নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি পেশা নয় নেশা। তাই শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ছাড়তে পারি না। লিখেছি লিখছি লিখব। কিছুটা আবেগী হওয়ায় মনের রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখতে পারিনা বিধায় কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে যাই। লিখার ভালো মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করা হয় না। তাই অনেকে খেপাটে ও বলতে দ্বিধাবোধ করে না।মনে মাঝে আঘাতটাকে শক্তিতেই রুপান্তরিত করি।চেষ্টা করি সমসাময়িক বিষয়ে লিখতে। হয়তো সফল হয়তো বিফল। কিন্তু সবার ভালবাসা ই আমার প্রেরণা।
(২০) যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাও এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধনসম্পদ প্রদান করে থাকো, তবুও তা থেকে কিছুই ফিরিয়ে নিও না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গোনাহের মাধ্যমে তা গ্রহণ করবে?(২১) কিভাবে তোমরা তা গ্রহণ করতে পারো, অথচ তোমরা একে অপরের সঙ্গে সংগত হয়েছ এবং নারীরা তোমাদের কাছ থেকে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে। সুরা আন-নিসা, আয়াত ২০, ২১তাফসির : আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে জাহেলি যুগের একটি কুপ্রথার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। জাহেলি যুগে পুরুষরা নানাভাবে নারীর সম্পদ-অর্থকড়ি আত্মসাতের হীন টালবাহানার পথ বেছে নিত। স্ত্রীকে তালাক দিলে প্রদত্ত অর্থকড়ি ফেরত নিয়ে যেত। ইসলাম নির্যাতিত নারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে, নারীর দেনমোহর বা অন্য কোনো সম্পদ আত্মসাৎ করা যাবে না। কোনো সম্পদ দিয়ে তা ফেরত নেওয়া যাবে না। কোনো অবস্থায়ই নারীকে মোহরানার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।মোটা অঙ্কের দেনমোহর ধার্য করা বৈধ : নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার উদ্দেশ্যে, নারীর আত্মতৃপ্তি ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলাম বিবাহের সময় পুরুষের ওপর দেনমোহরের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অন্যদিকে নারীর পক্ষ থেকে ন্যূনতম অর্থকড়ি বা সম্পদ পুরুষকে প্রদান করার কোনো বাধ্যবাধকতা ইসলাম আরোপ করেনি। এমনকি মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করাও ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। এ ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে একটি চমকপ্রদ ঘটনা রয়েছে। একদা হজরত ওমর (রা.) মিম্বরে উঠে বললেন, 'হে লোক সকল! তোমরা মোটা অঙ্কের মোহর বাঁধতে শুরু করলে কেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা তো ৪০০ দিরহামের বেশি মোহর ধার্য করেননি। আজ থেকে যেন আমি ৪০০ দিরহামের বেশি মোহর নির্ধারণের কথা আর না শুনি।' এ কথা বলে তিনি মিম্বর থেকে নেমে আসেন। এমন সময় একজন কোরাইশ মহিলা এসে বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন! আপনি নাকি মহিলাদের মোহর ৪০০ দিরহামের বেশি নির্ধারণ করতে নিষেধ করেছেন? ওমর (রা.) বললেন, হ্যাঁ। মহিলা বললেন, কেন, আপনি কি কোরআনের আয়াত শোনেননি? ওমর (রা.) বললেন, কোন আয়াত? মহিলা বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'ওয়াতাইতুম ইহদাহুন্না কি্বনতারা'- অর্থাৎ তোমরা কোনো মহিলাকে প্রচুর অর্থসম্পদ দিয়ে থাকো। এটা শুনে হজরত ওমর (রা.) বললেন, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। আমি ওমরের চেয়ে ইসলামের ব্যাপারে সবাই বেশি জানে। এরপর তিনি আবার মিম্বরে ওঠেন এবং বলেন, 'হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের বেলায় ৪০০ দিরহামের বেশি মোহর নির্ধারিত করতে নিষেধ করেছিলাম; কিন্তু আমি তা থেকে প্রত্যাবর্তন করে এই মুহূর্তে বলছি, তোমরা নিজেদের স্বাধীন মতে স্ত্রীদের জন্য মোহর নির্ধারণ করতে পারো!'মোহরানা আদায় না করা নির্লজ্জ পাপ : মোহরানা নারীর অর্থনৈতিক অধিকার। ছলে-বলে-কৌশলে এ অধিকার থেকে কিছুতেই নারীকে বঞ্চিত করা যাবে না। জাহেলি যুগে স্ত্রীদের মোহরানার ব্যাপারে অনেক অবিচার ও জুলুমের পন্থা প্রচলিত ছিল। এক. স্ত্রীর প্রাপ্য মোহর তার অভিভাবকরাই আত্মসাৎ করে নিত। দুই. নারীর মোহরানাকে আর্থিক জরিমানা মনে করা হতো। তিন. স্বামীরা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে মোহর মাফ করিয়ে নিত। তিক্ত হলেও সত্য, যে জাহেলি বর্বরতাকে ধ্বংস করার জন্য ইসলামের আগমন ঘটেছে, সেই মুসলিম সমাজে নারীর মোহরানা আদায়ের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আরো আশ্চর্য ঘটনা হলো, এক শ্রেণির মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, মোহরানা কেবলই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মাত্র। কেউ বা মনে করেন, মোহরানা হলো বিবাহের নিশ্চয়তা, যা কেবল তালাক দিলেই পরিশোধযোগ্য! মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করা এখন আমাদের সমাজে সামাজিক 'ঐতিহ্যে' পরিণত হয়েছে। অথচ তা আদায় করার প্রতি কোনো দৃষ্টিপাত করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে এই হাদিসটি সবারই স্মরণ রাখা উচিত, 'সাবধান! জুলুম কোরো না। মনে রেখো, কারো পক্ষে অন্যের সম্পদ তার আন্তরিক তুষ্টি ছাড়া গ্রহণ করা বৈধ হবে না।' (মিশকাত, পৃ. ২৫৫) আজকাল অতি ভালোবাসার ছলে কিংবা বাসর ঘরের 'ঐতিহ্যে'র ছদ্মাবরণে মোহর 'মাফ' করে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ ব্যাপারে হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, মোহরের অর্থ স্ত্রীর হাতে দেওয়ার পর স্ত্রী যদি তা ইচ্ছামতো খরচ করার সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও স্বামীকে দিয়ে দেয়, কেবল তবেই তা মাফ বলে গণ্য হবে, অন্যথায় নয়।
©somewhere in net ltd.