নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাইকোর্টের সামনের ভাস্কর্যটি ন্যায়বিচারের ই প্রতীক

০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৫৬

ভাস্কর্য শিল্পকলায় পৃথিবীর আদিমতম একটি অধ্যায় । আদিম যুগ থেকেই শিল্পকর্মের পিপাসুদের অনেকেই এই ভাস্কর্য শিল্পের সাথে জড়িত ছিল আজ ও আছে । মাঝে মাঝে ই আমাদের দেশে বিভিন্ন ভাস্কর্য নিয়ে নানা ধরনের বিতর্কের জন্ম হয় যা পরবর্তীতে যা তারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আন্দোলনে পরিনত করার চেষ্ঠা করে দেশের কিছু ইসলাম পন্থি রাজনৈতিক দল , সংগঠন ও ব্যক্তি । সম্প্রতি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনের চত্বরে একটি ভাস্কর্য নিয়ে তেমন কিছু বির্তকের জন্ম দেয়ার পায়তারা করে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের চেস্টা করছে হেফাজতে ইসলাম সহ বেশ কিছু ইসলাম পন্থি রাজনৈতিক দল । সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে স্হাপিত ভাস্কর্য টি সম্পর্কে হেফাজতে ইসলাম সহ বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দল গুলির দাবি সেখান থেকে " গ্রিক দেবীর মুর্তি " অপসারন করতে হবে ।



প্রথমেই একটু পরিস্কার হওয়া দরকার মুর্তি ও ভাস্কার্যের মধ্যে আর্দশিক পার্থক্য । ভাস্কর্যের মাধ্যমে একটি গোত্র বর্ণ জাতি বা রাষ্ট্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় । আর স্বাভাবিক ভাবে আমরা মুর্তি বলতে বুঝি কোন ধর্মের দেব দেবীর প্রতিচ্ছবি কে যাকে ধর্মীয় স্বার্থে বা ধর্মীয় বিশ্বাসে পূজা করা হয় । তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে স্হাপিত ভাস্কর্য টি হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান ইসলাম পন্থি রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠিরা মুর্তি বলে ই সাধারন মানুষের মাঝে প্রচার করে আসছে সে ই সাথে যোগ করেছে গ্রিক দেবীর কথা । সত্যিকারে ই কি হেফাজতে ইসলাম সহ অন্যান ইসলামিক দল গুলির দাবি সঠিক ? সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে স্হাপিত ভাস্কর্য টি একটু বর্ননা তাহলে দিতে ই হয় । শাড়ি পড়া মাথায় লম্বা চুলের এক নারী যার চোখ বাধা এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, আরেক হাতে তলোয়ার ।এটা আসলেই যে কোন গ্রীক দেবী মুর্তি নয় তার প্রথম প্রমান ই হলো মহিলাটি শাড়ি পড়া কারণ কোন গ্রীক দেবী ই শাড়ি পেননি বা পরবেন ও না শাড়ি সাধারনত বাঙ্গালী নারীর ই পোষাক । লম্বা চুল তা ও সাধারনত বাঙ্গালী নারীর মাথায় ই দেখা যায় বেশি । তাই এটা যে কোন গ্রীক দেবীর মুর্তি না এটা তো সত্য ।ঐ নারী ভাস্কর্য টি চোখা বাধা অর্থাৎ নিরপেক্ষতার প্রতীক আর এক হাতে আছে দাঁড়িপাল্লা, আরেক হাতে তলোয়ার । তার মনে দাঁড়িপাল্লা ন্যায় বিচারের প্রতীক আর তলোয়ার বিচারের সাজা কর্যকরের ই প্রতীক । অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা ও কিংবা বিচারের প্রতীক হিসেবে তলোয়ারের ছবি দেখা যায় ।

আমাদের শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের দেশের ইসলামিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠির এলার্জি অনেক পুরানো । যে কোন আন্তর্জাতিক বিমান কিংবা আন্তর্জাতিক নৌ বন্দর ই একটি দেশের প্রবেশের সিংহ দ্বার । তাই ঐ সব স্হানে নির্মান করা হয় ষে দেশের শিল্প সাংস্কৃতির নানান প্রতি চিত্র । ফকির লালন শাহ সহ অন্যান বাউলেরা ও ছিলেন আমাদের সাংস্কৃতির ই একটি বড় অংশ । তাই আমাদের ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সমানের রাস্তার চত্বরে স্হাপন করা হয়েছিল " অচিন পাখি " নামের বাউল ভাস্কর্য । এই ভাস্কর্য নিয়ে ও উগ্র ইসলাম ধর্মীয় মৌলবাদীদের পেটের ব্যাথা কম ছিল না । অবশেষে আমরা দেখেছি উগ্র ইসলামিক মৌলবাদী গোষ্ঠিরা কিভাবে উঠে পরে লেগেছিলেন এই ভাস্কর্য টি নিশ্চিন্ন করতে । পরে অবশ্য সরকার ইসলামিক মৌলবাদীদের ভয়ে " অচিন পাখি " নামের বাউল ভাস্কর্য সরাটে বাধ্যে হয়েছিল ।আফগানিস্তানের তালেবানেরা ও ধর্মের দোহায় দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল বামিয়ান প্রদেশের দেড় হাজার বছরের বছরের পুরনো জোড়া বুদ্ধমূর্তি । এর আগে আমরা ১৯৯২ সালে দেখেছি ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু মৌলবাদীদের তান্ডব । প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাবরি মসজিদ শুধু মাত্র ধর্মীয় উন্মাদনায় মুহুর্তেই সম্পূর্ণরূপে ভূমিসাৎ করে দেয় । বাবরি মসজিদ শুধু মাত্র মুসলামদের একটি মসজিদ ই ছিলনা এটা ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চিহ্ন ও ছিল বটে ।

ভাস্কর্য শুধু মাত্র ইসলাম ধর্মীয় প্রধান দেশেই নয় বিশ্বের অনেক ইসলামিক রাষ্ট্রে ও দেখা যায় এমন সৌদি আরবের মত ইসলামিক রাষ্ট্র যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে সেখানে ও ভাস্কর্য দেখা যায় । গত বছর সৌদি আরবের ৮৬তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ২১৬ বর্গমিটার উচ্চতার সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হয়েছে যার নির্মাতা ও সৌদি চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ আসিরি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতি হিসেবে সালমানের ছবিটিকে স্বীকৃতি দিতে ইতোমধ্যে গিনেজবুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে সৌদি শিক্ষা বিভাগ। এ ছাড়াও ইরান, মিসর, ইরাকের জাদুঘরে অসংখ্য ভাস্কর্য এবং প্রাচীন শাসক ও দেব-দেবীর মহৃর্তি তো রয়েছেই, সেসব দেশে উন্মুক্ত স্থানে রয়েছে অনেক ভাস্কর্য।অথচ আমদের দেশের তথাকথিত ধর্মীয় নেতাদের এই ভাস্কর্য নিয়ে কতনা সমস্যা । বাংলাদেশ একটি মুসলিম জনগোষ্ঠি প্রধান হওয়া সত্যে ও আমারা দুর্নীতিতে কতবার ই না চ্যাম্পিয়ান হলাম । সুদ ঘুষ ধর্ষন খুন ডাকাতি রাহাজানি ছিনতাই জমি দখল কোন অপকর্ম টি না হচ্ছে বাংলাদেশে অথচ যারা ধর্মে বিশ্বাসী তাদের সবার জন্য ই এই ধরনের কাজ গুলি হারাম । অথচ এ ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কখনো ই এই ধরনের সংগঠন বা রাজনৈতক দল টু শব্দ টা পর্যন্ট করে না । অথচ ভাস্কর্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিয়ে তাডের কতই না মাথা ব্যাথা এতে নাকি দেশে ধর্মের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে । আসলে সত্য হলো এটাই এই ধরনের উগ্র মৌলবাদী শক্তি কখনো ই আমাদের বাংলাদেশ কে বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতিকে মেনে নিতে পারে নাই । তাই আমাদের জোড় দাবি হলো আমাদের আমাদের ইতিহাস ও ঐতিয্য যেমন আছে তা টিকে রাখার জন্য বিভিন্ন শিল্প কর্ম ও থাকবে ।


মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০৮

সাইফুল ফরিদপুর বলেছেন: এটা পরিষ্কার ইসলাম শরিয়াহ পরিপন্থি এবং এধরনের ভাস্কার্য নাজায়েজ। কোন দেশ বা জাতি ইসলামের জন্য আদর্শ না বরং কুরআন এবং সুন্নাহ হল আদর্শ। যে দেশে শিল্প সংস্কৃতির চর্চা করবেন তারা যদি না চায় তবে জোড় করে তা প্রতিষ্ঠা করবেন? শিল্প সংস্কৃতির চর্চা কার জন্য? গুটি কয়েক পথহারা মানুষের জন্য?

১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন বলেছেন: বাংলাদেশে কোন শরিয়াহ আইন চালু নাই এমন কি বাংলাদেশ শুধু মাত্র মুসলমানের দেশ ই না তাই এখানে শুধু মাত্র মুসলমানদের কথা চিন্তা করলেই হবে না সকল ধর্মের মতামতের কথা মাথায় রেখে ই কোন কাজ করতে হবে ।

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৪:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


@সাইফুল ফরিদপুর ,

পৃথিবী সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই, আপনার বিচার বুদ্ধি জাতির জন্য যথস্ট নয়।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:১৯

এ আর ১৫ বলেছেন: সাইফুল ফরিদপুর বলেছেন: এটা পরিষ্কার ইসলাম শরিয়াহ পরিপন্থি এবং এধরনের ভাস্কার্য নাজায়েজ। কোন দেশ বা জাতি ইসলামের জন্য আদর্শ না বরং কুরআন এবং সুন্নাহ হল আদর্শ। যে দেশে শিল্প সংস্কৃতির চর্চা করবেন তারা যদি না চায় তবে জোড় করে তা প্রতিষ্ঠা করবেন? শিল্প সংস্কৃতির চর্চা কার জন্য? গুটি কয়েক পথহারা মানুষের জন্য?
দেশে এখন মূর্তি ও ভাস্কর্য নিয়ে উত্তেজনা চলছে। বিষয়টির সঙ্গে হেফাজতিরা ইসলামকে জড়িয়ে ফেলেছে। তাই চলুন আমরা সূত্র ধরে দেখি এ ব্যাপারে কোরান, হাদিস, সিরাত (ইবনে হিশাম ইবনে ইবনে ইসহাক), তারিখ আল তারারি ও অন্যান্য দলিল কী বলে।
প্রথমেই তিনটে শব্দ বুঝে নেওয়া যাক: প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি। প্রতিমা হল মানুষ যার আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ভুলের ক্ষমা চায় ইত্যাদি। ভাস্কর্য্য হল মানুষসহ কোনো প্রাণী বা কোনো কিছুর মূর্তি যাকে মানুষ রাখে সম্মান দেখতে বা সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে, যার মানুষ আরাধনা বা উপাসনা করে না। এবারে অন্যান্য দলিলের দিকে তাকানো যাক, সেখানে আমরা দেখব হযরত মুহাম্মদের (সা.) বাড়িতে মূর্তি ছিল তাঁর সম্মতিক্রমেই। সব দলিলের শেষে আমরা কোরানে যাব এবং দেখতে পাব আল্লাহর নির্দেশেই এক পয়গম্বরের প্রাসাদে ভাস্কর্য ছিল।
কোরানে যাওয়ার আগে প্রথমেই হাদিস ও অন্যান্য দলিল। কাবাতে রাসূল (সা.) লাত, মানাত, উজ্জা, হোবল, ওয়াদ ইত্যাদির প্রতিমা ভেঙেছিলেন, এগুলোর আরাধনা করা হত বলে। ভাস্কর্য ও মূর্তির বিপক্ষে কিছু হাদিস আছে, কিন্তু সাধারণত বিপক্ষের দলিলে আমরা ব্যক্তির নাম ও ঘটনার বিবরণ পাই না, যা পক্ষের হাদিসগুলোতে পাই। পার্থক্যটা গুরুত্বপূর্ণ।
(ক) সহি বুখারি ৮ম খণ্ড হাদিস ১৫১:
আয়েশা বলিয়াছেন, আমি রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুলগুলি লইয়া খেলিতাম এবং আমার বান্ধবীরাও আমার সহিত খেলিত। যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) আমার খেলাঘরে প্রবেশ করিতেন, তাহারা লুকাইয়া যাইত, কিন্তু রাসুল (সা.) তাহাদিগকে ডাকিয়া আমার সহিত খেলিতে বলিতেন।
(খ) সহি আবু দাউদ বুক ৪১ হাদিস নং ৪৯১৪:
বিশ্বাসীদের মাতা আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন, যখন আল্লাহর রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খাইবার যুদ্ধ হইতে ফিরিলেন তখন বাতাসে তাঁহার কক্ষের সামনের পর্দা সরিয়ে গেলে তাঁহার কিছু পুতুল দেখা গেল। তিনি [(রাসুল (সা.)] বলিলেন, “এইগুলি কী?” তিনি বলিলেন, “আমার পুতুল।” ওইগুলির মধ্যে তিনি দেখিলেন একটি ঘোড়া যাহার ডানা কাপড় দিয়া বানানো হইয়াছে এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহা কি যাহা উহার উপর রহিয়াছে?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “দুইটি ডানা।” তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ডানাওয়ালা ঘোড়া?” তিনি উত্তরে বলিলেন, “আপনি কি শোনেননি যে সুলেমানের ডানাওয়ালা ঘোড়া ছিল?” তিনি বলিয়েছেন, ইহাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) এমন অট্টহাসি হাসিলেন যে আমি উনার মাড়ির দাঁত দেখিতে পাইলাম।”
(গ) সহি মুসলিম – বুক ০০৮, নং ৩৩১১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁহাকে সাত বৎসর বয়সে বিবাহ করিয়াছিলেন (যদিও অন্য রেওয়াতে আমরা পাই ছয় বছর: হাসান মাহমুদ) এবং তাঁহাকে নয় বৎসর বয়সে কনে হিসেবে তাঁহার বাসায় লইয়া যাওয়া হয়, এবং তাঁহার পুতুলগুলি তাঁহার সাথে ছিল এবং যখন তিনি দেহত্যাগ করিলেন তখন তাঁহার বয়স ছিল আঠারো।
(ঘ) সহি মুসলিম – বুক ০৩১ নং ৫৯৮১:
আয়েশা (রা.) বলিয়াছেন যে তিনি আল্লাহর রাসুলের (সা.) উপস্থিতিতে পুতুল লইয়া খেলিতেন এবং যখন তাঁহার সঙ্গিনীরা তাঁহার কাছে আসিত তখন তাহারা চলিয়া যাইত। কারণ তাহারা আল্লাহর রাসুলের (সা.) জন্য লজ্জা পাইত। যদিও আল্লাহর রাসুল (সা.) তাহাদিগকে তাঁহার কাছে পাঠাইয়া দিতেন।
সহি বুখারির ব্যাখ্যা শুনুন। হাদিসটার ফুটনোটে ‘ফতহুল বারি’র লেখক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি: “পুতুল ও একই রকম ইমেজ অবৈধ কিন্তু ইহা বৈধ করা হইয়াছিল তখন আয়েশার (রা.) জন্য। কারণ তিনি ছিলেন ছোট বালিকা, তখনও তিনি বয়স্কা হননি।” (ফতহুল বারি, পৃষ্ঠা ১৪৩, ১৩ খণ্ড)
নবী (সা.) পুতুল বৈধ করেছিলেন এটাই আসল কথা। কী কারণে করেছিলেন সেটা ইমামের জানা সম্ভব নয়। কারণ তিনি রাসুলের (সা.) ৮০০ বছর পরের হাজার মাইল দূরে মিসরের লোক, রাসুলের (সা.) সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি। ওটা তাঁর ব্যক্তিগত মত মাত্র।
এবারে আরও কিছু সংশ্লিষ্ট দলিল।
তখন কাবার দেয়ালে ৩৬০টি মূর্তি (বুখারি ৩য় খণ্ড – ৬৫৮) ও অনেক ছবির সঙ্গে ছিল হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবিও। উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “রাসুল (সা.) হযরত ঈসা (আ.) ও মাতা মেরির ছবি বাদে বাকি সব ছবি মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন।” (সিরাত (ইবনে হিশাম/ইবনে ইশাক-এর পৃষ্ঠা ৫৫২)
এবারে সাহাবি ও খলিফারা।
দুনিয়ার প্রায় এক চতুর্থাংশ জয় করেছিলেন মুসলিমরা। সবই অমুসলিমের দেশ এবং সেখানেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিমা-ভাস্কর্য ছিল, সেগুলোর তো সবই ভেঙে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেও আমরা তেমন দলিল পাই না। ৭১০ সালে হিন্দু রাজা দাহিরের দেশ সিন্ধু জয় করার পর কয়টা মূর্তি ভেঙেছিলেন মুহম্মদ বিন কাশেম? ভাস্কর্য-মূর্তি তো দূরের কথা কোনো প্রতিমাও ভেঙেছেন বলে জানা যায় না।
রাসুলের (সা.) অজস্র ছবি স্বচক্ষে দেখতে চাইলে ইরানে চলে যান। দেখবেন দেয়ালে ঝুলানো সুদৃশ্য কার্পেটে আছে মা আমিনার কোলে শিশু নবী (সা.), সাহাবি পরিবেষ্টিত নবীজি (সা.), আসমানে বোরাখে উপবিষ্ট নবীজি (সা.) ইত্যাদি।
গুগল করলেই পেয়ে যাবেন– সবই কাল্পনিক ছবি অবশ্য– হাজার বছর ধরে আছে ওগুলো। ইরান এখন তো শিয়া দেশ, কিন্তু ৭৫০ সালে আব্বাসিরা দখল করার আগে পর্যন্ত ওটা সুন্নি উমাইয়াদের রাজত্ব ছিল।
এবারে সাম্প্রতিক কাল। ছবি তো ছবি, নবীজির (সা.) আট ফুট উঁচু, ১০০০ পাউণ্ড ওজনের মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যও ছিল দীর্ঘ ৫৩ বছর। ১৯০২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ২৫ নং স্ট্রিট ম্যাডিসন এভিনিউতে অবস্থিত ম্যাডিসন পার্কের মুখোমুখি নিউইয়র্ক আপিল বিভাগের কোর্ট দালানের ছাদে। ইতিহাসের আরও নয়জন আইনদাতাদের সঙ্গে নবীজির (সা.) আট ফুট উঁচু মার্বেল পাথরের ভাস্কর্যও রাখা ছিল সসম্মানে।
গুগলে ‘এ স্ট্যাচু অব মুহাম্মদ’ সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। মুসলিম সমাজ ও দেশগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ওটা সরানো হয়েছে। এখন ইতিহাসের বাকি নয়জন আইনদাতার ভাস্কর্য রাখা আছে। কোর্টের ভেতরের দেয়ালে ওই দশজনের সঙ্গে তাঁর ভাস্কর্য এখনও আছে কি না জানি না। ওটার ছবি এখনও আছে কি না জানি না।
কোরান-রাসুল (সা.)-সাহাবি-খলিফা-সাম্প্রতিক কাল তো অনেক হল, মধ্যপ্রাচ্যের কী খবর? হাঙ্গামা করার আগে বাংলাদেশের ইমামদের ভেবে দেখা দরকার কেন মধ্যপ্রাচ্যের ইমামেরা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নন। সৌদি আরবেও বহু ভাস্কর্য আছে। গুগল করুন ‘স্ট্যাচু ইন মুসলিম ওয়ার্ল্ড’ কিংবা ‘স্ট্যাচু ইন সৌদি আরব’– রাস্তার মোড়ে মোড়ে উটের, কবজি থেকে হাতের আঙুলের, মুসলিম বীরদের এবং আরও কত ভাস্কর্য। সেখানকার মওলানারা জানেন কোরান ও রাসুল (সা.) সুস্পষ্টভাবে প্রতিমাকে নিষিদ্ধ করে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে বৈধ করেছেন। তাই তাঁরা মুসলিম বিশ্বে অজস্র মূর্তি ও ভাস্কর্যকে অস্বীকৃতি জানাননি।
এবারে কোরান। কোরানে সুস্পষ্ট বলা আছে: (ক.) মূর্তিপূজা শয়তানের কাজ (মায়েদা ৯০) এবং (খ.) “এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ?” (আম্বিয়া ৫২)।
অর্থাৎ কোরানের নিষেধ মূর্তিপূজা, উপাসনা-আরাধনা-ইবাদত সম্পর্কে। কারণ, মূর্তি স্রষ্টার অংশীদার অর্থাৎ শরিক হয়ে দাঁড়ায়। এটাই মানুষকে মুশরিক বানায়। তাহলে যে মূর্তিকে আরাধনা ইবাদত করা হয় না, যে মূর্তি সৌন্দর্য্য বাড়ায়, সুসজ্জিত করে সে ব্যাপারে কোরান কী বলে? এখানে আমরা অবাক হয়ে দেখব কোরান সুস্পষ্ট ভাষায় ভাস্কর্যের অনুমতি দেয়। উদ্ধৃতি:
“তারা সোলায়মানের (আ.) ইচ্ছানুযায়ী দূর্গ, মূর্তি, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।” (সুরা সাবা, আয়াত ১৩)
নবীজি (সা.) মূর্তি-ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা কোরানের ওই আয়াতের বিরুদ্ধে যেত, সেটা সম্ভব নয়। আরাধনা করলে সেটা হয় প্রতিমা আর না করলে হয় ভাস্কর্য (মূর্তি)। ইসলাম প্রতিমার বিরুদ্ধে, ভাস্কর্য ও মূর্তির বিরুদ্ধে নয়।
আদি থেকে মানুষ স্রষ্টা খুঁজেছে, সূর্য-চন্দ্র থেকে শুরু করে পশু-পাখিকে, এমনকি নিজেরাই মূর্তি বানিয়ে আরাধনা করেছে। যে হযরত মুসা (আ.) মানুষকে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম স্রষ্টার দিকে ডেকেছেন তাঁর বিশ্বাসীরা বাছুরের মূর্তির আরাধনা করেছে। যে ঈসা (আ.) মানুষকে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম স্রষ্টার দিকে ডেকেছেন তাঁর বিশ্বাসীরা তাঁর তো বটেই, তাঁর মায়েরও (মাতা মেরি) মূর্তি বানিয়ে আরাধনা শুরু করেছে। যে গৌতম বুদ্ধ স্রষ্টার ধারণা ত্যাগ করে কর্মফলের কথা বলেছেন, তাঁর অনুসারীরা তাঁর মূর্তি বানিয়ে আরাধনা শুরু করেছে। এখানেই ইসলামের আপত্তি: ইসলাম আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক বা অংশীদার করার ঘোর বিপক্ষে।
তাই হয়তো অতীত বর্তমানের কিছু ইমাম সরাসরি মূর্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিমা ও ভাস্কর্যের পার্থক্য উপেক্ষা করছেন। ইমামেরা প্রতিমার বিরুদ্ধে বলুন অসুবিধা নেই, কিন্তু ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা কোরান-রাসুলের (সা.) বিরুদ্ধে দাঁড়ানো হয় কি না, তাঁরা ভেবে দেখতে পারেন। কারো দরকার হলে উপরোক্ত সূত্রগুলোর কপি দেওয়া যেতে পারে।
মূর্তি বিড়ম্বনার ইসলামি আঙ্গিক

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এসব বাল ছাল মূর্তি/ভাস্কর্যর জন্য খরচ করারই বা দরকার কি? খামাখা বিতর্কের জন্ম দেয়...

১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪২

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন বলেছেন: ভাষা ভাল হলেই ভাল হয় ।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০৬

আল ইফরান বলেছেন: এই ভাস্কর্য (বা মূর্তি) স্থাপন করে কি সৌন্দর্যবৃদ্ধি হয়েছে এই সুন্দর চত্বরটির?
পিছনে বাংলাদেশের একটা ম্যুরাল ছিলো, সেইটা যে ঢাকা পড়ে গেলো সেইটা নিয়ে কারো চেতনানূভুতি দেখলাম না।
আমাদের মত যারা প্রায়ই এখানে যায় কেবল তারাই বুঝবেন কি পরিমান দূর্বল সেন্স থেকে এই জিনিসটাকে এখানে স্থাপন করা হয়েছে।
এসথেটিক্যালি এই অদ্ভুত ভাস্কর্যটি যে কি ধরনের ভিস্যুয়াল নুইসেন্স তৈরি করেছে সেইটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিরুচির বিষয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.