নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
চল্লিশ দশকের শেষ দিকে প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসনের অবশিষ্ট গুলোর পরিসমাপ্তি ঘটতে শুরু করে। আমাদের এ অঞ্চলে সাতচল্লিশ সালে ইংরেজ শাসনের অবসান যেমন। কিন্তু আশ্চর্য যে একই সময়ে সাম্রাজ্যবাদ নতুন কিসিমের উপনিবেশ বানাতে শুরু করে। নতুন ধরনের ‘সেটলার কলোনিয়ালিজম’। তারা ইউরোপ থেকে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের বিতাড়িত করে তাদের জন্য আরব ভূখণ্ডে জবরদস্তি চিরস্থায়ী আবাস বানিয়ে তাকে রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়। আর সেটা করতে গিয়ে ফিলিস্তিনীদের নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়, তারা দেশান্তরী হয়। বিভিন্ন জায়গায় তাদের আশ্রয় হয় শরণার্থী শিবিরে। এই অপরাধকে ন্যায্যতা দেবার জন্য বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের নির্যাতন ও গণহারে মারাকে (holocaust) অজুহাত হিসাবে খাড়া করা হয়েছে। সাদা মানুষগুলো এর আগে ইউরোপ থেকে গিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ইত্যাদি মহাদেশে বসতি স্থাপন করেছে। সেই মহাদেশের আদি অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে মহাদেশগুলো দখল করে নিয়েছে তারা। যাদের হত্যা করতে পারে নি তাদের এখনও রেখে দিয়েছে রিজার্ভে। আফ্রিকা মহাদেশের অনেককে দাস বানিয়েছে তারা। আমেরিকান ইন্ডিয়ান, মায়া, ইনকা ইত্যাদি সভ্যতাকে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তারা। সে ইতিহাস বড়ই নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংস। সেই সকল হোলোকস্টের কথা ভুলে গিয়ে আজ সাম্রাজ্যবাদ শুধু ইউরোপের হোলোকস্টের কথা বলে। শুধু তাই নয়। সকল প্রকার মারণাস্ত্রে জায়নবাদী ইসরাইলকে সজ্জিত করেছে তারাই। সকল প্রকার আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে ফিলিস্তিনীদের নিজ জন্মভূমি থেকে তারা উৎখাতই শুধু করে নি, নির্মম ভাবে হত্যা করছে বছরের পর বছর। আরব দেশগুলোতে টিকিয়ে রেখেছে তাঁবেদার শাসকগোষ্ঠী। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ফিলিস্তিনীরা তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।ইউরোপে ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা চর্চার (anti-semitism) পরিণতি হিসাবে তাদের নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আবার সেই ইহুদি নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাকেই সাম্রাজ্যবাদ মহিয়ান করতে চায় কেন? কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের স্বার্থ রা করার পেছনে তাদের জ্বালানি, অর্থনীতি ও নিরাপত্তার স্বার্থ জড়িত সন্দেহ নাই, কিন্তু একই সঙ্গে রয়েছে তাদের অতীতের জঘন্য ও ঘৃণ্য অপরাধ লুকিয়ে রাখার মতলব। যেন ইহুদি হোলকস্টের কাহিনী দিয়ে উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকায় সংঘটিত অন্যান্য হোলকস্টের কথা ভুলিয়ে দেওয়া যায়। ইউরোপের এই সাদা মানুষগুলোই কি আদিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করে নি? জনগোষ্ঠির পর জনগোষ্ঠিকে কি নিশ্চিহ্ন করে দেয় নি? এই কিছুদিন আগেও কালোদের দড়িতে কি লটকিয়ে মারে নি তারা? পুড়িয়ে হত্যা করে নি? সেই সকল হোলকস্টের কী হোল? তাহলে আমাদের পরিষ্কার বুঝতে হবে দুনিয়ায় ইহুদিরাই একমাত্র নির্যাতীত জাতি নয়, অন্যান্য নির্যাতীত জাতিকে যেভাবে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে তাদের ইতিহাস কি আমরা কি মনে রেখেছি? ইহুদিদের ওপর নির্যাতন নিন্দনীয়। কিন্তু ইহুদি নির্যাতনের কাহিনী দিয়ে মানবেতিহাসের অন্য সকল নির্যাতনকে গৌণ ও অদৃশ্য করে ফেলা মহা অপরাধ। আমরা ইতিহাস ভুলে যাই। ভুলে যাই তথাকথিত ‘আধুনিকতা’ বা পাশ্চাত্য সভ্যতার ইঁটপাথরগুলো তৈরি হয়েছে সেইসব মানুষের হাড় দিয়ে যাদের গায়ের রঙ ছিল কালো, বাদামি বা অন্য রঙের। বর্ণবাদ আমাদের নিজেদের কলিজাকে কয়লার কালিতে কালো করে ফেলেছে। তাই যারা ইহুদিদের রাষ্ট্রের দাবির পক্ষে দাঁড়িয়ে আজ ফিলিস্তিনী জনগণকে সেই রাষ্ট্র মেনে নেবার কথা বলেন, তারা জায়নবাদের পক্ষেই শুধু দাঁড়ান না, একই সঙ্গে তারা বর্ণবাদের পক্ষেও বটে। ফিলিস্তিনী জনগণের সংগ্রাম এই দুইয়েরই বিরুদ্ধে।অন্য জনগোষ্ঠি নিশ্চিহ্ন হয়েছে, কিম্বা ধুঁকছে তাদের জন্য বরাদ্দ ‘রিজার্ভ’ গুলোতে। কিন্তু ফিলিস্তিনীরা দমে নি। গাজাকে কুখ্যাত প্রিজন হাউস বানাবার পরেও লড়ছে তারা। এই জন্যই আমাদের বলতে হবে, সাবাশ হামাস! গাজা থেকে প্রতিটি রকেট ছোঁড়ার অর্থ সেই সব হোলকস্টের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আমেরিকান ইন্ডিয়ান, মায়া, ইনকা, দাস হিসাবে ধরে নিয়ে যাওয়া আমেরিকায় আফ্রিকার কালো মানুষসহ আরো অগুনতি মানুষ যাদের ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদ মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর।আমাদের বলতে হবে, সাবাশ ফিলিস্তিন! সাম্রাজ্যবাদী যুগে ‘সেটলার কলোনিয়ালিজমের বিরুদ্ধে তোমাদের লড়াই। সাম্রাজ্যবাদের হৃদপিণ্ড এখানেই। এর বিরুদ্ধে লড়াই ছাড়া জাতীয়তাবাদ, জায়নবাদ ও পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিলয় ঘটিয়ে দুনিয়ার সকল মানুষের ঐক্য কায়েমের জন্য শর্ত তৈরি অসম্ভব। অন্য কোন শর্টকাট রাস্তা নাই। দুনিয়ায় জাতীয়তাবাদী ও জায়নবাদী বহুত আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে তারাই নিকৃষ্ট যারা প্রগতির ভান ধরে। জায়নবাদের সবচেয়ে চরম বিকার এদের মধ্যেই আপাদমস্তক দৃশ্যমান হয়। নিজেদের পোষা মতাদর্শের সঙ্গে মিলে না বলে এরাই নিপীড়িত জনগোষ্ঠির ন্যায্য যুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়ায়।এই যুগ ভণ্ড, কাপুরুষ, নিপীড়ক ও জালিম বিশ্বব্যবস্থার ধ্বজাধারীদের যুগ নয়। এই যুগ সৎ, পরিচ্ছন্ন ও সাহসীদের যুগ। যারা কোনপ্রকার দোদুল্যমানতা ছাড়া হুংকার দিয়ে বলতে পারে সাবাশ ফিলিস্তিন। সাবাশ হামাস, সাবাশ দুনিয়ার যে যেখানে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের পক্ষে লড়ছে। লড়বে। আবারও বলি সাবাশ ফিলিস্তিন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তোমরা আমাদের পাশে ছিলে, সকল জাতীয়তাবাদী ও জায়নবাদী সংকীর্ণতা ছিন্ন করে বাংলাদেশের বীর ছেলেরা তোমাদের জন্য রক্ত দিয়েছে, শহিদ হয়েছে। আমরা তোমাদের পাশে আছি। থাকব।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫৭
ঢাকাবাসী বলেছেন: খুব ভাল।