নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সদা সুন্দর চিরন্তন

অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির ভয়ে কাপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর। -নজরুল

ওয়েলকামজুয়েল

লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।

ওয়েলকামজুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিলিস্তিন : জীবন যেখানে মিসাইলের নিচে

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩২

গাজার মানুষবিহীন রাস্তায় আপনি যে জিনিসটি প্রথম উপলব্ধি করবেন, তা হলো সেখানে শিশুদের অনুপস্থিতি। সৈকতটায় শুক্রবার বিকালে সাধারণত সবাই জড়ো হয়ে থাকেন। কিন্তু সেই সৈকতও খাঁ খাঁ করছে। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক পরেই অবস্থিত আল আজহার পার্ক, বার্সেলোনা পার্ক, সব কিছুই আজ খালি, মানুষজনের চিহ্ন নেই। চারদিকে বড় অ্যাপার্টমেন্টের মাঝে ছোট্ট একটি জায়গায় কিছু শিশু খেলাধুলা করছে। তাদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন বাবা-মা। ঠিক নেই কখন যে বোমা হামলা হয়! ইসরাইলি বিধ্বংসী হামলার মুখে ফিলিস্তিনের চতুর্থ দিনের চিত্র এটি। ১৭২ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এই চার দিনে। এদের বেশির ভাগই শিশু। ৬৭০ জনের মতো মানুষ মারাত্মক আহত হয়েছেন। গাজার প্রত্যেকটি পরিবার যুদ্ধাবস্থার আতঙ্কে দিন গুনছে। তাদেরকে ২০০৯ আর ২০১২ সালের সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বারবার। ইসরাইলের মতো ফিলিস্তিনে বোমা আক্রমণ থেকে বাঁচার মতো কোন আশ্রয়কেন্দ্র নেই। মিসাইল আসার সময় নিরাপদ অবস্থানে যাওয়ার জন্য কোন সাইরেন বেজে ওঠে না। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য কোন আয়রন ডোম নেই। তারা কেবল একটি সতর্কতাই পেয়ে থাকে, তা হলো হুট করে বিধ্বস্ত করে দেয়া বোমা। চারপাশে উড়াল দিতে থাকা ড্রোন, একের পর এক যুদ্ধ বিমান, সমুদ্রে অবস্থিত যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্রমাগত বোমা হামলার মুখে নারী ও শিশুরা এখন বিদ্যুৎহীন ঘরে আটকা পড়ে থাকে। গোটা গাজায় এই ভবনগুলোই তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদস্থল। ইসরাইল বলেছে, তারা গাজার ঘরে ঘরে মিসাইল হামলা করে ‘লক্ষ্য প্রশিক্ষণ’ করছে, কারণ হামাস সে সব ঘরে লুকিয়ে আছে। অথচ এই ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে বলে মনে করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। বৃহসপতিবার জাতিসংঘের মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি বলেন, আমরা বহু প্রতিবেদন পাচ্ছি যে, ঘরবাড়িতে হামলার কারণে বহু বেসামরিক নাগরিক, এমনকি শিশু মারা যাচ্ছে। এরকম প্রতিবেদন ‘সন্দেহ’ জাগায় যে ইসরাইলি বিমান হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার সমপর্কীয় আইন অনুসারে হচ্ছে কিনা। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং হামলা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন, কোন ধরনের আন্তর্জাতিক চাপ গাজায় ইসরাইলি অভিযান থেকে ইসরাইলকে নিবৃত্ত করতে পারবে না। হামাসের নেতারা গাজার সাধারণ মানুষের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, তাই সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির দায় তাদের! গাজায় প্রায় ১৮ লাখ মানুষ বাস করেন। এই রমজানে ইফতারের আগ থেকে সেহরি পর্যন্ত শুধু ইসরাইলি হামলার কথা চিন্তা করে তটস্থ থাকতে হয়। রমজানে গাজার ফিরাস বাজারে ফলমূল ও শাকসবজির কেনার জন্য বিকালে মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো। অথচ সেই বাজার আজ প্রায় খালি। একজন দোকানি জানালেন সারা দিনে তিনি কিছুই বিক্রি করতে পারেননি। তার ভাষায়, আমি এত ঝুঁকি সত্ত্বেও বের হয়েছি, কারণ আমি আর ঘরের ভেতরে থাকতে পারছি না। আমার পরিবারে ৫০ জন মানুষ আছে, এদের মধ্যে ২০ জনই আমার নাতি-নাতনি। কেবলমাত্র আমিই খুব ভোরে মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। কিন্তু তখনই হামলার মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই আমি মসজিদে যাওয়ার সময় ভবনের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে হেঁটে যাই। অন্যথায় কেউ বের হয় না বললেই চলে। কারও কোন কাজ নেই, কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কোন জায়গাই নিরাপদ নয়। সবখানে এক আতঙ্ক বিরাজ করছে, এই বুঝি বোমা পড়লো। আমাদের বাড়ির সামনে ২ বর্গমিটারের একটি জায়গা আছে, যেখানে বাচ্চারা খেলতে পারে। গত রাতে আমার কিছু নাতি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কেন তোমার দোকান খুলছো? কিন্তু তবুও আমি দোকান খুলতে বাধ্য হলাম। পাশে থাকা আরেক দোকানিও বলে উঠলেন, অর্থ উপার্জনের কোন উপায়ই নেই। ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ কারায়েম এলেন তাড়াহুড়ো করে। তিনি এসব বোমা হামলা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। বললেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অত্যাধুনিক মিসাইল হামলার মুখে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের জীবন কখনই স্বাভাবিক হতে পারে না। বললেন, আমার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাসায় আছে। যখন বোমা বিস্ফোরিত হয়, আমি বারংবার তাদের আশ্বস্ত করি। আমি তাদের জড়িয়ে ধরে আদর করতে শুরু করি যাতে তারা এসবে আশ্বস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু মাঝে মাঝে এসব আসলেই কাজ করে না। স্থানীয় ইমাম তার বক্তৃতায় সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, এটি শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। রমজান বিজয়ের মাস। তার আগে আমেরিকা ও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে এই দুষ্কর্মের সহযোগী বলে প্রতিবাদের পাশাপাশি আরব বিশ্বের নীরবতাকেও সমালোচনা করেছেন। মাহমুদ খালিজা নামের একজন শ্রমিক জোহরের নামাজ শেষে কিছু জিনিসপত্র কিনতে দোকানে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তার ভাষায়, আমার স্ত্রীও কাজে যাচ্ছে। আমাদের শিশুরা ছোটদের সঙ্গে বাসায় সঙ্গ দিচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। অনেক কৃষক তাদের ফসল বাজারে আনতে পারছেন না, ফলে দাম বেড়ে গেছে মারাত্মকভাবে। গাজায় আপনার সমপদ ও ভয় থেকে আপনাকে দূরে রাখতে পারবে না। কিছু কিছু ভবনে বোমা হামলার শব্দ বেশি জোরে শোনা যায়। ভয়ে কুঁকড়ে ওঠেন সবাই। ইসরাইলি নৌবাহিনীর গোলা হামলার কাছাকাছিই থাকেন তারা। এদেরই একজন ফারওয়ানা বলছিলেন, মানুষ ঘরের ভেতর স্বেচ্ছাবন্দি হয়ে আছে। তারা কেবল খেতে পারে। ১৬ বছরের কমবয়সী আমার ৪ সন্তান আছে। আমি তো তাদের বেশি দূরে যেতে দিতে পারি না। তিনি যখন এসব বলছিলেন, হঠাৎ একটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। সব কিছু যেন কেঁপে উঠলো একবার। তবুও কথা থামালেন না ফারওয়ানা। বললেন, যদি আমার ভাগ্যে মৃত্যু লেখা থাকে, তবে আমি মরবোই। আমি ঘরের বাইরে থাকলে যেভাবে সহজে মারা যেতে পারি, ভেতরে থাকলেও একই ভাবে মারা যেতে পারি।

অনলাইন গার্ডিয়ান অবলম্বনে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.