| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জেড আই অর্ণব
আমার নিজেস্ব কোন পরিচয় নেই, সহজাতই আমি মানুষের ফ্রেমে বন্দী এক অজ্ঞাতনামা✔
ঘোষণা দিয়ে খুন করতেন ডাকাত শহীদ
ল্যাবরেটরিতে মানুষরূপী দানব বানিয়েছিলেন ড. ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। পরে সেই দানবের হাতেই খুন হতে হয় তাকে। বাংলাদেশেও অনেক ডনকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
ঘোষণা দিয়ে খুন করতেন ডাকাত শহীদ।
পুরান ঢাকার কাউন্সিলর যুবদল নেতা আহাম্মদ হোসেনকে ফোন করেন ডাকাত শহীদ। ফোনে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘টুপিওয়ালা, তোর দিন শেষ।’ এ হুমকির তিন মাস পর আহাম্মদ হোসেনের লাশ পড়ে। সূত্রাপুর থানার এসআই গৌতম রায়কে কলকাতা থেকে মোবাইল করেছিলেন ডাকাত শহীদ। ফোনে তিনি এই পুলিশ কর্মকর্তাকেও হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। এরপরই পুরান ঢাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় এসআই গৌতম দাসকে।
শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, ডাকাত শহীদ যাকে ফোনে হুমকি দিতেন, তার লাশ পাওয়া যেত রাস্তায় কিংবা নর্দমায়। পুরান ঢাকায় ডাকাত শহীদের অপকর্ম ছিল ‘সন্ত্রাসের কিংবদন্তি’তুল্য। এক যুগের বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ত্রাস ছিলেন এই শহীদ। কখনো নিজ হাতে মানুষ খুন করেছেন, আবার কখনো তার অদৃশ্য নির্দেশে পড়েছে একের পর এক লাশ। বিদেশে পালিয়ে থেকেও দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণ করেছেন আন্ডারওয়ার্ল্ড। তার নির্দেশ মতো চাঁদা না দিলেই জারি হতো ডাকাত শহীদের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’। শেষ পর্যন্ত অবসান হলো ডাকাত শহীদ যুগের। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, অর্ধশতাধিক খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ডাকাত শহীদ। ডাকাত শহীদের পুরো নাম শহীদুল ইসলাম শহীদ। বাবা মৃত ইসমাইল হোসেন ওরফে আবদুর রহমান। গ্রাম-মাকডাল, থানা- শ্রীনগর, জেলা-মুন্সীগঞ্জ। ইসমাইল হোসেন পেশায় ছিলেন কৃষক। তাই সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি। অবশ্য সেদিকে যেতে ছেলেটির আগ্রহও ছিল কম। তাই সদরঘাটে কুলির কাজ শুরু করেন তিনি। সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা এই কিশোরই একসময় হয়ে ওঠেন নৌ-ডাকাতদের রাজা। সর্বশেষ রাজধানীর বিশেষ করে পুরান ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন। রাজধানীর পুরান ঢাকার এমন কেউ নেই, যিনি ডাকাত শহীদের নাম শোনেননি। আর এমন ব্যবসায়ী নেই, যিনি ডাকাত শহীদকে চাঁদা দেননি। তবে সামনা-সামনি তাকে দেখা লোকের সংখ্যা হাতে গোনা। সেই ডাকাত শহীদ ২০১২ সালের জুনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তার সঙ্গে নিহত হন সহযোগী কালু মিয়া ওরফে পাঞ্চি কালু। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই তার লাশ দেখতে মর্গে ছুটে গেছেন। তবে এই ছুটে যাওয়া কোনো আফসোসের কারণে নয়। মানুষজন সেখানে গেছেন ঘৃণা প্রকাশ করতে। অনেকেই তার লাশের ওপর থুথু ছিটিয়েছেন। তবে ডাকাত শহীদ না থাকলেও রয়ে গেছে তার সহযোগীরা। তারাই এখন চাঁদাবাজি করছে পুরান ঢাকায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ডাকাত শহীদ ২০-২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালের দিকে সদরঘাটে কুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছিঁচকে চুরি করে অপরাধীর খাতায় নাম লেখান তিনি। ধীরে ধীরে শুরু করেন লঞ্চ ডাকাতি। কিন্তু তাকে ধরতে পারে না পুলিশ। তাই তখনই তার নাম হয় ডাকাত শহীদ। এরপর তিনি বিক্রমপুরে বাস শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯০ সালে তিনি বাস শ্রমিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সে সময় অস্ত্র, গুলি আদান-প্রদান এবং টিকাটুলী এলাকায় রাস্তা থেকে চাঁদা উঠানোর কাজ শুরু করেন। ওই বছরেই একটি ডাকাতি মামলায় মুন্সীগঞ্জ জেলে তিন মাস কাটানোর পর বের হয়ে ১৯৯১ সালে কুয়েতে চলে যান। ১৯৯৪ সালে কুয়েত থেকে দেশে ফেরেন এবং নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান। তখন জুরাইনে আবুল গ্রুপের সঙ্গে অস্ত্রের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি শুরু করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী লিয়াকতের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওয়ারীতে টেন্ডারবাজি শুরু করেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরতে হয়নি। অন্যদের বাদ দিয়ে নিজেই নেতৃত্ব নিয়ে শুরু করেন টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি। জুরাইন থেকেই তার একক নিয়ন্ত্রণের হাতেখড়ি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, জুরাইনে তিনি অন্যের ভাড়াটিয়া হিসেবে জমি দখল করে দিতেন। সঙ্গে চাঁদাবাজি তো ছিলই। তখনই তিনি আলিম কমিশনারসহ দুজনকে খুন করেন। এর কিছুদিন পর তাঁতীবাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলেকে খুন করে আলোচনায় চলে আসেন। সবাই তাকে একনামে চিনতে শুরু করেন। নাম বললেই দিয়ে দেন চাহিদা মতো চাঁদার টাকা।
২০০২-০৩ সালের দিকে পূর্ণ উদ্যমে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ট্রাক-বাসস্ট্যান্ড দখল করার কাজ শুরু করেন ডাকাত শহীদ। ২০০৪ সালে ডিবির এসি আকরাম ৫টি অস্ত্রসহ তাকে আটক করেন। ঢাকা কারাগারে এক বছর থাকার পর বের হয়ে আবার চাঁদাবাজি শুরু করেন। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর তিনি যশোর গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেখানে তিনি ‘আরমান’ নাম ব্যবহার করে চলতে থাকেন। ২০০৫ সালে ভারত সীমান্তের পাশে বাসাভাড়া করে অবস্থান করেন। তখন কালু প্রতি মাসে চাঁদার টাকা হুন্ডির মাধ্যমে শহীদের কাছে পাঠাত। এরপর তিনি কলকাতার নাগরিক হিসেবে বসতি স্থাপন করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি নদীয়া, কলকাতা, উড়িষ্যায় অবস্থান করেন। ২০১০ সালে তিনি নদীয়া থেকে নেপালে চলে যান। পরে নিজেকে বাংলাদেশের শিল্পপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে সেখানকার একটি মেয়েকে বিয়ে করেন।
#অসংখ্য খুন, কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় : ডাকাত শহীদ কতগুলো খুন করেছেন তার কোনো পরিসংখ্যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও নেই। শুধু যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে তারই হিসাব দিতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের হিসাবে ৮টি খুনের মামলাসহ দেড় ডজন মামলা ছিল ডাকাত শহীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তবে তার খুনের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৩৮টি মামলার হিসাব তাদের কাছেই ছিল। আর জিডির সংখ্যা সহস্রাধিক। পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকাত শহীদের হাতে যারা খুন হন তাদের মধ্যে আছেন- ওয়ার্ড কমিশনার আলিমসহ দুজন, তাঁতীবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রেমকৃষ্ণ ও তার ছেলে, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মণ্ডল, ওয়ার্ড কমিশনার বিনয় কৃষ্ণ, ছাত্রদল নেতা ছগির আহমেদ, যুবলীগ নেতা শিমুল এবং কমিশনার আহাম্মদ হোসেন, কেরানীগঞ্জের ববি, ছাত্রদল নেতা লাসানী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ ও পরে গেণ্ডারিয়ায় একই দিনে ছয়জনকে হত্যা করেছিলেন এই ডাকাত শহীদ।
ডাকাত শহীদের নামে চাঁদা উঠত কোটি কোটি টাকা। নিচে ৫ লাখ আর উপরে ৫০ লাখ। পুরান ঢাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিল তার শতাধিক ক্যাডার। একেক এলাকা একেকজন নিয়ন্ত্রণ করত। চাঁদা তোলার পর বড় অংশই চলে যেত বিদেশে ডাকাত শহীদের কাছে। আত্মগোপনে থেকেও সহযোগীদের দিয়ে টেলিফোনের মাধ্যমে দেশে নিয়মিত চাঁদাবাজি চালিয়ে যান।
#অভিনেত্রী দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ: একজন অভিনেত্রী দিয়ে পুরান ঢাকার ১০টি এলাকার নিয়ন্ত্রণ করতেন ডাকাত শহীদ। ডাকাত শহীদ এই অভিনেত্রীর মাধ্যমে আন্ডারওয়ার্ল্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদানপ্রদানও করেছেন। প্রায় ৩৫ বছর বয়স্ক ওই অভিনেত্রীর চলচ্চিত্রজগতে বেশ যশ-খ্যাতি ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাত শহীদের হয়ে কাজ করেছেন তিনি।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পুরান ঢাকায় ডাকাত শহীদের একাধিক গ্রুপ এখনো সক্রিয়। তার গ্রুপে অন্তত ১০০ ক্যাডার এখনো আছে। ডাকাত শহীদের অবর্তমানে বাঙাল সুমন নামে এক সন্ত্রাসী পুরান ঢাকায় তার জায়গা দখল করেছে। এ ছাড়া শুটার বিদ্যুতের লোকজনও চাঁদাবাজি করছে।
তথ্যসূত্র:"বাংলাদেশ প্রতিদিন" দৈনিক পত্রিকা
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৭
জেড আই অর্ণব বলেছেন: এমন খবর পেপার বা অন্য কোন যোগাযোগ মাধ্যমে পাইনি!!
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৮
কালীদাস বলেছেন: আরও দক্ষিণে গেলে এক বিখ্যাত টপওয়ার্ল্ড কিং আছেন। তাঁকে ভয় পায়না এরকম কেউ নেই ঐ অঞ্চলে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল, ঐ লোকের ডান হাত বাম হাত যারা থাকে তাদেরকে সে নিজেই মেরে ফেলার ব্যবস্হা করে একটা নির্দিষ্ট সময় পার হলে।

বলেন তো, ঐ লোকের নাম কি?