| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জেড আই অর্ণব
আমার নিজেস্ব কোন পরিচয় নেই, সহজাতই আমি মানুষের ফ্রেমে বন্দী এক অজ্ঞাতনামা✔
চিন্তিত মুখে আমি বসে আছি ড.চকলাদারের চেম্বারে।
আমার ধারনা মতে একজন ডক্টর দেখতে যেমন হওয়ার কথা ছিল, ওনি ঠিক তেমন না। সে হালকা-পাতলা, দীর্ঘকায় দেহের মালিক। কথায় কথায় ভ্রু কুঁচকে ফেলেন। যেন ম্যাথের একটা জটিল তত্ত্ব তাকে দেয়া হয়েছে সমাধান করার জন্য। ডক্টর'রা সাধারণত চেম্বারে পাঞ্জাবি পড়ে আসেন না, কিন্তু সে টকটকে লাল পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে। আমি কোন দিক থেকেই মিলাতে পারলাম না তার লাল পাঞ্জাবি পছন্দের কারণ। না পারাটাই স্বাভাবিক। এক এক মানুষের পছন্দ এক এক রকম। যেমন আমি নীলচে সাদা পাঞ্জাবি পছন্দ করি, কিন্তু তার টকটকে লাল পছন্দ।
দীর্ঘক্ষণ পর A4 পেজ থেকে চোখ তুলে ড.চকলাদার তাকালেন আমার দিকে। হঠাৎ এভাবে তাকানোর জন্য আমি একটু অস্বস্তিববোধ করছি। মূলত ভ্রু কুঁচকে তাকানোর জন্যই অস্বস্তি হচ্ছে। বোধহয় আমার চোখের ভাষা পড়তে পারলেন তিনি। ভ্রু স্বাভাবিক করে বললেন-
"কাল রাতে আপনি তাকে দেখেছেন?"
"হ্যাঁ"
"দেখতে কেমন?"
এখন ইচ্ছে করছে তার কানের নিচে দুইটা থাপ্পড় দেই। এই মক্কেল ডক্টর হলো কিভাবে? গাধার গাধা। আপনিই বলুন ছায়া দেখতে কেমন বলা যায়? ছায়া দেখতে ছায়ার মতোই তো হবে। আমি নিজেকে সংযত করে বললাম
"ছায়া দেখেছেন? অনেকটা তেমন"
"হুম। কথা হয়েছে?"
"দেখুন, এভাবে যদি সবই জিজ্ঞেস করেন তাহলে রাতভর কাগজে লেখার মানে কি?"
"দেখছি উত্তর দু'রকম আসে কিনা?"
"প্রথম দিনই বলেছিলাম আপনি উকিল না আর আমি মক্কেল না। ভিন্ন রকম আসলে সমস্যার কি আছে?"
"রেগে যাচ্ছেন কেন? সত্যতা যাচাই করছিলাম"
"মানে? আমার লেখা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না?"
"বোঝার চেষ্টা করুন প্লিজ।"
"অনেক কিছুই বুঝে ফেলেছি। আপনার হ্যালুসিনেশন আপনিই গুলে খেয়ে নেন।"
"কি সব বলছেন। প্লিজ কুল ডাউন"
"বিদায়।"
বোধহয় দ্রুত উঠে দাঁড়ানোর জন্যই কাঠের চেয়ারটা পেছনে পরে গেল। একটা ছোটখাটো আতশবাজি ফোটার শব্দ হলে ড.চকলাদার স্তব্ধ হয়ে গেলেন। আমি সোজা বেড়িয়ে পড়লাম রাস্তায়। মিনিট খানিক স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ ডক্টরের চেম্বারে আবার যেতে ইচ্ছে করলো। আমি কখনোই ইচ্ছের বাঁধা দেই না, এখনো দিলাম না। ড.চকলাদার পরে যাওয়া চেয়ারটা ঠিক করে আবার বসেছেন নিজের চেয়ারে। আমার হূলস্থুল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি বোধহয়। আমি দাঁত কটমট করে বললাম
"আপনার বউ'কে বলবেন অ্যানিভার্সারির উপহারের তীব্র নিন্দা করেছি আমি। লাল পাঞ্জাবিতে আপনাকে না তোকে লালটু লালটু লাগছে। আয়না দেখোস নাই আসার আগে?"
আমি প্রায় দৌড়ে বেড়িয়ে পরলাম চেম্বার থেকে। ড.চকলাদারের মুখ দেখলে আপনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতেন। ভাগ্যিস দেখেন নি। ভালোয় ভালোয় আমি পালিয়েছিলাম, নইলে মোটাসোটা অ্যাসিস্ট্যান্টের হাতে পরলে নিশ্চিত জেল হতো।
মন খারাপ করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। ডক্টরকে এভাবে অপমান করা ঠিক হয়'নি। নিঃসঙ্গতায় আক্রান্ত ছেলে-মেয়েরা অল্পেই রেগে যায়। আমার অবস্থা হয়েছে তাই। মন ভালো করা দরকার। কিন্তু তেমন কোন উপায় মাথায় আসলো না। সমস্যা আরো একটা আছে, এখন আর হাঁটতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কোন খালি রিকশাও পাচ্ছি না। সব উপেক্ষা করে ভাবছি হ্যালুসিনেশন এর কথা। এর থেকে মুক্তির কোন রাস্তা আছে কিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
"অর্নব মামা না?"
আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলাম একটা রিকশাওয়ালা আমার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। সে কি আমাকে চেনে নাকি? এমনিতেই এক চিন্তায় নাওয়া খাওয়া প্রায় বন্ধ, আর বাড়তি কোন চিন্তা মাথায় নিতে পারলাম না।
"হুম। কে যেন?"
"মামা আমারে চিনবার পারেন নাই? আমি মঞ্জু। কাইল চড়ছিলেন আমার রিশকায়।"
মনে করতে পারছি না। যাই হোক আমার রিকশায় চড়া দরকার তাই চেপে বসলাম। আমি কিছু না বলতেই রিকশা চলতে শুরু করলো। রিকশা চলুক রিকশার মতো। আমি আমার চিন্তায় ডুব দিলাম। কিছুক্ষণ পর মঞ্জু বললো
"মামা কি তেনশনে আছেন?"
"হুম একটু আধটু"
"চিনতে পারেন নাই তাই না?"
আমি একটু ধাঁধায় পরলাম। হুট করেই মনে হলো কাল উনার রিকশাতেই সেঁজুতির বাড়িতে গিয়েছিলাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম
"এখন চিনেছি। হয়েছি কি, আমি সব ভুলে যাই ইদানীং"
"ভালবাসার মানুসের কাছে চইলা যান। দেখবেন সব ঠিক। তেমশনও উধাও"
"কিভাবে বুঝলেন?"
"এইটা সবাই জানে মামা"
বলেই খুশির হাসি দিল। মানুষ কত সহজে অন্যকে আপন করে নেয়। কালকের দশ মিনিটের এক সাথে থাকা আজকের খুশির কথোপকথন!! আবার দুদিন পর সে আমাকে চিনতে পারবে না, না আমি। এভাবেই চলছে পৃথিবী। সবাই সবাইকে মনে রাখতে গেলে সুস্থ মানুষের দেখা মিলতো না। চমৎকার রহস্য, অথচ সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
আমি মঞ্জুর কথার যথার্থতা পরীক্ষার জন্য বললাম
"কাল যেখানে নামিয়েছিলেন, সেখানেই যান।"
সেঁজুতি'দের বাড়ি বাড়াবাড়ি রকমের বড়। এর জন্যেই বাড়ির বর্ণনা দিতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ি হবে ছোট্ট, দুতোলা। দেখলেই বর্ণনা দিতে ইচ্ছে করবে। বাড়াবাড়ি রকমের বড় বাড়িতে দারোয়ান আর কাজের লোক রাখতে হয় প্রয়োজনেরর থেকে বেশি। তবে সেঁজুতি'দের বাড়িতে কোন দারোয়ান বা কাজের লোক প্রথম দিন চোখে পরে নি। অবশ্য আজো কোন দারোয়ান দেখিনি। আমি দরজায় কড়া নেড়ে দাঁড়িয়ে আছি। সময় পার করার জন্য ভাবছি আজ সেঁজুতি কোন রঙের শাড়ি পড়বে। আমার ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে আজ সে নীলচে সাদা শাড়ি পড়বে। আমার পছন্দের রঙ। কেন এমন মনে হলো তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কয়েক মুহূর্ত পর দরজা খোলার শব্দে সঙ্গা ফিরে পেলাম। দরজা সেঁজুতি খুলে নি। একটা অল্পবয়স্কা মেয়ে খুলেছে। চোখমুখ শক্ত করে বললো,
"আসেন ভেতরে। আপা দোতলায়। আসতে একটু দেরী হবে"
"কতক্ষণ লাগতে পারে?"
"এই ধরেন দু'মিনিট আবার দু'ঘন্টাও হতে পারে"
"তুমি?"
"চাঁদনী, সবাই চাঁদ বলে"
"আমি কি বলবো?"
"আপনার ইচ্ছা। বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসেন ভেতরে আসেন"
আমি ভেতরে ডুকরতে খটাশ করে দরজা বন্ধ করে দিল চাঁদ তথা চাঁদনী।
"চা দেবো?"
"তোমার অন্য কোন কাজ আছে?"
"কাজের জন্যেই এই বাড়িতে রাখা। থাকবে না!!"
"শোন চাঁদ, তুমি দু'কাপ চা আনো। একটা আমার জন্য চিনি ছাড়া। অন্যটা তুমি যেভাবে খাও। বুঝলে চা একা খেতে এক রকম স্বাদ আর দুজন এক সাথে বসে খাওয়াতে অনরকম।"
চাঁদ আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো। কেন জানি আমার হাসি পাচ্ছে। হয়তো এই পুঁচকে মেয়েকে আমার সাথে চা খাওয়ার অফার করেছি বলেই। মেয়েটি চা আনতে গেছে। আমি নিশ্চিত মেয়েটি দু'কাপ চা ঠিকই আনবে তবে একটা আমার জন্য আর অন্যটা সেঁজুতির জন্য। সাথে দুটা টোস্টও নিয়ে আসবে। সেঁজুতি চা'য়ে টোস্ট না ভিজিয়ে খেতে পারে না।
যখনই আমরা কল্পনা করি একটা পরী দেখতে কেমন, তখনই চোখের মাঝে ভেসে উঠে প্রিয় মানুষটির মুখ। সে হতে পারে আপনার মা, নয়তো বোন অথবা স্ত্রী বা প্রেমিকা। অথচ আমার চোখে ভেসে উঠে ঝলসানো পূর্ণিমার আলো। এ জন্যেই সেঁজুতি আমাকে চন্দ্রাহত বলে। সেঁজুতি সিড়ি বেয়ে নামার সময় আমার চোখের তারায় আলো ঝলসে উঠলো একবার। নীলচে সাদা শাড়ি পড়েনি সে। পড়েছে খয়েরী রঙের শাড়ি। তবে শাড়ির উপর যে শাল চাপিয়েছে সেটা নীলচে সাদা। অসম্ভব মানিয়েছে তাকে। বস্তুত যারা সুন্দর তারা যাই পড়ুক অসম্ভব ভালোই লাগবে। হাঁটার ভঙ্গিমাও রোমাঞ্চকর, ডান হাতে কুঁচি ধরে সিড়ি কাঁটছে। সব সময়ের মিষ্টি হাসি এখনো তার ঠোঁটে লেপ্টে আছে। কাছে এসে সোফায় বসতে বসতে বললো
"আবার আজ?"
"সত্যি বলবো না মিথ্যে"
"দুটাই বলো। দেখি আমার আইকউ কতদূর গড়ালো।"
আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। গুছিয়ে নিয়ে বললাম
"বোতল ফেরত দিতে, অবশ্য বোতল আনতে ভুলে গেছি।"
"বাকিটা?"
"জানতে ইচ্ছে হলো, কালকের প্রচ্ছদ পড়ে তুমি কি বুঝলে।"
"তুমি দুটোই মিথ্যে বলেছ।"
"কিন্তু কেন?"
"আমার থেকে ভালোই জানো তুমি"
"তাহলে সত্যিটা কি?"
"চাঁদ চা আনছে, ওকেই জিজ্ঞেস করো। ওর বুদ্ধি তোমার থেকে দশ গুণ বেশি"
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। পুঁচকে মেয়ের বুদ্ধি আমার থেকে বেশি? এর কিছুক্ষণ পর চাঁদ চা নিয়ে এলে আমি তাকে বললাম
"তোমার চা কোনটা?"
"আমি চা খাই না"
"আমার কোনটা?"
"এই যে নেন।" কাপ হাতে বাড়িয়ে "চিনি বেশি দেয়া। আরো লাগলে পিরিচ থেকে ঢেলে নেবেন"
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আসলেই আমি চায়ে চিনি বেশি খাই। তবে খালি লিকার চা ব্রেনের নিউরনে আলোড়ন তোলে। ফলে চিন্তা ভাবনা সহজেই গুছিয়ে নেয়া যায়। এর জন্যেই চিনি ছাড়া চা চেয়েছিলাম। আমি বোকা বোকা চোখে সেঁজুতির দিকে তাকালাম। তার ঠোঁটে পূর্বের মিষ্টি হাসি। এই হাসি রেগে থাকলেও এমনই থাকে। এর জন্য ও কখন রেগে আছে বোঝা যায় না। আমি শান্ত কণ্ঠে মিনমিন করে বললাম
"ধন্যবাদ"
সেঁজুতি বললো
"বল কি গল্প শুনতে চাও?"
আমি আবার বোকা বনে গেলাম। এই মেয়ে কি মনের কথা পড়তে পারে? সব কেমন মিলে যায়।
"চাঁদের গল্প বল। ও জানলো কিভাবে আমি চিনি বেশি চা খাই?"
"সহজ উত্তর আমি বলেছি।"
আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। রান্নাঘর নিচ তলায় আর ও নেমেছে দোতলা থেকে। এখন ধোঁয়াশা ঘুচে যাচ্ছে। তাকে আগেই বলে রাখা ছিল আমার কথা। জানালা দিয়ে হয়তো আমাকে আগেই দেখে ফেলেছে। সম্ভব? আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম
"গল্পের ব্যপারটা?"
"স্বাভাবিক সবাই গল্প করতেই আসে।"
"তাহলে সত্য মিথ্যা ধরলে কি করে?"
"যাদের মিথ্যা বলার অভ্যাস নেই, তারা মিথ্যা খুব গুছিয়ে সময় নিয়ে বলে। বিরাম চিহ্নের সময়েও সচেতন থেকে পুরোপুরি সত্যের মতো মিথ্যা বলে"
নিজেকে খুব বোকা বোকা লাগছে। লজ্জা করতেও শুরু করেছে একটু একটু। সেঁজুতি টোস্ট চা'য়ে ভিজিয়ে খাচ্ছে। আমি চুপচাপ দেখছি। এখন মনে হচ্ছে ওর চা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমার গল্পের সময় শেষ হয়ে যাবে। এমনটা হলে কেমন হয়? ওর বলার আগেই "আজ আসি" বললে কেমন হয়? অনিচ্ছা সত্যেও বলেই ফেললাম
"তাহলে আজ আসি?"
"এসো"
কি মেয়ে এটা? আর একটু বসতে বলা স্বাভাবিক ভদ্রতা। এটুকুও আশা করা যায় না ওর কাছ থেকে? উঠতে যাবো তখনই বললো
"তোমার যেতে ইচ্ছে করছে না জানি। তাহলে থেকে যাও। ডিনার করে যেও"
হঠাৎ সব হতাশা কেটে গেল। কিন্তু কি ভেবে আনমনে বললাম
"কাল আসে একসাথে খাবো"
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছি কাল আবার যাবো ড.চকলাদারের চেম্বারে। হ্যালুসিনেশন না হ্যালুজেনেশন যাই হোক আমার। আমি তার সমাধান পেয়েছি। কাল তাকে খুশির সংবাদ দিতে হবে সাথে মঞ্জুকেও।
পূর্ববর্তী পর্ব: Click This Link
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭
জেড আই অর্ণব বলেছেন: আসলেই হাস্যকর :-)
যাইহোক... আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ
ভালো থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪০
বর্ষন হোমস বলেছেন: বাহ ।কালকে বলেছিলাম বর করে লিখতে আজকে লিখে ফেলেছেন।ভালই বলা চলে