নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস । ডিসেম্বর মাস এলেই মনটা কেমন জানি বিষন্ন হয়ে পরে । ডিসেম্বর এলেই বাবাকে খুব মনে পরে ।মার কাছে শুনেছি বাবা নাকি মুক্তি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তবে আমার সদ্য প্রায়াত ছোট ফুপু প্রায় ই বাবার যুদ্ধে যাওয়ার গল্প আমাকে শুনাতেন ছোট ফুপু ছিলেন আমার বাবার সাত বছরের বড় কিন্ত তিনি ছিলেন আমার তিন ফুপুর মধ্যে ছোট তাই আমারা সবাই তাকে ছোট ফুপুই বলতাম । আর বাবা ছিলেন আমার দাদার সংসারে বড় ছেলে তাই বাবা নাকি ছিলেন আমার দাদা-দাদীর সাত রাজার ধন । তাই বাবা যুদ্ধে যাবেন এটা কোন ভাবেই কারো চাওয়া ছিলনা তার পর ও বোধ হয় বাবা তার দ্বায়কে অস্বীকার করতে পারেন নি । ফুপার চাকুরী সুবাদে ছোট ফুপু থাকতেন ডেমারার শারুলিয়াতে বর্ষার কোন এক রাতে ভারী বৃষ্টির মাঝে বাবা বাড়ীর কাউকে কিছু না বলে দাদার পকেটের সত্তর টাকা নিয়ে চলে মুক্তি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ফারুক কাকাকে সাথে নিয়ে চলে এসেছিলেন শারুলিয়াতে ছোট ফুপুর বাসায় । ছোট ফুপুর হাজারো বারন আর কাঁন্ন ও রুখতে পারেনি বাবার মুক্তি যুদ্ধে যাওয়া । বাবা শুধু ছোট ফুপু কে একটা শান্তনা দিয়ে ছিলেন বুজীরে আর কত আমারা পশ্চিমাদের বুটের লাথি খামু তুই আমার জন্য দোয়া কর সত্যি ই তো এই ভাই একদিন দেশ শত্রু মুক্ত করে দেশ স্বাধীন করা আসবে । বুজীরে আমরা না হয় পশ্চিমাদের বুটের লাথি সহ্য করলাম আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও কি পশ্চিমাদের বুটের লাথি খাবে তাকি করে হয় রে বুজী । আমাদের ভবিষ্য প্রজন্মের জন্য ই তো আমাদের যুদ্ধ করতে হইবো । আর এই বলেই বাবা আর ফারুক কাকা চলে গিয়েছিলেন মুক্তি যুদ্ধে । তার পর বাবার সাথে যুদ্ধ চলাকালীন সময় আর বাবা সাথে আমাদের পরিবারের কারো তেমন যোগাযোগ হয়নি যুদ্ধ চলা কালীন সময় বাবা দাদা কে দুটি চিঠি দিয়েছিেন দাদা কাছে শুনেছি বাবা তার প্রথম চিঠিতে দাদাকে শান্তনা দিয়েছেন এ ভাবে বাবা আমায় ক্ষমা করো আমি কি আজ পর্যন্ত কোন দিন তোমার সাথে মিথ্যা বলেছি না বলে তোমের কিছু নিয়েছি কিন্তু দেশে জন্য আমি না বলে তোমার পকেটের সত্তর টাকা নিয়ে এসেছি । তুমি হয়তো ইতোমধ্যে বুজীর কাছে পুরো ঘটনাটা ই শুনেছ । বাবা তোমরা বৃটিশের চাবুকের পিট্টি খেয়েছো আমরা খাচ্ছি পাকিস্তানিদের বুটের লাথি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও কি এভাবেই লাথি গুতা খেয়ে যাবে তা তো কোন দিন হতে পারে না বাবা । আমারা পশ্চিমাদের থেকে কম কিষে আমারা কেন পরাধীন হয়ে থকবো । বাবা আমি জানি এ যুদ্ধে আমরা জয়ী হবোই হবো । যদি আমি কোন দিন তোমাদের মাঝে ফিরে না আসি তার জন্য কোন কষ্ঠ নিওনা তুমি তোমার ওমর কে খুজে নিও বাংলার আকাশে বাতাসে বাংলার সব খানে মার শরীরে দিকে খেয়াল রেখ । বাড়ী থেকে মার আনেক জ্বর ছিল তাই আমার পালিয়ে আশাটা খুবই সহজ হয়েছিল । সবাই ভাল থেক । বাবার সেই চিঠিটা অনেক দিন দাদা যত্ন করে রেখে দিয়ে ছিল । বাবা দেশ স্বাধীন করে বীরের বেশে ই বাড়ী ফিরে এসেছিলেন কিন্তু ফারুক কাকার আর বাড়ী ফেরা হয়নি ফারুক কাকা মুক্তি যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে ফরিদপুরের বোয়াল মারিতে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন । ফারুক কাকা ছিলেন আমার বাবার খালাতো ভাই । ফারুক কাকা যুদ্ধে যাওয়ার কিছুদিন পর পাক সেনাদে ও বাংগালী দোষরদের সহযোগিতায় ফারুক কাকাদের পুরো বাড়ী আগুন দিয়ে পুরিয়ে দিয়েছিল তার বড় ভাই সালাম কাকাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গেছে যার সন্ধান আজো মিলেনি । স্বাধীনতার কিছু দিন পর ই আমার সেই দাদী পুত্র শোকে মস্তিস্ক বিকৃতি হয়ে দুনিয়া ত্যাগ করেন । স্বাধীন দেশে ফেরার পর বাবা চোখে কতই না স্বপ্ন ছিল । দাদা আর্থিক ভাবে ছিলেন মোটা মুটি স্বচ্ছল তাই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা পুত্রকে বিয়ে করানোর জন্য আমার দাদা আদা-জল খেয়ে নেমে পরলেন তার পর ১৯৭২ শেষ দিকে দাদা আমার মাকে তার পুত্র বধু করে নিয়েছিলেন । বিয়ের পর মা বাবার সংসারে এসে ই প্রথম যে কাজটি কেরেছিলেন তআ নাকি ছিল বাবার মুক্তি যুদ্ধের সমস্ত প্রমানাদি তালতলার খালে নিক্ষেপ করা । এর কারণে মা বলতেন সে সময়কার মুক্তি যুদ্ধাদের দুরাবস্হার কথা । তথা কথিত রক্ষীবাহীনি দিয়ে প্রকৃত মুক্তি যুদ্ধাদের লান্হনার কথা । আমাদের বিক্রমপুরের এমন কোন গ্রামের নাই যে রক্ষীবাহীনির দ্বারা অত্যাচারীত না হয়েছে । আর তাদের নাকি মূল লক্ষ ই ছিল মুক্তি যুদ্ধা ও তাদের পরিবার । ১৯৭৩ এর শেষ দিকে কোন এক সময় রক্ষীবাহীনি আমার নানা বাড়ী হানা দিয়ে আমার মায়ের বিয়ের গহনা সব লুট করে নিয়েছিল আর এর প্রতিবাদ করার কারনে আমার বড় মামাকে রক্ষী বাহীনির অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল । বিয়ের পর বাবার কাধে যখন হালের জোয়াল চাপানো হলো প্রয়োজনের তগিদে বাবা তখন একটি চাকুরীর পেছনে হন্য হয়ে ছুটে ও প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকুরি না পেয়ে অবশেষে একটি ঢাকা বরিশাল রুটের একটি লঞ্চে ক্লার্ক হিসেবে চাকুরিতে যোগ দেন আর সেই চাকুরি ই আমার বাবার জীবনের বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ায় । আর সেই চাকুরি ই আমাদের পিতার আদর থেকে চির তরে বন্হিত করে । পকিস্তানি হায়নারা আমার বাবাকে
স্পর্শ করতে না পারলে ও দেশী হায়নারা তাকে রক্ষা করে নি । আমার আজকের লেখার মুখ্য বিষয় অবশ্যই এটা না আমার বিষয় আমাদের অগ্রজের কি বিশ্বাস কি উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে ছিলে ? অবশ্যই বর্তমান বাংলাদেশের যে রুপ সে রুপ দেখার জন্য কখনোই তারা জীবন বাজি রেখে বা জীবন উৎসর্গ করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপ দেন নি । বিজয়ের ৪৩ বছর পরে ও আমরা যে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার তা কখনোই তাদের প্রত্যাশ ছিল না । আজ মুক্তি যুদ্ধ শুধুই কারো কারো রুটি রুজী আর কারো কারো ক্ষমতার সিংহাসন দখলের সিড়ি । এর বাহিরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা সম্পুর্ণ অর্থ হীন ।
২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১০
অন্তরন্তর বলেছেন:
আপনার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩০
খেলাঘর বলেছেন:
আপনার বাবার জন্য সন্মান রলো।
তাজুদ্দিন সাহেব, ভুল করে মুক্তিযো্ধাদের সরকারে না নিয়ে নিজে মরেছেন, মুক্তিযো্ধাদের স্বপ্নকে বৃথা করে দিয়েছেন।