| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জেড আই অর্ণব
আমার নিজেস্ব কোন পরিচয় নেই, সহজাতই আমি মানুষের ফ্রেমে বন্দী এক অজ্ঞাতনামা✔
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে পড়লাম ড.চকলাদারের চেম্বার থেকে।
ডক্টর যা বললো সবই বিজ্ঞানসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য। অথচ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কেন পারছি না তাও বুঝতে পারছি না।
আপাতত কোথায় যাবো সেটাও বুঝতে পারছি না। ড.চকলাদার A4 পেজে লেখা আমার সমস্যার বৃত্তান্ত ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেই পেপার দুমড়িয়ে ছোট বল বানাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু হাত সেই ইচ্ছেতে সাড়া দিচ্ছে না। কোথায় যেন পড়েছিলাম "মানুষের সকল অঙ্গাণু নিজ নিজ স্বার্থে কাজ করে। কখনোই মালিকের হুকুম পালন করে না।" আমি তার প্রমাণ পেলাম।
ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি, সাথে বুট ঠোকার ক্রমাগত শব্দ। যতক্ষণ গন্তব্য ঠিক করতে না পারছি, ততক্ষণ হাঁটবো- এই ঠিক করেছি। হাতের পেপারটা এখনো অক্ষত আছে। ভাবছি কি লিখেছি আবার পড়বো। কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। মনে মনে ভাবলাম "সেঁজুতি থাকলে ভালো হতো।" তখনই থমকে দাঁড়ালাম। আমার সামনে কেউ থাকলে অবশ্যই বলতো "কি হয়েছে? চোখ চকচক করছে কেন?" ভাগ্যিস কেউ নেই। একটা রিকশা থামিয়ে তাতে চেপে বসলাম।
"মামা, কৈ যাইবেন?"
মামা ডাক'টা কমন হয়ে গেছে। এখন টোকাই থেকে শুরু করে বাসের হেল্পার-কন্ডাক্টর পর্যন্ত মামা ডাকে, ছেলে বুড়ো সবাইকে। শুধুমাত্র ফকির-মিস্কিন'রা ডাকে বাজান বলে। অদ্ভুত!!
"সোজা যেতে থাকেন।"
রিকশা চলতে শুরু করেছে। শীতের হালকা ঠান্ডা বাতাস নাকে-মুখে ডুকে যাচ্ছে। আমি হাতের পেপারের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠান্ডা বাতাসে পেপারটাও কাঁপছে। আমিও কাঁপছি।
"আপনি পড়তে পারেন?"
রিকশা চালক বোধহয় বুঝতে পারলো না যে আমি তাকেই বলেছি। তাই কাঁধে টোকা দিয়ে পুনঃপ্রশ্ন করলাম। সে লজ্জার হাসি দিয়ে বললো,
"না মামা"
"আপনার নাম কি?"
"মঞ্জু। আপনার?"
"অর্ণব। আচ্ছা আপনি হাঁটার সময় পেছনে কোন শব্দ শুনতে পান? বুট পড়ে হাঁটার শব্দ?"
মঞ্জু ঘাড় ঘুড়িয়ে আমার দিকে একবার তাকালো। তার চোখে আমি বিস্ময় দেখতে পেলাম। তারপর মৃদু কণ্ঠে বললো
"না।"
বাকি পথ আর কোন কথা বললাম না। সেও কোন কৌতূহল দেখালো না।
সেঁজুতি'দের বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমেছি মিনিট দুয়েক হবে। যার জন্য সেঁজুতির কাছে আসা, তা আর মনে করতে পারছি না। দু'মিনিট ভাবার পর বাড়ির গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম। কেমন আছে জিজ্ঞেস করে আসি। মূলত চা'য়ের তৃষ্ণা পেয়েছে।
এই নিয়ে তিন বার কলিং বেল চাপলাম। কিন্তু দরজা খুলছে না। ভদ্রতার গণ্ডি না পেরিয়ে বাঁধ্য হয়ে দরজায় কড়া নাড়লাম। প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল। অদ্ভুত! কলিং বেল বোধহয় নষ্ট।
দরজা খুলেছে সেঁজুতি নিজেই। মিষ্টি হাসি দিয়ে ভেতরে যাওয়ার আহ্বান জানালে আমি ভেতরে ডুকে গেলাম। এই প্রথম সেঁজুতি'দের বাড়িতে এসেছি, কিন্তু ও অবাক হলো না। সত্যি বলতে আমি ওকে কখনোই অবাক হতে দেখিনি।
সেঁজুতি সবসময় শাড়ি পড়ে। আজো শাড়ি পড়ে আছে, ঝকঝকে সাদা শাড়ি। হালকা কাজল দিয়েছে টানা চোখে। কপালে কালো টিপ। আমি শিল্পী হলে এখনোই একটা ছবি আঁকতে বসে যেতাম। যেখানে মেয়েটির এক হাতে সাদা গোলাপ আর অন্য হাতে তলোয়ার থাকতো। অনেকটা মাগাদিরা মুভিতে নায়কের ছবির মতো। শুধু কবুতরের জায়গায় সাদা গোলাপ। আজগুবি চিন্তা!
"কি হলো?"
সেঁজুতির কথায় আমার বিভ্রম ভাঙ্গলে বললাম
"চা খাবো"
"তোমার সামনেই চায়ের কাপ"
আশ্চর্য তো! কখন আনলো চা? দরজা খোলার পর সে তো আমার চোখের আড়াল হয়নি। তাহলে? আর ভাবতে না পেরে চা'য়ের কাপ হাতে নিলাম। ছোট্ট চুমুক দিয়ে বললাম
"কেমন আছো?"
"হঠাৎ কেন এলে?"
"ভুলে গেছি।"
"মনে করিয়ে দেবো?"
আমি সব কিছুতেই অবাক হই। এখনো হলাম। হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। সে বললো
"কাগজটা দাও। পড়ে শোনাই।"
আমি যন্ত্রের মতো হাত বাড়িয়ে দিলাম। সেঁজুতি কাগজ নিয়ে চোখ বুলাতে শুরু করছে। এর মাঝেই কিছুটা চা কাপ থেকে মেঝেতে পরে গেল। সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই। ভাবছি মেয়েটি কি করে বুঝলো। ভাবনার মাঝেই শুনতে পেলাম রিডিং পড়ার মিষ্টি কণ্ঠ।
"হঠাৎ করেই মনে হলো.. আসলে বুঝলাম "কেউ আমাকে ফলো করছে।" বিরক্তি ভরা চোখে পিছনে তাকাতেই দেখি কেউ নেই। যখন হাঁটতে শুরু করি তখন আবার বুটের সোল কনক্রিটের মেঝেতে ঠোকার শব্দ কানে আসে। বিরক্তিকর শব্দ। আমি হাঁটা থামালেই শব্দও থেমে যায়, অদ্ভুত কম্বিনেশন।
একটু কৌতূহলী হলাম। ঘড়ি দেখার ভান করে হাত উঠালে মনে পরলো হাতঘড়ি আমি পরি না। অযথা বোঝা ছাড়া কিছুই না এই হাতঘড়ি যখন মোবাইলে সময় দেখাই যায়। তারপর ফোন বের করলাম এমন ভঙ্গিতে যেন আমার সময় দেখাটা অতীব জরুরী। সময় দেখলাম ঠিকই, সন্ধ্যা ৬টা। তারপর মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা ওপেন করে মুখের সামনে ধরে চুল ঠিক করলাম হাঁটা না থামিয়ে। আসল উদ্দেশ্য "আমার পেছনে কে" জানা। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার.. বুটের শব্দ ক্রমাগত আসছে ঠিকই কিন্তু ক্যামেরায় কারো অবয়ব দেখলাম না। একটা অজানা ভয় ডুকে গেল মনে। কথায় আছে "যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়।" তখন আমার মনে পরলো সন্ধ্যায় এই গলি কেউ ব্যবহার করে না।"
সেঁজুতি আমার দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
"কাজ শেষ। এবার আসো?"
আমি নড়লাম না। আসলে আমার এখন যেতে ইচ্ছে করছে না। কৌশলে বললাম
"আর এক কাপ চা খাওয়াতে পারবা?"
"চিনি শেষ। এবার আসো?"
"ডায়ভেটিক্স। চিনি খাই না"
"চা পাতাও শেষ।"
"তাহলে এক গ্লাস পানি দাও। নাকি তাও শেষ?"
বেশ অনিচ্ছায় সেঁজুতি উঠে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর দু'বোতল পানি হাতে ফিরে বললো
"ঠান্ডা গরম দুটোই আছে। বোতল দুটি নিয়ে কেটে পরো।"
আমি রিকশা থেকে যেখানে নেমেছিলাম এখন ঠিক সেখানেই দাঁড়ানো। এক হাতে ঠান্ডা এক বোতল পানি। আর অন্য হাতে সেই পেপার। মনে মনে ঠিক করেছি কাল সন্ধ্যায় আবার যাবো ড.চকলাদারের চেম্বারে। তার আগে নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট লিখে ফেলতে হবে।
(চলবে...)
পূর্ববর্তী পর্ব: Click This Link
পরবর্তী পর্ব: Click This Link
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৩
জেড আই অর্ণব বলেছেন: :-)
২|
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল লাগছে! আশায় রইলাম।
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৩
জেড আই অর্ণব বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:১২
দেশের পোলাপাইন বলেছেন: A++