভাবে দায়বদ্ধ।ব্রুকিংস দোহা সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, আইসিসের এ ঘোষণা উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য বহন করে। এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু এটা ঠিক যে ইসলামী  খিলাফত বা ইসলামী রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি ৯/১১-এর পর  আন্তর্জাতিক জিহাদবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি বলেন, এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়া হবে বিশ্বব্যাপী যেহেতু আল কায়দা ও তার সহযোগীদের এবং অন্যান্য সংগঠনকে ইসলামী রাষ্ট্রকে সমর্থন ও যোগদান অথবা তার বিরোধিতার পথ গ্রহণ করতে হবে। উপসাগরীয় আরব দেশগুলো যেমন সউদী আরব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য ঘোষণাকে বিপজ্জনক বলে মনে করতে পারে। এটাকে তাদের ক্ষমতা ও রাজতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে গণ্য করা হতে পারে। নিউইয়র্কের কনসালটেন্সি সুফান গ্রুপের মতে ১২ হাজার যোদ্ধা সিরিয়ায় গমন করে। এর মধ্যে ৩ হাজার ছিল বিদেশি  যারা ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ, আমেরিকা, অন্যান্য আরব দেশ ও ককেশিয়ার অধিবাসী। পশ্চিমা যোদ্ধাদের শতকরা ৮০ ভাগই আইসিসের সাথে যোগ দিয়েছে। ব্রিটেনের বিদেশি গোয়েন্দা বিভাগ এমআই৬-এর সন্ত্রাস দমন প্রধান রিচার্ড ব্যারেট বলেন, আল বাগদাদী বিস্ময়কর সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন- তিনি একের পর এক শহর ও স্থান দখল করেছেন, বিপুলসংখ্যক যোদ্ধাকে সমবেত করেছেন।

এপিপি

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:২৪

কলাবাগান১ বলেছেন: স্বপ্ন দেখতে থাকেন.......

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩৭

সৌভিক ঘোষাল বলেছেন: শিয়া সুন্নি মারামারি আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে মনে হয়। দেখা যাক শেষমেষ নিজেদের মধ্যে ইসলামি রাষ্ট্র ও অন্যান্য স্বপ্ন নিয়ে কতটা হত্যালীলা চলে।

৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৪

দাম বলেছেন: ভাই খিলাফত মুসলিম উম্মার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয়, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু খিলাফত হওয়ার জন্য শর্ত গুলো কি কি?

আমি আমার বাসা কে খিলাফত হিসেবে কেন ঘোষনা দিতে পারব না।
অথবা আমি দাম যদি এখন নিজেকে খলিফা হিসেবে দাবি করি তাহলে সমস্যা কি?

৪| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১০

সৌভিক ঘোষাল বলেছেন: মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। সিরিয়ায় অনেকদিন ধরেই গৃহযুদ্ধ চলছিল। সম্প্রতি তা ছড়িয়ে পড়েছে ইরাকে। এই যুদ্ধকে শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্ব হিসেবেই মূলত দেখা হচ্ছে। যে সংগঠনটি এই গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এবং ইরাকে অধিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোভাগে রয়েছে তার সংক্ষিপ্ত নাম ‘আই এস আই এস’। পুরো কথাটি হল ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া/আল সাম। এরা মূলত সুন্নি মুসলিম মতবাদে বিশ্বাসী এক জঙ্গী গোষ্ঠী। সিরিয়া ও ইরাক - দু দেশেই এরা যে শাসকদের বিরুদ্ধে লড়ছে তারা শিয়া গোষ্ঠীর। প্রসঙ্গত মনে রাখার ইরাকে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সিরিয়াতে সুন্নিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
শিয়া সুন্নি বিরোধের বহু শতাব্দী ব্যাপী ইতিহাস আছে এবং বিভিন্ন সময়ে তা নতুন নতুন প্রেক্ষাপটে আত্মপ্রকাশ করে। সাম্প্রতিক সময়ের গৃহযুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন, সুন্নি শাসক সাদ্দামের পতন, অতঃপর আমেরিকাপন্থী নয়া শিয়া শাসকের জমানার সূত্রপাত যেমন প্রভাব ফেলেছে, তেমনি আরব বসন্ত, বিশেষত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষভাবে ইরাকের ঘটনাবলীকে প্রভাবিত করেছে।
২০০১ এ মার্কিন মুলুকে বিমান হানার পর তার একদা সোভিয়েত বিরোধী লড়াই এর সঙ্গী আল কায়দা ও তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। প্রথম আক্রমণ হয় আফগানিস্থানে তালিবান শাসকদের ওপর। দু বছর পরেই রাসায়নিক অস্ত্র রাখার মিথ্যা অভিযোগে সে হামলা চালায় সাদ্দাম হোসেন এর শাসনাধীন ইরাকে। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ বশংবদ শাসকদের মত সাদ্দাম আমেরিকার হুকুম তামিল করতে রাজি হচ্ছিলেন না। বিশেষত কেবলমাত্র ডলারেই তেলের বাণিজ্য করতে হবে এ ফতোয়ার বিরুদ্ধে যাওয়াই একদা মিত্র সাদ্দামের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করে। আফগানিস্থান বা ইরাক কোনও যুদ্ধই আমেরিকা সহজে জিততে পারে নি, বরং কোটি কোটি ডলার অর্থব্যয় করে শেষমেষ সে সেখান থেকে তার সেনা নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়। তার বসানো এবং অনুগত পুতুল সরকারেরা দেশের বৃহৎ সংখ্যক মানুষের আস্থাশীল হয় নি এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পরও সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এখন পুরো মাত্রায় বিদ্যমান। দেশ দুটি আক্ষরিক অর্থেই বারুদের স্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
মার্কিন আগ্রাসন ছাড়া সাম্প্রতিক ইরাক পরিঘটনার পেছনে সুগভীর প্রভাব ফেলেছে আরব বসন্ত। ২০১১র শুরু থেকে ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে বহু বছরের একনায়ক স্বৈরতন্ত্রী শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের সোচ্চার সক্রিয় প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। তিউনিশিয়া, মিশর, ইয়েমেন, জর্ডন, আলজেরিয়া ইত্যাদির মতো এর শরিক হয় সিরিয়াও।
এখানেই পরিস্থিতি সবচেয়ে অস্থির, সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী, সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সংকটের জন্ম দেয়। দীর্ঘদিন ধরেই সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধ চলছে, যাতে কম করে তিরিশ হাজার মানুষ নিহত এবং দশ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের আঁচই ক্রমশ ছড়িয়েছে ইরাকে।
ইরাকে গৃহযুদ্ধের প্রধান শক্তি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আই এস আই এস) তার শক্তি সংহত করে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। তাদের প্রধান নেতা আবু বকর আল বাগদাদি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়েই সংগঠনের নেতার আসনে চলে আসেন। অনেকগুলো শক্তি মিলিত হয়ে আই এস আই এস এর জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুজাহিদিন সুরা কাউন্সিল, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক, আল কায়দা ইন ইরাক, জেইস আল তাইফা আল মানসুরা এবং বিভিন্ন সুন্নি মতাবলম্বী উপজাতি। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর থেকে সে দেশে সুন্নি মতাবলম্বীদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েছে। শিয়া শাসক বিরোধী লড়াইয়ে সুন্নি মতাবলম্বীদের মধ্যকার এই ক্ষোভকে আই এস আই এস ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে।
ইরাকে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ২০১৩ র ডিসেম্বর মাস থেকে। ২০১৪ র জানুয়ারী মাসে আই এস আই এস মিলিশিয়া ফাল্লুজা আর রামাদি দখল করে নেয়। এর ফলে আনবার প্রদেশটির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে আসে। ইরাকি সেনাবাহিনীও আনবারে তাদের হামলা বাড়াতে শুরু করে। এই সময় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নৌরি আল মালিকি এক বিতর্কিত বক্তৃতায় পরিস্থিতিকে আরো জ্বলন্ত করে তোলেন। ৭ম শতকে সংঘটিত হুসেন এবং ওয়াজিদ এর মধ্যে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতাতেই এই লড়াই হচ্ছে, একথা বলে তিনি দীর্ঘ লালিত শিয়া সুন্নি বিতর্ককে আরো উসকে দেন। এই বক্তৃতার আগে সুন্নিদের একাংশ আনবারের লড়াই এ ইরাকি সেনাকেই সমর্থন করছিল। কিন্তু এরপর তারা পুরোপুরি আই এস আই এস এর পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। প্রথমদিকে পশ্চিমদিকে আবদ্ধ থাকলেও ক্রমশ আই এস আই এস ইরাকের মধ্য ও উত্তর অংশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। জুনের প্রথম থেকেই আই এস আই এস তাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটাতে থাকে। ৫ জুন তারা সামাররা শহর দখল করে নেয়। ৬ জুন তারা মুসৌল আক্রমণ করে। ইতোমধ্যেই আই এস আই এস এর সাথে কুর্দ স্বায়ত্ত শাসনাধীন অঞ্চল ও তার সেনাবাহিনীর লড়াই শুরু হয়ে যায়। ১১ জুন আই এস আই এস তেল সংশোধনাগারের শহর বাইজি আক্রমণ করে। সেদিনই তারা তিরকিত দখল করে নেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য তিরকিত ছিল সাদ্দাম হুসেনের জন্মস্থান ও বিকাশের এলাকা। ১২ জুন তারা উধাইম নামক একটি ছোট শহরের দখল নিয়ে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ৯০ কিমির মধ্যে চলে আসে।
১৩ জুন থেকে ইরাকি সেনাবাহিনী, কুর্দদের বাহিনী এবং ইরানের ‘রিভোলিউশনারি গার্ড’ রা মিলিতভাবে আই এস আই এস বিরুদ্ধে অস্ত্র শানাতে থাকে। বাগদাদ থেকে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী এসে সামাররা পুনরুদ্ধার করে। সালাউদ্দিন প্রদেশ পুনরুদ্ধারের দাবিও তারা করেছে। ওইদিনই ইরাকের সর্বোচ্চ শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলি সিসতানি যুদ্ধের ডাক দিলে একদিনের মধ্যেই তৈরি হয় বিরাট মিলিশিয়া। ইরাকের সেনার পাশাপাশি তারাও আই এস আই এস এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
আই এস আই এস এই সময় থেকে চোরাগোপ্তা অসংখ্য ছোটখাট হামলা ও অপহরণের রাস্তা গ্রহণ করে। মুসৌলের এক তুর্কি কোম্পানীতে কর্মরত চল্লিশজন ভারতীয় নাগরিককে তারা অপহরণ করে। অনেক ভারতীয় নার্সকেও অপহরণ করা হয়। ২৩ জুন আই এস আই এস বড় ধরণের সাফল্য পায়। ওইদিন তারা তাল আফার বিমানবন্দরের দখল নিয়ে নেয়। ২৯ জুন আই এস আই এস এর নাম পরিবর্তন করে শুধু ইসলামিক স্টেট বা আই এস করে নেয়। ঘোষনা করে নয়া খিলাফৎ এর। আবু বকর আল বাগদাদিকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করে তারা বিশ্বের সমস্ত মুসলিমের কাছে এর স্বীকৃতির জন্য বার্তা পাঠায়। তারা শুধু সিরিয়া বা ইরাকেই নয়, এক বিস্তৃত ভূখণ্ড জুড়ে তাদের শাসন কায়েম করতে চায়। সমগ্র মুসলিম সমাজ তাদের খিলাফৎ এর ঘোষিত লক্ষ্য হলেও আপাতত ইরাক, সিরিয়া ও তার সংলগ্ন অঞ্চলই তাদের নিশানার মধ্যে আছে, যার মধ্যে পড়ে সমগ্র লেভান্ট অঞ্চল অর্থাৎ জর্ডন, ইসরায়েল, প্যালেস্টাইন, লেবানন, দক্ষিণ তুর্কি এবং সাইপ্রাস।
ইরাকের গৃহযুদ্ধ কোনদিকে গড়াবে তা বলা শক্ত। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা এবং ইরাকের ঘটনার গতিপ্রকৃতি থেকে আশঙ্কা হয় এই রক্তক্ষয়ও দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। বিশেষত আন্তর্জাতিক মহলও যখন ইরাক ও সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে কোনও ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারে নি। মুসলিম বিশ্ব গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। সুন্নিপ্রধান সৌদি আরব, তুর্কি এবং কাতার বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে। অন্যদিকে ইরাণ এবং লেবাননের হিজবুল্লা গোষ্ঠী সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সিরিয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি আরব লিগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাষ্ট্রসংঘ সিরিয়ার শাসকদের আক্রমণ করলেও চীন এবং রাশিয়া সিরিয়া সরকারের পক্ষেই দাঁড়িয়েছে। ইরাকের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহল ইপ্সিত এবং দ্রুত কোনও শান্তির সমাধান হাজির করতে পারে কিনা, সেদিকেই সবাই তাকিয়ে আছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.