নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধ্যাত্মিক পুরুষ, ধর্মগুরু; খানকা থেকে বলছি।

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

জাকির এ মাহদিন

আমি পথিক। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। আক্ষরিক অর্থেই আমি পথিক। একে একে জীবনযাত্রার সব সুতো কেটে দিচ্ছি। আবার শূন্যের উপর নির্মাণও করছি। এটাই প্রকৃতপক্ষে জীবন। অথবা- জীবন এমনই। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ির দুরন্ত প্রয়াস, যে সাগরের পাড় নেই। আমি মানবতার মুক্তির জন্য বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শোষিত-বঞ্চিতের পাশে দাঁড়াতে চাই।

জাকির এ মাহদিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৫

‘মানুষ’ হিসেবে সমস্ত মানবজাতির এমন কতগুলো মৌলিক মিল ও ঐক্য রয়েছে যাতে সবাই এক প্লাটফরমে আসতে পারে। জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্কেলে সমস্ত মানবজাতি একমত হতে বাধ্য। এটাই জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। বিরোধ মীমাংসা করা, ঐক্য সৃষ্টি করা, মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানবতাবোধ জাগিয়ে তোলাই ‘শিক্ষা’ ও ‘জ্ঞানের’ কাজ। স্বাভাবিকভাবে কে কোন ধর্মের, কোন দলের সেটা বিবেচ্য নয়। এমনকি জাতি হিসেবে বিভিন্ন দল, ধর্ম ও গোষ্ঠীর অতীতের ভুলগুলোও নমনীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে হবে এবং জাতির ‘সামগ্রিক মঙ্গল’ অনুসন্ধান করতে হবে। মোটকথা, যেসব ইস্যু ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রায় সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় সেগুলো নিয়েই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন ও বিশাল অংশের তরুণ সমাজকে এগুতে হবে। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অন্ধ আক্রোশ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কুফল পুরো জাতি ভোগ করছে। সবাই নিজ নিজ মতবাদ ও দর্শন সত্য বলে দাবি ও প্রচার করছে। এ থেকে আপনি আমিও মুক্ত নই। তাই ভুল-শুদ্ধ ‘পার্থক্য’ করার জ্ঞান যুব সমাজেকে রপ্ত করতে হবে। অযথা বুঝে-না-বুঝে চিৎকার-চেঁচামেচি ও বিতর্কে কোনো লাভ নেই।



আমাদের উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে চলবে না, এই সমাজ ভেতর থেকে নষ্ট হয়ে গেছে এবং সুকৌশলে ব্রিটিশরাই কিছু মৌলিক ও জাতিগত বিতর্ক সৃষ্টি করে গেছে। এর সাথে স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে আরও কিছু যোগ হয়েছে। এর একটা বিতর্ক এই- ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। মূলত ‘ধর্ম’ কি, ‘ধর্ম-নিরপেক্ষতাই’বা কি এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের’ চরিত্র কি হবে তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার মতো বুদ্ধিজীবী আমাদের দেশে নেই। এমন আলেমের সংখ্যাও বিরল। যে স্বল্প সংখ্যক আলেম ও জ্ঞানী আছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা কোণঠাসা, মিডিয়ায় উপেক্ষিত। আর দার্শনিক, সমাজতান্ত্রিক বা ইসলামি যেসব বুদ্ধিজীবী মিডিয়ায় নাচানাচি করেন, তাদের নিজস্ব কোনো জ্ঞান নেই বললেই চলে। লক্ষ্য করে থাকবেন এরা বিদেশি লেখক/বুদ্ধিজীবীদের উদ্ধৃতি আওড়ানো ছাড়া কোনো তত্ত্ব ‘প্রমাণ’ করতে পারেন না। আর এখানেই সমস্যার সূত্রপাত। অর্থাৎ এই যে ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিদিন বুদ্ধিজীবীদের মুখে খই ফুটছে, অথচ বিষয়গুলো তাদের নিজেদের কাছেও সুস্পষ্ট নয়। তাই জনগণকে কোনো একক প্লাটফরমে একত্রিত করা যাচ্ছে না। সবেচেয়ে বড় কথা, যে মূল বিতর্কটি নিয়ে আজকের বাঙ্গালি/বাংলাদেশি জাতি দ্বিধা-বিভক্ত, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট, সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মডেল পৃথিবীর কোথাও নেই, কখনও ছিলোও না।



সুতরাং সাধারণ কোনো উপায়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার বা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার কোনো পথ আপাতত খোলা নেই। তবে পথ অবশ্যই আছে, সেটা এখনও প্রকাশ না। আমরা এমন একটি দর্শন, এমন একটি আদর্শ, এমন কিছু নীতিমালা এবং এমন একজন নেতা আশা করছি, সূর্য উঠলে যেমন সবাই দেখে ও স্বীকার করে, এক্ষেত্রেও সবাই দেখবে এবং স্বীকার করবে। কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি নন। অথবা বিতর্ক উঠলেও মিলিয়ে যেতে সময় নেবে না এমন কেউ। প্রাথমিকভাবে রাজনীতির বাইরে থেকেই তাকে আলো ছড়াতে হবে।



ধর্ম, ধর্মনিরপেক্ষতা, গনতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র প্রয়োগ করতে হলে সবার আগে এদেশকে বুঝতে হবে, দেশের মানুষকে বুঝতে হবে, মানুষের রক্তের ‘তাপমাত্রা’ মাপতে হবে। ভূমির বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে। বাঙ্গালির হাজার বছরের ইতিহাস ঘাটতে হবে। আর এটা বিদেশি কারও পক্ষে সম্ভব না। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা একাধিক বিশ্ববরেণ্য রাজনীতিক পেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক, লেখক বা বুদ্ধিজীবী পাইনি। শেখ মুজিব কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন? শহীদ জিয়া ব্যর্থ হয়েছিলেন কেন? কারণ তাদের আশপাশে আমাদের নিজস্ব ‘দার্শনিক’ ও ‘বুদ্ধিজীবীর’ বড় অভাব ছিল যা এখনও রয়ে গেছে। বস্তুত ধর্মের সঙ্গে কোনো মানুষের বিরোধ নেই। ধর্ম বুঝতে পারলে ধর্ম নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্রের কোনোই প্রয়োজন ছিল না। ধর্ম নিয়ে এই সব আতিপাতি ও বিতর্কগুলো ব্রিটিশদের সৃষ্টি। আমি দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে আজকের যুবসমাজকে আহ্বান করব, অন্ধতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা পরিহার করে ধর্মকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য।



মূল গাছের যত্ন ঠিকমতো না নিলে তা দ্রুত আগাছার তলে পড়ে যায়। আগাছা বাড়ে তাড়াতাড়ি, যত্ন ছাড়া, খুব সহজেই। আজ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার কথা বলা হচ্ছে, শিক্ষা ও সাহিত্য থেকে আলাদা করা হচ্ছে, করা হচ্ছে সমাজ ও পরিবার থেকেও আলাদা। শেষে ব্যক্তিজীবন থেকেও অবশ্যই। ঠিক যেমন একজন মানুষের শরীর থেকে হাত-পা, চোখ-কান-নাক, মাথা আলাদা করে ফেলা। তাহলে ধর্মের স্থান কোথায়? একজন বললেন, ‘সাহিত্যের সঙ্গে সাহিত্যিকের ব্যক্তিগত জীবন ও ধর্মচিন্তা বা ধর্ম-কর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।’ আমার প্রশ্ন, তাহলে ‘সাহিত্য’ কেন? হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর সারাদেশ তাকে নিয়ে মাতোয়ারা। অথচ তার সাহিত্য তাকেই মুক্তি দিতে পারেনি। তার স্ত্রী, তার সন্তানগণ তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি নিজেও সারা জীবন এই কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছেন। অথচ ধর্ম তাদের উভয় পক্ষকে কত সহজেই এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারত। একজন পুরুষ- যদি তার সবদিক থেকে সামর্থ থাকে, তাহলে ‘বিশেষ সমস্যার’ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়েতে স্ত্রী অসন্তুষ্ট হওয়ার কথা না। অবশ্য নারীবাদীদের কথা ভিন্ন। যাহোক, আমাদেরও দায় কম না। আমরা ধর্মকে সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌঁছাতে না পারাতেই এ সমস্যা। এখন যে অবস্থা! সারা ক্ষেতে শুধু আগাছা আর আগাছা। ফসল কোথায়? এসব কি পরিষ্কার করার সামর্থ্য আমাদের আছে? আর যারা পরিষ্কার করবেন, তারা যদি আগাছাসমূহকেই ফসল মনে করেন তাহলে কি হবে এবং কি হতে পারে?



‘বিতর্ক’ কখনও শেষ হবার নয়, ফলাফল যেই লাউ সেই কদু। তাই প্রথম কথা, যারা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে কিছু করতে যাবেন তারা পরস্পরকে কতটুকু ছাড় দিবেন বা দিতে রাজি তা দেখতে হবে। নিজের মতের উপর অটল থাকলে কখনও কিছু হবার নয়। হলেও ভঙ্গুর। কখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিটি সদস্য পর্যন্ত প্রত্যেকেই পরস্পরকে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত হয় এবং নির্দিষ্ট কারও নেতৃত্ব সহজভাবে মেনে নেয়, পাশাপাশি প্রতিপক্ষের সঙ্গেও একদেশ একজাতির প্রশ্নে বা মানবিক প্রশ্নে সহাবস্থান করতে পারে তা ভালোভাবে খুঁজে নিতে হবে। দ্বিতীয় কথা, ইস্যুর অভাব নেই। তাই মৌলিক ইস্যুগুলো কি তা খুঁজে বের করে ধীরে-সুস্থে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, কোনো একগুয়েমি নয়। দাওয়াতে আপনাকে ২০টা আইটেম দেয়া হল। অথচ আপনি খেতে পারবেন বড়জোর ৩টি। তখন কি করবেন? নিশ্চয় ২০টির মধ্যে ৩টি বাছাই করবেন। সুতরাং সব বিষয় আলোচনায় আসতে পারে না, আসার দরকারও নেই। আসলে শেষ হবে না। যদিও আলোচনা চলতে হবে দীর্ঘমেয়াদি, লাগাতার। বিশেষ পরিস্থিতি বা স্বাভাবিক পরিস্থিতি- সর্বাবস্থায়; পক্ষ-বিপক্ষ সবার সঙ্গেই।



রাজনৈতিক মতবাদগুলোকে আমরা বুঝবার সুবিধার্থে ডানপন্থী, বামপন্থী ও মধ্যপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করি। আবার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থান মাপার জন্য উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত হিসেবে চিহ্নিত করি। জীবনদর্শনগুলো ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের আলোকে পর্যালোচনা করতে পারি। আবার প্রতিটিতেই চরমপন্থি, উদারপন্থি ও মধ্যপন্থি বের করতে পারি। মোটকথা এভাবে প্রসঙ্গের পর প্রসঙ্গ বাড়বেই। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য কি তা দেখতে হবে। উদ্দেশ্য যদি হয় সমঝোতা ও সমন্বয়, তাহলে এই ভাগ ও বিভক্তিগুলোই সব পথ ক্লিয়ার করে সমাধানে পৌঁছাবে। আর যদি উদ্দেশ্যই থাকে বিতর্ক সৃষ্টি, আলোচনা বানচাল করা, তাহলে ওইসব ভাগ-বিভক্তিই সমাজ ও রাষ্ট্রকেও এভাবে ভাগ ও বিভক্তির দিকে ঠেলে দেবে।



একজন রাজনীতিকের সরল স্বীকারোক্তি, ‘রাজনীতিকদের কখনও বিশ্বাস করতে নেই।’ প্রকৃতই সত্য ও বাস্তব কথাটি তিনি বললেন। নিশ্চয় তার নিজের মধ্যেও ‘এই বাস্তবতা’ পরিবর্তনের একটা আকাঙ্খা প্রায়ই কাজ করে, কারণ সময়ে অসময়ে তারা নিজেরাও এর নির্মম শিকার হন। কিন্তু ‘পরিবর্তন সম্ভব’Ñ এই ‘বিশ্বাসটা’ বোধ হয় তাদের (আমাদের দেশের বর্তমান নেতানেত্রীদের) মধ্যেও নেই। তাই রাজনীতির গতানুগতিক নীতিমালাই তারা অনুসরণ করেন। রাজনীতিকরা দোষ চাপান জনগণের ওপর, আর জনগণ রাজনীতিকদের ওপর। একদল রাজনীতিক মনে করেন, যে ধারায় উন্নতি ঘটছে, দীর্ঘ একটা সময় পর আমাদের সব আশা-আকাঙ্খা পূরণ হয়ে যাবে। এখন শুধু ‘সময়ের’ অপেক্ষা। কিন্তু আমি মনে করি এই বায়বীয় প্রত্যাশা ও সময়ের অপেক্ষায় না থেকে বরং অপেক্ষার সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত। যে হারে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, সে হারে কিন্তু উন্নতি ঘটছে না। আর মূলকথা, ‘বিশ্বাস’ ছাড়া মানবজীবন অচল, স্থবির। তাই পারস্পরিক বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই বিশ্বাসের উন্নতি ঘটায় জ্ঞান।



অনেকে যুক্তি দেখায়, ধর্ম এত ঠুনকো না যে ‘সামান্য’ কথাতেই আঘাতপ্রাপ্ত হবে। যুক্তিটা আপাদমস্তক ভুল। সাদা কাপড়ে সামান্য দাগ লাগলেই দেখা যায়, ধুতে হয়। চিন্তা করি, যাদের এত শ্রদ্ধা করি, বাঙ্গালির ‘বুদ্ধি’ নিয়ে এত গর্ব করি, তাদের ‘ঘিলু’তে এই সামান্য বিষয়টি ধরা পড়ে না? সম্মানিত কোনো ব্যক্তি বা বিষয় নিয়ে সামান্য কটূক্তি বরদাশত করা যায় না। ব্যাপারটা যদি আবার সেন্টিমেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় তাহলে তো কথাই নেই। ধর্ম আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কথা হচ্ছে কারও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাত। মানুষের ‘অনুভূতি’ সবচেয়ে স্পর্শকাতর একটি অদৃশ্য অঙ্গ। চোখে সামান্য বালিকণা পড়লেই বিশাল ইট মনে হয়। যে কারণে হাদিস শরীফে মনে বা অনুভূতিতে আঘাত দেয়াকে মসজিদ ভাঙ্গার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, যে বা যারা মানুষের ‘অনুভূতিতে’ আঘাত দেয়ার মত নির্মম নিচু কাজ করতে পারে, তারা করতে পারে না হেন খারাপ কাজটা নেই। সুতরাং অন্যদের তো বটেই, তার বা তাদের নিজেদেরও সমূহ ক্ষতি থেকে বাঁচাতে এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।



অর্থনৈতিক মুক্তিই জীবনের ‘সার্বিক’ মুক্তি নয়। উন্নত বিশ্বের অর্থনৈতিক মুক্তি সত্ত্বেও তাদের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই তাদের নজর এখন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশ্বের প্রতি। তাই বর্তমান বিশ্বের যেকোনো মুসলিম দেশ বিশেষত বাংলাদেশকে ইরাক-আফগানিস্তানের পরিণতি বরণ বা ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সুতরাং জ্ঞানগত বিপ্লব, একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজ গঠন, সকলের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন এবং সমস্ত মানবজাতির মুক্তিই আমাদের মূলকথা। মানুষ কি চায়, তার মৌলিক (আধ্যাত্মিক) চাহিদা কি, সমস্যা ও সম্ভাবনা কি, সার্বিক মুক্তি অর্জনের পথ কি এসব আমাদের ভাবতে হবে। তর্ক-বিতর্ক, দলাদলি, হিংসা-বিদ্বেষ এসবে সময় নষ্ট আর নয়। আসুন নিজেদের সম্পর্কে সজাগ হই, পারস্পরিক ‘পরিচয়’ অর্জন করি।



আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামী মূলত একটা রাজনৈতিক বা রাজনীতিনির্ভর দল। এর বিশেষ লক্ষণ, আত্মশুদ্ধির প্রাধান্যে নয় বরং অন্যান্য দলের মতই ক্ষমতার মাধ্যমে সমাজ ও জাতির সামগ্রিক পরিবর্তন ও কল্যাণকামী ইচ্ছা। এই ইচ্ছাটা শুভ হলেও কর্মপন্থাটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল বলা যায়। কারণ ক্ষমতার মাধ্যমে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মুক্তি আনা গেলেও সার্বিক মুক্তি অসম্ভব। সুতরাং ধর্মীয় দল হিসেবে দাবী করে ধর্মকে তারা যেভাবে ব্যবহার করতে চায় তাতে আমার আপত্তি আছে। যদিও তাদের দুর্বল তবে আপাত রঙ্গীন ধর্মীয় ব্যাখ্যাগুলো আজকের আধুনিক শিক্ষিত একদল ধর্মপ্রবণ যুবসমাজকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এর কতক বাস্তব কারণও আছে। যেমন (ক) আলেম-উলামাদের বৌদ্ধিক দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ, (খ) আন্তর্জাতিক লবিং ও অঢেল অর্থ খরচ, (গ) বিশেষ করে আজকের অন্যান্য ইসলামিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শিক ও দার্শনিক দুর্বলতা ইত্যাদি।



যাহোক, ক্ষমতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট- এসব একই, কোনো পার্থক্য নেই। আজকের রাজনৈতিক দলগুলো দেশজাতি গঠনে যে কারণে ব্যর্থ, আমার দৃষ্টিতে সেই একই কারণ ফখরুদ্দীন, ড. ইউনুস, কামাল হোসেন, বি চৌধুরীদের মধ্যেও রয়েছে। রয়েছে শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম কিংবা কওমি ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যেও। এছাড়া তাদের মধ্যে অযোগ্যতার আরও কিছু বাড়তি লক্ষ্মণ রয়েছে যা ইতোমধ্যেই মিডিয়ায় জোরে-শোরে প্রকাশ।



পরিশেষে এ নিয়ে বন্ধুবর জুনায়েদ গালিবের একটি উদ্ধৃতি টেনে এ লেখা শেষ করছি। “বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদ। হাল্কা, অগভীর, বায়বীয় ও অসংবেদনশীল ‘বুদ্ধির’ উৎপত্তি সেখান থেকেই। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা না ‘টেকনিক্যাল’, আর না ‘থিওরিটিক্যাল’, কোনোটার মধ্যেই পড়ে না। সামগ্রিকভাবে ‘জ্ঞান’ নামক আলো থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করার ফলাফল এটা। আর দেশ-বিদেশে বিস্তৃত পড়াশোনা করা লোকের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু তাদের অন্তরেও থেকে যায় লোভ, লালসা, ক্ষমতা, বিত্ত, জনপ্রিয়তা ইত্যাদির প্রতি অসম আকর্ষণ। এ কালে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অসম জোয়ারে সামাজিক উন্নয়নের উপাদানগুলি যথাÑ মানবতা, দয়া, মায়া, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে এক সময় মিলিয়ে যায়।”



রাজনীতির মুখোশ ও মনুষ্যত্বের বিকাশ (পৃষ্ঠা-২৪-২৭)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৩

মনসুর-উল-হাকিম বলেছেন: মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।

আপনি ঠিকই ধরেছেন যে, আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সামাজিক শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা সব ব্যবস্থাতেই গলদ রয়েছে।

আসলে, রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম হয় না, ধর্ম মানে দেশের মানুষ - জনগণ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে পারে, কিন্তু দেশের জনগণ ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না, তখন মানুষ হয় ধর্মহীন।

কোনো মানব সমাজ যদি দীর্ঘ দিন ধরে দরিদ্র, অশিক্ষিত, যথাযথ কর্ম-সংস্থানহীন, নৈতিক অবক্ষয়-এর মধ্যে থাকে তবে সেই সমাজ ধীরে ধীরে ধংসপ্রাপ্ত হয় - জাতি পরিনত হয় হতদরিদ্র, কুশিক্ষিত, লোভী আর দুর্নীতিপ্রিয় এক অসভ্য সমাজে। বাংলাদেশেও এই প্রক্রিয়ার প্রভাব যথেষ্ট ক্রিয়াশীল।

কুশিক্ষা, অনৈতিকতা, দূর্নীতির অবাধ প্রসারে সাধারণ মানুষ ভুলে গেছে তাদের কল্যানমূখী প্রকৃত সংষ্কৃতি। ফলে কুজনেরা তৈরী করছে অকল্যানমূখী অবাস্তব অপসংষ্কৃতি। সুস্থ্য সংষ্কৃতির স্বাভাবিক চর্চা আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরেই অনুপস্থিত। আমরা বিজাতীয় সংষ্কৃতির অন্ধ-অনুকরণ বা কখোনো বিকৃত অনুকরণ করা শিখেছি আর আমাদের নিজস্ব সংষ্কৃতিকে ঘৃনা করেছি কখোনো অপ-ধর্মের নামে, কখোনো নষ্ট-রাজনীতির নামে কিন্তু আপন সংষ্কৃতির উন্নয়নে চেষ্টা করিনাই। চেষ্টা করবোই বা কিভাবে দূর্নীতি আর সৎ-উন্নয়ন কখনো এক সাথে হয় না, বরং ধর্মহীনতার চর্চাই বেশি হচ্চে।

মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫২

জাকির এ মাহদিন বলেছেন: ধন্যবাদ। আমীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.