|  |  | 
| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা একটি নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আর সেই নামটি হলো প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দেশজুড়ে এক নতুন আশা, এক নতুন স্বপ্নের প্রতিফলন এই মানুষটি। তাঁকে ঘিরে সাধারণ মানুষ যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, তা অনেকটা সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ বা আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি ড. মাহাথির মোহাম্মদের প্রতি তাঁদের জনগণের বিশ্বাসের মতোই। সাধারণ মানুষের ভাবনা  ড. মুহাম্মদ ইউনুসই হয়তো পারবেন বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও বাকস্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে। আমারও বিশ্বাস ছিল এবং আছে বাংলাদেশের মানুষের এই প্রত্যাশা অমূলক নয়। কিন্তু এমন রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রয়োজন সময়, সততা, সর্বস্তরের সহযোগিতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দীর্ঘদিনের নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতির আমূল পরিবর্তন।
তবে স্বভাবগতভাবেই আমাদের দেশের একটি বিশেষ শ্রেণি সেই চিরাচরিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি কিংবা আসার সদিচ্ছাও তাদের নেই। আমাদের দেশের একটি শ্রেণির লক্ষ্যই হচ্ছে এদেশের মানুষকে গিনিপিগে রূপান্তর করে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করা। তাই যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে একটি কথা বহুল প্রচলিত, “রাজার পরিবর্তন হলেও রাজনীতিতে নীতির পরিবর্তন হয় না।” স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে বহুবার সরকারের পরিবর্তন হয়েছে, কখনো নির্বাচন, কখনো সামরিক অভ্যুত্থান আবার কখনো বা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের ছত্রিশ দিনের গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের এক নতুন সূর্যোদয়। এই গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত ফসল ছিল ৫ আগস্ট। দীর্ঘ পনেরো বছরব্যাপী আওয়ামী লীগ জোটের স্বৈরশাসনের পতন। সেই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বহু দোসরের দেশ থেকে পলায়ন। ৫ আগস্টের পর জাতি এক ঐতিহাসিক মোড়ে এসে দাঁড়ায়। তখন দেশের আপামর জনগণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রত্যাশায় একক সত্তায় মিলিত হয়ে অনুরোধ জানায় জাতির এই কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিতে হবে এমন একজন মানুষকে, যিনি রাজনীতির নয়, নীতির প্রতীক। সেই প্রেক্ষাপটে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ গঠিত হয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
যদিও কেউ কেউ বলার চেস্টা করেন , বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। কিন্তু যারা এমন কথা বলছেন তারা হয়তো ভুলে গেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলো ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ও সমর্থন দেওয়া বাংলাদেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষের সরকার। তাই যারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনির্বাচিত বলে অবজ্ঞা করছেন, তারা প্রত্যক্ষভাবে জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করে দেশকে স্বৈরাচারের কবলে রাখার পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনতার সম্মিলিত ইচ্ছা ও বিপ্লবের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত সরকার। তাই এই সরকারের সঙ্গে দেশের অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষগুলো অন্তত আছে।
বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক প্রত্যাশার শিকড় খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হয় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে। সেই সময় সাধারণ মানুষ শুধু একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য লড়াই করেনি; লড়াই করেছিল স্বাধীনতা, ন্যায়, সমতা, গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদার জন্য। আমাদের অগ্রজেরা বিশ্বাস করেছিল এই দেশ হবে এক ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র, যেখানে শোষণ থাকবে না, মানুষ কথা বলবে নির্ভয়ে, বিচার পাবে অবাধে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৪ বছরেও কোনো সরকারই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল ও তা দীর্ঘস্থায়ী করতে দেশের স্বাধীনতাকেই জলাঞ্জলি দিতে প্রস্তুত ছিল স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী জোট সরকার।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা তার প্রতি ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই শুধু একজন শাসক নন, হয়ে উঠলেন একজন শোষক। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল তিন বছর সাত মাস হলেও জাতির জন্য তা ছিল এক দুঃস্বপ্নময় অধ্যায়। দুর্ভিক্ষ থেকে অগণতান্ত্রিক একদলীয় বাকশালী শাসন সহ সবই দেখতে হয়েছে তাঁর শাসনামলে। তাঁর স্বল্প মেয়াদের শাসনে দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়, আর সদ্য স্বাধীন দেশ পরিণত হয় গুম, খুন ও দুর্ভিক্ষের রাজ্যে। স্বাধীনতার যে চেতনা মানুষ রক্ত দিয়ে অর্জন করেছিল, তা অল্প সময়েই মুছে যায় রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের হিংস্র থাবায়।
এরপর ইতিহাসে আসে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্থান। তিনি নতুন করে গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ আবারও প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করে। দেশে গনতন্ত্র তথা বহু দলীয় রাজনীতি মানুষের বাকস্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহ বাংলাদেশের মানুষের ভগ্যের অভূতপূর্ব উন্নয়নের নতুন পথ উন্মোচন হয়। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে তাঁর হত্যাকাণ্ডে সেই আশার সূর্য দ্রুতই অস্তমিত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এবং দীর্ঘ নয় বছর কঠোর স্বৈরাচারী শাসন চালান। এর পরিণতি হয় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আবার নতুন স্বপ্ন দেখে হয়তো এবার প্রতিষ্ঠিত হবে সেই গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা সহ তাদের ন্যায্য অধিকার যার জন্য এদেশের মানুষকে  জীবন দিয়ে হয়ে ছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধপ ও ১৯৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে।
১৯৯১ সালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম অবাধ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন  ক্ষমতায় আসে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি। কিন্তু অচিরেই স্পষ্ট হয়ে যায়, এই সরকারও অতীতের পুনরাবৃত্তি করছে। গণতন্ত্রের জায়গায় আসে দলীয়করণ, জনস্বার্থের স্থলে ব্যক্তিস্বার্থ। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ একুশ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে নতুন প্রতিশ্রুতির পসরা নিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেই প্রতিশ্রুতির অনেকটাই রয়ে যায় রাজনৈতিক ভাষণ আর মিথ্যার ফুলঝুরিতে । দেশ আবারও পড়ে অস্থিরতার চক্রে।  ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও ক্ষমতাসীনদের চরিত্র বদলায়নি। বেড়েছে দুর্নীতি, দমননীতি, দলীয় নিয়োগ ও ক্ষমতার বেপরোয়া ব্যবহার। এরপর ক্ষমতা আবার মুদ্রার অপর পিঠে চলে যায়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য একই মুদ্রায় বন্দি থাকে।
এরপর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের রাজনীতিতে রচিত হয় এক কালো অধ্যায়। জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে ফখরুদ্দীন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রথম দিকে ফখরুদ্দীন ও মঈনের সরকার জনগণের মন আকর্ষণের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিলেও তার অন্তরালে লুকিয়েছিল গভীর ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্র বাস্তব রূপ নেয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। সেই নির্বাচনের পেছনে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশের বিশেষ প্রভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী চৌদ্দদলীয় জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে এবং বাংলাদেশকে একটি কর্তৃত্ববাদী, অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করে। জাতি শেখ হাসিনার এই দীর্ঘ অবৈধ শাসনামলের চরম মূল্য দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক দুঃস্বপ্ন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতার পর যে রাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটি ক্রমেই পরিণত হয় ভয়, গুম, হত্যা, দুর্নীতি ও নির্যাতনের রাষ্ট্রে। এই দীর্ঘ একনায়কতান্ত্রিক শাসনের পর ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে দেশের নিঃশেষিত মানুষ রাজপথে নেমে আসে এবং ঘটে গণঅভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান কেবল একটি সরকারের পতন নয়, এটি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের আর্তচিৎকারের ফল। সেই জনজোয়ার থেকেই জন্ম নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক নতুন আশা, এক নতুন সূর্যের প্রতীক হিসেবে। ড. ইউনুসের সরকার যে পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছে, তা সহজ নয়। গত পনেরো বছরে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে এমনভাবে দলীয় আনুগত্যের সংস্কৃতি গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে এখনো প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তার প্রভাবমুক্ত নয়। শেখ হাসিনার আমলে যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যই ছিল নিয়োগের প্রধান মানদণ্ড। ফলে রাষ্ট্রযন্ত্রে আজও বিরাজ করছে অযোগ্যতা, পক্ষপাত ও আমলাতান্ত্রিক দাসত্ব। এই বাস্তবতায় ড. ইউনুস সরকারের পক্ষে দ্রুত কোনো পরিবর্তন আনা কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবুও মানুষ আশাবাদী কারণ এই সরকার অন্তত সৎ উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ আজ যে সংকটে আছে, তা শুধু রাজনৈতিক নয় এটি নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকট। রাষ্ট্রকে পুনর্গঠন করতে হলে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,  সশস্ত্র বাহিনী  সহ প্রতিটি খাতে গঠনমূলক সংস্কার জরুরি। দুর্নীতির শিকড় যতদিন উপড়ে ফেলা না যাবে, ততদিন কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কারণ যেখানে মানুষ ভয় ছাড়া কথা বলতে পারে না, সেখানে গণতন্ত্র টেকে না। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময় এদেশে বাকস্বাধীনতা এক ভয়ংকর বিলাসিতায় পরিণত হয়েছিল। সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র, রাজনীতিক সবাই আতঙ্কে বসবাস করত। ড. ইউনুসের সরকার ইতোমধ্যেই সেই ভয়ের সংস্কৃতি ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ নতুনভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
তবে এই পুনর্গঠনের পথে কোন বাধা কম্য নয়। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিটি পদে পদে ই বাঁধার সম্মুখীন। শেখ হাসিনার শাসনামলে অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থসম্পদ অর্জনকারী এক শ্রেণির সুবিধাভোগী এখনো রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রভাব বিস্তার করে আছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। একই সঙ্গে ভারত এখন বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব হারানোর আশঙ্কায় নানা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত নানা অযৌক্তিক সুবিধা হারিয়েছে। তাদের গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক পরিসরে অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে ইউনুসবিরোধী প্রচার ও ভীতি প্রদর্শনের প্রবণতা। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন কৌশলগত দৃঢ়তা ও জনসমর্থন যা ড. ইউনুস সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি।
বাংলাদেশের মানুষ এখন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনায় দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেটি শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়  এটি হবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পুনর্জন্মের পরীক্ষা। প্রশ্ন হলো এই নির্বাচন কি সত্যিই জনমানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে? কারণ যতদিন না রাষ্ট্রব্যবস্থার শিকড়ে সংস্কার আসে, ততদিন শুধু সরকার পরিবর্তনে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আসবে না। নতুন নেতৃত্বকে তাই শুধু নির্বাচনে জয়ের জন্য নয়, বরং জাতির নৈতিক ও সাংবিধানিক পুনর্গঠনের দায়িত্বও নিতে হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা খুবই অল্প তারা চায় একটি সৎ সরকার, যেখানে দুর্নীতিবাজদের স্থান নেই  যেখানে মানুষ মত প্রকাশে স্বাধীন যেখানে আইন সবার জন্য সমান  এবং যেখানে রাষ্ট্রের সম্পদ কিছু গোষ্ঠীর হাতে বন্দি নয়, বরং মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের সম্ভাবনা আজ নতুন করে জেগেছে। কারণ  ড. মুহাম্মদ ইউনুস কেবল একজন প্রশাসক ই নন তিনি একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তক, যিনি সারা বিশ্বে ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন অর্থনীতি ও ন্যায় একসাথে চলতে পারে।
বাংলাদেশের মানুষের রক্ত, ঘাম ও আশার বিনিময়ে যে পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে, তা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সহনশীলতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সর্বোপরি জনগণের অব্যাহত অংশগ্রহণ। বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে যদি সঠিক দিকনির্দেশনা নেওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো আধুনিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে। কিন্তু যদি আবারও স্বার্থান্ধ রাজনীতি মাথাচাড়া দেয়, তাহলে আমরা ফিরে যাব অতীতের অন্ধকারে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকার সেই আলো দেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে। এখন দেখার বিষয় এদেশের রাজনীতিবিদসহ আমরা সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষ পর্যন্ত কতটা সহযোগিতা করতে পারি? আমার বিশ্বাস, সৎ নেতৃত্ব, সময় ও সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকলে বাংলাদেশ বদলাবেই। এই পরিবর্তন শুধু সরকারের নয় এটি হবে জাতির আত্মপরিচয়ের পুনর্জন্ম, যেখানে বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতার আলোকবর্তিকা।
 ১ টি
    	১ টি    	 +১/-০
    	+১/-০©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫  দুপুর ২:১১
৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫  দুপুর ২:১১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: করাপশন যারা দুর করবে তারা নিজেরাই করাপটেড ।