নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
ভারত আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল- এটা বহুল প্রচারিত কথা। কিন্তু কেন করেছিল বা করতে বাধ্য হয়েছিল কিনা- এসব প্রশ্ন উদ্রেকের সঙ্গত চিন্তার খোরাক রয়েছে। মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি হিসেবে পাকিস্তানের জন্ম বা স্বাধীনতাকে ভারতীয় মুশরিক নেতারা তখন মেনে নিলেও পূর্ব-বাংলার (নবাব সিরাজদৌল্লার বাংলার) মুসলমান বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি হিসেবে ভারতের পূর্বাঞ্চলকে (পশ্চিম বাংলা, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়সহ) ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের আর এক অংশ হিসেবে পূর্ব-পাকিস্তানকে মেনে নিতে চায়নি। ভারতীয় মুশরিক-হিন্দু নেতাদের তীব্র বিরোধিতা ও ব্রিটিশ শাসকদের সাথে তাদের কূটকৌশলের কারণে তখন ব্রিটিশরা পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ম্যাপ বা আয়তন থেকে ভারতের উল্লেখিত রাজ্যগুলোকে বাদ দিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের যে আয়তন তা পূর্ব-পাকিস্তান হিসেবে মেনে নিতে তখনকার মুসলিম নেতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শেষ পর্যন্ত তা মেনে নিতে বাধ্য করে। তারপরেও ভারতীয় মুশরিক নেতারা বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ব-পাকিস্তান করার তীব্র বিরোধিতা করেছিল, বঙ্গভঙ্গ রোধ আন্দোলনের নামে তখন ভারতীয় মুশরিকরা অখ- বাংলাকে ভারতের অংশ হিসেবে ধরে রাখতে ব্রিটিশ ও ভারতীয় হিন্দু রাজনৈতিক নেতাদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির ৬৬ বছর (পূর্ব-পাকিস্তানের ২৩ বছর ও বাংলাদেশের ৪৩ বছর) পর এখনো পশ্চিম বাংলার বাঙালি হিন্দুদের একটা অংশ বঙ্গসেনা নামে স্বাধীন বঙ্গভূমি প্রতিষ্ঠা করে কার্যত বাংলাদেশের কয়েকটা জেলাকে পশ্চিম বাংলার সাথে একীভূত করার অপচেষ্টায় ব্যর্থ প্রয়াস বা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।ভারত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মকে মেনে নিলেও ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১২০০ মাইল দূরে (এক অর্থে বিচ্ছিন্ন) আয়তনের তিন চতুর্থাংশ দিক দিয়ে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত পূর্ব-পাকিস্তান এক সময় পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের সাথে একীভূত হয়ে যাবে বলেই ভারতীয় নেতারা বিশ্বাস ও প্রত্যাশা করতো। যে কারণে ১৯৭১ সালে বাঙালি মুসলমানরা যখন পাকিস্তান থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিল, তখন ভারতের কোনো কোনো হিন্দু জাতীয় নেতা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তাদের সে স্বপ্ন পূরণের শুভ সূচনা হিসেবে মনে করে পুলকিত হয়েছিল। ভারতের বর্তমান শাসক দল বিজেপি’র প্রবীণ নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী তো ১৯৭১ সালে দিল্লিতে প্রকাশ্যেই আস্ফালন করে বলেছিল, “অখ- ভারত কায়িম করার এটাই উপযুক্ত সময়।”১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ না করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। কাজেই এই হিন্দু শরণার্থীদেরকে তাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরত দিতে হলে পূর্ব-পাকিস্তানের ভূখ-টাকে পাকিস্তানের আওতা থেকে পৃথক বা মুক্ত করতেই হবে। ভারতের সামনে এর কোনো বিকল্প ছিল না বলেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে (সুবিধাজনক সময়ে যখন বাঙালি মুসলমান মুক্তিফৌজ ৮ মাসে পাকিস্তানী বাহিনীকে প্রায় পরাজয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল, তখন) ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হয়ে (নৈতিক অবস্থান থেকে নয়, তাদের নিজস্ব স্বার্থে) পূর্ব-পাকিস্তানকে পৃথক তথা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজটা নিশ্চিত ও সমাপ্ত করে দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে অবশ্যই উল্লেখ্য, ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের রাত থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট ও পুলিশ লাইনে বাঙালি সৈনিক ও সিপাইদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করেছিল, তখন পর্যন্ত ভারতীয় সাহায্য ছিল না কেন? এমনকি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্তও ভারত তার সীমান্ত শরণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্যের পিছনে ভারতের এ চিন্তাও ছিল যে, বাংলাদেশ যদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেও ভারতের পাশে অবস্থান করে তাহলেও ভারতের বিশাল অর্থনৈতিক তথা বাণিজ্যিক সুবিধা হবে, ভারত প্রায় ৮ কোটি (এখন ১৬ কোটি) জনসংখ্যার একটা দেশের বাজার পাবে, যার প্রমাণ এখন ডিম থেকে গাড়ি পর্যন্ত ভারতীয় পণ্যে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব। পাকিস্তানের অংশ হয়ে থাকলে ভারত কখনো এ সুযোগ পেত না। তাছাড়া প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য, হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষার জন্য ভারত যাচ্ছে। আর ভারতের সিনেমা ও টেলিভিশনের অপসংস্কৃতি তো বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে আষ্টে-পিষ্ঠে জড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে ভারত তার অশ্লীল ও অপসংস্কৃতির ছোবল দ্বারা ক্ষতবিক্ষত করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এটা বাংলাদেশের উপর ভারতের সফল সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেরই অংশ।ভারত আরো অনেক আগেই বাংলাদেশের পাট ও চা শিল্প ধ্বংস করে এখন এই বাজার একচেটিয়া নিজের দখলে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প এবং জনশক্তি রপ্তানী খাতও ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতা ও ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়েছে। আর ভারত উজানে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের নদ-নদীকে মরুভূমি বানিয়ে বাংলাদেশের কৃষি, আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ইতোমধ্যেই ধ্বংসের শেষ সীমায় ঠেলে দিয়েছে।অর্থাৎ বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ভারতের জন্য কোনো হুমকি হবে না, বরং ভারতের লাভই হবে এবং কার্যত ভারতই বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে থাকতে পারবে। এসব হিসাব-নিকাশ সঠিকভাবে করেই ভারত ১৯৭১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানকে তথা পূর্ব-বাংলাকে পাকিস্তান থেকে পৃথক তথা স্বাধীন বাংলাদেশ হতে সাহায্য করেছিল।ভারতের উদ্দেশ্য যদি ভালো হতো তবে বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারত পারস্পরিক সৌহার্দ্যমূলক, মর্যাদাসুলভ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত বাংলাদেশের প্রতি বৈরী, আধিপত্যসুলভ, মোড়লীপনা তথা দাদাগিরির মতো আচরণ শুরু করে। আসল কথা হলো- ভারত যে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মর্যাদা দিতে চাইছে না; বরং ভারতের কলোনি বা অঙ্গরাজ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে, ভারতের এ নীতির কখনো পরিবর্তন হবে না। কাজেই বাংলাদেশের জনগণকেই তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সক্রিয় হতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৪১
গাধা গরু বলেছেন: সহমত