নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
ফিবছর আগস্ট মাস এলেই আগস্ট অভ্যুত্থান নিয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উদ্ভব ঘটানো হয়। বলা বাহুল্য, এসকল তথ্যের সবগুলোই তৎকালীন উপপ্রধান সেনাপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঘিরে। গতকাল শুনলাম, তিনিই নাকি খন্দকার মুশতাক আহমদকে দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন। বটে! এতদিন প্রধান সেনাপতি জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ, রক্ষীবাহিনীর রাজনৈতিক প্রধান তোফায়েল আহমদ, রক্ষীবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল হাসনাত প্রভৃতি সহ অভ্যুত্থানকারী মেজররা তো দায়মুক্তি পেয়েই এসেছেন, এবার স্বয়ং খন্দকার মুশতাক আহমদ মাফ পেয়ে গেলেন! এখন সব দোষ ওই কেষ্ট ব্যাটার নয়, সব দোষ জিয়ার!যাহোক, ইতিহাস ভুলে যাবার আগে সেটা একান্ত নিজের জন্যই ঝালাই করে নিতে চাই! ১৫ আগস্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রেসিডেন্ট খন্দকার মুশতাক আহমদ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীকে নিজের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেন। ২৪ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অর্পণ করা হয়। তিনি রাষ্ট্রদূতের চাকরি নিয়ে কোন এক দেশে চলে যান (ইতিহাসের প্রতি একের পর এক যেরকম মালাই পড়ছে, সেজন্য দেশটার নাম ভুলে গেছি)।শফিউল্লাহর স্থলে অভ্যুত্থানের নেতা মেজর খন্দকার আবদুর রশিদের প্রস্তাবে উপপ্রধান সেনাপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নয়া প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জেনারেল জিয়ার সাথে খন্দকার মুশতাক ও জেনারেল ওসমানী উভয়েরই শীতল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেজরদের মুখের উপর জিয়াকে বাদ দেয়াটাও সম্ভব হচ্ছিলো না।এজন্য জিয়াকে বেকায়দায় রাখতে জেনারেল ওসমানীর সাথে শলাপরামর্শ করে প্রেসিডেন্ট মুশতাক সেনাপ্রধানের উপরে চীফ অভ ডিফেন্স স্টাফ নামে একটি নতুন পদ সৃষ্টি করেন। হালে বিভিন্ন দেশে জয়েন্ট চীফ অভ স্টাফ নামে তিন বাহিনীর প্রধানের উপরে যে পদ দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের চীফ অভ ডিফেন্স স্টাফের পদটাও তেমনই ছিল। এই পদে খন্দকার মুশতাক তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে নিযুক্ত করেন। মেজর জেনারেল গোলাম দস্তগীরকে বিডিআরে খলিলুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত করা হয়।চীফ অভ ডিফেন্স স্টাফের দফতর ছিল বঙ্গভবনেই। এই পদায়নের ফলে সেনাপ্রধান হয়েও জিয়া ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন। কারণ যেকোনো দাবী, এমনকি মামুলী নথি নিষ্পত্তি করতেও জিয়াকে তখন সিডিএস জেনারেল খলিলুর রহমানের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছাতে হতো। এটিও কিন্তু নভেম্বরে সেনাবাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া অস্থিরতার পেছনে দায়ী ছিল।জিয়া চাচ্ছিলেন মুশতাক-ওসমানী-খলিল চক্র তাঁর মাথার উপর থেকে সরে যাক, যাতে তিনি একাই অভ্যুত্থানকারী মেজরদের ব্যবহার করে নিজের ক্ষমতা সংহত করতে পারেন। সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, ৪৬ স্বতন্ত্র ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার শাফায়াত জামিল ও অন্যান্যরা চাচ্ছিলেন বঙ্গভবনে অবস্থানরত অভ্যুত্থানকারী মেজরদের নিরস্ত্র করে সেনাবাহিনীতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে, এবং নিজেদের ক্ষমতা পোক্ত করতে। অন্যদিকে জাসদ গণবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের চাচ্ছিলেন এই গণ্ডগোলের মধ্যে নিয়ন্ত্রণহীন সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে দেশে কমিউনিস্ট শাসন কায়েম করতে।এক্ষেত্রে তাহের জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছিলেন। অন্যদিকে জিয়া চাচ্ছিলেন তাহেরকে ব্যবহার করে খালেদ মোশাররফকে নিষ্ক্রিয় করতে। কারণ জিয়ার উপর থেকে তখন একটি বোঝা কিন্তু সরে গিয়েছিলো। খন্দকার মুশতাক ততোক্ষণে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন খালেদ মোশাররফের দ্বারা। সবার এই চাওয়া-পাওয়ার সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল ৩-৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থান। একে অপরকে ব্যবহার করে ক্ষমতা সংহত করার এই সম্মিলিত খেলায় নিজ বুদ্ধিমত্তার গুণে জিয়া জয়ী হন। শুরুতেই ছিটকে পড়েন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল শাফায়াত জামিল। এরপর 'ক্র্যাচের কর্নেল' আবু তাহের...!
লিখা : ইমরান চৌধুরী
©somewhere in net ltd.